২৯ ফেব্রুয়ারির কত কথা
বছরের আর এগারোটা মাসের চাইতে ফেব্রুয়ারী যেন একটু আলাদা। আর এর কারণ চার বছর পরপর ঘুরে ফিরে নতুন করে আসা ছোট্ট একটা দিন। ফেব্রুয়ারীর ২৯ তম দিন! যাকে মানুষ নাম দিয়েছে অধিবর্ষ। অনেকটা আগ্রহ আর উত্তেজনা নিয়ে ফেব্রুয়ারীর ২৯ তারিখের জন্যে অপেক্ষা করলেও আমাদের বেশিরভাগের জ্ঞান কিন্তু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু আপনি কি জানেন যে খুব গড়পরতা এই কয়েকটি তথ্য ছাড়াও ফেব্রুয়ারীর এই ২৯ তারিখ, অর্থাৎ লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষকে ঘিরে রয়েছে ছোটখাটো অনেক মজার ব্যাপার? চলুন আসতে যাওয়া অধিবর্ষের দিনটিকে সামনে রেখে জেনে নিই সেগুলোকে।
১. শুভ-অশুভের দিন
ফেব্রুয়ারীর ২৯ তারিখকে অনেকেই শুভদিন বলে মনে করে থাকেন। বিশেষ করে জ্যোতিষীরা তো সবসময়েই বেশ আনন্দের সাথে স্বাগতম জানান এ দিনটিকে। এই দিনে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের ভেতরে অন্যরকম এক শক্তি আর মেধা থাকে বলে মনে করেন তারা। তবে এটা কেবল কিছু মানুষেরই ভাবনা। পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই এই দিনটিকে অশুভ দিন বলে ভাবতে ভালোবাসেন। আর তাই এ দিনে জন্মগ্রহনকারীদেরকে অপয়া তো মনে করেনই তারা, বিয়ে সংক্রান্ত যেকোন কাজেও এ দিনটিকে গোনার বাইরে রাখেন। এই যেমন গ্রীসের কথাই ধরুন না! কখনোই লিপ ইয়ারে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারীর ২৯ তারিখে বিয়ে করতে চায় না তারা।
২. রোগভরা দিন
অধিবর্ষ সম্পর্কে অনেক কিছুই হয়তো আপনি জানেন, কিন্তু এটা কি জানেন যে, ফেব্রুয়ারীর ২৯ তারিখকে বিশ্বের যতরকম দূর্লভ রোগ-ব্যাধি আছে সেটার প্রতিকী দিবস বলে পালন করা হয়?
৩. হাতমোজা উপহার
২৯ ফেব্রুয়ারীর আরেকটি মজার ব্যাপার হচ্ছে এই দিনের সাথে জড়িত একটি প্রথা। মূলত ডাচ আর গ্রীকদের ভেতরেই বেশি চালু রয়েছে এটি। আর প্রথাটি হচ্ছে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া। তবে ছেলেরা নয়, বরং মেয়েরাই এ দিনে প্রস্তাব দেয়। ছেলে হ্যাঁ বললে তো হয়েই গেল, তবে উত্তরটা যদি হয় না তাহলে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয় ছেলেকে। মোট ১২ টি স্কার্ট বা হাতমোজা দিতে হয় ক্ষমতাপ্রার্থনাস্বরূপ। মূলত, বলা হয় যে নিজের হাতের বিয়ের আংটি পরার আঙ্গুলকে ঢাকতেই এই হাতমোজা দিতে হয় ছেলেদেরকে।
৪. অধিবর্ষের নির্মাতা
আমরা নাহয় এখন ফেব্রুয়ারীর ২৯ তারিখকে লিপ ইয়ার বলে পালন করি। কিন্তু সবসময়েই কি দিনপঞ্জিকায় একটা দিন কমই পেয়ে এসেছে ফেব্রুয়ারী? না! আদতে এর আগে ৩৫৫ দিনে এক বছর পালন করত রোমানরা। তবে এতে খানিকটা ঝামেলা হয়ে যাওয়ায় ৪৫ বিসিতে জুলিয়াস সীজার এই অদল বদল টি করেন আর বছরকে নিয়ে যান ৩৬৫ দিনে। তবে এরপরে ব্যাপারটাকে একেবারে বর্তমান সময়ের রূপ দেন অগাস্টাস। জুলিয়াস যেমন নিজের নামে জুলাইয়ের নামকরণ করেছিলেন, অগাস্টাসও নিজের নামানুসারে অগাস্ট মাসকে বেছে নেন। কিন্তু অগাস্ট মাসে তখন মাত্র ৩০ দিন ছিল। যেটা কিনা জুলাইয়ের চাইতে ১ দিন কম হয়ে যায়। নিজের মানকে জুলিয়া সীজারের বরাবর করে তুলে ধরতেই শেষ অব্দি ফেব্রুয়ারীর কাছ থেকে একটা দিন নিয়ে নেন অগাস্টাস সেসময়। তৈরী হয় লিপ ইয়ার!
৫. বংশগত জন্মদিন
কেউ একজন লিপ ইয়ারে জন্ম নিতেই পারেন, তাই বলে তার বাবা, এমনকি তারো বাবা! ঠিক এমনটাই একের পর এক পরিবারের ধারা বজায় রেখে আয়ারল্যান্ড ও ইউকের কেয়োগ পরিবার নিজেদের বংশধরদের জন্ম দিয়ে চলেছেন লিপ ইয়ারে। শুরুটা পিটার এ্যান্থনী কেয়োগের মাধ্যমে হয়েছিল। ১৯৪০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারী জন্মান তিনি। তার সন্তান পিটার এরিকের জন্ম হয় ১৯৬৪ আলের লিপ ইয়ারে। এমনকি তার নাতি বেথানি ওয়েলদের জন্মও হয় ১৯৯৬ সালের একই দিনে!
৬.প্রায়োগিকভাবে কী ৪ বছর পর পর লিপ ইয়ার
২০০০ সাল লিপ ইয়ার ছিল। কিন্তু ১৭০০ সাল, ১৮০০ সাল, ১৯০০ সাল লিপ ইয়ার ছিল না। মূলত সেই সকল সাল লিপ ইয়ার যা ৪ দ্বারা বিভাজ্য, ব্যতিক্রম সেই সকল সাল যারা ১০০ দ্বারা বিভাজ্য কিন্তু ৪০০ দ্বারা বিভাজ্য নয়। শতক বছরগুলোতে এই নিয়ম করা হয়েছে যেন প্রতি চার বছর পর পর অতিরিক্ত একদিন নির্ধারণ করা যায়।
৭.জুলিয়াস সিজার বনাম পোপ গ্রেগরি
রোমান ক্যালেন্ডার ছিল ৩৫৫ দিনের এবং দুই বছর পর পর অতিরিক্ত ২২ দিন যোগ করা ছিল। জুলিয়াস সিজার সম্রাট হওয়ার পর সে তার জ্যোতিষী সসিগেনেসকে এই ক্যালেন্ডার সংস্করণ করতে আদেশ করেন। সসিগেনেস ৩৬৫ দিনে বছর এর সিধান্ত নেন ও চার বছর পর পর অতিরিক্ত এক দিন হিসাবে ফেব্রুয়ারি ২৯ দিনে ঠিক করেন।
প্রকৃত পৃথিবী বছর ৩৬৫.২৫ দিন দীর্ঘ নয়। তাই পোপ গ্রেগরী XIII এর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ৪০০ বছর পর পর ৩ দিন কমিয়ে ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু করেন।
গাণিতিক নিয়মে এই পদ্ধতি কাজ করলেও ১০,০০০ বছর পর এই পদ্ধতি নিয়ে আবার নতুন করে ভাবতে হবে।
৮.অন্যান্য কালেন্ডারে লিপ ইয়ার
আধুনিক ইরানি ক্যালেন্ডার সোলার ক্যালেন্ডার অনুসারে করা হয়েছে, এখানেও ৮ লিপ ডে যুক্ত করা হয়েছে যা ৩৩ বছর পর পর চক্রাকারে আসে।
ইন্ডিয়ান জাতীয় ক্যালেন্ডার ও বংলাদেশের বাংলা ক্যালেন্ডারেও লিপ ইয়ার যুক্ত করে গ্রেগরি ক্যালেন্ডারের মতই করা হয়েছে।
৯.লিপ ইয়ার-এ জন্ম হলে
হিসাব অনুযায়ী লিপ ইয়ারে জন্ম হওয়ার সম্ভাব্যতা প্রতি ১৪৬১ জনের মধ্যে এক জন। যারা লিপ ইয়ারে জন্মগ্রহণ করে তাদেরকে লিপ্লিংস বা লিপারস বলা হয়ে থাকে। লিপ ইয়ারে জন্মগ্রহণ করা অনেকেই ফেব্রুয়ারি ২৮ বা মার্চ ১ এ জন্মদিন পালন করে থাকেন।
অনেকেই বলেন ২৯ ফেব্রুয়ারি মধ্য দিনের আগে জন্ম নিয়ে থাকলে ২৮ ফেব্রুয়ারি জন্মদিন পালন করা যাবে, আর যদি দুপুরের পর জন্মগ্রহণ করেন তবে মার্চ ১ এ জন্মদিন পালন করা যাবে। পৃথিবীতে প্রায় ৪.২ মিলিয়ন মানুষ রয়েছে জাদের জন্ম ২৯ ফেব্রুয়ারি।