ছাই-ছাই বিকেল ও অন্যান্য
৪ মে কবি ঈশিতা ভাদুড়ীর শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
দুঃস্বপ্নের এক্কাদোক্কা
চাঁদ আর নক্ষত্র দিয়ে শুরু করি যদি,
পরবর্তী দৃশ্যে তবু ভিড় করে কাক ও ক্যাকটাস।
তারপর, কঙ্কাল ও ছায়া।
চৈত্রের শালবন দিয়ে শুরু করি যদি,
পরবর্তী দৃশ্যে তবু ভিড় করে ভীমরুল ও শুঁয়োপোকা।
তারপর, দাবানল ও হাহাকার।
মায়ামৃদঙ্গ ও মনিপদ্ম দিয়ে শুরু করি যদি,
পরবর্তী দৃশ্যে তবু ভিড় করে জিরাফ ও হায়না।
তারপর, যাপন ও অন্ধকার।
কোনো মায়াময় রাত ডিজিটাল স্বপ্ন দিয়ে শুরু করি যদি,
তবু তারপরও দুঃস্বপ্নেরা জড় হয়ে এক্কাদোক্কা খেলে আমার সঙ্গে সারারাত…
তবু তারপরও দুঃস্বপ্নেরা…
রঙ
স্প্রেপেইন্টে নিজের শরীরের গোপন অভিসন্ধিগুলো বেরিয়ে পড়েছে পোস্টকার্ডে। দর্শকেরা
টানটান, হাততালি দিতে ভুলে গেছে। যেন তুষারপাতেও বিস্মিত নয় কেউ। স্তব্ধতার গায়ে হাত
রেখে স্পষ্ট মনে পড়ে, সমুদ্রের জলে লাল দেখেছিলাম, সূর্য। এখন দেখছি সবুজ শ্যাওলা। কাল কি
কমলা, উড়ন্ত ক্যানভাস? আসলে প্রতিটি দৃশ্যের জন্যেই নতুন রঙ, সতর্ক জেগে থাকা। প্রতিটি
দৃশ্যেই মেরুদণ্ড পেঁচিয়ে ব্যাকরণের জটিল তত্ত্ব।
অক্ষর কাঁদে একা
শব্দেরা স্মৃতিভ্রষ্ট দূরবর্তী দূরে আজ, অক্ষর কাঁদে একা।
চারপাশে যে দু’চারটে পালক উড়ে বেড়ায়
রোদ্দুর অথবা চাঁদ কেউই কি পারে
. তাকে দিতে অন্য চিত্রকর ?
অল্প দক্ষিণে যদি
কমা আর সেমিকোলনের মধ্যবর্তী অংশে
দাঁড়িয়ে য়ে শূণ্যতা তার থেকে উত্তরে
হাঁটি য়দি অথবা অল্প দক্ষিণে
সেখানে কি অসামান্য ক্যানভাস কোনো ?

ছাই-ছাই বিকেল
হেমন্তের কুয়াশা এবং দু-চারটে বিষন্নতায় আজ
ছাই-ছাই বিকেল আর বিবর্ণ ক্যানভাস—
একান্ত কোনো দেওয়াল নেই যেইখানে আঁকতে পারি
কাঞ্চনজঙ্ঘাটিকে,
দুই কিংবা চার পলক দাঁড়াতে পারি একা
এমন নিভৃত বারান্দাও নেই |
হয়ত কোনোদিন নির্মিত হবে
একান্ত দেওয়াল অথবা ব্যক্তিগত আড়াল—
তখন হয়তো থাকবে না কেউ ছাদের কার্ণিশে,
দেওয়ালে হিজিবিজি দাগে একা দাঁড়কাক শুধু—
হয়তো তখন
কুয়াশা এবং বিষন্নতা থেকে সরে আমি অন্য পথে

নিভে যাচ্ছে আকাশ
হঠাৎ নিভে যাচ্ছে আকাশ
তলিয়ে যাচ্ছ তুমি
. কি এক আশ্চর্য ঘুমের মধ্যে
আর এখানে সুতে-কাটা ঘুড়ির মতো আমি
. পড়ে আছি প্রবল শূণ্যতায়
এই ঘুম কেমন?
. তুমি তলিয়ে যাচ্ছো দয়াহীন!
. ফেলে যাচ্ছ সমুদ্র-ঢেউ তীব্র কোলাহল!
এই যে তুমি চলে যাচ্ছো
. অন্যত্র, অনন্ত ঘুমে
কি হবে আমার এই সূর্য-ছেড়া সকাল?
অরণ্য বা নদী, কার কাছে যাবো আমি?

অন্ধগলিতে দীর্ঘশ্বাস
বিশ্বাস বাড়ির পুকুরে অভিমান বেঁচে ছিল গতকালও,
আজ সকালে কে বা কারা হত্যা করেছে তাকে।
রাস্তা বন্ধ, মানুষ টানটান, অন্ধগলিতে দীর্ঘশ্বাস।
সংক্ষিপ্ত কারণ খুঁজে বার করি, একটু সরে দাঁড়াবেন?

কুয়াশা-মেঘ
কুয়াশা মেঘ শীতের আকাশে চোদ্দ টুকরো ওরা
আর সারারাত পাপড়ি ছড়ানো বিছানাটি
. বিষন্ন একা
সারারাত শীত শীত ওরা


জন্ম দক্ষিণ কলকাতায়। পেশা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় স্থপতি। আটের দশকে কবিতা দিয়ে লেখালিখির শুরু।সেঁজুতি ভাদুড়ী ছদ্মনামেও লিখেছেন। কবিতা, গদ্য, সম্পাদনা মিলিয়ে ৩৫ টি বই প্রকাশিত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একাধিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছেন। ২০০৮ সালে বেজিং-এ ভারতীয় দূতাবাস আয়োজিত একক কবিতা সন্ধ্যায় অংশ নিয়েছেন। পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার, কবি বিষ্ণু দে স্মৃতি পুরস্কার, কবি গৌরাঙ্গ ভৌমিক স্মৃতি পুরস্কার, শান্তিলতা দেবী স্মৃতি পুরস্কার, কিঞ্জল পত্রিকা সম্মাননা, বাংলাদেশ রাইটার্স ফাউন্ডেশন সম্মাননা ইত্যাদি।