পদসঞ্চার
১.
মার্চ মাসের ১৮ তারিখ। বুধবার। বসে আছি ঘরে। অমরনাথ করণ, অমর নস্কর, বনি এল। আজ আমাদের পর্ণশ্রী সাহিত্য সম্মেলনের বৈঠক ছিল। বাতিল করতে হল। করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক। সেই সব কথাই হচ্ছিল বন্ধুদের সঙ্গে। ১৩ মার্চ থেকে খারাপ খবর আসছিল। ওই দিন ভারতে প্রথম মৃত্যু হয় করোনায়। সৌদি আরব থেকে দিনকয়েক আগে ফিরেছিলেন ৭৬ বছরের এক বৃদ্ধ। তাঁর মৃত্যু হয়েছে। সমস্ত পর্যটক ভিসা বাতিল করে দিয়েছেন ভারত সরকার। তার দুদিন পরে ভারত সরকার করোনার প্রকোপকে বিপর্যয় ঘোষণা করলেন। রাজ্যেও ৩১ মার্চ পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হল সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে; তার দুদিন পরে রাজ্য সরকার জানালেন ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
আজকের খবর আরও ভয়ংকর। আমাদের রাজ্যে প্রথম করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেল। ইংল্যাণ্ড ফেরত এক যুবক আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। এদিকে মুম্বাইতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। মহারাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। কেরলেও লাগছে তার হাওয়া। দূর পাল্লার ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। রেল আর বিমান আমদানি করছে করোনার। এরাই এতদিন দূরকে নিকট করেছিল। এখন তার বিপদ বুঝতে পারছি। ‘বিজ্ঞানের বলে পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়’—এ কথা বলে আত্মশ্লাঘা বোধ করে এসেছি। তার মূল্য চুকিয়ে দিতে হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার এত উন্নতি না হলে করোনা এত তাড়াতাড়ি দেশে দেশে ছড়িয়ে যেতে পারত না। পঞ্চশরকে দগ্ধ করে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন মহাদেব। বিজ্ঞানও তেমনি দূরকে দগ্ধ করে করোনাকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে । রেল আর বিমান থেকে আমদানি করা হচ্ছে করোনা।
নস্করবাবু সাহসী সাংবাদিক। কিন্তু তিনি বেশ ভয় পেয়ে গেছেন বলে মনে হল। অমর করণের মতো মাস্ক পরে আসেন নি, কিন্তু বসেছেন অনেকটা দূরে। নস্করবাবুকে সে কথা বলতে বললেন, ‘কি করব! শুনছি, এ রোগের কোন প্রতিষেধক নেই, ভ্যাকসিন নেই, তাই একমাত্র উপায়টাই অবলম্বন করা।’
একদম ঠিক। সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বা ফিজিক্যাল ডিসট্যান্সিং এক মাত্র উপায়। তাই অন্যান্য দেশ কোয়ারেন্টাইন চালু করেছে। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ হয়। নাক আর মুখের ছিদ্র দিয়ে ঢুকে যায় করোনা ভাইরাস। আশ্রয় নেয় আমাদের কোন কোষে।
অমর করণ গম্ভীরমুখে জানাল, ‘আপনারা ভয় পাচ্ছেন কেন ? করোনার প্রতিষেধক তো আমাদের হাতের কাছেই আছে।’
আমরা অবাক। বনি অতীব আগ্রহে জানতে চাইল সেই প্রতিষেধকের কথা। আরও গম্ভীরভাবে অমর করণ বলল, ‘কেন, গোমূত্র।’
তার কথা শুনে আমরা হেসে উঠলাম। দিনকয়েক আগে রাজধানী দিল্লিতে হয়ে গেছে গোমূত্র পার্টি। তার উদ্যোক্তা ছিলেন হিন্দু মহাসভা। তারই মহান অনুপ্রেরণায় আমাদের রাজ্যে কলকাতা, ডানকুনি আর রায়গঞ্জে গোমূত্র পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। রাজ্য সরকার অবশ্য এই অনুষ্ঠানকে মদত না দিয়ে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। মজার ব্যাপার, গোমূত্র পানকারীদের একজন খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি কান মুলে প্রতিজ্ঞা করেছেন যে জীবনে এ ভুল তিনি আর করবেন না।
আমাদের দেশের হিন্দুত্ববাদী দল ও সংগঠনগুলি বিচিত্র কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। মানুষের কাছে পেশ করে যাচ্ছেন বিচিত্র বক্তব্য। ইতিহাসে পড়েছি উনিশ শতকের শেষ দিকে হিন্দুধর্মের পুর্নজাগরণ পর্বে একদল প্রচারক হিন্দুধর্মের সব ক্রিয়াকর্মের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিয়ে মেতে উঠেছিলেন। বেদ প্রভৃতি শাস্ত্রগ্রন্থকে তাঁরা সমূহ জ্ঞানের আকর বলে মনে করতেন। বৈজ্ঞানিক মেঘনাদ সাহা তাই ঠাট্টা করে বলতেন, ‘ব্যাদে সব আসে।’ একবিংশ শতকেও হিন্দু মহাসভা, রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ এবং ভারতীয় জনতা পার্টি ঘটাতে চাইছেন হিন্দু ধর্মের পুর্নজাগরণ। রামচন্দ্র তাঁদের কাছে ভগবান বিষ্ণুর অবতার, তাঁর জন্মভূমি নিশ্চিতভাবেই অযোধ্যায়, রামের জন্য ধর্মযুদ্ধে যেতে চান তাঁরা। রামের পরে গোমাতা। এই গোমাতা অক্সিজেন ত্যাগ করেন, তাঁর দুধে সোনা আছে, তাঁকে কোতল করে যাঁরা তাঁর মাংস ভক্ষণ করেন তাঁরা হিন্দুধর্মের শত্রু, শত্রুদের বিরুদ্ধে তাঁদের ধর্মযুদ্ধ। এঁদের মতে হিন্দুশাস্ত্র সর্ব জ্ঞানের আকর। জেনেটিক এঞ্জিনিয়ারিং, প্লাস্টিক সার্জারি, ইন্টারনেট, উড়োজাহাজ, বিমান বন্দর সবই আমাদের ছিল। আজ নয়, হাজার হাজার বছর আগে। এখন দেখি, শাস্ত্র থেকে করোনা প্রতিরোধের আর কি উপায় তাঁরা নির্ধারণ করেন।
নস্করবাবুকে ভীতু বলে ঠাট্টা করলেও তাঁরা চলে যাবার পরে আমার মেয়ে কেকা ফোন করল। সে জানাল সংকট গুরুতর। করোনাকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। চিনের উহান থেকে ইউরোপের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। সংক্রমণ বাড়ছে প্রতিদিন। গোষ্ঠী সংক্রমণ হচ্ছে। ভারতের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এ রোগ ছড়ালে মারাত্মক বিপদ হবে। আমাদের চিকিৎসা পরিকাঠামো দুর্বল। অর্থনীতিতেও দুর্বল দেশ। অতি দুর্বল তার বৃদ্ধির হার। ঠেকাবে কি করে বিপর্যয়কে? সে বলল ইন্টারনেট থেকে করোনা আপডেট দেখে নিতে।
খাওয়া-দাওয়ার পরে আমি খুলে বসলাম কম্পিউটার ‘টাইমলাইন: হাউ দি নিউ করোনা ভাইরাস স্প্রেড’, যার যাত্রা শুরু ২০১৯ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর।
করোনার দিনলিপি: ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯ থেকে ১৮ মার্চ, ২০২০
৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯- বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাকে চিন জানায় সে দেশের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে এক ‘অস্বাভাবিক’ নিউমোনি্য়া রোগের প্রাদুর্ভাব হয়েছে। এ রোগের ভাইরাস অজানা।
১ জানুয়ারি, ২০২০- উহান সি ফুড হোলসেল মার্কেটের ৪০ জনের মতো কর্মী অসুস্থ হবে পড়েছে। সেই মার্কেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
৫ জানুয়ারি- নতুন রোগের ভাইরাস যে ২০০২-৩ সালের সার্স ভাইরাস নয়, সে কথা চিনা ডাক্তাররা জানিয়েছেন।
৭ জানুয়ারি- চিন জানিয়েছে এই নতুন ভাইরাস করোনা ভাইরাস পরিবারের একজন। এর নাম দেওয়া হয়েছে 2019-nCoV.
১১ জানুয়ারি- করোনায় প্রথম মৃত্যু চিনে। মারা গেলেন ৬১ বছরের এক বৃদ্ধ। ইনি সি ফুড মার্কেট থেকে কিছু জিনিস কিনেছিলেন।
১৩ জানুয়ারি- থাইল্যান্ডে এক নারী করোনা আক্রান্ত। চিনের বাইরে এই প্রথম। এ খবর দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা । এই নারী উহান থেকে ফিরেছিলেন।
১৬ জানুয়ারি- জাপানে উহান প্রত্যাগত এক ব্যক্তির করোনা ধরা পড়ে।
১৭ জানুয়ারি- করোনায় দ্বিতীয় মৃত্যু উহানে। নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দঃ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান ও আমেরিকায় করোনা ছড়িয়ে পড়ছে বলে সংবাদ।
২০ জানুয়ারি- চিনে করোনায় তৃতীয় মৃত্যু। রোগটিতে সংক্রমিত হয়েছে ২০০ মানুষ। হুবেইএর বাইরে বেজিং, সাংহাই, শেনজেনে ছড়িয়ে পড়েছে রোগ। লক্ষ লক্ষ লোকের সংক্রমণের আশংকা করা হচ্ছে লুনার নিউ ইয়ার হলিডের জন্য। এক চিনা বিশেষজ্ঞ বলেছেন রোগটি মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হচ্ছে। ওয়াশিংটনে এক ৩৫ বছরের মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। চিনের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল থেকে যে সব বিমান আসে সেগুলি পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এশীয় দেশগুলি।
২২ জানুয়ারি- চিনে করোনায় মৃত্যু ১৭ জনের, আক্রান্ত ৫৫০। উহান থেকে আসা বিমানযাত্রীদের পরীক্ষা শুরু করে ইউরোপীয় বিমান বন্দরগুলি।
২৩ জানুয়ারি- উহান, জিয়ান্ডা ও শিবি শহরে কোয়ারেন্টাইন ঘোষণা। বন্ধ বিমান পরিষেবা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানালেন আর্ন্তজাতিক ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কারণ নেই।
২৪ জানুয়ারি- চিনে মৃত্যু ২৬, আক্রান্ত ৮৩০। হুবেইএর ১৩ টি শহর লকডাউন। সাংহাই ডিজনিল্যান্ডসহ বিনোদনকেন্দ্রগুলি বন্ধ।
২৫ জানুয়ারি- হুবেইএর আরও ৫টি শহরে লকডাইন ঘোষণা। চিনের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করল হংকং।
২৬ জানুয়ারি- চিনে মৃত্যু ২৬, আক্রান্ত ২০০০। আমেরিকা, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, জাপান, দঃ কোরিয়ায় বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।
২৭ জানুয়ারি- চিনে মৃত্যু ১০৬ (এর মধ্যে শুধু হুবেইতে ১০০), আক্রান্ত ৪৫১৫ জন।
২৮ জানুয়ারি- চিনের প্রেসিডেন্ট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডাইরেক্টর জেনারেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চিনে পর্যবেক্ষক দল পাঠাবেন।
২৯ জানুয়ারি- করোনা ভাইরসের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য হোয়াইট হাউসের টাস্ক ফোর্স গঠনের ঘোষণা।
৩০ জানুয়ারি- চিনে মৃত্যু ১৭০, আক্রান্ত ৭৭১১। আমেরিকা, ভারত. ফিলিপিনসে ১ জন করে আক্রান্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করল।
৩১ জানুয়ারি- চিনে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দশ হাজার। রাশিয়া, স্পেন, সুইডেন, ইংল্যান্ডে প্রথম আক্রান্তের সংবাদ। ১৪ দিনের মধ্যে যে সব বিদেশি চিনে গেছেন, তাঁদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করল আমেরিকা।
১ ফেব্রুয়ারি- চিনে মৃত্যু ২৫৯, আক্রান্ত ১১৭৯১। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, জাপান, সিঙ্গাপুর ও আমেরিকায় নতুন আক্রান্তের সংবাদ।
২ ফেব্রুয়ারি- চিনের বাইরে ফিলিপিনসে প্রথম মৃত্যু । তিনি উহান থেকে ফিরেছিলেন।
৪ ফেব্রুয়ারি- চিনে মৃত্যু ৪২৫, আক্রান্ত ২০৪৩৮ । হংকং এ একজনের মৃত্যু। উহান থেকে আসা বেলজিয়ামে একজন আক্রান্ত। জাপান জানাল ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজের ৩৭০০ যাত্রী করোনা আক্রান্ত।
৫ ফেব্রুয়ারি- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাল করোনায় আক্রান্তদের সঠিক চিকিৎসাপদ্ধতি অজানা।
৬ ফেব্রুয়ারি- ইউরোপে মৃত্যু ৩০। মালয়েশিয়া মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের কথা জানাল।
৭ ফেব্রুয়ারি- চিনে মৃত্যু ৬৩৬, আক্রান্ত ৩১১৬১। রোগটি প্যাঙ্গোলিন থেকে সংক্রমিত হয়েছে বলে চিনের ধারনা । চিনের যে ডাক্তার প্রথম করোনা সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন, সেই লি ওয়েনলিয়াংএর মৃত্যু। কোয়ারেন্টাইন না মানলে কারারুদ্ধ হতে হবে বলে জানিয়ে দিল হংকং।
৮ ফেব্রুয়ারি- চিনে এক আমেরিকান ও এক জাপানির মৃত্যু।
৯ ফেব্রুয়ারি- চিনে মৃত্যু ৮১১। এ সংখ্যা পূর্ববর্তী সার্সের মৃত্যুর সংখ্যাকে ছাষিয়ে গেল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যবেক্ষক দল এলেন চিনে।
১০ ফেব্রুয়ারি- চিনে মৃত্যু ৯০৮, আক্রান্ত ৪০১৭১ । মহামারীর আবির্ভাবের পর চিনের প্রেসিডেন্ট প্রথম প্রকাশ্যে এলেন। পরিদর্শন করলেন হাসপাতাল, করোনা যুদ্ধে অটুট রাখতে বললেন মনোবল।
১১ ফেব্রুয়ারি- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাসের নাম দিল কোভিদ-১৯। চিনে মৃত্যু ১০১৬, আক্রান্ত ৪২৬৩৮।
১৩ ফেব্রুয়ারি- উঃ কোরিয়া সমস্ত বিদেশি ও অন্যান্য পর্যটকদের ১ মাস কোয়ারেন্টাইনে রাখার সিদ্ধান্ত নিল। চিনে একদিনে প্রায় ৩০০ মৃত্যু, আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ল প্রায় ১৮ হাজার। জাপানে প্রথম মৃত্যু।
১৪ ফেব্রুয়ারি- ফ্রান্সে প্রথম মৃত্যু। চিনে আকদিনে ১২১ জনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত হল ১৪০০ জন।
১৫ ফেব্রুয়ারি- জাপানের বন্দরে আটকে থাকা জাহাজ থেকে আমেরিকা তাদের নাগরিকদের বাইরে নিয়ে এল।
১৬ ফেব্রুয়ারি- তাইওয়ানে ৬০ বছরের এক ট্যাক্সি ড্রাইভারের মৃত্যু। চিনে মোট মৃত্যু ১৬৬৫, আক্রান্ত ৬৮৫০০।
১৭ ফেব্রুয়ারি- জাপানে ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজের ৯৯ যাত্রী আক্রান্ত।
১৮ ফেব্রুয়ারি- এই প্রথম চিনে একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ২০০০-এর কম হল। রাশিয়ায় চিনা নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হবে ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে।
১৯ ফেব্রুয়ারি- ইরানে ২ মৃত্যু।
২০ ফেব্রুয়ারি- চিনে প্রাত্যহিক সংক্রমণের হার কমল। দঃ কোরিয়ায় প্রথম মৃত্যু ল
২১ ফেব্রুয়ারি- দঃ কোরিয়ায় দ্বিতীয় মৃত্যু। আক্রান্ত হল নতুন ১০০ জন। ইতালিতে আক্রান্ত ৬ জন, ইস্রায়েলে জাহাজ থেকে নামা এক নারী আক্রান্ত।
২২ ফেব্রুয়ারি- দঃ কোরিয়ায় একদিনে আক্রান্ত ২২৯ জন। ইতালিতে ২ ও ইরানে ৫ জনের মৃত্যু। চিনে নতুন সংক্রমণ মাত্র ৩৯৭ জনের।
২৩ ফেব্রুয়ারি- ইতালিতে তৃতীয় মৃত্যু। বহু দেশ ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করল।
২৪ ফেব্রুয়ারি-কুয়েত, বাহরিন, ইরাক, আফগানিস্তান, ওমেনে প্রথম সংক্রমণ। দঃ কোরিয়াব আক্রান্ত ৮৩৩, মৃত্যু ৭। ইতালিতে সপ্তম মৃত্যু।
২৫ ফেব্রুয়ারি- ইরানের ডেপুটি স্বাস্থ্যমন্ত্রী আক্রান্ত। দঃ কোরিয়ায় আক্রান্ত ৯৭৭, মৃত্যু ২৮৯ । চিনে নতুন সংক্রমণ ৫১৮, মৃত্যু ৭১।
২৬ ফেব্রুয়ারি- বিশ্বে আক্রান্ত ৮০০০০, মৃত্যু ২৮০০। নরওয়ে, রোমানিয়া, গ্রিস, জর্জিয়া, পাকিস্তান, উঃ ম্যাসিডোনিয়া, ব্রাজিলে নতুন সংক্রমণের সংবাদ।
২৭ ফেব্রুয়ারি- ইতালিতে আক্রান্ত ৬৫০, মৃত্যু ১৭। এস্তোনিয়া, ডেনমার্ক, উঃ আয়ার্ল্যান্ড, নেদারল্যান্ডে সংক্রমণের সংবাদ। ২৮ ফেব্রুয়ারি-লিথুয়ানিয়া, ওয়েলসে সংক্রমণের সংবাদ। নেদারল্যান্ড ও জর্জিয়ায় দ্বিতীয় সংক্রমণ।
২৯ ফেব্রুয়ারি- দঃ কোরিয়ায় একদিনে ৮১৩ জন আক্রান্ত । সেখানে মোট আক্রান্ত ৩১৫০, মৃত্যু ১৭। ইরানে একদিনে আক্রান্ত ৫৯৩, মৃত্যু ৪৩। কাতারে প্রথম সংক্রমণ।
২ মার্চ- সৌদি আরব, তিউনিসিয়া, জর্ডানে সংক্রমণ।
৩ মার্চ- ইরানে ৭৭ জনের ও ইতালিতে ৭৭ জনের মৃত্যু।
৭ মার্চ- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে সংক্রমণ হয়েছে ৯০টি দেশে, আক্রান্ত ১০২০০০, মৃত্যু –৩৫০০ । ইরানে আক্রান্ত ৪৭৪৭, মৃত্যু ১২৪। চিনে নতুন সংক্রমণ মাত্র ৯৯ জনের।
৮ মার্চ- সৌদি আরব কোয়াটিফের পূর্বাঞ্চলে লক ডাউন ঘোষণা করল, বনধ করে দেওয়া হল সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইতালির মোম্বার্ডি ও অন্য ১৪ টি অঞ্চলে কড়াকড়ি করা হল কোয়ারেন্টাইন।
৯ মার্চ- সংক্রমণের ভয়ে ইরানে ৭০ হাজার বন্দিকে মুক্ত করা হল। জার্মানিতে আক্রান্ত ১১০০, মৃত ২।
১০ মার্চ- একদিনে ইরানে মৃত ৫৪, ইতালিতে ১৬৮ জন। লেবানন ও মরোক্কোয় প্রথম মৃত্যু। ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক আফ কঙ্গো,পানামা, মঙ্গোলিয়ায় সংক্রমণের সংবাদ।
১১ মার্চ—বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে অতিমারী ঘোষণা করল। কাতারে একদিনে সংক্রমণ ২৪ থেকে হল ২৬২।
১২ মার্চ- বিশ্বে আক্রান্ত ১২৬১০০, মৃত ৪৬০০। চিনে একদিনে মাত্র ১৫ টি নতুন সংক্রমণের সংবাদ।
১৫ মার্চ- একদিনে স্পেনে আক্রান্ত ২০০০, মৃত ১০০। অস্ট্রিয়া ও ফিলিপাইন সংক্রমণ রুখতে কড়াকড়ি ব্যবস্থা গৌহণ করল।
১৬ মার্চ- সংক্রমণ বাড়ছে বলে নিউইয়র্কের মেয়র সমসগত বিনোদন কেন্দ্র বন্ধের নির্দেশ দিলেন। ইরানে আক্রান্ত ১৪৯৯১, মৃত ৮৫৩। বাহরিনে প্রথম মৃত্যু।
১৭ মার্চ- ইতালিতে আক্রান্ত ৩১৫০৬, মৃত ২৫০৩।
১৮ মার্চ- অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ‘হিউম্যান বায়োসিকিওরিটি এর্মাজেন্সি’ ঘোষণা করলেন। ইতালিতে আক্রান্ত ৩৫৭১৩, মৃত ২৯৭৮। এই প্রথম চিনে কোন নতুন সংক্রমণের সংবাদ নেই।
করোনার দিনপঞ্জি যখন শেষ হল তখন রাত দেড়টা। চারদিক শুনশান। আমি ঘাবড়ে ঘোড়া হয়ে গেছি। করোনার পদসঞ্চারের খোঁজ-খবর রাখি নি বলে লজ্জা করছে। আমাদের দেশে তো এখনও তেমন অবস্থা হয় নি, তাই উদাসীন ছিলাম। কিন্তু নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়? বিশ্বের শতাধিক দেশে যে পদসঞ্চার করছে, সে আমাদের দেশকে বাদ দেবে কেন?
মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের কথা বলা হচ্ছে। এর মধ্যে বিদেশ থেকে বহু মানুষ আমাদের দেশে এসেছেন। তাঁদের থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। কি হবে তখন? হতাশার সাগরে ডুবে যেতে যেতে বাঁচার একটা খড়-কুটো পেয়ে গেলাম। প্লেগ, ইবোলা, আ্যনথ্রাক্স, সার্স. মার্স- কত মহামারী হয়েছে পৃথিবীতে, বহু মানুষ মরেছে, কিন্তু মানব জাতি তো বিনষ্ট হয় নি ।গুনগুন করে আওড়াতে লাগলাম সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা: মন্বন্তরে মরিনি আমরা, মারী নিয়ে ঘর করি। তা না হয় হল, কিন্তু আমি বা আমার স্ত্রী বা আমার নিকট আত্মীয় যদি করোনার কবলে পড়ে তাহলে? মৃত্যুর মুখোমুখি হলে স্বার্থচিন্তাই প্রধান হয়ে ওঠে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তারিনীমাঝি’ গল্পটা চোখের সামনে ভেসে উঠল।
[ক্রমশ]
গবেষক