আপাদমস্তক করোনা
সূর্যের আলো সর্বত্র সমানভাবে পড়ে কিন্তু স্থানীয় মেঘের কারণে কোথাও কম বেশি দেখায়। তেমনি কোভিড–১৯ বা নভেল করোনাভাইরাস সংক্রামণও তাই। সারাবিশ্বে সমভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কিন্তু অবস্থানগত বা সময়পোযোগি সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এবং মানুষ কিছুটা সচেতন হওয়ায় দেশে দেশে এই মরণথাবার হিসেবে একটু তারতম্য আছে।
এর আগেও মানবসমাজে বহু ভাইরাসের আক্রমণ হয়েছে। তাণ্ডব লীলা চালিয়েছে একেকটা ভাইরাস। এইতো শতাব্দী আগে স্প্যানিশ ফ্লু প্রায় ৫ কোটি মানুষের প্রাণ কেড়েছে। যদিও সেই ভাইরাসও করোনার মত আমেরিকা থেকে বেরিয়েছে কিন্তু স্পেনের কপাল খারাপ তাই নাম হয়েছে স্প্যানিশ ফ্লু! মূলত ফ্লুটি মহামারীর রূপ নিয়েছে স্পেন থেকে। এবং প্রায় ৫০ কোটি মানুষ এতে আক্রান্ত হয়। যার স্থায়ীত্ব ছিল ১৯১৮ থেকে ১৯২০ পর্যন্ত দুই বছর। এবারও তাই আমেরিকায় উৎপত্তি চিন থেকে বিস্তার!
এখন যে করোনা পৃথিবী জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তা কী শুধু নিছক একটা দূর্ঘটনা নাকি ইচ্ছাকৃত! কিংবা ভবিতব্য? শোনা যাচ্ছে একটি উপন্যাসে এই ভাইরাসের কথা উল্লেখ আছে। এবং তা নাকি ২০২০ তো থাকবেই একুশও যেতে পারে! এই ভাইরাস যদি সত্যি তাই করে তাহলে তো পৃথিবীকে ঢেলে সাজাতে হবে! আর তাই এখন থেকেই উচিত আগামী পৃথিবীর ছক আঁকা।
সে যাইহোক অন্যান্য ভাইরাসের মতোই করোনা মানবজাতির শত্রু, তাই একে মোকাবেলা করতে হবে সন্মেলিত প্রেচেষ্টায়। এটা একটা মনস্তাত্বিক সংক্রামণ যা শ্বাসকষ্টের সাথে সাথে মনকে দূর্বল করে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায়। এবং একসময় হৃদরোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন রোগী। করোনা মূলত আতঙ্কিত করে একটা মানুষকে ঘায়েল করে। নিজেকে দূর্বল না ভাবলে করোনা তেমন কিছুই করতে পারবে না। সত্যি এখন পর্যন্ত এটাই পরীক্ষিত দাওয়াই।
ভ্যাকসিন, ওষুধ নিয়ে নানা রকম কথা প্রচলিত হয়েছে এর মধ্যে। তবে গাছের মধ্যেই এর ওষুধ আছে এটাও ভাবছেন অনেকে। কেউ কেউ বলছে আকন্দ, তুলসি, জল এবং গাঁজার সংমিশ্রণ যে উপাদান নিসৃত করে তা শ্বাসকষ্ট নিবারণ করে। কিন্তু ভুল প্রয়োগে মৃত্যুর কারণও হতে পারে। তাহলে পরীক্ষাটা করবে কে?
ইতোমধ্যে আমেরিকা দাবী করছে তাঁরা ফিংগার ট্রিপ ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে এবং ইঁদুরের উপর সফল পরীক্ষা শেষ করেছে! সত্য মিথ্যা তারাই জানে! তবে যারা ভাইরাস তৈরি করে তারাই যে অ্যান্টি-ভাইরাস বাজারে ছাড়বে পুঁজিনীতি তাই বলে। এটা তো খুব স্বাভাবিক। এমনও হতে পারে এটা মূলত একটা প্যানিক ডিজিজ! মৃত্যুর প্যানিক। যার আবিষ্কারক আমেরিকা এবং বাজারজত করেছে চিন!
সেদিন এক বন্ধু বলছিলো, আচ্ছা করোনা আক্রান্ত হলেই কি মানুষ মারা যায়?
– আমি বললাম না।
– তাহলে এতো আতঙ্কিত হওয়ার কী আছে! ওদিকে মোদীজি গদির আরামে পাগলের প্রলাপ বকেই চলেছেন। ট্রাম্প আবার ট্রাম কার্ডের তুড়িতে রাষ্ট্রপ্রধান থেকে ডাক্তার বনে গেছেন! বাহ্ কী মনোরম! কারো কারো নাকি জাত ভাই করোনা! করোনা আর রঙ্গ করোনা।
এই সুযোগে বিশ্বের প্রধান প্রধান নেতারা তাঁদের ক্ষমতা পোকাপোক্ত করতে নিচ্ছেন নানা সময়োপযোগি পদক্ষেপ। বেশ কিছু দেশ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিকদের ট্রাকিং করছে। আর এখন পর্যন্ত যারা করেনি তারাও হয়ত শুরু করে দেবেন শীঘ্রই। যা ভবিষ্যতে বিশ্বনেতাদের একনায়কত্বের গদি রক্ষা করবে। আর সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত বলে কিছু থাকবে না।
যদিও এরই মধ্যে প্রকৃতিতে অনেক পরিবর্তন আসতে শুরু করছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরণের দূষণ কমতে শুরু করেছে! বলা যায় দূষণের হাত থেকে তো প্রকৃতি রক্ষা পাচ্ছে! আবার মানুষও তাঁদের পরিবার পরিজন নিয়ে একান্তে সময় কাটাতে পারছে। বিশেষ করে যেসব পরিবারে বাবা মা দুজনেই চাকরি করেন, তাঁরা তাঁদের শিশুদের সান্নিধ্য পাচ্ছেন। শিশুরাও পাচ্ছে বাবা মায়ের আদর। এদিকে আবার পড়া নামক বিভীষিকার মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। স্কুলের নামে সকাল বিকাল মুটের কাজ শিখতে হচ্ছে না। বড়দেরও অফিস নামক যন্ত্রণা থাকছে না! থাকছে শুধু খাদ্যাভাব আর চিকিৎসার অপ্রতুলতা!
নিক্তির নিরিখে হিসেব করলে দেখা যাবে মানুষ আগের থেকে কিছুটা আনন্দেই আছে। মন্দা যা হবার তা হল বিশ্ব পুঁজির। সারা পৃথিবীর জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। সারা বিশ্ব একযোগে অর্থ সঙ্কটে পড়বে। সামাজিক অপরাধ বেড়ে যাবে। কিন্তু মানুষ যদি মানবিক হয় তবে অর্থ সঙ্কট কোন সমস্যা নয়। বিশ্ব ব্যাংক আছে! সমস্যা হল মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা মানুষকে সচেতন করা।
কিছুদিন বাদেই আজকের আনন্দ হয়তো আর থাকবে না। তবুও ক‘টা দিনতো আনন্দে কাটলো! ক্ষতি কী! আর মানুষ যদি আনন্দে থাকে তবে করোনাও মানুষকে পর্যদুস্ত করতে পারবে না। করোনার সাথে এই যুদ্ধে মানুষ জয়ী হবে অনায়াসে। কিন্তু বিশ্বনেতৃত্ব যা করতে চাচ্ছে বা যা আশঙ্কা করছি তা যদি সত্য হয় তবে তা হবে মানব জাতির জন্য একটা কলঙ্কময় বিশেষ অধ্যায়ের সূচনা।
জন্ম ১৬ ই বৈশাখ, ১৩৯৪ মাদারীপুরের শিবচরে। বাবা ইন্দ্রজিৎ মালো পেশায় ছিলেন শিক্ষক। বোনহীন বড় দুই দাদার স্নেহে মায়ের ভালোবাসায় কেটেছে শৈশব। ছোটবোলা থেকেই খেলায় বলায় ডানপিটে। প্রতিবেশী স্বজনেরা আদর করে ডাকতেন তপু। উমেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ভদ্রাসন জি সি একাডেমিতে স্কুল শেষ করেছেন। ড. নুরুল আমিন কলেজে থাকাকালীন শিল্পসাহিত্যর সাথে পথচলা শুরু হয়। রাজধানী ঢাকায় এসে সরকারি তিতুমীর কলেজে গণিতে স্নাতক করেন। এসময় সাহিত্যে বাচিক চর্চা ও প্রসার প্রতিষ্ঠান কন্ঠশীলন চতুরমাসিক আবর্তন করেন। কন্ঠশীলন কোর্স চলাকালীন সত্য ও সুন্দরের আরাধনায় ‘উদ্ভাসন’ প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপর মীর বরকত তামান্না তিথিকে নিয়ে ‘কল্পরেখা’ কোমল প্রাণের প্রদীপ প্রতিষ্ঠিত করেন। এছাড়া বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র পরিচালিত পাঠচক্রের সভ্য ছিলেন। খামখেয়ালী সভায় রবীন্দ্রচর্চায় যুক্ত ছিলেন। আবৃত্তিশিল্পী চন্দ্র তাপস শিশুরাই স্বপ্ন নিয়ে ‘প্রজাপতির মেলা’ নামে একটি স্কুল শুরু করে অর্থাভাবে বেশি দূর যেতে পারেনি। ছায়ানট পরিচালিত স্কুল নালন্দা এবং ফুলকির সম্বন্বিত শিক্ষা সাংস্কৃতিক কর্যক্রমে শিক্ষাকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ‘কথা কবিতার ঘ্রাণ’ নামক একটি শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ক অনলাইন পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ প্রকাশিত যৌথ কাব্যগ্রন্থ “কবিতা ও প্রেম”। কর্মজীবনে শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা, ব্যাংকিং একের পর এক চাকরি ছেড়ে ব্যাবসায় যুক্ত হন। বর্তমানে প্রবাসে ভবঘুরে জীবনযাপন করছেন।