আজ ১ মে ছড়াকার চন্দনকৃষ্ণ পালের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
কাকতাড়ুয়া
চোখ মুখ আঁকা মাটির পাতিলটাই শুধু স্থির
আর ক্রস করা দুটো কাঠি,বাকি সব অতীত
সারা মাঠ খাঁ খাঁ ,রোদের জিহ্বায় বিদ্যুৎ
নীলচে গ্রামের ছায়ায় ভূতুড়ে মেঘমাখা দিন…।
পুরনো শার্ট আর ছেঁড়া ফাটা জিনসের জৌলুসে
নতুন কাকতাড়–য়া দৃষ্টি নন্দন ,কাকতাড়–য়া ভীত কিনা
কে জানে,অন্য পাখিদের ভীত চাহনী দেখে
আনন্দিত এক পায়ে দাড়ানো স্থির কাকতাড়–য়া।
ঐ সব অতীতের দিন,তারপর রোদ ঝড় বৃষ্টিতে
ঠায় দাঁড়িয়ে ভেজা-শুকানোর দিনরাত
চৈত্রের এক ঝড় ছিড়ে নেয় মূল আবরণ,খসে পড়ে
ছেড়া ফাটা জিনস,একপায়ে দাঁড়িয়ে থেকে
বিবর্ণ চোখ মুখ নাক আঁকা পাতিল পাহারা।
কাকরা সাহসী হয়,
মুন্ডুতে কর্ম করে সকাল দুপুর…।
অস্থায়ী কোলাজ -১
দহন বুকের গহনে
শিখা অনির্বাণ যেনো –
অথচ শীতলতা বিষন্ন হলো
আঙুলের শুদ্ধতার মতো ।
কতো কিছু হয়ে যায় অজান্তেই, মুহুর্তেই –
অগ্নুৎপাত ঘটে যেতে পারে কোন নিরীহ স্থাপত্যে ।
ভুল ভাবনার স্রোতে শরীর ভাসানোর দিন
আজ হলো প্রমানিত শ্লোক,
আবৃত্তিক মোহ নেই আর
নিরব পাঠের উৎসব হোক
তারপর …।
অস্থায়ী কোলাজ – ২
শূন্যতায় তৈরী মহল
এভাবেই ভেঙে পড়ে জেনেও
মাপ-জোক, অংকনের আয়োজনে
পূর্ন করো বসন্তের দিন,
সংগ্রহের ব্যস্ততায় ঐ চাঁদমুখে মাখো
মলিনতার তীব্র মায়াজাল ।
কে আর ছিন্ন করে,
কার এত বাহুতে আগুন ?
স্বপ্নময় জ্যোস্নায় অবগাহন হলো
ঢেউময় সৈকতে কত পদছাপ
উত্তুঙ্গ পাহাড়ে কতো ফেলে আসা দিন ।
নতুন ঋতু
শিউলী ফোটা শেষের পথে
স্থলপদ্মও শেষ,
ভোর বিহানের হাওয়ার মাঝে
একটু শীতের রেশ।
সবজি ক্ষেতে সবুজ চারার
একটু নড়াচড়া,
রাতের বেলা হালকা শিশির
ঘাসের গায়ে পড়া।
পিঁপড়ে সারি খাবার মুখে
শীতের আয়োজনে,
রোদেও যেন তীব্রতা নেই
স্তব্ধতা আজ বনে।
নদীর জলে টান ধরেছে
কাশের ফোটাও শেষ,
কালচে সবুজ মাখলো গায়ে
আমার বাংলাদেশ।
শরৎ শেষে হেমন্তেরই
ছোঁয়া গায়ে তার
আমার বাংলা খুললো বুঝি
নতুন ঋতুর দ্বার।
হেমন্ত
সকাল বেলা একটু শিশির ঘাসে
সূর্য এলে সেই শিশিরই হাসে
হালকা একটি চাদর কুয়াশার
সকালটা তো শিউলী ফুলের গন্ধ ছড়াবার।
সূর্যের আলোয় তেমন তাপ আর নাই
সকাল বেলার সূর্য আমার ভাই
মিষ্টি রোদে ভরায় সারা দেশ
তার সে আলোয় ভালোবাসার রেশ।
শর্ষে ক্ষেতে সবুজ চারার উঁকি
ফুলকপি আর বেগুন চারা সুখী
সকালবেলাই মজার সময় জানি
মাঠের মালিক তখনই দেয় পানি।
সূর্য যখন একটু তেতে ওঠে
মাটি থেকে সব পানি নেয় লুটে
খা খা করে মাটির নরম বুক
চারার মনে থাকে না আর সুখ।
বিকেলটা তো ঝুপ করে যায় নেমে
আঁধার আসে আলোটা যায় থেমে
একটুখানি হিমেল হাওয়া বয়
হেমন্ত আজ, শীত ঋতু আজ নয়।
তাঁরা
জনতার ঘাড়ে চড়ে
সমুদ্র পাড়ি দেন
দুই হাত পাতলেই
বির্মূত হাড়ি দেন।
লুকোচুরি করে তাঁরা
চাপাবাজি মেরে যান
কচি কচি ছেলেদের
মুণ্ডু চিবিয়ে খান।
.
আড্ডা
আড্ডাতে কত কিছু হয় যে
আড্ডার কথা মনে রয় যে।
বন্ধু ও বান্ধবী মিলে মিশে আড্ডা
তেতুলিয়া-টেকনাফ, ডেমরা টু বাড্ডা।
গ্রাম ও শহর সবখানে এটা চলে
ঝালমুড়ি, চানাচুর, চা’র চুলো জ্বলে।
রাস্তার মোড় থেকে ফুটবল মাঠ
চায়নিজ থেকে ওই সদরের ঘাট।
আড্ডা তো চলছেই ঠিক তার মতো
লক্ষ পুরুষ নারী আড্ডায় রত।
আমার আড্ডা এই ম্যাগাজিনটাই
ওটা ছাড়া আমি আর কোত্থাও নাই।
.
এই ঢাকা শহরে
এই ঢাকা শহরে
মিছিলের বহরে
কাঁদানে গ্যাস হয়
নাক চোখ শেষ হয়
পুলিশেরা মৃদু কয়।
জল খুবই ঘোলা হয়
চামড়াও তোলা হয়
আগুনও জ্বালা হয়
কান ঝালা-পালা হয়।
পেট্রোল বোম হয়
মারপিট ধুম হয়
মাঝে মাঝে গুলি হয়
ফুটি ফাটা খুলি হয়।
হামলা টামলা হয়
দিব্যি মামলা হয়
ধরা আর ছাড়া হয়
লোকজন ভাড়া হয়।
কলকাঠি নাড়া হয়
কর্মীকে মারা হয়
লীগ-দল ঝাড়া হয়
মা পুত্র হারা হয়।
এ শহর ঢাকাতে
সাকসেসফুল হবে
প্রাণে বেঁচে থাকাতে।
কবি ও ছড়াকার
পেশায়:
উপ-পরিচালক(অর্থ)
শতভাগ ডিএনই (ডিএমসিএস) প্রকল্প
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড।