আপনি আমায় বিরক্ত করলে, ফের ডাকাডাকি করলে, লোক জনকে ডাকতে বাধ্য হবো।পেয়েছেন টা কি?তখন থেকে একজন মেয়ের পেছনে ধাওয়া করে আসছেন।এই বলে, দীপশিখা হনহন করে সামনে এগিয়ে গেলো।
লোকটি ষ্টেশনে নামবার পর থেকেই দীপশিখার পেছনে।দেখে কিন্তু পাগল বা বদমাশ ধরনের তাও মনে হচ্ছে না। ভদ্রলোক গোছের চেহারা,খুব দামী পোশাক না পড়লেও যা পড়েছে তা সুবিন্যস্ত।ফিটফাট।চুল, দাঁড়ি। সযত্নে আঁচড়ানো এবং কামানো।তারপর দীপশিখা আরও একটু তাকিয়ে চমকে গেলো।
দীপশিখার স্কুল এই ষ্টেশন চত্বর থেকে আধ কিলোমিটার হেঁটে বাস ধরে কিলোমিটার সাতেক দুরে। ছোট্টো ষ্টেশন, সারাদিন আপ ডাউন মিলে গোটা দশেক লোকাল ট্রেন দাঁড়ায়।হাতে গোনা দুতিনটে দোকান আর দু চারটি রিক্সা, ইদানীং একটা দুটো টোটোর দেখা মেলে, দীপশিখা ঐ আধ কিলোমিটার হেঁটেই যায়। একসাথেই দশটার লোকাল ট্রেনে নেমেছে।
কাঁধের ব্যাগ দেখে প্রথমে নতুন শিক্ষক ভেবেছিলো। আশপাশের কোনো স্কুলে জয়েন্ট করেছে। একবার চোখাচুখি,পরের মূহুর্তে সামনে এসে হাজির। জিজ্ঞেস করলেন,তুমি প্রীতিলতা না?সেই ভাব জমানোর পুরানো কায়দা,মনে মনে ভাবলো।
না,আমি প্রীতিলতা নই। দীপশিখা বললেন।
না, তুমি আমায় ফাঁকি দিচ্ছো প্রীতিলতা। তোমার সাথে আজ এইভাবে দেখা হবে স্বপ্নেও ভাবিনি।তুমি কেমন আছো?এবারে দীপশিখা শুধু চমকালো না,বেশ ঘাবড়ে গেলো।
দেখুন প্রথমত;আমি প্রীতিলতা নই। দ্বিতীয়ত আপনাকে তো আমি চিনিই না।
বলেই দ্রুত পা চালালেন বাস স্ট্যান্ডের দিকে।বলা নেই,কওয়া নেই,আপদ এসে হাজির।এক একটা দিন সকাল থেকেই এরকম শুরু হয়।তবে, দীপশিখাও অতো সিদেসাধা মেয়ে নয় যে ঘাবড়ে যাবে।এসব সামাল দিতে জানে।
পেছনে আর খেয়াল করেনি। আবার সেই অমায়িক কন্ঠে ডাক,শুনছেন।এবার ঘাড়ের কাছে।আপনি কেন প্রীতিলতা হয়েও স্বীকার করছেন না,আপনি প্রীতিলতা?আমি এতোটা ভুল করতে পারিনা।একদম না।
দীপশিখা তারপর যারপরনাই বলবার পর ভদ্রলোক চুপচাপ দাঁড়িয়ে গেলেন।ও চলতে শুরু করলো। কিছুটা দূর যাবার পর ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো,উনি অবাক বিস্ময়ে ঠাঁয় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দীপশিখাকে দেখছেন।একটু কষ্ট লাগলো দীপশিখার মনে।
ফেসবুকে দীপশিখা নাম ভাঁড়িয়ে তো ঐ নামেই লেখালেখি করে। প্রোফাইল নেম তো প্রীতিলতাই। পিকচারটা কিন্তু তার। সদ্য আপডেটেড।গতরাতেও কত কি নিয়ে কথা হলো। সাহিত্য, রাজনীতি। ফেভারিট বন্ধু তালিকায় উনি একজন।বাসে বসে দীপশিখার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ফেসবুকের ঐ বন্ধুর জন্য ভেতরে ভেতরে কেমন যেন করে উঠলো।স্বীকার করলে কি এমন ক্ষতি হতো!
একটা সময় অবধি সায়েন্সের ছাত্র।দূরসঞ্চার বিভাগে কর্মজীবন শুরু টেলিগ্রাফিস্ট হিসেবে। জুনিয়র ইন্জিনিয়ার পদেও কিছু বছর। বর্তমানে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থায় (ভারত সরকারের) Accounts Officer হিসেবে কর্মরত।জীবন ও জীবিকার ভাঙ্গাগড়া অনেক দেখেছি।আমার ভেতরে তাই বয়ে চলে সাহিত্য নদীর ধারা অনবরত। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত অনেক লেখা।এই লেখার টানেই কবিতাকে নিয়ে চলে যাবো নগ্ন নির্জন দ্বীপে—এই আমার শখ।জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা শিলিগুড়ি শহরে, বর্তমান কর্মস্থল কলকাতা।