| 25 এপ্রিল 2024
Categories
নারী

স্রষ্টা ও বিনাশিনী আমি নারী

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

আমাদের ছোটোবেলায় নারী দিবস পালন হত কিনা আজ আর মনে পড়ে না।তবে হত বলেও মনে হয় না।কারন তখন সংবাদমাধ্যমে এই বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা,লেখালেখি দেখিনি।বিশ্বায়ন শুরু হবার পর সারা বিশ্বেই এই নিয়ে অনুষ্ঠানের রব উঠল।বিভিন্ন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান তাদের কমোডিটিতে এদিন নানা রকম ছাড় দেওয়ার ঘোষণা করতে শুরু করল।অন্যান জায়গার মত হুজুগপ্রিয় বাঙালিও মেতে উঠল নারী দিবস পালনে।
কিন্তু নারী!তার জন্য কি একটা দিন! তাহলে বাকি দিনগুলো তার ক্ষমতা সীমিত? আর এখানে এসেই দিনটার আলাদা কোনো মানে খুঁজে পাই না আমি। যে মুহূর্তে এক নারী তার গর্ভ যন্ত্রণা সহ্য করে সন্তান জন্ম দেয়,সঙ্গে সঙ্গে তার শক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় পৃথিবীর বুকে।কারন এই বিরল ক্ষমতার অধিকারী নারী নতুন প্রজন্ম তৈরির,সৃষ্টির কারিগর। মাটি না থাকলে যেমন এই পৃথিবীর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে পড়বে ঠিক তেমনি নারী না থাকলেও সব ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।
তাই দেবতারাও বারবার অশুভ শক্তির সঙ্গে লড়াইয়ে নারী শক্তির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে।আবার নারী যদি অপমানিত হয় তবে যে কি ভয়াবহ হয়ে ওঠে তার প্রমাণও আমরা পাই।তখন সে কালি।এই শক্তিকে ভয় পায় সবাই। দেব দানব অসুর মানুষ প্রত্যেকে সম্ভ্রম করে চলে তাই ছিন্নমস্তা রূপী কালিকেই।ঘোর কালো বর্ণা,লকলকে জিহ্বা,হাতে মু্ন্ডমালা..। এভাবেই তো নারীকে অপমান করলে বিনাস ঘটবে এই চিত্রায়ন করেছিলেন আমাদেরই পূর্ব পুরুষ, শাস্ত্র, পুরান, সর্বত্র তার জয়গান।
প্রাচীন কালেও যতগুলো সভ্যতার অস্তিত্ব আবিষ্কার হয়েছে সবেতেই মাতৃতন্ত্র ছিল।কারন পুরুষ জানত একমাত্র মায়ের হাতে বা নারীর হাতে সর্বোচ্চ ক্ষমতা থাকলে তিনি স্নেহবলে একদিকে যেমন সন্তানকে আগলে রাখবেন,তেমনি তিনিই বাহুবলে রাজা হয়ে রক্ষা করবেন। তার শক্তি অপরিসীম।
তখন নারীর জন্য কোনো একটি দিন বরাদ্দ করার দরকার হয়নি।
তারপরে ধীরে ধীরে আমাদের মহাকাব্যে নারী শক্তির অবমাননা শুরু হল।দুটি অন্যতম কাব্য রামায়ন, মহাভারতে নারীর জন্য লড়াই। আবার নারীকেই পন্য করে খোলা প্রাঙ্গনে তাকে চরম অপমান।সীতার পাতাল প্রবেশ নারীর কোন সম্মান বৃদ্ধি করে!কিংবা ভরা রাজসভায় দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ, তাকে বাজি রেখে জুয়ো খেলা…
এখান থেকেই তো শুরু হল নারীকে পন্য করার খেলা।আর এই খেলা শুরু হল বাড়ির ভিতর থেকেই।
বদলে গেল সমাজের মূল স্তম্ভ নারীর সামাজিক অবস্থান। ক্রমে ক্রমে সে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিনত হল।তাকে দান করা হল,যেমন করে গরু বাছুর,চাল, ফল মূল,সোনা দানা দান করা হয় হোম যজ্ঞের সামগ্রী হিসেবে।
তাকে পুড়িয়ে মেরে সম্পত্তির উপর থাবা বসালো পুরুষ। তাকে শেখানো হল সমাজে যা কিছু অকল্যাণ সব কিছুর জন্য দায়ী সে।কাজেই যত ব্রত,বার,উপোষ সব কিছু তাকেই পালন করতে হবে।নিজেকে আহুতি দিতে হবে।তবেই নাকি সমাজের মঙ্গল,সংসারের মঙ্গল।
নারী সে তো সবার প্রথম প্রজজনের যন্ত্র, সে মা,সেখানেই তার গৌরব।তাই পরিবারের মঙ্গল কামনায় সে নিজেকে সঁপে দিল।আর সেই সুযোগে ক্রমশ সংসারে সবার নিচের স্থান হল তার।এর পিছনে ব্রাহ্মণ্যবাদী মনোভাব পরিস্কার।কারণ তারাই একমাত্র জানতো নারীর ক্ষমতা কতটা।তাই গোড়া থেকে নির্মূল করে দেওয়ার এই সব বিধান।
তারপরেও সারা বিশ্বের মতো এদেশেও জন্মালেন কিছু আলোকিত মানুষ,যারা রুখে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করলেন,দিনের পর দিন অপমান,আক্রমণ সহ্য করেও নারীর কথা ভাবলেন।ধীরে ধীরে বদল শুরু হল।আবারও নারী শক্তির জয়ধ্বজা উড়ল।
পথটা সহজ ছিল না।এখনো সহজ নয়।যত ক্ষমতা সে স্পর্শ করবে তত রক্তাক্ত হবে।তবু জাগতিক নিয়মেই এই পরিবর্তন আসবে,আসছে।সেদিনটা আর খুব বেশি দেরী নেই যেদিন পণের জন্য পুড়বে না নারী,ধর্ষিত হবে না সর্বস্তরে,অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার তলোয়ার ঝলসে উঠবে,আর লেখা হবে নারী বিশ্বের নতুন ইতিহাস।তার আগে অবধি আমরা বরং পালন করি একটা দিন আমাদের জন্য। আমরা আনন্দের সঙ্গে নদী হই,মাটি হই,বৃক্ষ হই…আর নিজেকে বলি নারী তুমি পারবেই,তুমিই পারবে নিজের আলোয় আলোকিত হতে…

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত