| 20 এপ্রিল 2024
Categories
এই দিনে গল্প সাহিত্য

দুটি গল্প

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

আজ ০৬ জানুয়ারী কবি, কথাসাহিত্যিক ও সম্পাদক বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়ের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।


 

শিল্পভূমি

নিভন্ত এই চুল্লিতে মা একটু আগুন দে , আরেকটু কাল বেঁচে থাকি বাঁচার আনন্দে । শঙ্করের মেয়ের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল হারান । কথা নয় কবিতা । শঙ্করের মেয়ে বুঝল না । শঙ্কর চা চপের দোকানি । মেয়ে ক্লাস এইটে । পড়াশোনা কামাই করে মাঝে মাঝে এসে বাপকে হেল্প করে । বিকালবেলা যখন দোকানে ভিড় জমে । একা সামলাতে পারেনা তার বাবা । -শঙ্কর আগুন দে তো , বিড়িটা নিভে গেছে । এবার একটা কাগজ পাকিয়ে উনুন থেকে আগুন ধরিয়ে হারানকে দিতেই হারান বলে – তোদের বোধ বুদ্ধি আর হল না । আমার শিল্পময় কথার ইঙ্গিত বুঝলি না । অথচ চপ আজ দেশের আয়বহুল শিল্প । উনুন জ্বলছে ওর নাম বয়লার । তোর মেয়ে যে হাতপাখা নাড়ছে উনুনের মুখে ওটাকে বলে এফ ডি ফ্যান । আর দেখতেই পাচ্ছিস চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে । এসব গল্পের মাঝেই একটা ছোকরা এসে থামল শঙ্করের দোকানের সামনে – দাদা আমাদের বিশটা চা , পঞ্চাশটা চপ । জলদি পাঠাবে গুণ্ডা মিলন সঙ্ঘে । – কিন্তু তোমাদের তো দুহাজার টাকা বাকি আছে আগের মাসের । মিনমিনে ভেজা গলা শঙ্করের । – বাকি ? হো হো করে হাসল ছেলেটি । বাকি আবার কি? এ পাড়ায় বিজনেস করবে আর ঝন্টুদার ক্লাবে ট্যাক্স দেবে না , সে কি হয়?

বিড়িটা টানতে টানতে হারান দেখছে শিল্পভূমি । শুধু চা চপ নয় কত শিল্প মাথা চাড়া দিচ্ছে । তোলা- নতুন শিল্প , বিনিয়োগ হীন শিল্প । বিড়িটা নিভে যাচ্ছে কি ? জোরে টান দিতেই হারান বুঝল এখনও ধোঁয়া উঠছে চিমনিতে ।

একটি স্পনসর্ড গল্প

একটি বহুল প্রচারিত বানিজ্যিক পত্রিকায় গল্প লিখে গোবর্ধন হালদার রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেল । পত্রিকার মালিক ঘরে ঘরে পৌঁচে যাওয়া “ ঝটপট ঝোল ’নামে একটি গুঁড়ো মশলার কর্নধার । পাশাপাশি দেশে বিদেশে আরও অনেক কারবার । সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলও কিনেছেন । সেই চ্যানেলে দিনরাত দেখা যাচ্ছে গোবর্ধনের গোলাপি মুখ । তার চারাপাশে তরুণী লেখিকাদের ভিড় । যারা দুচারদিন আগে গোবর্ধন নাম শুনলে যারা আঁতকে উঠত সেই বিশ্বসুন্দরীরা এখন গোবর্ধনের করুণা প্রার্থনা করে – গোবুদা , আমাকে একটু দেখবেন প্লিজ । যদি আপনার পাশে বসার জায়গা পাই । কত বড় লেখক আপনি । গোবর্ধন গম্ভীর থাকে । এটা তার কৌশল । সে সবই জানে । এইসব আদব কায়দা । আলো এবং উদ্দীপনার কথা । গল্প কীভাবে লিখতে হবে সেই টেকনিকও বেশ রপ্ত করে নিতে পেরেছে সে । তিনলাইন গল্প বলার পর কমারসিয়াল ব্রেক থাকবে । এরপর পাঞ্চলাইন হিসেবে ওই গুঁড়ো মশলার গুণকীর্তনএর জন্য একটি আকর্ষণীয় বাক্যবিন্যাস । যাতে সহজেই বোঝা যায় এই গল্পটি কে স্পন্সর করছে । এই সহজ হিসেব নিকেশের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে মিট মশালা সেরা লেখক পুরষ্কারও পেয়ে গেল গোবর্ধন । এখন সে সেলেব্রিটি । দেশ বিদেশ ঘোরে ভাষণ দেয় । কিন্তু গল্প লেখেনা । আয়নায় নিজের মুখ দেখে একদিন সত্যি সত্যিই চমকে উঠে গোবর্ধন । নিজের প্রতিকৃতি রান্নার ঠাকুরের মতো হয়ে গেছে । গায়ে আদার গন্ধ । হাতে হলুদ দাগ । প্রতিকৃতি হেসে ওঠে – বেশ আনন্দে আছো ? – এতদিন ছিলাম । আজ বুঝতে পারছি – কি বুঝছ ? একজন গুঁড়ো মশলার মালিক শুধু হদুদ গুঁড়ো , জিরে পাওডার , আদা বাটাই বানায় না । লেখকও বানিয়ে দেয় আজকাল ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত