| 29 মার্চ 2024
Categories
গল্প সাহিত্য

স্ক্রিপ্ট

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট
আমি শখের বসে লেখালেখি করি। জানতাম না এ নিয়ে কেউ আমাকে একটা ফরমাইশি কাজ দিতে পারে। এটা ছিল আমার ধারণার বাইরে। পৃথিলা নামের এক মেয়ে সে আমার সাথে সাক্ষাত করতে চায়। পৃথিলাকে আমি চিনতাম না। মূলত সে আমার ভাগ্নি সুমির বন্ধু। সুমি আর সে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। তবে ডিপার্টমেন্ট পৃথক। ভাগ্নির কাছে শুনেছে আমি লেখালিখি করি। একদিন এসে বললো আঙ্কেল আপনি তো লেখেন। আমাকে কিন্তু একটা স্ক্রিপ্ট লিখে দেবেন? 
-স্ক্রিপ্ট দিয়ে তুমি কী করবে? 
-ডিপার্টমেন্টে একটা প্রতিযোগিতা চলছে। মোবাইলে ছবি তৈরি করে জমা দেব। বলতে পারেন ফিল্ম মেকিং কন্সেপ্ট কার কত ভালো। বিষয় বস্তু কেমন। সব মিলিয়ে মিনিট পাঁচ দশেকের একটি মিনি প্যাকেজ।
-আমি তো স্ক্রিপ্ট জাতীয় কিছু লিখি না। 
-একটু চেষ্টা করে দেখুন। 
-কী বিষয়ে তুমি লিখতে বলছো? কোন আইডিয়া দিলে আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি। 
-তারপর পৃথিলা আমাকে বেশ কিছু আইডিয়া দেয়- আমি মনোযোগী শ্রোতা। মাঝে মাঝে আমি আমার আগ্রহ প্রকাশ করি। সে আরেকটু ডিটেইল করে বলতে থাকে। পৃথিলার একটা আইডিয়া শেয়ার করছি।
ধরুন একজন শিল্পপতি রাউন্ড টেবিলে বসে আছে। বাইরে প্রশস্ত লবিতে বসে আছে একজন সাংবাদিক। ওটাই ওয়েটিং জোন। শুনশান নিরবতা ভেঙ্গে কখনো বাঁশী কখনো সেতার বাজছে। বিলম্বিত খেয়ালের মৃদুমন্দ সুর পরিবেশটা শান্ত করে রেখেছে। বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন সাংবাদিক। এক পর্যায়ে ডাকসাইটে শিল্পপতির ডাক যখন পেলেন বিরক্তি ঝেরে উঠে দাঁড়ালেন। সম্পাদক বলে পাঠিয়েছে এই সাক্ষাতকারের উপর নির্ভর করছে সারা বছরের বিজ্ঞাপন। চাপা একটা উত্তেজনা চোখেমুখে। লবিতে হাঁটতে গিয়ে বারবার সম্পাদকের চেহারাটা মেগা সিরিয়ালের মতন ঝপাত ঝপাত করে সামনে চলে আসছে। একটু নারভাস! স্মাইল একটা চেহারা নিয়ে সাংবাদিক মিটিং রুমে ঢুকলেন। পড়তে থাকা কাগজ থেকে মুখটা তুললেন শিল্পপতি মীর্জা গালিব। আমি খুবই দুঃখিত আপনাকে বসে থাকতে হয়েছে। মিটিং রুম নাকি আমার চেম্বারে বসবেন কোনটা ভালো হয়? স্যার আমার কোন অপশান নেই। আপনার যেটা চয়েজ। তাহলে এখানেই বসি কী বলেন? 
-স্যার আপনি তো একজন বড় শিল্পপতি এই ব্যাবসার শুরুটা কী আপনার হাত ধরে নাকি পৈত্রিক সূত্রে- 
-না, না, আমার হাত ধরে এক্সপানশন হয়েছে। তার আগে ছোট ছিল। ক্যাপিটাল সাইজ বেড়েছে। আর একটা কথা আপনি আমাকে শিল্পপতি বলবেন না। আমি একজন উদ্যোক্তা আই মিন শিল্পপতি আর উদ্যোক্তার মধ্যে একটা পার্থক্য আছে সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি আমি নিজেও একজন শ্রমিক। শ্রমিকরা যেমন মাস শেষে বেতন নিচ্ছে আমিও নিচ্ছি। এখানে আমরা ক্রিয়েট করছি। সেই লাভাংশ থেকে বেতন নিচ্ছি। এখানে ঐ অর্থে কোন পতিটতি নেই। মালিক কথাটা খুব শেকেলে। আমি কী আপনাকে বোঝাতে পারলাম? 
-স্যার তাহলে এটা কী কোন ট্রাষ্ট? 
তা হবে কেন? ব্যক্তিমালিকানাধীন কিন্তু পুরাতন এ্যপরোচটা এখানে নেই। 
-কি রকম? যদি একটু বুঝিয়ে বলেন? 
আপনাকে নিয়ে তাহলে আমার একটা ফ্যাক্টরি ভিজিটে যেতে হবে। ধরুন আমি যদি কোন ফ্যাক্টরিতে যাই বেড়িয়ে আসার সময় আমাকে কিন্তু চেক করা হবে। আপনাকেও চেক করবে।
-সে কি! এ কি করে সম্ভব!
ওখান থেকে বেড়িয়ে আসার সময় সবাই দেখলো এখানে যারাই আসে তাদের সবাইকে চেক পোস্টের মুখোমুখি হতে হয়। এই চেক করাটা তখন অনেক বেশি লজিক্যাল হয়ে ওঠে। কোন হীনমন্যতার জায়গা থাকে না। মানে সর্বজনীন! 
-আপনার কিছু প্রয়োজন হলে কী করবেন? 
-আমি আনতে পারি। একটা প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আনতে হয়। 
-কীভাবে? 
আমাকে রিকুইজিশন দিতে হয়। অফিসকে জানিয়ে নিতে হয়! 
-স্যার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই। আপনার কোন খেলা বেশি পছন্দের। 
অনেক খেলাই আমাকে আকর্ষণ করে লনটেনিস তার মধ্যে একটা। রিস্টের জোর এখানে সব কিছু নয়। প্লেসিং যদি আপনি করতে পারেন তাহলে জোর দিয়ে জিততে পারবেন না। আরেকটা খেলা আমার খুব ভালো লাগে! সেটা ওয়ার্ল্ডে স্বীকৃত কোন খেলা নয়। 
-কোন খেলা? 
এই যে সাপলুডু। মই পেলে তড়তড় করে উঠে যাচ্ছেন। আবার সাপের মুখে পরলে নিমিষে নেমে যাচ্ছেন। পৃথিবীতে একই সাথে দ্রুত উঠে যাওয়া আর দ্রুত নেমে যাওয়ার এমন অনিশ্চয়তার গেম আর হয় না, কিছুটা পুঁজিবাজারের মতো আরকি! 
– স্যার পৃথিবীর এমন কী আছে যা আপনার খুব রহস্যময় লাগে? 
রাতের তারা। 
– কেন? 
দিনের বেলা মনে হয় সে নেই। আসলে কিন্তু সে ওখানেই আছে। আমি দেখতে পাই না তাই মনে হয় সে তার অবস্হানে আর নেই। আচ্ছা আমরা একটা ব্রেক নেই। চলুন আমার অফিস রুমে যাই বাকী আলাপ ওখানে করা যাক। 
মীর্জা সাহেবের পেছেন ধরে সাংবাদিক এগিয়ে যায়। রুমে ঢুকে সাংবাদিক দেয়ালে চোখ বুলায়। রুমের ভেতর তিনটে ছবি একটা সম্ভবত তাঁর বাবার ফটোগ্রাফ আরেক পাশে পাশ্চাত্যের এক স্নানরত নারীর অবয়ব। ভেজা কাপড়ের ভাজে তার শরীর। চোখ বুজে আছে। দক্ষিণের দেয়ালে একটি দুর্ভিক্ষের স্কেচ। জয়নুলেরই হবে। সাংবাদিককে চা না কফি বলায় সম্বিত ফিরে পায়। মীর্জা তুলতুলে ওয়েট টিস্যু দিয়ে মুখটা মুছে নেয়। মীর্জা বলেন, আপনি এক কাজ করুন আপনার প্রশ্নগুলো লিখিত থাকলে দিয়ে যান। সাথে আপনার মেইল এ্যাডরেস এবং মোবাইল নম্বর। আমি আজ বা কাল পাঠিয়ে দেব উত্তর। 
-স্যার প্রশ্ন নয় একটা কৌতুহল ছিল? জানতে পারি?  আপনার রুমে জয়নুলের এই ছবিটা কেন? 
উৎপাদন বাড়াতে হলে ওটার দিকেও বিশেষ নজর রাখতে হয়! ঐ শরীরটাই সব!
আমার ক্যামেরা তখন একবার মেয়েটার দিকে আরেকবার স্কেচটার দিকে দেখাবে। শরীর কথা বলবে…. মেটাকে কেন দেখাবে? ওটা ভোগের সিম্বল হিসেবে আসবে। সৌন্দর্য নয় কেন? আপনি যদি মনে করেন সৌন্দর্য তাহলে সৌন্দর্য! 
পৃথিলাকে বললাম আচ্ছা লিখবো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত