| 24 এপ্রিল 2024
Categories
ক্রিকেট খেলাধুলা

নায়ক থেকে খলনায়ক হ্যান্সি ক্রোনিয়ে

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

রাশিক এহসান প্রান্তিক


 

দক্ষিণ আফ্রিকার ব্লুমফন্টেইন শহরে ১৯৬৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জন্ম নিয়েছিলেন আধুনিক ক্রিকেটের এক মহান নায়ক, যিনি তার নিজের দোষেই পরে পরিণত হয়েছিলেন এক খলনায়কে। ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেটকে যে কজন কলুষিত করার পাপে পাপী, তিনি তাদের অন্যতম। তার নাম “ওয়েসেল জোহান্স হ্যান্সি ক্রোনিয়ে” – যিনি অনেকের চোখেই দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বকালের সেরা অধিনায়ক। যাকে ক্রিকেট হয়তো অন্যভাবেও মনে রাখতে পারতো। আজ তারই গল্প শোনাবো।

বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় ক্রোনিয়ে স্কুলজীবনে ছিলেন প্রায় সকল খেলায় চৌকস। অধিনায়কত্ব করেছেন স্কুলের ক্রিকেট আর রাগবি দলের। তার বাবা ইউয়ি ক্রোনিয়ে ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার। হয়তো সেই কারণেই ক্রিকেটের প্রতি ছিলো অন্যরকম ভালবাসা। সেই ভালবাসা থেকেই ক্রিকেটকে বেছে নেয়া। ১৯৮৮ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে  অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। পরের বছরেই কুরি কাপের প্রতিটি ম্যাচে অসাধারণ পারফরম্যান্স। ফাইনালে খেলেন ৭৩ রানের ম্যাচজয়ী এক ইনিংস। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে লাল বলের ক্রিকেটে আকস্মাৎ ছন্দপতন। গড় মাত্র ১৯!

কিন্তু একদিনের ক্রিকেটে ঠিকই জ্বলে উঠছিলো ব্যাট। সেই মৌসুমে একদিনের ক্রিকেটে তার গড় ছিলো ৬০.১২। ১৯৯০-৯১ মৌসুমে মাত্র ২১ বছর বয়সে  হয়ে গেলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে  অধিনায়ক, জন্মগতভাবেই এই গুণ রপ্ত করেছিলেন হয়তো । সে বছরেই এলো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম শতক। মৌসুম শেষটাও করেন শতক দিয়ে, মোট ৭১৫ রান নিয়ে। একদিনের ক্রিকেটেও সে বছরে খেলেন ১৫৯ রানের অপরাজিত এক জ্বলজ্বলে এক ইনিংস! তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

১৯৯১-৯২ মৌসুমে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ফর্ম তাকে এনে দেয় জাতীয় দলের ক্যাপ। তাও আবার ডাক পান সরাসরি ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ দলে। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেক ঘটে তার।hansie cronje এর ছবি ফলাফল সেই টুর্নামেন্টে ৩৪ গড়ে ব্যাট হাতে করেন ২৭২ রান। ২০ ওভার হাত ঘুরোলেও কোন উইকেট পাননি। বিশ্বকাপের পর উইন্ডিজ সফরে ব্রিজটাউনে টেস্ট অভিষেক যেটি ছিলো নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন। টেস্টটা প্রায় জিতেই গিয়েছিলো তারা। ২০০ রানের লক্ষ্যে নেমে একপর্যায়ে ১২২ রান তুলে ফেলেছিলো ২ উইকেটে ।

কিন্তু তখনই তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ে তাদের ব্যাটিং, গুটিয়ে যায় ১৪৮ রানে। ১৯৯২ সালে ভারত সফরের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে দলের যখন দরকার ৪ বলে ৬, ছক্কা হাঁকিয়ে হন ম্যাচসেরা। সেই সফরে ব্যাট হাতে আর কোন বলার মত পারফর্মেন্স না থাকলেও, বল হাতে তিনি ছিলেন দুর্বোধ্য। সেই সফরেই তুলে নেন তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং (৫/৩২), যেটি দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে কোন বোলারের রঙ্গিন পোশাকে প্রথম ৫ উইকেট।

সেই সফরের প্রথম টেস্টে তুলে নেন নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরী। ৪১১ বল মোকাবেলা করে, প্রায় ৯ ঘন্টা উইকেটে কাটিয়ে খেলা সেই ইনিংসটি এখনো অনেকের চোখে সর্বকালের সেরা টেস্ট ইনিংস। উইকেটে এসেছিলেন যখন দলের রান ১ উইকেটে ০। আউট হন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে। এই ইনিংসেই ভর করে প্রত্যাবর্তন যুগে প্রথম টেস্ট জয় করে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই বছরের শেষদিকে পাকিস্তানে ত্রিদেশীয় সিরিজে তার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে চমক দেখায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

পরের বছর শ্রীলঙ্কায় পেয়ে যান দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরী যার উপর ভিত্তি করে দল পায় ইনিংস ও ২০৮ রানের বিশাল জয়। ১৯৯৩ সালে হয়ে যান সহ-অধিনায়ক, দলের সর্বকনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও। নিউজিল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার সাথে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেন অপরাজিত ৯১ রানের এক ম্যাচজয়ী মহাকাব্যিক এক ইনিংস।হ্যান্সি ক্রোনিয়ে

সেই সফরের দ্বিতীয় টেস্টের শেষদিনে নিয়মিত অধিনায়ক কেপলার ওয়েলসের অসুস্থতা তার কাঁধে এনে দেয় অধিনায়কের দায়িত্ব।

হতাশ করেননি তিনি। সেই টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা জয় পায় ৫ রানে। তৃতীয় টেস্টেও তাকে নিতে হয় দায়িত্ব, হয়ে যান দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট অধিনায়ক। ফিরতি সফরের অস্ট্রেলিয়া যখন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আসে, তখন বলতে গেলে একাই শাসন করেন অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের। ১৯৯৪ সালের সেই সিরিজে টেস্ট ওয়ানডে মিলিয়ে রান করেন ৭২১। রানের দেখা পান পরের ইংল্যান্ড সফরেও। দুইটি সেঞ্চুরী তুলে নেন তিনি।

পরে পাকিস্তান আর অস্ট্রেলিয়ার সাথে ত্রিদেশীয় সিরিজে ৮৮.০৫ গড়ে করেন ৩৫৪ রান, যদিও সবগুলো ম্যাচেই হেরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এটাই ছিল বব উলমারের কোচ হিসেবে প্রথম ও কেপলার ওয়েলসের শেষ সিরিজ। এরপর তার কাঁধে আসে দীর্ঘমেয়াদী অধিনায়কত্ব। প্রথম টেস্টে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে যান কিন্তু পাকিস্তান শ্রীলংকা নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে শুরু হওয়া ম্যান্ডেলা কাপ ঠিকই জিতে নেন। ১৯৯৫ সালের নিউজিল্যান্ড সফরে আসে আরেকটি শতক।

১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে দলকে  প্রথম রাউন্ডের বাঁধা পার করাতে পারলেও কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রায়ান লারার অসাধারণ এক সেঞ্চুরীর কাছে হেরে যান। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে পাকিস্তানে প্রথম সিরিজ জয় করে দক্ষিণ আফ্রিকা তার নেতৃত্বে। ১৯৯৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেন ৮৮ রানের এক ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস, ৩৩৮ মিনিট উইকেটে থেকে। পরের টেস্টে মার্ক ওয়াহ হিট উইকেটের শিকার হলেও বেঁচে যান আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে।

জীবন পেয়ে ওয়াহ হাঁকিয়েছিলেন ১০৪ রানের ইনিংস যা হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচটাকে ছিটকে দেয়। রাগে আম্পায়ারদের ড্রেসিংরুমের কাঁচের দরজায় স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করেও পার পেয়ে যান ক্রোনিয়ে। পরের সিরিজে শ্রীলংকার সাথে তুলে নেন ৩১ বলে ফিফটি, তখন তা ছিল দ্বিতীয় দ্রুততম। ১৯৯৮ সালের শেষদিকে ইংল্যান্ড সফরে টানা ৫ ফিফটি করেন, আর সিরিজের শেষ টেস্টে খেলেন  ১২৬ রানের ইনিংস যা তার শেষ টেস্ট সেঞ্চুরী। সেই সিরিজে রান করেন ৪১০, গড় ৬৬.৮৩।

১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে উইন্ডিজ সফরে ৫-০ তে টেস্টে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজ জিতে নেয় ৬-১ এর বিশাল ব্যবধানে। ১৯৯৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজ জেতে তার দল, টেস্ট ওয়ানডে দুটোই। তারপর নিয়ে যান দলকে ‘৯৯ বিশ্বকাপে।

সেই বিশ্বকাপে একদমই ফর্মে ছিলেন না তিনি। গোটা টুর্নামেন্টে করেন মাত্র ৯৮ রান। দল বাদ পড়ে যায় সেমি-ফাইনালে যেখানে অস্ট্রেলিয়ার সাথে সেই বিখ্যাত টাই করে তার দল। পরের জিম্বাবুয়ে সফরে তিনি হয়ে যান দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।

১৯৯৯-০০ সালের ইংল্যান্ড সিরিজে পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দেন অভিনব এক সিদ্ধান্তে।hansie cronje এর ছবি ফলাফল বৃষ্টির কারণে শেষদিনে খেলা হবার সম্ভাবনা ছিল মাত্র ৪৫ ওভার। দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ছিল ১৫৫/৬। আগের রাতেই দুই অধিনায়ক কথা বলে ঠিক করে ফেলেন যে তারা প্রত্যেকেই এক ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেবেন এবং ৭০ ওভারে ২৫০ রানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৮ রানে পৌঁছালে ডিক্লেয়ার করে দেন ক্রোনিয়ে।

চুক্তিমত পরের দুই ইনিংসও ঘোষণা করে দেয় দুই দল। শেষ ইনিংসে ইংল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৪৯ যা তারা ৫ বল ও ২ উইকেট হাতে রেখে পৌঁছে যায়। কিন্তু পরে বোঝা যায় এই অভিনব সিদ্ধান্তের আসল কারণ।

৩১ মার্চ ২০০০, তিনি তার শেষ একদিনের ম্যাচে ৭৩ বলে করেন ৭৯ রান, পাকিস্তানের বিপক্ষে।

তার অধীনে ২৭ টেস্টে জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ছাড়া সিরিজ জিতেছে সব দলের বিপক্ষে। ১৩৮ ওয়ানডেতে জয় পেয়েছে ৯৯ টিতে। ৬৮ টেস্টে ৩৬.৪১ গড়ে রান করেছেন ৩৭১৪। রয়েছে ৬টি সেঞ্চুরী, ২৩টি হাফ সেঞ্চুরী। বল হাতে নিয়েছেন ৪৩টি উইকেট, গড় ২৯.৯৫। আর ১৮৮ ওয়ানডেতে রান ৫৫৬৫, গড় ৩৮.৬৪। উইকেট নিয়েছেন ১১৪টি, গড় ৩৪.৭৮। দুই ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে ১০৬টি ক্যাচ রয়েছে তার ঝুলিতে।

এরপর আসে সেই কালো দিন যা গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দেয়! ৭ এপ্রিল ২০০০ সালে ফাঁস হয়ে যায় ক্রোনিয়ে ও সঞ্জয় চাওলা নামের এক ভারতীয় বাজিকরের কথোপকথন। তদন্তে বেরিয়ে আসে নানা তথ্য। বলা হয়ে থাকে, ১৯৯৭ থেকে ২০০০ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ম্যাচে টাকার বিনিময়ে ম্যাচ হেরেছে ইচ্ছে করে তার দল।

হার্শেল গিবস, নিকি বোয়ের মত খেলোয়াড়দেরও নাম উঠে আসে এসব তদন্তে। এমনকি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই অভিনব সিদ্ধান্তটিও নেয়া হয়েছিল ম্যাচটি ইচ্ছে করে হেরে যাবার জন্য। ১৯৯৮ সালের ভারত সফরের বেশ কয়েকটি ম্যাচ ইচ্ছে করে হেরেছিল বলেও তদন্তে পাওয়া যায়।

গোটা ক্রিকেট বিশ্ব এক প্রচন্ড ধাক্কা খায়। কিং কমিশনের তদন্তের পর ক্রোনিয়েকে ক্রিকেট থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। গোটা ক্রিকেট বিশ্বের কাছে যিনি ছিলেন অবিসংবদিত এক নেতা, এক লড়াকু মানসিকতার সৈনিক, ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিষ্কের অধিকারী, তিনি হয়ে গেলেন সবচেয়ে ঘৃণিত এক পাপী। তিনি তার দোষ স্বীকার করে নেন।

সেদিনের সেই প্রেস কনফারেন্সে তিনি নিজে কেঁদেছিলেন, তার সাথে কেঁদেছিল লক্ষ-কোটি ক্রিকেট ভক্ত।ছবি ফলাফল তার মত কেউ যে ক্রিকেটের সাথে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, বিশ্বাস করেও যেন বিশ্বাস করতে চাচ্ছিলো না বিশ্ববাসী। তার মত এমন এক ক্রিকেট কিংবদন্তিকে যে এ পরিণতি ভোগ করতে হবে, তা মানতে পারা আদতেই অসম্ভব ছিলো। দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম শ্রদ্ধার ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তার এমন বিদায় ছিলো ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা ট্র্যাজেডি।

২০০১ সালে অবশ্য আজীবন বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আপিল করেন। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। তার শাস্তির মেয়াদ আজীবনই রেখে দেয় ট্রাইবুনাল।

তার মৃত্যুও আজ পর্যন্ত রহস্য আবৃত। ১ জুন ২০০২ সালে এক বিমান ক্রাশ দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। যদিও অনেকের ধারণা, ম্যাচ পাতানো কেলেংকারির ব্যাপারে তার মুখ বন্ধ করতেই তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। সেই ধারণার পক্ষে শক্তিশালী যুক্তিও রয়েছে। যে বিমান ক্রাশে তিনি মারা যান, তার সেদিন সেই বিমানেই থাকার কথা ছিল না। তার নির্ধারিত বিমান মিস করায় তিনি সেই বিমানে ওঠেন।

বিমানটি ছিল একটি মালবাহী বিমান এবং তিনি আর চালক ছাড়া আর কেউ সেই বিমানে ছিল না। তার মৃত্যু রহস্যের কিনারা এখনো করা সম্ভব হয়নি যদিও এখনো ব্যাপারটি তদন্তাধীন। তবে এ রহস্যের সমাধান করা আদৌ সম্ভব হবে কিনা, তা সবারই অজানা। তার মৃত্যুর পর ২০০৪ সালে তাকে ১১তম “সেরা দক্ষিণ আফ্রিকান” ঘোষণা করা হয়। জ্যাক ক্যালিস, মার্ক বাউচার, শন পোলক, আলান ডোনাল্ডের মত ক্রিকেটার তিনি তৈরি করেছেন, যারা পরবর্তীতে তার বিপক্ষেই সাক্ষী দিয়েছিলো। সাক্ষী দেবার সময়েও ক্যালিস বলেছিলেন,” তবু আজো আমাদের কাছে ক্রনিয়েই  একমাত্র অধিনায়ক। তার জায়গা কেউ নিতে পারেনি, কেউ কখনো পারবেও না।“

ক্রিকেট তাকে সব দিয়েছে, ঠিক তেমনি নিজের ভুলে হারিয়েছেনও সবকিছু। আমাদের দেশের ক্রিকেটেও ম্যাচ ফিক্সিং এর কালো হাতের থাবা পড়েছে। দেশের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য এই হ্যান্সি ক্রনিয়ে হতে পারেন এক দৃষ্টান্ত।

বিপিএল আসছে, যা তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য নিজেকে মেলে ধরার অনেক বড় সুযোগ। সাবধান হওয়ার সময় এখনই।  তার মতো আর কোন তরুণ যেন এই ভুলে নিজেকে জড়িয়ে না ফেলে, সেদিকে বোর্ড থেকে শুরু করে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি রাখতে হবে।

দেশের জন্য শতভাগ দেবার জন্য প্রস্তুত করে তুলতে হবে তরুণদের। তাদের মনে গেঁথে দিতে হবে যে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে গর্বের আর কিছুই নেই। এই ম্যাচ ফিক্সিং এর কালো দিক তাদেরকে বুঝাতে হবে, এর ফল যে কতটা খারাপ আর অপমানের, তা বুঝাতে হবে।

প্রত্যেক তরুণ খেলোয়াড়ের মনে যদি প্রবল দেশপ্রেম, নিজের আত্ম-নিবেদনের প্রতি সম্মানবোধ, বিশ্বের কাছে দেশের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের দায়িত্ব – এসব যদি নিজে থেকে গড়ে ওঠে, তবেই এদেশের ক্রিকেট থেকে এই ফিক্সিংয়ের বিষ দূর করা সম্ভব হবে।

কৃতজ্ঞতা: ক্রিকেটসাতানব্বই

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত