‘বাইশে শ্রাবণ’-এর যে সিকোয়েল আসতে চলেছে, বাজারে সেই খবর অনেক দিন ধরেই রয়েছে। কিন্তু এটি সিকোয়েল নয়, স্পিন-অফ। ছবি মুক্তিও পেল ২৩ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার, এরাজ্যে ছুটির দিনটি মাথায় রেখে। দর্শক ছবির শুরুতেই খুনখারাপি পাবেন (থ্রিলারে যা দর্শকের প্রত্যাশা থাকে), ‘বাইশে শ্রাবণ’-এর সেই প্রেমিক পুলিশকেও (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) পাবেন দর্শক যে কিনা অমৃতার (রাইমা সেন) প্রিয় ডালভাত। সাড়ে আট বছর আগেকার ছবির সুখস্মৃতি নিয়ে দেখতে শুরু করবেন। নতুন যুগের তারকা অনির্বাণ, ঋতব্রতকে দেখে মন ভাল হবে, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে মিস করবেন আর তার পর… মনে ও মগজে ঝিলমিল লেগে যাবে।
সমালোচনা মানেই যে তুলোধনা করতে বসতে হবে তেমনটা একেবারেই নয়। কিন্তু ‘দ্বিতীয় পুরুষ’-কে ঠিক জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালকের ছবি বলে মনে হয় না। অন্তত ‘বাইশে শ্রাবণ’-এর পরিচালকের ছবি বলে তো একেবারেই নয়। ‘বাইশে শ্রাবণ’ একটি থ্রিলার ঠিকই কিন্তু সমান্তরালে একটা সম্পর্কের গল্প ছিল। আসলে অপরাধপ্রবণতা তো আকাশ থেকে পড়ে না বা অপরাধীরাও অন্য গ্রহের জীব নয়। ডাল-ভাত-বিরিয়ানির দৈনন্দিনতার ভিতরেই অপরাধ ও অপরাধীর জন্ম। ‘বাইশে শ্রাবণ’ তাই কয়েকটি জায়গায় অতিনাটকীয় বা অতিসরলীকরণে দুষ্ট হলেও থ্রিলার হিসেবে ভাল।
’বাইশে শ্রাবণ’-এ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্রটি একটি বিরোধাভাস ছিল। অপরাধ ও অপরাধদমন দুটিকেই ধারণ করেছিল প্রবীর রায়চৌধুরী। দুটির জন্যই তার কাছে লজিক ছিল। আর অদ্ভুত একটি দৃষ্টিকোণের বিশ্লেষণে দুটি লজিককে এক প্লেনে এনে ফেলে ওই চরিত্র। সেই দৃষ্টিকোণ এবং লজিকের গ্রহণযোগ্যতা ছিল। ‘দ্বিতীয় পুরুষ’-এ গল্পকে যেখানে নিয়ে গিয়ে ফেলেছেন পরিচালক, তাতে লজিক ঘেঁটে তো গিয়েইছে, মগজেও ঝিলমিল লেগে গিয়েছে। সেটা অবশ্য সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের অধিকাংশ ছবিরই একটা বৈশিষ্ট্য।
প্রথমার্ধে দর্শক ‘ধরতে পারবেন না’ যে দ্বিতীয়ার্ধে কী অসাধারণ ‘ছানাবড়া’-মুহূর্ত অপেক্ষা করছে। থ্রিলারের সেটাই মজা! অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটবে ক্লাইম্যাক্সে। আবার থ্রিলার যাঁরা ভালবাসেন তাঁরা এই অপ্রত্যাশিতকে প্রত্যাশা করাতে একটা মজা পান। সব প্রেক্ষাগৃহেই শোনা যায়– ‘কী বলেছিলাম না, এটাই হবে।’ এই ছবিতে পরিচালক-চিত্রনাট্যকার দর্শককে সেই খেলা খেলতে দেন ঠিকই কিন্তু তাঁর যেন নিজেরই খেলা থেকে মন উঠে যায়। অনেকটা লিখতে লিখতে উদাস হয়ে যাওয়ার মতো, তাই গল্প কিছুক্ষণ পরে তালকানা হয়ে যায়। অথবা কাহানি মে টুইস্ট, তার উপর আরও একটা টুইস্ট… টুইস্ট নাম্বার থ্রি করতে গিয়ে সম্ভবত বিষয়টা ঘেঁটে যায়।
এই ছবির সবচেয়ে বড় প্রাপ্য হল ‘আর একটি চরিত্রে’ অনির্বাণ ভট্টাচার্য। ‘খোকা’-র লুকসেটিং ইতিমধ্যেই আলোচিত বিষয়। তার বেগুনী চুলও। এছাড়া প্রাপ্য হল ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় ও সোহম মিত্রের অভিনয়, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, অনুপম রায়ের সেই বিখ্যাত গানের পুনর্নবীকরণ এবং টুকটাক ‘বাইশে শ্রাবণ’ নস্টালজিয়া। বাকিটা না হয়েছে একটি ঠিকঠাক রোমহর্ষক শ্লাশার, না হয়েছে একটা সম্পর্কের দৃষ্টিকোণ থেকে অপরাধের গল্প। তাও পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় তাঁর কাজটুকু করে গিয়েছেন, ব্রাউনি পয়েন্টস অনির্বাণ নিয়ে গেলেও।
পরিচালক এখানে আইন, অপরাধ ও অপরাধীর সংশোধনের যে থিওরিটি খাড়া করেছেন, সেটি খুবই উপর-উপর এবং তার থেকেও বড় কথা, সাইকিয়াট্রির ধোঁয়াশা দিকটির সুবিধা নিয়ে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন চমক রাখার জন্য। সেটা অবশ্য বহু পরিচালকই যুগ যুগ ধরে সিনেমায় করে থাকেন। তবে সেখানেও একটা লজিকের গোলমাল আছে। চিত্রনাট্য যেমনই হোক, সিনেম্যাটোগ্রাফার সৌমিক হালদার তাঁর কাজ করেছেন। যদিও এই হলদেটে আধা-অন্ধকারটা বাংলা থ্রিলার ছবিতে বড্ড পরিচিত।