আজ ২২ ফেব্রুয়ারি কবি ও সাংবাদিক হেনরী স্বপনের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
আঁচলে জড়াবে ভোর
বাইরে এখনো চাঁদকে সজাগ রেখেছি ভুলিয়ে,
ঘরের আলোটা এক্ষুনি নিভিয়ে দিতে হবে—
ফিনাইল জলে
ভিজিয়ে রাখতে হবে ছোলা আর কাজু বাদামের শাঁস
ফুলে উঠবে স্তনের বোঁটা বুকের পাঁজরে
ভরে উঠবে বাগানবিলাস আনছান করা রজনীগন্ধার ডালপালা
ছড়াবে শাড়ির হোলিখেলা—
আঁচলে জড়াবে ভোর !
স্বপ্ন দেখবে হাঙর সাঁতার কাটছে হাইওয়ের জোছনায় ড্রাইভিং কোর্স…।
উড়ালপুলের ডানা
উড়াল পুলের ডানা খসে পড়ল পালক খুলে,
লোহার গায়ে যে পেরেক ঠুকেছ ঘাসের
বুকে!
সেখানে রক্তের ফোয়ারায় মৃত্যুর যন্ত্রণা
ঝরছিল—
চাপা পড়ে থাকা বহু প্রজাপতি উড়ছিল ডানা ভাঙা
কল্পনা ছাড়াই, ভাসছিল তরী…
বহু মানুষের লাশ টেনে তুলতে হয়েছে
থেঁতলে থাকা নিশ্চুপ মায়ের বুকের শিশুকে—
দেখে, ন্যুব্জ কাতর দেখেছি, কলকাতার ক্রুশবিদ্ধ যিশুকে।
কোলাহল হবে
কালোকে কালো বললে, কোলাহল হবে
সানগ্লাস ছাড়াই চোখের উপর চৈত্রের রোদ্দুর ছড়াবে,
দুর্ভিক্ষের গম খেয়ে আফ্রিকার মেয়েরা কৃষ্ণাঙ্গ
হয়েছে র্যাবের পোশাক খুলে…
বাঘের চামড়া গায়ে দিয়ে মিলিটারি
ক্যাম্পের সার্কাস খেলা হতো সূর্যমণি মেলার প্রাঙ্গণে
লোক সমাগম—
সকলে দাঁড়িয়ে রয়েছে নির্বাক, সকলের পাষাণ হৃদয়-মন…
তখনো পথের পাশে তড়পাচ্ছিল পোশা একটি কালো বেড়াল!
বৃষ্টিতে মেতেছো রাত
বৃষ্টিতে মেতেছো রাত, স্পর্শগুলি ভরে উঠেছিলো
দুলে ওঠা পেয়ারার ডালে;
খুলেছিলে পুষ্পদল মেলে অঞ্জলিতে রাখা
নিবিড় বাগান খুঁজে এসে—
সেই জঙ্ঘায় নুনের গন্ধ শুঁকে নিয়েছিলো তার
হূদয়ের পূর্ণিমা অঙ্গার…।
ফণীমনসার কাঁটা
প্রগাঢ় যুবতী খড় শুয়ে থাকা স্তূপের ভিতর
স্পর্শ করে রাখো … আগুন ঈশ্বর;
অন্ধের আঙুলে ফণীমনসার কাঁটা গেঁথে
চৈতন্যের ফোঁড় খাওয়া…
মেহেদি পাতার উপর ক্রমশ ছড়িয়েছো
তেলরঙে আঁকা পতঙ্গের নাচ …।
মুগ্ধতা দেখালে পবিত্র স্নানের জলে ভাসা বুকের উচ্ছ্বাস।
ভালোবেসে লেখা পদ্য
০১.
গোধূলি মেঘ, বিকেল জুড়ে আছে
আঁচল পেতে আকাশ ছিল কাছে।
মেঘ করেছে, মেঘের কালো মেয়ে
রাজার ঘোড়া আসবে ছুটে ধেয়ে।
সোনার কাঠি ছোঁয়ায় যদি মন
উঠুক কেঁপে ঢেউয়ের আলিঙ্গন।
০২.
বরখাস্ত কবি, চাকরিতে ছিল না তার মন
অধ্যাপক মানুষ কেন, লিখল নারীর স্তন!
চল্লিশ সাইজের ব্রা’গুলো কি, ছিল না তখন?
০৩.
খাতায় ভরা লেখা আর ছিল না তার আঁতলামি
গো-বেচারা সাত্ত্বিক কবি ছিলেন, লাবণ্যের স্বামী।
কে বলছে, কোন পাতালপুরীর রাজকন্যে
অভিসারে আসবে কেবল সেই কবির জন্যে…।
০৪.
অন্ধকারে লুকাও যদি শরীর ভরা গন্ধ
কামিজ রঙের চাঁদ কেন জ্বলজ্বলে
টের পাই যেন বুকের নদী টলমলে
শরীর জ্বরে কেঁপে ওঠা—কবিতার ছন্দ।
০৫.
হ্রদের কাছে মাছের লোভে সারস হয়ে এলে
ঘড়ির কাঁটা গলায় বেঁধে, সময় খুঁজতে গেলে।
হাত-ঘড়িটার সঙ্গে এত খোলামেলা ছুটে চলা
চ্ছলাচ্ছল নদীর সঙ্গে, বললে কথা বাড়িয়ে গলা।
০৬.
ঝুমকা জবায় ফুল ফুটলে সেই
ছবিটা আঁকি।
খাঁচায় পাখি একলা তখন করছে
ডাকাডাকি।
ক্যানভাসে প্রাণ ছড়িয়ে দেয়া রঙের
মাখামাখি।