| 20 এপ্রিল 2024
Categories
এই দিনে গল্প সাহিত্য

ভারতবর্ষ

আনুমানিক পঠনকাল: 10 মিনিট

ভয়ে আমি সিটিয়ে আছি, একটা বাসের আড়ালে। নিয়াজ কোথায়– কে জানে! চারিদিকে তুমুল হুল্লোট হচ্ছে। মুসকো মুসকো কয়েকটা লোক গরুখোঁজা খুঁজছে যে কথা বলতে বলতে, তাতে স্পষ্ট, খুঁজছে আমাদেরই। আমাকে আর নিয়াজকে। চেঁচাচ্ছে তারা, ‘গেল কই, চিপা চুতমারানির পো ডা, কই কই ঢ্যাঙা হারামির বাচ্চা ডা। হালা, পয়সা না দিয়া খাওয়ন।
জন্মের খাওয়া খাওয়ামুনে, আয় পুঙ্গির ভাইয়েরা!’ ‘চিপা’ মানে রোগা, আমি, ঢ্যাঙা অর্থাৎ লম্বা ওই নিয়াজ। পদ্মার ওপর ফেরিতে ১৮-২০টা বাস, ট্রাক, গাড়ি আর সেসবের ৫০০-৭০০ মানুষজন। ফেরির টঙে সার্চ লাইট ঘুরছে। সে আলো এড়িয়ে ভয়ে লুকিয়ে আছি। নির্ঘাৎ নিয়াজও লুকিয়ে আছে কোথাও! দৌলতদিয়া থেকে পদ্মা পেরিয়ে ওপারে আরিচা ঘাট যাচ্ছে মাঝরাতের ফেরি। ফেরির ওই টঙেই রেস্তোরাঁ। নিয়াজ আমাকে ওই রেস্তোরাঁতেই রাতের ভোজ খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিল।

বেনাপোল থেকে ঢাকা যাওয়ার বাসে এতক্ষণ যাকে দেখেছি, টাকাপয়সা আদৌ নেই, সে নৈশ ভোজ খাওয়াতে ডাকছে, কিন্তু কিন্তু বোধ হচ্ছিল আমার। আমারও যে পকেটে ততো বাংলাদেশি টাকা নেই। বাসভাড়া আর দুপুরের খাওয়া দাওয়ায় যথেষ্ট টাকা খরচ হয়ে গেছে। ডলার তো আর ফেরিতে ভাঙানো যাবে না। তাই আমি যেতে চাইছিলাম না নিয়াজের সঙ্গে টঙের রেস্তোরাঁয়। ‘আও তো, মেরা পহচান আদমি হ্যায় কান্টিন মে’– হাত ধরে টঙে ওঠার সিঁড়িতে টেনেছে সে। তারপর বসিয়েছে টেবিলে। নিজে সে চলে গিয়েছে কাউন্টারের সামনে, টেবিলে বসে থাকতে থাকতে দেখেছি রসুইঘরের ভেতরেও দু এক চক্কর ঘোরাঘুরি করে নিয়েছে সে। এরপর সে এসে টেবিলে আমার মুখোমুখি বসতেই প্লেটে কাটা পেঁয়াজ, নুন, কাঁচালঙ্কা, জলের গ্লাস আর ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের সঙ্গে সর্ষে ইলিশের বাটি একে একে এসে গেছে। দুজনের জন্যই। জমিয়েই খেয়েছি।

বেসিনে হাত ধুচ্ছি যখন, নিয়াজ ফের কাউন্টার, রসুইঘরে দু এক চক্কর ঘুরে আমার কাছে এসে পিঠে টোকা দিয়ে বলেছে ‘চল।’ আমার হাত ধরে একটু যেন হুড়হুড়িয়েই নেমে এসেছে নিচে। লোকজনের ভিড়ে আমাকে ঠেলে দিয়ে বলেছে, “যাও, ম্যায় আ রহা।’

তখনই আমি ওপরে হইচই শুনেছি। তারপর সিঁড়ি দিয়ে দুদ্দাম নেমে আসতে দেখেছি ক্রুদ্ধ চিৎকাররত রেস্তোরাঁর লোকজনদের ‘কাউয়ার বাচ্চা দুটা গেল কই? ট্যাহা না দিয়া পলাইসে! পুঙ্গির পুত! চুতমারানির পো!’ আমি লুকিয়ে পড়েছি ১০-১৫টা বাসের ফাঁকে, অন্ধকারে। নিয়াজ কোথায় কে জানে!

সেখান থেকেই ওই বিপদে, ওই দুঃসময়ে, দেখেছি বাস কোম্পানির লোকেরা ড্রাইভার, কন্ডাকটাররা আপন আপন বাসের যাত্রীদের বাঁচাতে এগিয়ে আসছেন। বাসে উঠে তল্লাশিতে বাধা দিচ্ছেন। ‘না, এই বাসে ওঠন যাইব না।’ সোহাগ পরিবহনের ড্রাইভার কন্ডাকটাররা বলছেন, ‘আমাগো যাত্রীরা ঘুমাইতাছেন। হ্যাগো ডিস্টাব করবেন না।’ ফাইভ স্টার পরিবহনের ড্রাইভার গেট আগলে দাঁড়িয়েছেন। বিআরটিসি সরকারি বাস, তার পুলিস গার্ডই দরজা আগলাচ্ছেন, “উহু কেউ ভিতরে যাবা না।’

ওই দেখে, প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে আমাদের বাস ফাইভ স্টার পরিবহনের যশোর ৬১৭২-এ আমি উঠে নিজের সিটে ঘুমের ভান করে চোখ বুজে বসে পড়ি। বসতেই পিঠে টোকা, নিয়াজ। চোখ বুজে, ঈষৎ হেসে, ফিস ফিস করে সে বলে, “ব্যাস, আউর ডর নেহি।’

এ-ই নিয়াজ। এবার একটু গোড়া থেকে বলি। ১৯৮৬। আগস্ট মাসের ভরা বর্ষাকালে বরিশালে যাচ্ছি দেশের বাড়ি গৈলা-ফুল্লশ্রী গ্রামটি দেখতে। তখনও বয়সে ছোকরা ছোকরা ভাবটি ছিল। উঠল বাই তো কটক যাইয়ের মতো বেরিয়ে পড়েছি। সরাসরি তখনও কলকাতা-ঢাকা বাস চলাচল শুরু হয়নি, মৈত্রী ট্রেন তো তখনও কাগজপত্রে।

বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্তে পাসপোর্ট ভিসা চেকিংয়ের পর ওপারে যশোর জেলার বেনাপোল। বেনাপোলে চেকিংয়ের পরই ফাইভস্টার পরিবহনের লোকজন খাতির করে ভ্যান রিকশা চড়িয়ে নিয়ে গেলেন বাস ডিপোয় তাঁদের অফিসে। জানালার ধারের সিটের টিকিট সঙ্গে সঙ্গেই। বেলা ১১টায় পৌঁছেছি। ওরা বললেন, নাইট কোচ, রাত ৮টায় বাস ছাড়বে। পরদিন ভোরে পৌঁছোবে ঢাকার গাবতলিতে। তা-ই সই। সারা দুপুর চক্কর দিলাম বেনাপোল গঞ্জটিতে। হোটেলে মুরগির মাংস দিয়ে ভাত খেলাম দুপুরে। একটা পুকুরে স্নান করে খুব আনন্দ হল। আমার মায়ের জেলার পুকুর। কী স্নেহমাখানো জল।

সন্ধেয় ফাইভ স্টার পরিবহনের অফিসে এসে দেখি ভারী গোলমাল হচ্ছে। ঢ্যাঙামতো একটি ছেলে, সে যুগের বিনোদ খান্না গোছের চেহারা,তবে ফর্সা গায়ের রংটি ধুলো ময়লায় তেলচিটে, খুব চেঁচাচ্ছে- তাকে ঢাকার টিকিট দিতে হবে ২০ টাকায়। ২০ টাকাই তো তার আছে। ফাইভ স্টারের অফিস ম্যানেজার সাবের বলছেন, ‘ক্যামনে দিই? ৮০ ট্যাহা ভাড়া।’ হট্টগোল হচ্ছে খুব। চেঁচাতে চেঁচাতে ঢ্যাঙা ম্যানেজারের টেবিলেই উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে। সন্ধেয় আজ ঢাকা কোচের যিনিই টিকিট কাটতে যাচ্ছেন ১০/২০ টাকা চাঁদা দাবি করছে সে। রোগা ম্যানেজার সাবের আলি তাকে ধাক্কা দিয়ে টেবিল থেকে নামাতে পারছেন না।

দেখে আমাদের রাজাবাজারের উর্দুভাষীদের মতো মনে হল। মুখের বুলি সেই রকম। ভাঙা ভাঙা বাংলা উর্দু মেশানো অবাঙালি উচ্চারণে। স্বদেশী ভেবে তোয়াজ করতে গেলাম। আমার পকেটেও গোনাগুনতি বাংলাদেশি টাকা, আমি ১০/২০ টাকাও ওকে দিতে পারব না, তাও বললাম, “আরে ভাই, দোস্ত ঝামেলা করো। না, নামো।’

‘আবে, ইন্ডিয়ান, তুম বাংলাদেশকে সমঝাও।’ একথা বলেই, হঠাৎ তার মনে পড়ল যেন, বলল, ‘হা, ইন্ডিয়ান বিশ রুপিয়া হ্যায় মেরে পাস, লেগা।’ ম্যানেজার নিয়ে নিলেন তেলচিটে লাল ভারতীয় নোটটি। তখন ভারতীয় ২০ টাকা বাংলাদেশের ৪০ টাকার সমান। ম্যানেজার বললেন, ‘আউর?’ চোখ পাকিয়ে ঢ্যাঙা বলল, ‘আভি মাংতা, নেহি হোগা’। ফের চলল বাগযুদ্ধ। শেষে ঝুলি থেকে বেরোল আট ভাজ করা পাকিস্তানি একটি ৫ টাকা। ম্যানেজার বললে, “পাকিস্তানের ট্যাহা এইখানে ভাঙন যাইবো না। শেষমেশ ঠিক হল ড্রাইভারের কেবিনে বিনাসিটেই পাটাতনে বসে যেতে হবে তাকে। শান্ত হল ঢ্যাঙা। আমি আলাপ করতে ফাইভ স্টার অফিসের বাইরে চায়ের দোকানে নিয়ে এলাম ওকে। চা খেতে খেতে শুধিয়ে জানলাম রাজাবাজারের নয়, বিহার ইউপি-রও নয়। কোথাকার? এ প্রশ্নে হেসে সে বলল, ‘ইহা কা উহাকা সবকা।’ আমি কিছুটা ভড়কে গেলাম। ও বলল, “হম ইন্ডিয়ান নেহি তো, বাংলাদেশ কা-উহ নেহি, পাক-কা, উয় ভি নেহি।’ আমার ব্যাগে কয়েক প্যাকেট চারমিনার ছিল, এক প্যাকেট দিতে খুব খুশি। দোস্তি হয়ে গেল আমাদের। ওর নাম বলন নিয়াজ।

বাস যখন রাতে পৌঁছেলো। নাভারনে সেনা চেকিং পেরিয়ে যশোর শহরে, হরেক দোকান পাটের সামনে নেমে গেল নিয়াজ। বাসের তখন আধঘণ্টা যাত্রাবিরতি। বাসের জানালায় আমাকে বাড়িয়ে দিল একটা কেক আর এক গেলাস চা। ওর হাতেও চায়ের গ্লাস। চায়ের গ্লাস দোকানে ফেরত দিতে যাব, নিয়াজ সে গ্লাস নিয়ে দুটো গ্লাসই ছুঁড়ে ফেলে দিল ঝোপে। উঠে পড়ল বাসে। অবাক হলাম। কিছুক্ষণ পর একটা দোকানের সামনে বেশ গণ্ডগোল হতে লাগল। কেউ একজন দু গেলাস চা কেক দু প্যাকেট সিগারেট নিয়ে পয়সা না দিয়ে চলে গেছে, চেঁচাচ্ছেন দোকানদার। পিছনে এ গণ্ডগোল রেখে ছেড়ে দিল আমাদের বাস। একটু পরে এক প্যাকেট বেসন হেজেস সিগারেট আমাকে বাড়িয়ে দিয়ে নিয়াজ বলল, ‘তুমহারে লিয়ে দোস্ত।’ রাত দুপুরে চলন্ত বাসে এক যাত্রী হইচই তুললেন যশোরে বাস থেকে ওঠা নামার সময় ভিড়ে তার বুক পকেট থেকে ৫০০ টাকা খোয়া গেছে। বাসের ভিতর পড়ে গেছে কিনা চলন্ত বাসেই টর্চ নিয়ে খোঁজাখুজি চলল। পাওয়া গেল না। বাস যশোর ছাড়াতেই কী করে যেন ড্রাইভারের কেবিন থেকে নিয়াজ আমার পিছনের সিটটির দখল নিয়ে নিল। ওই সিটের যাত্রী যশোরে নেমে যাওয়াতেই হয়তো।

মাঝরাতে আমাদের বাস দৌলতদিয়ায় পৌঁছে আরও হরেক বাসের সঙ্গে পদ্মার ফেরিতে উঠল। ওপারে আরিচা পৌঁছে আবার ঢাকার দিকে ছুটবে বাস। ফেরির রেস্তোরার ঘটনা, বা দুর্ঘটনা গোড়ায় বলেছি।

২.

পুরনো পাসপোর্ট ভিসার ছাপের উল্টোপাতায় বেনাপোলে এন্ট্রির ছাপ দেখে একেবারে দিনক্ষণ বলে দিতে পারছি, দিনটা ছিল ২২ আগস্ট ১৯৮৬। দিনের বেলা আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। দুপুরে বেনাপোলে ঝমঝম করে বৃষ্টি হয়েছিল। বাস মধুমতী নদী পেরিয়ে ফরিদপুরের রাজবাড়ি পেরিয়ে পদ্মার ফেরিতে যখন, মাঝরাতের আকাশ মেঘমুক্ত, তারায় ভরা। ফেরি থেকে আরিচাঘাটে নেমে বাস যখন আরিচা-ঢাকা মহাসড়কে, রাত তখন শেষ হয়ে আসছে, চারিদিকের সবুজ তখন ফুটি ফুটি হয়ে আসছে, দুপাশে ঢেউখেলানো জমি। আমার পাশের যাত্রী আরিচার পরেই একটি আধা জনপদে নেমে গিয়েছিলেন, নিয়াজ এসে বসল আমার পাশে। জানালা দিয়ে দুপাশের আধো আলো ফোটা সবুজের সমারোহ দেখছিলাম আমি, হঠাৎ মনে হল, ফুঁপিয়ে কাঁদছে নিয়াজ। আমি ঠেলা দিয়ে কারণ শুধোতেই নিয়াজ চোখ মুছে বলল, “ও কুছ নেহি’, ঢাকার দিকে এলেই আব্বুর জন্য চোখে পানি এসে যায় তার। এরপরই সে, যেন শোনাতে কাতর, এভাবে বলল, “শুনে গা মেরা কহানি…?

চারিদিকে যখন জয় বাংলা জয় বাংলা হই হই হচ্ছে ঢাকায়, সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে তাদের, আবাসিক ছাত্রদের ভেতর অবাঙালি যারা, প্রিন্সিপাল তাদের বাইরে বেরোতে দেননি। উঁচু পাচিল দেওয়া হস্টেল থেকেই তারা বুঝতে পেরেছে রাস্তায় রাস্তায় খুব মারপিট হচ্ছে, মিলিটারি ট্রাক যাচ্ছে অনবরত, কিন্তু যুদ্ধ যে বেঁধে গেছে, নিয়াজ বলেছিল, তারা অবাঙালি আবাসিক ছাত্ররা বুঝতেই পারেনি। রাস্তার দিকের জানলাগুলোতে সুপার তালা লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সারারাত ওরা আঁতকে উঠত বোমাগুলির শব্দে। ক্যান্টনমেন্ট থেকে সানডে গুলোতে তিন সপ্তাহ যখন আম্মি স্কুলে এলো না তাকে দেখতে, প্রিন্সিপালকে সে, শুধু সে নয়, সহপাঠীরা অনেকে, সে কথা শুধোতে তিনি কেবল গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। একদিন স্কুলের দারোয়ান তাদের ফিসফিস করে বলল, যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, মুক্তিযুদ্ধ। বাবার জন্য

মন কেমন করে উঠল নিয়াজের, নিশ্চয়ই যুদ্ধে গেছে, তার বাবা যে পাকিস্তানি আর্মির মস্ত অফিসার। কিন্তু আম্মি আসছেন না কেন? |

উদ্বেগে উদ্বেগে মাস গড়িয়ে গেল। একদিন চারদিকে হই হই করে জয় বাংলা ধ্বনি শোনা গেল, স্কুলের ভেতরও সে আওয়াজ ঢুকে পড়ল। লালসূর্যের মধ্যে সোনালি মানচিত্র আঁকা স্বাধীন বাংলাদেশের সবুজ পতাকা উঠল স্কুলের ফ্ল্যাগস্ট্যান্ডেও। আর হস্টেলের দরজা খুলে দেওয়া হল।

নিয়াজ ছুটল ক্যান্টমেন্টের দিকে। আম্মু নিশ্চয়ই খুব চিন্তায় আছে। মহাখালির কাছে একটা তিনতলা বাড়ির ব্যালকনি থেকে একটা বাচ্চা মেয়ে তাকে লক্ষ করে আধলা একটা ইট ছুঁড়ল। পায়ের কাছে পড়ল ইটটা। তাই রক্ষে। এরপর একটা গলি থেকে বেরনো রিকশায় বসা মাঝবয়সি মহিলা তাকে এই কুত্তার বাচ্চা বলে থুতু ছুড়ল। ছুটল নিয়াজ, ছুটল। ক্যান্টমেন্টে তাদের কোয়াটার্সে এসে নিয়াজ দেখল আম্মু নেই। কেউ নেই। আসবাবপত্র নেই। জানালা দরজাও কারা খুলে নিয়ে গেছে।

ছুটল নিয়াজ ছুটল। ভয়ে, ভাবনায়, ইটপাটকেল এড়িয়ে থুতু এড়িয়ে ছুট ছুট। কদিন? নিয়াজ বলল, ইয়াদ নেই দোস্ত। এলিফেন্ট রোডে, একদিন দেখা হল সুলেইমান চাচার সঙ্গে। তাদের বাবুর্চি। সেও বিহারি, কিন্তু লুঙ্গি ফতুয়া পরে বাংগালি সেজে গেছে। সুলেইমান চাচাই হাত বুলিয়ে হাউ হাউ করে কেঁদে জানালেন স্যার, নিয়াজের বাবা আরিচার যুদ্ধে মারা গেছেন। মেমসাহেবা সে খবর পেয়ে সেই রাতেই নিজে গাড়ি নিয়ে কোথায় চলে গেছে, কাউকে বলে যাননি। নিয়াজ বলল, জানো দোস্ত, আমারও চোখে আঁশু এল, তারপরই ছুটলাম, লুঙ্গি কিনলাম একটা, একটা পাঞ্জাবি। একদিন গাবতলিতে এসে দেখলাম, বাস যাচ্ছে বেনাপোল, ইন্ডিয়া বর্ডারে। সুলেইমান চাচাই বলেছিলেন, ইন্ডিয়া মে যাও–।

নানা-নানি কবেই মারা গেছেন। লক্ষ্ণৌয় এক মামা থাকতেন। ভাবলাম আম্মু গিয়েছে হয়তো সেখানে। কিতাবমহল বইয়ের দোকানের পাশেই মামাবাড়ির হাভেলি, সেটা জানা ছিল। বেনাপোল থেকে বনগাঁ রেলস্টেশন- শিয়ালদা। নিয়াজ বলল, পানির মতো বয়ে চলে এলাম। শিয়ালদার রাস্তা দিয়ে হাঁটতে, নিয়াজ বলল, সে অবাক, কত জাতভাই! হাজার লোকের উর্দু বুলি। ঢিল নেই, থুতু নেই। আপেল রয়েছে, ন্যাসপাতি রয়েছে। বেচছে তার জাত ভাইয়েরাই। কদিন পরেই তাকে লক্ষ্ণৌর ট্রেনে তুলে দিয়ে গেল এন্টালির গোল্ডেন স্পোর্টিং ক্লাবের মুন্না, তারক, মহসিন, পিন্টুরা। লক্ষ্ণৌয় কিতাবমহলের পাশের হাভেলিতে এসে সে থ! সে হাভেলিতে আনজান লোকজন! তবে সে সেখানে জানতে পারল মামা এ হাভেলি বেচে পাকিস্তানে চলে গেছেন। ১০/১২ বছর আগে। সে ঠিকানা দিতে পারল না কেউ।

লাহোরের এম এম আলম রোডে ফিরদৌস মার্কেটের কাছে নিয়াজের এক চাচা থাকতেন। বাবার বিমাতার ছেলে। লক্ষ্ণৌ থেকে অমৃতসর, আটারি সীমান্ত যেখানে ভারত-পাক চেকপোস্ট, তার দেড় কিলোমিটার উত্তরে দর্শন সিংয়ের ধাবা। ধাবার বেঞ্চগুলি ভারতে, উনুনটি পাকিস্তানের পিলারকে কালো করে দিয়েছে তেলে ধোঁয়ায়। সেই চুলার পিছন দিকে কুলকুচো করার ছলে বা আর একটু দূরে হিসি করার ভঙ্গিতে পাকিস্তানের ভুট্টা খেতে ঢুকে পড়া যায়। তবে ঢুকতে দালালদের টাকা দিতে হয়। তারা গেঁহু মকাইয়ের ক্ষেতের ভেতর দিয়ে লাহোর যাওয়ার হাইরোডে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দেয়। নিয়াজ হেসে একথা বলে জানাল, লাহোর পৌঁছে গেলাম। রকিবউদ্দিন চাচা খুব খাতির করলেন। যুদ্ধে ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়েছেন, এখবরও পেয়েছেন তবসুম, নিয়াজের মা ঢাকার পিজি হাসপাতালের এক পাকিস্তানি ডাক্তারের সঙ্গে লন্ডন চলে গেছে। চাচা বললেন, ‘শুনেছি, ওদের শাদিও হয়েছে।’ শুনে বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠল নিয়াজের, অভিমানে থমথমে হল মুখ, তারপর ক্রোধে লাল। চাচা বলেছিলেন থেকে যেতে। নিয়াজ ছুটে রাস্তায় বেরিয়ে এল। এলোমেলো ঘুরল। তারপর পকেট থেকে পাকিস্তানি ১ টাকার মুদ্রা বের করে হেডটেল। ইণ্ডিয়া না বাংলাদেশ কোথায় থাকবে সে! টেল- ইণ্ডিয়াই, ঠিক করে দিল নসিব। নিয়াজ চলে এল ফের লক্ষ্ণৌ। লক্ষ্ণৌয় তিন চার দিনের যোগাযোগেই কানপুরে পাউরুটির বেকারিতে দিব্যি এক চাকরিও মিলে গেল তার। সে চাকরিতে কাটিয়ে দিল কয়েক বছর। জমাতে লাগল টাকা, ফের যদি ঢাকায় ফিরতে হয়, তার রসদ।

কানপুর নফরবাগের বস্তিতে থাকত তখন উল্টোদিকে ফুটপাথে কয়েকটা ঝুপড়ি। পাশেই চায়ের দোকান। বেকারির কাজে বেরোতে রোজ ভোরে চা খেতে যেত সেখানে। যেতে যেতে ঝুপড়ির স্বর্ণকেশী কুসমার সঙ্গে কী করে যেন মোহাব্বত ঘটে গেল তার। নিয়াজ বলল, কেয়া বলু দোস্ত, তিন মাসেই পেট বাধিয়ে বসল মেয়েটা। তা নিয়ে বস্তিতে গণ্ডগোল বাঁধো বাঁধো, কানপুরে মসজিদে ইট ছোঁড়ার এক ঘটনায় শুরু হয়ে গেল দাঙ্গা। একাই পালাচ্ছিল নিয়াজ, কী ভেবে ফিরে এসে কুসমার হাত ধরে টেনে এনে ফের রাস্তায়। আগ্রার বাস যাচ্ছিল একটা। নিয়াজ বলল, রাতের সে বাসে কুসমা তার কাঁধে মাথা দিয়ে নিদে ঢলে পড়তেই সে ঠিক করল, আগ্রা পৌছেই নিকা করে ফেলবে। তারপর কানপুর লক্ষ্ণৌয় গিয়ে ঝামেলায় পড়া নয়, সোজা আটারি হয়ে পাকিস্তান।

আগ্রা কোর্টের পশ্চিমের ফটকের গায়েই কাজির অফিস। বেলা ১১টায় সে অফিস খুলতেই দুলহাদুলহানকে দেখে কাজি হতবাক, শাদি করতে এসেছো।

এই বেশে! যাও যাও গোসল করে সাফ সুতরো হয়ে এসো। একটু ভালো পোশাক পরে আসবে মিয়া-বিবি, কেমন।

যমুনা কিনার ধারে অনেকটা হেঁটে গেলাম দুজনে, লাইফবয় সাবুন কিনলাম একটা। তারপর নদীতীরে ঝোপঝাড় ভরা একটা নির্জন জায়গা দেখে নাঙ্গাই করে ফেলতে হল কুসমাকে, ওর গায়ে যা ময়লা, চুলে আঠা, ঘসতে হল খুব! আমিও নাগা হতে কুসমা খুব ঘসাঘসি করে দিল। এরপর ময়লা জামা কাপড় ফের পরে হাঁটা দিলাম সাফসুতরে জামাকাপড়ের খোঁজে। যমুনার হাওয়ায় কুসমার বাল শুকোচ্ছিল, সাচ বলছি দোস্ত, ওর হাত, মুখ ঝকঝক করছিল, পাকা গেঁহুর মতো রং। হাওয়ায় উড়ছিল বাল, আঙুরলতার শিকড়ের মতো খয়েরি। খুসবুর শিশি কিনে দিলাম ওকে একটা।

যমুনা কিনারে একটা জায়গায় ধোবিরা কাপড় কাচছিল। হরেক সফেদ কুর্তা সালোয়ার দড়িতে টাঙানো। ভাবলাম, চোরি করি। লেকিন শাদি করতে যাচ্ছি… গুনাহ হবে। ধোবিদের বললাম, শাদি করতে যাচ্ছি কুর্তা, সালোয়ার ধার দাওনা ভাই। ওরা হেসে ফেলল। আদর করে আমাদের টাঙা চড়িয়ে তাজমহলের কাছে এক ফটোওয়ালার কাছে নিয়ে এলো। সে, ওই ফটোওয়ালা, তার দুকানে নিয়ে গিয়ে আমাকে পরিয়ে দিল শাহজাদার এক ঝলমলে পোশাক। তাতে হরেক জরির কাজ করা গুলাবি চুমকি বসানো। পায়ে পরাল নাগরা। কোমরে ঝুলিয়ে দিল রাংতার এক তরোয়ালও! কুসমা যখন দুকানের সাজঘর থেকে বেরিয়ে এল, সে যেন রিজিয়া সুলতানা, মাথায় একটা বাহারি টোপি, তাতে ঝলমলে পালক গোঁজা। ফটোওয়ালা তাজমহলে আমাদের ছবি তুলে কাজির অফিসে নিয়ে গেল আমাদের। তুমারা হিন্দুঘরকা লেড়কি শরমে লাল হয়ে বলল, কবুল কবুল, কবুল। ধোবি আদমি এক বাক্স লাড্ডু নিয়ে এল।

বিকেলে আমরা ফটোর দোকানে শাহজাদাশাহজাদির পোশাক ফিরিয়ে দু কপি ফটো নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে এলাম চণ্ডীগড়ের বাস ধরবো বলে। অমৃতসর হয়ে আটারি বর্ডার পেরিয়ে যাব পাকিস্তান, লাহোরে ঢুকে পড়ব।

ও দোস্ত, দেখো উহ তসবির। ঝুলি থেকে নিয়াজ বের করল নীল রেক্সিনে মোড়া একটি বই। তাতে সোনার জলে গুরমুখী হরফে কিছু লেখা, খালসার প্রতীক চিহ্ন আঁকা। নিয়াজ বলল, সেবার অমৃতসরে খালিস্তানিরা খুব বিলি করছিল, গ্রন্থসাহিব। তসবিরটা এই বইয়ের ভেতরেই রেখে দিয়েছি, আর একটা তসবির কুসমার ঝুলিতে রয়ে গেছে।

জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাঁয়ে রেখে আমাদের ফাইভ স্টার পরিবহনের বাস তখন ঢাকার উপকণ্ঠে সাভার দিয়ে ছুটছে। ভোরের আলোয় ডান দিকে লাল আভায় মাখামাখি হয়ে ফুটে উঠেছে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহিদের স্মরণে অপূর্ব স্থাপত্যের জাতীয় শহিদ মিনারটি। গ্রন্থিসাহিব থেকে নিয়াজ বের করল পলিথিনের মোড়ক। মোড়ক খুলতেই তাজমহলের সামনে দাঁড়ানো তার আর কুসমার সেই ছবি। ভোরের সূর্যের লাল আভা শহিদ মিনারে ঠিকরে বাসের জানালা দিয়ে এসে লাগল তসবিরে। ঝলমল করে উঠল ওই ছবি!

নিয়াজ বলে চলল, আটারিতে গেঁহু খেতের ভিতর দিয়ে দালালরা নির্বিঘ্নে মেয়েদের দলটিকে লাহোরের বাসরাস্তায় পৌছে দিয়ে এল। ও যখন গেঁহু খেতের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, হাত নেড়ে আমি বললাম, হম আ রহা কুসমা। আমরা, ছেলেদের দলটি, বর্ডার পার হয়েই পাকিস্তানি রেঞ্জারদের হাতে ধরা পড়ে গেলাম। ১৪ জন। সারাদিন পেটাল। বিকেলে তুলে দিল তুমহারা বি এস এফের হাতে। বি এস এফও পেটাল বহুত। তারপর কোর্ট। তিনমাস জেল। কোর্টেরই অর্ডারে পুসব্যাক। মালগাড়িতে শিয়ালদা এনে পুলিস ভ্যানে বনগাঁ বর্ডার বাংলাদেশ। নিয়াজ বলল, সেই থেকে ঢাকা কলকাতা-কানপুর-লক্ষ্ণৌ-আগ্রা-দিল্লি ঢুঁড়ছি। পাঞ্জাব দিয়ে, রাজস্থান দিয়ে পাকিস্তানে ঢোকার চেষ্টা করেছি এ পর্যন্ত ৫ বার ফেল করে গেছি দোস্ত। নিয়াজ বলল, বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢোকা, ভারত থেকে বাংলাদেশ যাওয়া গঙ্গা পদ্মার পানির মতো ইজি। পাকিস্তানে ঢোকা খুব শক্ত। খুঁখার পাহারা। একবার তো রাজস্থানের বিকানের গুলাম আলিয়া বর্ডারে গুলি চালিয়ে দিল বি এস এফ। একটা লোক বালুর ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে মরল। লাল হয়ে গেল বালু। কাঁটাঝোপের ভেতর ডানা ছটফটিয়ে মরে গেল একটা ময়ুরও।

তবু আমি বারবার লাহোর ঢোকার চেষ্টা করব, দোস্ত, দোয়া কর, বলতে বলতে নিয়াজ উঠে পড়ল। নামবে সে, তার মিরপুর এসে গিয়েছে। ঢাকায় ঢুকছে বাস, আমি ডলার ভাঙিয়ে নিতে পারব। আমি ১০০ টাকার একটি বাংলাদেশি নোট জোর করেই ওর পকেটে গুঁজে দিলাম। চারমিনারের প্যাকেট দিলাম আর একটা। ফির মিলুঙ্গানেমে গেল নিয়াজ।

আর দেখা হয়নি। তবে বছরের পর বছর কেটে গিয়েছে। আড়াই দশক কম সময় নয়। নিয়াজের কথা বার বারই ভেবেছি। চোখ বুজলে এখনও মনে ঝলমল করে ওঠে সেই ছবি তাজমহলের সামনে ওরা দুজন শাহজাদা-শাহজাদি। নিয়াজ নিশ্চয়ই এই এতগুলো বছরে বার বার ঢোকার চেষ্টা করেছে লাহোরে। সফল হয়েছে কি? দোয়া করেছি। দোয়া করেছি। ছেষট্টি বছর বয়স হয়ে গেল স্বাধীনতার, দেশভাগেরও। অতীতের ভারতবর্ষ তিন টুকরো হয়েছে, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ। মানচিত্রে তিনটি রং। কাদামাখা পায়ে নিয়াজ তছনছ করে দিয়েছে সব সীমান্ত, সব নিয়ন্ত্রণ রেখা, ধেবড়ে দিয়েছে মানচিত্রের তিন রং।

৩.

গল্পটা এখানে শেষ হয়ে যেতে পারত, কিন্তু শিকসপিয়র হ্যামলেটকে দিয়ে বলিয়েছেন, হোরিশিও, পৃথিবীতে এমন অনেক আশ্চর্য ঘটনা ঘটে, যার তুমি ব্যাখ্যা করতে পারবে না।

আমি লোকটা, বছর চারেক আগে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। নেশা বলতে বই পড়া, ব্রিজ খেলা, ধূমপান আর অবরে সবরে হুইস্কি। ইদানিং ঘোরতর একটা আসক্তি জন্মেছে, ফেসবুক। ফেসবুকে আমার ১৭৫২ জন বন্ধু-বান্ধবী, নানা বয়সের, কয়েকটি দেশেরও। একালের অল্পবয়সিরা ফেসবুক সম্পর্কে সকলেই জানেন। আমাদের মতো বুড়োদের কেউ কেউ জানেন না। তাই একটু বলতে হবে। ফেসবুক একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক। এতে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা যায়, কথা বলা (চ্যাট করা, মেসেজ পাঠানো) এসব তো যায়ই, কোনো লেখা, ছবি, পোস্ট করা যায়, বন্ধু যদি আপনাকে নিজের গান বা কারো গান শোনাতে চান শুনতে পারবেন। যা পোষ্ট করা হচ্ছে, শেয়ার করে বন্ধুরা ছড়িয়ে দিতে পারেন। ১০০-২০০ জন শেয়ার করে মুহুর্তে ছবি বা লেখা জানিয়ে দিতে পারেন বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার জনকেও।

গত পরশু রাত পৌনে ১২টায় আমি আমার ল্যাপটপে ফেসবুক খুলে চমকে উঠেছি, বিস্মিত হয়েছি, উল্লসিত হয়েছি, পুলকিত হয়েছি, আনন্দ-ব্যাথা অশ্রু হাসিতে মাখামাখি হয়ে উঠেছি। শেয়ার, তথ্য শেয়ার, অন্য শেয়ার আমার ফেসবুক হোম পেজে ঝলমল করে উঠেছে সেই ছবি তাজমহলের সামনে শাহজাদাশাহজাদি বেশে নিয়াজ-কুসমা! ছবিটি মূল পোস্ট করেছেন যিনি, তিনি ইসলাবাদ শহরের হিনা বিলকিস। হিনা জানাচ্ছেন, বাবাকে কখনও দেখেননি। শুনেছেন বাবা ভারতে বা বাংলাদেশে রয়ে গেছেন, সে তখন মায়ের গর্ভে। নিয়াজ মুর্শেদ তার বাবার নাম। তার মা কুসমা মুর্শেদ লাহোরের মুজরোয় গান গেয়ে গেয়ে তাঁকে বড়ো করেছেন, হিনা এখন ইঞ্জিনিয়ার, ইসলামাবাদে পূর্ত বিভাগে আছেন। তাঁর স্বামী ইসলামাবাদের ও পি এফ বয়েজ কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক। মা এখন তাঁদের সঙ্গে ইসলামাবাদের রাওয়াল টাউনে বি-৪ স্ট্রিটের ফ্ল্যাটে থাকেন। ৭ তলার ফ্ল্যাটে আম্মি কলিং বেল বাজলে ছুটে যান, ব্যালকনি থেকে নিচে তাকিয়ে থাকেন। এখনও তার বিশ্বাস, তাঁর স্বামী একদিন তাকে খুঁজে বের করবেনই। বিলকিস পোস্ট করেছে, ঘুমের ভেতর খোয়াব দেখে উঠে বসেন আম্মি, ওই তো কুসমা কুসমা বলে কেউ ডাকছে।

ফেসবুক আমি সার্চ করে ৭ জন নিয়াজ মুর্শেদকে পেয়েছি। তাদের দুজনের বয়স আমার আশপাশে। ভালো করে খুঁটিয়ে তাদের ছবি দেখে নিয়াজের সঙ্গে মিল খুব একটা বুঝতে পারিনি, তাও আমি তাঁদের ওই তাজমহলের সামনে দাঁড়ানো শাহজাদা-শাহজাদির ছবিটি পাঠিয়ে দিয়েছি।

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত