| 19 এপ্রিল 2024
Categories
গল্প সাহিত্য

জন্মভূমির মাটি

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

আজির উদ্দিন বড় ভূইয়ার বলা যায় আনুষ্ঠানিকভাবে এটিই প্রথম বিদেশযাত্রা বা বিদেশভ্রমণ। এর আগে সেই কবে কৈশোরের শুরুতে বছর বারো বয়সে আচমকা এক মওকা পেয়ে তিনি তাঁর এই মাটিতে অবৈধভাবে অর্থাৎ কী না বিনা পাসপোর্টে আরও সোজা করে বললে গলাধাক্কা পাসপোর্টে প্রথম পা রেখেছিলেন। তখন অবশ্য দুয়েকজন বাদে প্রায় সকলেই এভাবে এপার-ওপার হতো; যাতায়াত করতো। সেই সব স্মৃতির অনেক কিছু ঝাপসা হয়ে এলেও তীব্র জীবনসংগ্রামে লিপ্ত হয়ে জয়ী হওয়া আজির উদ্দিন বড়ভূইয়া একেবারে তা ভুলে যাননি; আর ভুলে যাওয়ার কথাও নয়।

জন্ম তাঁর এই মাটিতে। জন্মভূমি আর চৌদ্দপুরুষের ভিটেমাটির প্রতি আকর্ষণ তাঁর দুর্বার হলেও সময় ও সুযোগের অভাবে এতদিন তিনি এই সুযোগটি গ্রহণ করেননি, অর্থাৎ, নিজমাটিতে পদার্পণ করতে পারেননি,যদিও শরীরের প্রতিটি রোমকূপ তাঁর এই মাটির স্পর্শ পাওয়ার জন্য উতলা হয়েই ছিল। আজ, কর্ম থেকে স্বেচ্ছায় অবসরের প্রায় মাস ছয়েক পর পাসপোর্ট-ভিসা-রোডটেক্স হেনতেন সাতসতেরো করে প্রথম সুযোগেই জকিগঞ্জ-করিমগঞ্জ কাস্টমস পেরিয়ে একাই করিমগঞ্জ-শিলচর বাসে ৫৫ কিলোমিটার পথ ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে পাড়ি দিয়ে এখানে এসে এই সেন্ট্রেল রোডের ইলোরা বোর্ডিংয়ে উঠেছেন।

কোথায় যাবেন তিনি? বাড়িতে? শেকড়ের সন্ধানে? বাড়িতে তাঁর কিছু জ্ঞাতি ছাড়া আপনজন বলতে তেমন কেউ আর নেই। সকলেই গত হয়েছেন। সময় তো আর কম হলো না। গুণে গুণে পঞ্চান্ন বছর। পঞ্চান্ন বছর আগে তাঁর বয়স যখন কেবল দুই অথবা তারও একটু বেশি, তখন তাঁরা সপরিবারে বাড়িঘর-সহায়সম্পত্তি সবকিছু ছেড়েছুড়ে এককাপড়ে তাঁর বাবার কর্মস্থল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ময়মনসিংহ শহরে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন।

তারপর একজেলা থেকে আরেক জেলা; এক শহর থেকে আরেক শহর। বলতে গেলে ছাত্রজীবনের পুরোটাই বাবার বদলিজনিত কারণে চক্করে থেকেছেন তাঁরা। বাবা যে কিছু করে যেতে পারেননি, তা নয়। যা কিছু করেছিলেন, সবকিছু তাঁর মৃত্যুর পর বারোভূতের ওই চক্করে পড়ে বেদখল হয়ে গেছে। তারপর, তাঁরা নিজ প্রচেষ্টায় এই পর্যন্ত উঠে এসেছেন। তিন ভাই তিন-তিনটি বাড়ি বানিয়েছেন। ছেলেমেয়েরাও দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁর এক ছেলে তো দক্ষিণ আমেরিকার হন্ডুরাসে হোটের ব্যবসা করছে। সারা হন্ডুরাসে বিশ-পঁচিশজন বাঙালিও নেই। তাঁর ছেলে আছে; ভালোভাবেই টিকে আছে।

বাাড়ির পথ ধরবেন বলে তিনি বিকেলবেলায় রাস্তায় নেমে এলেন। দূরের কোথা থেকে মুয়াজ্জিনের ক্ষীণকণ্ঠে আযান ধ্বনি ইথারে ভেসে এলো। রাজপথ লোকে লোকারণ্য। এত লোক! এত লোকের ভিড়ে তিনি কোথায় কী করবেন; কোথায় যাবেন? তাগড়া এক রিক্সাওয়ালা দেখে তিনি হাত ইশারা করলেন।

রিক্সাওয়ালা এসে জিজ্ঞেস করলো ,‘কাহা জানা হ্যায়?’

তিনি বললেন ,‘মধুরাঘাট।’

‘পচাশ রুপিয়া দেনা হোগা।’

‘কমতি নেহি?’

‘যিয়াদা গরমি হ্যায়। কমতি নেহি হোগা।’

ভাষার জটিলতার কারণে তিনি বিহারি যুবকের রিক্সায় সওয়ারি হলেন না। এই প্রায় বুড়ো বয়সে হিন্দি-উর্দুর গ্যাড়াকলে পড়ে আজীবন বলে আসা নিজ মাতৃভাষাকে অপমান করতে রাজি না হওয়ায় তিনি অপেক্ষার প্রহর গুণতে লাগলেন।

কৈশোরের কিছু স্মৃতি তাঁর মানসপটে ভেসে উঠল।

এই সেন্ট্রের রোডে, হ্যাঁ এই সেন্ট্রাল রোডেই তো তাঁর কৈশোরে একদিন তিনি তাঁর ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কিসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন এখন আর তাঁর মনে নেই। তারপর, একের পর এক আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হতে লাগলো। কেউ সম্পর্কে মামাতো ভাই, কেউ চাচাতো ভাই, কেউ খালাতো ভাই, আর কেউ সম্পর্কে মামা। এত স্বজন! তারপর গুডলাক টেইলার্সে পেটমোটা লোকটির কাছে ফুফাতো ভাইয়ের দেয়া প্যান্ট-শার্টের মাপ দিয়ে মওলানা স্টোরে ঢু মেরে ফাটকবাজারে বাজার করতে চলে গেলেন।

ভারত ভূমিতে এসেছেন, আর পান খাবেন না, তা হয় না। তিনি কাছের পানের একটি দোকানে গিয়ে ১২০ জর্দা দিয়ে পান নিয়ে মুখে পুরলেন। পানওয়ালা কীভাবে যেন টের পেয়ে গেল। বলল,‘ বাইসাব, আরও দুইটা পান নেইন। ইন্ডিয়ার পানো আলাদা টেস্ট! কানো (কোথায়) যেইতা, বাইসাব?’ তিনি কাঙ্খিত গন্তব্যের কথা বললেন। তারপর, খাইকে পান বানারসোওয়ালা গাইতে গাইতে দোকান থেকে একটু মুখ বের করে পানওয়ালা, এক রিক্সাওয়ালাকে হাক দিতেই রিক্সাওয়ালা এসে হাজির হলো। তিনি রিক্সাওয়ালাকে একটু পরখ করে নিয়ে ভাড়া জিজ্ঞেস না করেই উঠে পড়লেন। বললেন, ‘মধুরাঘাট।’

রিক্সাওয়ালা বলল, ‘ই পঙ্খিরাজ সব জায়গাত যায়। তুমার মউদরাগাটোও যেইবো। তুমারে একেবারে গাটো নিয়া দিমু। আর ভাড়া ত্রিশ টেকা দিবায়। বেশি চাইছিনি? বেশি চাইছি না। গরমো চান্দি ফাটি যার।’

‘কেমন সময় লাগবো?’

‘বেশি অইলে আদা ঘণ্টা। কানো যেইতায় দো?’

‘কেনে, মধুরাঘাট।’

‘না দো। গাঙ পার অইয়া কানো যেইতায়?’

‘অউ মউদরামুক।’

‘কার বাড়ি?’

‘তুমি চিনবায়নি?’

‘কইয়া যাও। চিনলে চিনতেও পারি।’

‘শফিকোর বাড়ি।’

‘বুইচচি, তুমি বাদিরোর বাড়িত যেইতায়। হে বেটা দশ-বারো বছর আগে মরছে। আস্তা একটা টাউট আসলো। মানষোরে (মানুষকে) ছাতাইয়া মরছে।’

তিনি কথা বাড়ালেন না।

রিক্সা আর স্কুটারের শব্দে রাজপথ গমগম করছে। পড়ন্ত এই বিকেলের তেজ দেখে মনে হচ্ছে, সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে।এপ্রিলের এই সময়ে নিম্নচাপ থেকে অনেক সময় ঘুর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। তারপর উপকূলের দিকে ধেয়ে এসে সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়ে দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে অসম-ত্রিপুরার দিকে উঠে যায়।

আখড়া থেকে কীর্তনের তীব্র আওয়াজ ভেসে আসছে। আশেপাশে কোথাও আখড়া রয়েছে। একটা সময় তো হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ই কীর্তন শুনত। ৪৭ এর দেশভাগ সবকিছুতে ঠাটা ফেলে লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেছে।

একদিনের ভ্রমণে গরমে, ঘামে, শরীর ভিজে একাকার হয়ে গেলেও তিনি গোসল না করেই বোর্ডিং থেকে বেরিয়েছেন। কাপড় বদলিয়ে এলেও পারতেন, কিন্তু তা না করে কেবল হাত-মুখ ধুয়ে দুপুরের খাবার সেরে মিনিট ত্রিশেক পরে চৌদ্দপুরুষের ভিটেমাটি দেখার উত্তেজনায় বেরিয়ে পড়েছেন।

লরি একটা বিপরীত দিক থেকে এসে দ্রুত ডানদিকে মোড় নিচ্ছে। তারপর, আরেকটি। তারপর, আরেকটি। লরির দরজায় প্রাণের অ্যাড. ভারত ভূমিতে তাদের অস্তিত্ব বেশ জোরে-সোরে জানান দিচ্ছে।

একদল লোক খাকি হাফপ্যান্ট আর সাদা হাফসার্ট পরে মার্চপাস্ট করে এগিয়ে যাচ্ছে। কাছে আসতেই দৃশ্যমান হলো আরএসএস। হেডগেওয়ারের আরএসএস। আরএসএস, বজরং দল, শিবসেনা, হিন্দুসেনা। সেনার আর অভাব নেই! এপারে শিবসেনা, আর ওপারে জামাত সেনা, ইসলামী সেনা। মুখে কুলুপ দেয়াই ভালো। কার, কখন আবার সম্মানহানী হয়ে যায়! সম্মানীদের আবার সম্মানহানী হয় বেশি!

যানজটে নাকাল হয়ে হাঁসফাঁস করছে যাত্রী-চালক। কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ থেকে মাম বের করে এক চুমুকে পুরোটি সাবাড় করে দিলেন যাত্রী। ভাগ্যিস, দেশ থেকে বহন করে নিয়ে এসেছিলেন, আর না হয় বিদেশ-বিঁভুইয়ে ভালো মানের মিনারেল ওয়াটার খোঁজা আরেক হেপা।

উঁচু কোন মগডালে বসে কোকিল একটা অনবরত ডেকে যাচ্ছে। কাছে কোন এক গাছের ডাল থেকে দোয়েল স্বর পাল্টিয়ে দুভাবে ডাকছে। গাছগাছালির এই মেলা দেখে তিনি রিক্সার হুড ফেলে দিলেন।

রিক্সা কেবল ইটখলা অতিক্রম করলো।

‘ওউ দেখোইন আমরার ইটখলা ঈদগাহ।’

তিনি রিক্সাওয়ালার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে গেলেন। এ পরিচয়ে তিনি নিজেই পরিচিত হতে চান না। মানুষের আবার পরিচয় কী? মানুষ তো মানুষই। তারপরও কথা থেকে যায়। একটি দেশের লোক কতটুকু সভ্য-ভব্য, তা সেই দেশের সংখ্যালঘু মানুষ কতটুকু নিরাপদে বসবাস করছে, তার ওপর নির্ভর করে।

তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘নিজ বাড়িগরো কিলা আছো বা?’

‘আমরার আর থাকা! গরিবোর কোনো আরাম নাই। গরিবোর সব ব্যায়ারাম।’

‘না, ওউ যে গাড়ি চালাইতরায়, রাইত-বিরাতো (রাতবিরাত) কোন অসুবিদা অয়নি?’

‘ও ,বুইচচি, তুমি কিতা কইতরায়? হি যন্ত্রণা তো আছে। ইনো সারা ইন্দু-মুসলমান। মানুষ একটাও নাই।’

তিনি চুপ হয়ে গেলেন।

রিক্সা ঘনিয়ালা অতিক্রম করে সাময়িক প্রসঙ্গ অফিস বামে রেখে মালুগ্রাম-ভৈরববাড়ি হয়ে সর্বদয় পাঠশালার সম্মুখ দিয়ে ঘাটে পৌঁছে গেল।

তিনি বরাক অতিক্রম করলেন। তেতাল্লিশ-চুয়াল্লিশ বছর আগের দৃশ্য তাঁর মানসপটে ভেসে উঠল। সেই সময়ে এই নৌকায়-ই গ্রামের লোক চেহারা-ছবি দেখে তাঁকে সনাক্ত করে ফেলেছিল!

বলেছিল, ‘তুমি মজির উদ্দিন বড়ভূইয়া চাচার কিতা অও?’

তিনি উত্তরে বলেছিলেন, ‘ছেলে।’

‘ওউ দেখো, হউ নাক, হউ চোউখ! আমরা তুমার বাই (ভাই)। যাও, বাড়িত যাও।’

তিনি মধুরার পাড় ঘেষে হেঁটে হেঁটে বাড়ি পৌঁছেছিলেন। দিন সাতেকের সেই ভ্রমণে দেবদূত সিনেমা হলে হিন্দি ছবি একটাও দেখে ফেলেছিলেন তুতো ভাইদের সঙ্গে। সবই আজ স্মৃতি।

আজ আর কিছু চেনা যায় না। মধুরার পাড় ঘেষে রাস্তাও আর নেই। তিনি যাবেন কোথায়? রাস্তাও তো চেনা দরকার।

বাজারে গিয়ে চায়ের একটি স্টল দেখে চায়ের অর্ডার দিয়ে সতেজ হওয়ার আশায় তিনি বসে রইলেন।

বিদ্যুতের লুকোচুরি শুরু হয়েছে। এই যাচ্ছে, এই আসছে। এখানেও তাহলে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে! বৃদ্ধ মতো একজন লোক ,বয়স পুরোপুরি আন্দাজ করা যায় না ,তাঁর দিকে তাকাতে তাকাতে হঠাৎ জিজ্ঞেস করে বসলেন, ‘সাব, কান (কোথায়) তাকি আইছোইন?’

‘বাংলাদেশ।’

‘ইনো কানো যেইতা?’

‘আফনে কিতা ওউ গ্রামোর বাসিন্দা নি?’

‘অয়।’

‘আমি মজির উদ্দিন বড়ভূইয়ার ছুটো ছেলে। দেখোইন চিনোইননি?’

আর বলতে হলো না। বৃদ্ধলোক কাঁদতে কাঁদতে উঠে এলেন।

বললেন ,‘আমার হরু (ছোট) মামুজির পুয়া। আমার মামুর গরোর বাই। এই হরু মামুজিয়ে আমারে পড়াইছোইন। দুই-দশ গ্রামো তান লাকাইন (তাঁর মতো) মেধাবী আর শিক্ষিত মানুষ আছিল না। কপাল খারাপ। দেশ ছাড়ি গেলাগি।’

চা পর্ব চলছিল। ক্রমেই লোকের ভিড় বাড়লো। ফুফাতো বৃদ্ধ ভাইটি মোবাইলে কার সঙ্গে যেন কথা বললেন; তাঁর কথাও উল্লেখ করলেন।

তারপর, বেরিয়ে দুজনেই বাড়ির পথ ধরলেন।

গাছের একটি পাতাও নড়ছে না। মনে হয় স্থির হয়ে অবনতচিত্তে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে, গ্রামের এই অকালে হারিয়ে যাওয়া উত্তরপুরুষটিকে!

‘ওউ দেখো, সব তুমার চাচাইনতোর বাড়ি। ওউটা এলকু (এখন) মূল রাস্তা। আগোর রাস্তা আর নাই। মউদরার পাড়োর রাস্তাও নাই। গাঙে খাইলেইছে।’

‘মণিপুরি বাড়ি ইতা আছেনি বাইসাব?’

‘আছে, আছে। সবতা আছে। হরু মামুজিয়ে খুব বালা মণিপুরি ভাষা জানতা।

একবার অইলো কিতা। হরু মামুজি তখন শিলচর গভর্নমেন্ট হাইস্কুলের ছাত্র। তুমরার রাইয়ত (রায়ত) চাঁড়ালবাড়ির এক বেটা সাপোড় কামড়ে মারা গেছে ভাবিয়া ভাসাইয়া দেওয়ার সময় হরু মামুজি স্কুল তাকি ফিরিতরা। দেখিয়া কইলা, ‘আমারে একবার সময় ও সুযোগ দেও।’ তখন তাইন ক্লাস সেভেনোর ছাত্র। মন্ত্র জানতা। কিলা-কিতা করিয়া সাপে কাটা রুগীরে বালা করিলেইলা! তারার হায়রে ভক্তি! তারা সাক্ষাৎ ভগমান মাইনছে (মেনেছে)।’

আরেকবার, হরু মামুজি তখন মাদ্রাসার ছাত্র। বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল চলের। বড়হুজুর সোফাসেটো বইয়া শরবত খাইয়া খাইয়া ওয়াজ করিতরা। পিছ তাকি (পেছন থেকে) একজন তালেবুল ইলমে বাতাসও করের। কইলা, ‘ভাইসকল, আমরা সব সমান। কুনো তফাত নাই।’ হরু মামুজি দাঁড়াইলা। কইলা, ‘আমার একখান মাত (কথা) আছে মেয়াসাব। আমরা সকল সমান অইলাম কিলা! আফনে সোফাত বইয়া বাতাস খাইয়া খাইয়া ওয়াজ নসিয়ত করিতরা, আর, আমরা সব মাটিত (মাটিতে) বইয়া হুনিয়ার (শুনছি)। সমান অইলাম কিলা?

লাগি গেল তর্কাতর্কি। তারপর, মারামারি। পরোরদিন হরু মামুজি মাদ্রাসা তাকি বহিষ্কার।’

গল্প শুনতে শুনতে তিনি ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে বাড়িতে প্রবেশ করলেন।

পশ্চিম দিকে সূর্য তখন আস্তে আস্তে তার রং-রুপ-ঐশ্বর্য হারাচ্ছে। কোথায় পূর্বে ছিল, আর কোথায় পশ্চিমে এসেছে; স্থান পাল্টিয়েছে। কাজেই, রং-রুপ-ঐশ্বর্য তো হারাবে!

জ্ঞাতি চাচাতো ভাইদের নাতি-নাতনিরা তাকে দেখে কেউ এগুলো, আবার কেউ মুখ লুকিয়ে পালালো।

তিনি বাড়িঘর দেখে কান্না আর ধরে রাখতে পারলেন না। শিশুদের মতো হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। ততক্ষণে, ভাবিরা এসে ভিড় করতে শুরু করেছেন। সকলেই বিধাবা-বেওয়া।

আমাদের আজির উদ্দিন বড়ভূইয়া দম নিলেন না, শাবল একটি সংগ্রহ করে নিজ হাতে মাটি খোঁড়ে মাটি তুলে বোতলে ভরলেন।

এ মাটিতে তাঁর চৌদ্দপুরুষের সোঁদা গন্ধ আছে।

এ মাটি তাঁর জন্মমাটি। এ মাটি বড় খাঁটি।

 

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত