নারীর নিজের মুক্তির জন্য, নিজের স্বাধীনতার জন্য নিজের উপর নিজেকে আস্থা রাখতে হবে, লড়াইটা নিজেকেই করতে হবে। নারীবাদ বলি কী নারী স্বাধীনতা বা নারী মুক্তি- অর্জন না করলে পাওয়া যাবে না। নরওয়ে নারী-পুরুষের সমতার জন্য একটি পারফেক্ট দেশ বলা চলে। তারপরও এই দেশেও তেমন নারীর সাক্ষাৎ মেলে যে নিজে ডাক্তার হয়েও ডাক্তার স্বামীর ভয়ে তটস্ত থাকে।স্বামী শুধু স্যান্ডউইচ দিয়ে লাঞ্চ করতে চায় না বলে স্ত্রীকে সাথে স্যুপও বানাতে হয়। আর এই স্যুপ বানানোটা ভালোবেসে বানানো না রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে বানানো। এর জন্য নিজের অফিসিয়াল কাজ শেষ কোথাও বসে দু’দণ্ড জিরায় না, পাছে বাসার কাজে দেরী হয়ে যায়। অথচ নরওয়ের সমাজে স্বামী-স্ত্রী সপ্তাহের দিনগুলো ভাগাভাগি করে রান্নাসহ ঘরের যাবতীয় কাজ করার নিয়ম। দেখা যাচ্ছে, আইন থাকলেও সব নারী তা যথাযথ নিতে পারছে না। এমন শিক্ষিত নারীকে কে নারী-স্বাধীনতা এনে দেবে বা তার কাছে নারী স্বাধীনতা বা নারীমুক্তির সংজ্ঞা কী কে জানে! ’ইরাবতীর কথা’ ধারাবাহিকে ইরাবতীকে নারীর অনেক না বলতে পারা কথায় ও রূপে সাজিয়েছেন বিতস্তা ঘোষাল আজ থাকছে ইরাবতীর কথা ধারাবাহিকটির ৬ষ্ট পর্ব।
মিটিং-এর সময় ইরাবতী মোবাইল এরোপ্লেন মোডে রাখে। মিটিং শেষ হবার পর নর্মাল মোডে নিয়ে এসে ডেটা অন করা মাত্র হোয়াটাসআপে একের পর এক মেসেজ ঢুকতে শুরু করল।
ইরাবতী এক নজরে দেখল নীলের মেসেজ।
হাই সুইট হার্ট, কেমন আছ? আমাকে তো ভুলেই গেছ।
মেসেজের পাশে একটা কান্নার ইমোজি। ইরাবতী নিজের মনেই হাসল। পাগল একটা। ফেরার পথে ফোন করব, ভেবে আর উত্তর দিল না।
ঐহিকের কতগুলো মেসেজ। নানান পোজে ছবি। কোনোটা স্টেজে বক্তৃতা দিচ্ছে, কখনো লেকের ধারে, কোথাও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে গদগদ ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে, আরো নানা ছবি… এক নজরে সেগুলো দেখে উত্তর দিল, বাঃ। সুন্দর।
প্রান্তির অনেকগুলো মেসেজ। মা, কোথায় তুমি? ফোন অফ বলছে। ঠিক আছ তুমি? কোনো বিপদ হয়নি তো! ও মা! হোয়্যা্র আর ইউ? আমি বাড়ি ফিরছি। মা, বাড়ি ফিরলাম। এখনো তোমার ফোন অফ বলছে…।
মেয়েটা এত চিন্তা করে আমাকে নিয়ে সারাক্ষণ। উত্তর না দিয়ে কল করল প্রান্তিকে।
মা তুমি কোথায় ছিলে? আমার কী ভীষণ চিন্তা হচ্ছিল।
আমি একটা মিটিং-এ ছিলাম সোনা। এখন চা খাচ্ছি । চিন্তা কোরো না।
আচ্ছা মা। সাবধানে থেকো। খেয়েছ কিছু?
হ্যাঁ সোনা। তুমি খেয়ে নিও।
একটু বাদে খাচ্ছি, বলে প্রান্তিও ফোন রেখে দিল।
ইরাবতী ফেসবুক চেক করে নিল দ্রুত। না, তেমন কোনো ভালো পোস্ট নেই। নিজে আজকাল পোস্ট দেয় না। সে খুব ভাল করে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে ভাল লেখা পোস্ট করলে হায়েস্ট কমেন্ট কুড়ি থেকে পঁচিশ, সে তুলনায় ছবি পোস্ট করলে লাইক,লাভ ইত্যাদি কমেন্ট তিনশোর বেশি। তাই খুব ইচ্ছে না করলে পোস্ট করে না সে।
কবি,কথাসাহিত্যিক,সম্পাদক ও প্রকাশক