আজ ২৬ ফেব্রুয়ারি কবি জহর সেনমজুমদারের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
বন্ধন
ভাঙা বাংলা, ভাঙা হ্যারিকেন
এই নাও শিব শক্তি কাম
অগ্নি আর জল সহ আমি
এইমাত্র গৃহে থামিলাম
ভাঙা বাংলা, ভাঙা হ্যারিকেন
এই নাও শিব শক্তি কাম
আমিও বৌদ্ধ বামাচারী
বন্ধন বিনাশ করিলাম
শ্রী ও শৃঙ্গার
এই নাও পাঁজরপঞ্জিকা, মৃদু মেঘ মৃদু আলো, অপরূপ শ্রী ও শৃঙ্গার
ও সখা আর কেঁদোনা ও সখা আর কেঁদোনা
এই নাও স্বপ্নপথ, নীল নৌকা, ব্রহ্ম ও বালিকার ছয় ইন্দ্রিয়
ও সখা আর কেঁদোনা ও সখা আর কেঁদোনা
এই নাও ভাঙা চাঁদ, ষড়রিপু, ভ্রমরসন্ন্যাস
ও সখা আর কেঁদোনা ও সখা আর কেঁদোনা
এই নাও মেঘভর্তি কথা, মা ও প্রেমিকের শেষতম দারুচিনি দ্বীপ
ও সখা আর কেঁদোনা ও সখা আর কেঁদোনা
ও সখা আর কেঁদোনা ও সখা আর কেঁদোনা
পথে পথে কৃষিমুণ্ড পথে পথে আমাদের পরিত্যক্ত লাশ
এই মাত্র শেষ হল আমাদের প্রতিরোধ, স্বপ্নতিতাস |
লালঝাণ্ডা কমরেড, বাবা ছিল তেভাগার চাষি
কাস্তে হাতুড়ি তারা — পরিবার পরিজন মাসি
সকলেই দেখছিল : ফেটে গেছে তলপেট, গাভী,
আমিও কি কমরেড ? সেই কথা সারাদিন ভাবি
পথে পথে কৃষিমুণ্ড, শকুনেরা মাংস খায় চিরে
পরিত্যক্ত আমরা পড়ে থাকি চুপচাপ মার্ক্সবাদী নীড়ে
মার্ক্সবাদ মার্ক্সবাদ, কাটা হাতে লাল ঝাণ্ডা তুলে
মাঝরাতে আমরাও চাষিদের কান দিই মুলে
গাছগুলি
বৃষ্টিভেজা গাছগুলি একদিন মর্গ থেকে
স্বর্গে গিয়ে চুপিসারে কাঁদে,
আমাদের মেয়েরাও প্রতিদিন রান্নাঘরে
রক্ত দিয়ে পোড়া ভাত রাধে
এই বাক্য লিখে আমি উচ্চে তুলি উত্তেজিত মুঠি
পোড়া সূর্যে ডুবে যায় মোরগের ঝুঁটি;
স্মৃতিদীর্ণ ভিটে জুড়ে একদিন চারিপাশে
বেড়ে ওঠে গুল্মলতা ঘাস
ও ভিখারি, ওগো ভিখারি, মাঝে মাঝে শোনা যায় শিহরিত হরিণের শ্বাস
জল যায় লুইপাদে, জল যায় কাহ্নপাদে,
ভেঙে পড়ে শাপভ্রষ্ট চুড়ো
পিতামহ গৃহে ফেরে; হাতে তার কাটামুন্ডু
আর কিছু হলুদের গুঁড়ো
এইসব বাক্য লিখে একদিন চেয়ে দেখি
শৃগালেরা এসে গেছে দোরে
মর্গ নেই স্বর্গ নেই; আমাদের মেরুদণ্ড
নিয়ে গেছে অলৌকিক চোরে