হূবনাথ পান্ডে ও তাঁর সাতটি বাংলা অনুবাদ কবিতা

Reading Time: 2 minutes

হূবনাথ পান্ডে [hubnath pandey]

hubnath pandey,irabotee.com

আধুনিক হিন্দি কবিতার জগতে হূবনাথ পান্ডে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য একটি নাম। ১৯৬৫ সালের ১৩ ই এপ্রিল ভারতের বেনারস শহরে কবির জন্ম। সমসময়কে বিষয় করে কবিতা-চর্চা তাঁর কবিতার বৈশিষ্ট্য। ‘মিট্টী’, ‘লোয়ার পরেল’, ‘কৌয়ে’, ‘অকাল’ প্রমুখ তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। কবি হূবনাথ পান্ডে বর্তমানে মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দি বিভাগে অধ্যাপনায় যুক্ত।

অনূদিত কবিতাগুলির মূল নাম যথাক্রমে ‘জিন্দগী’, ‘দেহ’, ‘কহানী’, ‘পুষ্কর’, ‘অহংকার’ এবং ‘উপলব্ধিয়াঁ’। এখানে উল্লেখ্য, ‘পুষ্কর’ ভারতেরই রাজস্তানের একটি তীর্থস্থান। ইরাবতীর পাঠকদের জন্য মূল হিন্দি থেকে অনুবাদ করেছেন স্বপন নাগ


জীবন
জানতেও পারিনি
নিজেকেই নিজে মিথ্যে বলে এসেছি।
জানতেও পারিনি আমি
নিজেই প্রতারণা করেছি নিজের সঙ্গে।
জানতেও পারিনি
নিজস্বতাকে হত্যা করেছি নিজেই।
জানতেও পারিনি আমি
নিজেকে ছাড়াই কাটিয়ে দিয়েছি জীবন,
এবং বেশ খুশিতেই, যে —
আহা ! কী সুন্দরই না কাটলো এ জীবন !
দেহ
দেহ
ত্বক নয়,
রোমকূপও নয়,
মাংস মজ্জা অস্থি রক্তও নয়।
এগুলো তো সব
দেহকে ঘিরে রাখার উপকরণ।
শব্দের বেড়ায় যেমন
ঘেরা থাকে কবিতা —
অস্থিরতাময়।
যাদের কাছে পৌঁছয় সেই অস্থিরতা,
কবিতাও পৌঁছয় সেই অব্দিই।
তা না হলে
কী-ই বা আর এই দেহ —
একটি সুন্দর শব্দ ছাড়া !
কাহিনী
শোনানোর মত কেউই
যখন বেঁচে থাকবে না,
তখনো, শেষ অবধি কিন্তু
বেঁচে থাকবে কাহিনী।
বাঁচবে না কাহিনীর চরিত্র
তাদের সুখ-দুঃখ,
তাদের কথা, সংঘর্ষ …
বেঁচে থাকবে শুধু কাহিনী।
পৃথিবীও বাঁচবে না যখন,
না-ই থাকুক আশেপাশে
শোনার মত কেউই ;
অন্য কোনো গ্রহে তখন
হয়তো কেউ বলবে —
অনেক বছর আগের কথা
একদা এক পৃথিবী ছিল !
পুষ্কর
পুষ্করে জল নেই।
ব্রহ্মা জানে, পুষ্করে জল নেই,
মেলায় আসবে হাজার হাজার যে উট
তারাও জানে, পুষ্করে জল নেই !
বাহান্ন ঘাট, বারো টিউবওয়েল, বাহাত্তর কাক
সব্বাই জানে, পুষ্করে জল নেই।
লাখো ভক্ত, হাজার হাজার ভবঘুরে,
পরিযায়ী পাখির দল পুষ্করে অবশ্যই আসবে।
দোকানদার, কুকুর, ভিখিরি, মাছি
এমনকি পর্যটন বিভাগেরও পুরো বিশ্বাস —
লোক অবশ্যই আসবে পুষ্করে।
পুষ্কর যে তীর্থ !
পুষ্করে জল নেই।

আরো পড়ুন: ওমপ্রকাশ বাল্মীকি ও তাঁর পাঁচটি অনুবাদ কবিতা


অহঙ্কার
অহঙ্কার
রক্তকে গাঢ় করে দেয়।
জায়গায় জায়গায়,
বিশেষ করে মস্তিষ্কে
জমতে থাকে জমাট রক্তের রং।
দৃষ্টি তখন ঝাপসা হয়ে যায়,
কোনকিছুর প্রকৃত রূপ
হারিয়ে যায় নজর থেকে,
কন্ঠস্বরে নেমে আসে জড়তা।
সত্য বলতে, এমনকি শুনতেও
অসহ্য কষ্ট তখন।
চিন্তাভাবনার শক্তিও
এমনভাবে কমতে থাকে যে
স্বার্থপর স্বপ্নের বাইরে বেরোনো
অসম্ভব হয়ে ওঠে !
অনায়াস ভার বাড়তে থাকে
অস্তিত্বের, দেহের নয়
হিংসের, খুশির নয়
উৎকন্ঠার, হাসির নয় …
এ সবই
নিজের উপলব্ধি আর গৌরব ভেবে
মানুষেরই মধ্যে থেকে সে
বেরিয়ে আসে দড়িছেঁড়া জন্তুর মত।
এবং
সমস্ত কুন্ঠার আবর্তে
ঘুরতে থাকে অবিরাম।
সুন্দর অনিন্দ্য এই জীবন
পৌঁছয় না কোথাও,
কিছুই পাওয়ার নেই
হারানোরও নেই কিছু …
শুধু বেঁচে থাকে পশুর মত।
এই সবকিছু থেকে প্রকৃত বুদ্ধিমান যারা
বেরিয়ে আসতে পারে শুধু তারাই।
অনুভূতি
আমি
জড়তাকে সামর্থ্য বলেছি,
মূঢ়তাকে অলঙ্কার,
অহঙ্কারকে পান্ডিত্য।
আমি
অসভ্যতাকে বলেছি যোগ্যতা,
স্বার্থকে সংগঠন,
বাসনাকে প্রেম।
আমি
ভয়কে ভক্তি বলেছি,
ঘৃণাকে ধর্ম,
হিংসাকে রাজনীতি …
আর
নিজের এই অনুভূতিতেই
খুশিতে মশগুল !
অভাগা
সে জীবনভর
নিজেকেই এত ধোঁকা দিয়েছে যে,
অন্য কাউকে দেবার মত
কিছুই বাঁচলো না তার !

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>