আজ ৮ এপ্রিল কবি নিরজা কামালের জন্মদিন। যদিও সাহিত্য পাঠক তাঁকে চেনেন কচি রেজা নামে। ইরাবতী পরিবার এই শুভলগ্নে তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
সেই ডাক ফেলে এসেছি
মধ্যরাতে কতদিন বাড়ি ফিরি কেউ উদবিগ্ন হয়না
তখন মনে পড়ে বাটার জুতো ফেলে এসেছি, নদী ফেলে এসেছি
আর সাঁতারও
এখন চুল বাঁধিনা ! হলুদ ফিতে ফেলে এসেছি, বাঁশি ফেলে এসেছি বলে
ডাক নাম ভুলে গেছি মা , তুমি কি এখনও তীব্র ডাক দিয়ে খোঁজো, কচি, কচি
কোথায় তুই , মা?
ঘর থেকে বেরিয়ে, উঠোন পেরিয়ে , গলির মোড়ে বাতি হাতে দাঁড়িয়ে থাকো …
কতদিন ঘুমের ভিতর চুল বেঁধে দিতে! হাতেকি এখনও জিরে ফোঁড়নের গন্ধ, মা!
সেই আদর সেই বেণী সেই ডাক আমি ফেলে এসেছি
তাইতো আজ বাড়ি ফিরে ঝলসানো আলোয় টেবিলে
জলের বোতল আর ঢাকা দেয়া খাবার দেখি ! তোমার মুখ দেখিনা!
হয়ত বড়ো বেশি বদলে গেছি ! অনেক বেশি অবিশ্বাসীও
সেই ঘর-উঠোন-ডিসি রোড -চৌরাস্তা বাজিয়ে আরেকবার
ডাক দাওতো মা
শীতের কর্মানুষ্ঠান
পকেট থেকে খুচরো বের করে বললে, এই তো শীতকাল পাখিরা রোদ্দুর লুকালো বারান্দা শিখলো
তুমি কম্পিত বুঝে নিলে সমূহ জ্বরের চিৎকার
অচেনা অজস্র ডানার পাখি দৈর্ঘ্যে বেড়ে বেড়ে রাশি রাশি পাতা একদিন ঝরে পড়লো শীতকালের পায়ে পুনরাবৃত্তি করে তোমাকে শোনা্লো শীতের কর্মানুষ্ঠান
অসুস্থ দাঁত
কেউ যদি উছলে ওঠে, সম্পূর্ণ দেবে । চক দিয়ে লিখবে ভঙ্গিটি। একটু আগ্রহী হয়ে কিনে নেবে এমন এক ধংসাবশেষ যা কেবল কিনতে পারে মাতালই।
ফলতঃ কষ্টের জলে মেয়েটি যে মাছ পুষেছিল, বেড়ে ওঠা শরীরে জামা পরতে গিয়ে ছিঁড়েছিল বোতাম —সে এখন মশলা ও সংসারের মাঝখানে অসুস্থ দাঁত।
অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিরকম এক বুনো হাঁস ছিল মেয়েটি।
নিরানন্দ থেকে আনন্দে উত্তীর্ণ হওয়ার লাল পথে কিভাবে হাঁটতে পারত।
কফিনভর্তি কোলাহল
নোনতা নেমেছে দুপুরবেলার জোড়া পায়ে
একটি নিষিদ্ধ ওষ্ঠ ছুঁয়ে গেল
আসলে উত্তাপ
ধুলো আর চুনসুরকির স্তূপ জ্ব্ললো ভোর অবধি
কান্না ভাঙছিল
বেসবল খেলছিল
মায়ের কানপাশা কারা নিয়ে গেল
মৃত নিজেই বলল , ওইযে মাঠ
কোমরের ভাষা
গ্রীষ্মকাল ও তার পশ্চাৎবর্তীদের হাত ধরে
নিয়ে যাচ্ছে অন্ধ প্রেমিক
শব্দরা ঝুঁকে ঢেকে রেখেছে কোমরের ভাষা
পাশাপাশি মোম , চুমুর ধ্বনি
দূর দিগন্ত থেকে ফিরবার পথে গা খুঁটছিল
দু”ফোঁটা মুছছিল
আকাশে মেঘের ছায়া রেখে
গুলির শব্দের কথা বলে
উড়ে গেল পাখি দু’টি
রাধার শাড়িটি দাও
আজ রাধার শাড়িটি দাও, আমি পরবো, ওই বিষন্নতা আমাকে মানায়
গতকাল বটপাতা প”ড়তে গিয়েও কিছু প্রবচন দেখি, এক অতিচেতনার
কপালে মৃত ঘোড়ার রক্ত। জ্যোতিবিশিষ্ট গানের ভিতর ঢুকে পড়েছে
অম্বুরী তামাক, স্থাবর গান তাই শোনাতে পারি না। ঘোড়ার ভয়ে পাগল
মেয়েটা কোথায় যে পালালো।
অসার্থক জন্ম
পাশ ফিরে জন্মদিন দেখি , আমারতো প্রতিদিনই অসার্থক জন্ম
তাই উদযাপন করিনা দুঃখি মুখ
সে গল্পও এত অবাঞ্ছিত যে মরিয়া হয়ে বেঁচে থাকাই চূড়ান্ত
তুমিকী ক্রুশবিদ্ধ কোনও কাঠের চিৎকার শোনো?
শোনা যায় যুদ্ধের বাজনা
পৃথিবীর একপিঠে ক্ষুধা, উদবাস্তুর ভাঙা বাক্স
নৈরাশ্য শেষে যেবেদনা তার গায়ে এত লাল পিঁপড়ে
কতদিন আশঙ্কায় কেঁপে চলে আসি সেরা বালিহাঁস না ছুঁয়েই
তলোয়ার কোথায় রেখেছে শিরোচ্ছেদ
নিভন্ত মশলার ঘ্রাণে নিতান্ত পিরিচ একা
দুলে ওঠা মালা বুঝি ওই বুকের ফ্যাশন!
ওয়ান ওয়ে পার হয়ে লিপিষ্টিকের সারি
ঠোঁট লাগালো হেলিকপ্টারের সিটে
তুমি কি আদুরে? গাড়ির লাইসেন্সের মতো?
নো-পার্কিং এ গাড়ি রেখে টিকিট খাও রোজ
বিষন্ন কার্তুজ কেন উড়ে যায় প্রদীপবনে
ক্ষেপাটে গিটার ফুলেরা ছোটে লক্ষ্য করে ফুল
একা নই, তবু একাই ভালবাসতে আসি রোজ
সহে না যদি বা আর কেউ পাতা ছোঁয় তোর
পোড়ে আগুন, ঘোরে তাঁবু, জল তোলে ঘট
ডান নয়, তোরা জন্য রাখি হৃদয়ের বাম
জানি, তলোয়ার কোথায় রেখেছে শিরোচ্ছেদ
অগাধ অগাধ বালু, রক্তে ভাসে পুরনো ট্রেন
সামনে পতাকা ওড়ে, পিছনে পতাকা কার
ঘুম ভেঙ্গে কেন যে সিংহ ধনতন্ত্র শোঁকে
উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত কবিতার বই : অবিশ্বাস বেড়ালের নূপুর ( ২০০৯) ভুলের এমন দেবতা স্বভাব (২০১২) অন্ধ আয়নাযাত্রা ( ২০১২) মনে করো : (২০১৭) নির্বাচিত কবিতা ( ২০২০)