আজ ০৭ মে কবি, অনুবাদক ও সমালোচক অত্রি ভট্টাচার্য্য-এর শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
অখিলবন্ধু ঘোষের জন্য
আমাকে জানুয়ারির লাল কিতাব ভেবে নিও।
সুবিধে হবে জল দিয়ে মুছে দিতে সব অক্ষর
সংলাপে সংলাপে রেগে গেলে অচল অভিনয়
স্ক্রিন জুড়ে হাসব একদিন তারস্বরে। এটাই লক্ষ্য….
অখিলবন্ধু ঘোষের গান দিয়ে ঘিরে ফেলেছি আত্মাকে।
দুমুঠো সুর দিও। দুপুরে সমস্ত ভবিষ্যি দিয়ে খাবো মেখে….
এই মানুষের সংসারে এক সন্ন্যাসীর মত রাত্রি নেবে আসবে।
আমি একাকী একা টুকরো মন্তাজের মত জেগে….
এদিকে কলকাতার রাস্তায় কিশোরী ফুলেরা
বিশ টাকার বিনিময়ে নিজেকে পোড়াতে রত।
আমি ও আমাদের শতাব্দীপ্রাচীন নিশ্চিত ঘুম
মেট্রোপলিসের সাথে বালিশে বন্দুকে অক্ষত।
বিশ্বাস করো জান। আমার জিভের গোড়ায় জ্বলন্ত গোটা ব্রহ্মান্ড ফোটে…
নিশ্বাসে বিদ্যুৎ উঠুক। শখের পায়রারা বিদ্রোহ করে ওঠে।
নিজস্বী
আমি বিশ্বাস করিনা নিজস্ব বলে কিছু হয়।
যে কিশোরী প্রতি বসন্তে ফোটে কারনেশন হয়ে সেও শুকিয়ে যায় জল না পেয়ে।
অভিনেতার অভিনয় সেও তো ধার করে আনা আয়নাশহরের মুখোশ বিক্রেতার কাছ থেকে।
প্রেমের নাটকীয় সব মুহূর্ত একইভাবে বারবার ফিরে আসে পৃথিবীর প্রসেনিয়ামে।
লেখা যায়না নতুন কিছু। মাটিতে মিশে থাকা শব্দেরা জল হাওয়ায় আগুনে বাক্য তৈরী করে।
একটা লেখা তৈরী হয় জ্যান্ত রক্তমাংসের মানুষের জন্মের মত।
শুধু প্রত্যাখ্যানের ভয়ে আমি ফিরিনা তার কাছে।
ঘড়ি শুধু জেগে আছে বিপ্লব হবে বলে!
ভূমিকম্প
১
দু’পাত্র উঠলে নিকট-ও মানুষ, দূরেরটি
মরীচিকা লেপচাজগতে পর্যবসিত।
আমরা এ দুয়ের কোনটিই
চেখে দেখিনি, পাহাড়ও আমাদের
অমন ভারঅসাম্যে চেনে না। পাহাড়ের
অতিথিঝোরা খুঁতধ্বস মাঘেত্যাদি মাসে কুয়াশা ও
অশান্তির প্রতীক হয়ে থাকে। আমাদের তুমিটিই
বোঝো না প্রতিটি মিঠেশব্দ ফার্ণের পালিত বনসাই
পুরষ্কৃত রোমের কুকুর।
২
জুলাই সেই-এর মিরিক আমি আদৌ দেখিনি। খবর
এসেছিল বন্ধুরা কাঁপছে, লেক-এর
আঁশটে জল কালো ক’রে দিচ্ছে
সন্ধ্যের আকাশ। অসীম ভূটিয়া ও ছেত্রীরা
কোয়েকের গন্ধে পাথর, যদিচ
স্বর্গ-ও ধ্যানগম্ভীরতার খবর এত অপ্সরার
সূত্রে ঐখানে পাঠিয়েছে।
৩
এতদিন বাদে লিখলাম আমি সূর্যাস্ত দেখিনি
বেহালার ছড় গুটিয়ে গুটিয়ে চাকা বানানো যে পাহাড়ী
জার্নি, উঠে বসিনি। নিহিত আমিগুলিই এত অথচ-র বাঁক
মুঠোয় নিয়েছিলাম।
তদানীন্তন টাচপ্যাডটি আমার চোখে ক্ষমতা হারিয়েছে।
বন্যা
তোমার রক্তের বিনিময়ে ভালো আছি। কমেন্টবক্সে
কোলোকাল ফুল, বহ্নিপাতা, উৎসবের
নানান ভণিতা, না হ’লেও
জীবন বেশ চলে যেত। তোমার
অচিরেই বৈভবগাছ এইসব অবাঞ্ছিত রাঙায়
রাস্তা উপড়ে জিভে এসে ঠেকে তরল সাপ।
কান্নার অচ্যুতদূরে প্রবাল কান পাতে
কথিত ভণিতা সরায়, যে বিপুল
ইশারাপ্রবাহ জমে ড্রেণ বোঝাই
তাকে এমন অপরূপ বোঝে !
খালি বেলচায় মাথা দিতে দিতে তাদের-ও
আশ্রয় কাবার। ওগো মাছ
ঠোকরাতে গিয়ে ভুলে গেলে
চার ও রাতের সম্পর্ক?
ধর্ষণত্রস্ত
বিকেলটুকু এখনও ততখানিই তার যতটুকু পরিষ্কার হয়,
কাচের রাস্তার মতো চকচক করছে আধাশিশুদের গাল,
গাল বেয়ে ঝরছে মরিচ। এক মৃত কবির
পাখনা পড়ে রয়েছে পাখিরা তাই ঠুকরে খাচ্ছে।
যাদের প্রেম স্যাঁকরায় নিয়েছে, তারাই এখানে সোজা হয়ে
বেঁচে থাকতে পারে। বিড়ি বাঁধতে বাঁধতে
ছাদ মাথায় ঠ্যাকে না ! মাথাদের বলে না ছাত—
টোকা পড়ো, যুদ্ধ ক’রে আসি।
আয়নারা আজ বড়ো অহেতুক বণিতা হয়েছে।
২
এক বিরাট সাইকেল কাঁপছে কারখানায়। রেফ্রিজারেটর।
ওইখানে বসে কেউ স্যান্ডুইচ বানায়, অর্ধেক কুলুঙ্গি গড়ে
ব্যবসা ক’রে। অনেকের চাহিদার কানায় কানায় এক ব্যাগমাত্র
খোলা। সমস্ত ভার্সিটিস্মৃতি ব্যাগকে মহান করেছে। কিছু
হিন্দি কিছু কাদা বাকি পাপ অদ্বৈত রকমের পাপ।
আমি হাঁটছি জুতোরা ফেয়ারওয়েল গাইছে সহাস্যে।
৩
দারুণ চাহিদা উড়ছে গাছপালায়, সান্ত্বনায় নুয়ে
পড়েছে গাছ। এ ওকে দ্যাখায়, ভ্রূকুটি উপেক্ষা ক’রে, দ্যাখে
সবার মধ্যে সবার সর্বনাশ ঘাপটি মেরে আছে।
এই ভয় আজকের নয়। গাছের ও মেঘেদের-ও কি?
পুরো দারিদ্র্য টলোমলো, মুখের প্রমাণ দিতে
মুখোশটি বয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে মহাসাগর পর্যন্ত।
প্রচুর লিখতে হচ্ছে যতক্ষণ
তাগিদের অর্থ হয়ে না ওঠে তদ্ভবকবিতা!
৪
একটু তীর্থে বোসো, গাড়িটি লাগাও,
তোমাকে ছন্দ করি প্রত্নস্পর্শ, মাঘমাস করি।
চিহ্ন করি ময়দানবের। একার আগুন আর তার মতো
কে খেতে পেরেছে! পরবর্তী লাইন ছিল— ময়দানব
নাকি অবিবাহিত— কোন মহাভারতে যে এ’সব লিখেছে?
এক স্বল্পালোকিত শ্রমিকের ঘর সবসময় থাকবে উজ্জ্বল! আমার
দানবিক কানে ওই বাতাস কত দীর্ঘদিন তুলোবীজ পোঁতে না।
চরিত্রের চিত্র মেটে রং মিশিয়ে আঁকে না!
শেষ চায় শেষ-ও লিখে দেয় না শরীরে
বিনা আপত্তিতে লোডশেডিং জড়িয়ে ধরে ধর্ষণত্রস্ত শহর

কবি, অনুবাদক ও সমালোচক।