| 29 মার্চ 2024
Categories
অনুবাদ কবিতা সাহিত্য

গের্ট্রুড কোলমারের কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

কবি পরিচিতি- কোলমারের জন্ম মধ্যবিত্ত ইহুদী পরিবারে ১৮৯৪ সালে বার্লিনে । ১৯১৭ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম কবিতার বই। ১৯২০ সালের পর থেকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে তার কবিতা। সমালোচকরা বলেছিলেন যে গের্ট্রুড সম্ভবত ইহুদীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জার্মান ভাষার লেখিকা। ত্রিশের দশকের শেষ দিক থেকে যখন নাৎসিবাহিনীর অত্যাচার জোরদার হতে থাকে ইহুদীদের উপর, গের্ট্রুডের বহু কবিতার বই নষ্ট করে ফেলা হয়। নিজের বাসস্থান ছেড়ে বারবার স্থানান্তরিত হতে হয় নাৎসিবাহিনীর হাত থেকে বাঁচবার জন্য।   ১৯৪৩ সালের মার্চ মাসের পরে তার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায় না । কার্যকারণ, সূত্র সবই বলছে সম্ভবত, ঐ সময় তিনি আউসভিৎসে খুন হয়ে যান । 


রাতগুলি

চাঁদে গ্রহণ লেগেছে 

তোমার হাত থেকে ফুটে উঠছে অজস্র অঙ্কুর।

আমি জানি না কবে কীভাবে ফুল ফুটবে-

সমুদ্র-সবুজ তুষারের উপাধানের ভিতর থেকে-

কীভাবে শ্বাস নেবে তারা?

ধূসর তরঙ্গ খেলে যাচ্ছে তোমার চোখের তারায়-

আমার গাল শুষে নিচ্ছে সেই ঢেউয়ের ফেনা। 

কারনেশান ফুলের মত লাল সর্জরসের উচ্ছ্বাস

উপচে পড়ছে বার্চগাছের কাণ্ড থেকে।

চতুর্দিকে উপচে পড়ছে সোনালী বাদামী নৈঃশব্দ!

ও রাত্রির ডানাআন্দোলিত করো তোমার স্কন্ধ!

ও ডানা,  হংসিনীর বিবর্ণ ডানা,

বিস্তার করো তোমার ছায়া- ঢেকে দাও আমায়।

তোমার কণ্ঠস্ফুরিত বক্ষশরীর-

দোলনার মত দুলিয়ে-

ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে যাও আমায়,    

ঘুমের ঢেউ এসে ঢেকে দিক আমায় ধীরে ধীরে।         

জলফড়িং এসে ফিসফিস করে…

এসোরাত…  

তুমি আমার অধরে রেখেছো ডালিমফলের মণিক-দানা,

আপেলের নির্যাস পান করিয়েছ আমাকে।

তারাগুলির স্বর্গীয় মৃত্তিকায় বপন করেছ বীজ,

আঙ্গুরের ক্ষেত শিকড় ছড়িয়েছে সেই মাটিতে…

নীল রসালো আঙ্গুর… আহা!

দ্যাখোআমিই হয়ে উঠছি একটা উদ্যান,

যেখানে প্রতি সন্ধ্যায় তুমি পা রাখো।

হাত রাখোজ্বরগ্রস্ত উষ্ণ আর্ত হাত রাখো

রূপালী দরজার পাল্লায়শীতল কর তাকে;

নিঃশব্দ শাখায় ভরন্ত অ্যাপ্রিকট ফল স্পর্শ করো তুমি।

দখিনা বাতাসের উষ্ণ নিঃশ্বাসের ঝলক-

আমাকে জাগিয়ে তোলে।

এক উপত্যকাযার প্রতিটি তৃণদল কেঁপে ওঠে উচ্ছ্বাসে-

উর্বরপ্রস্তুত ভূমি এক…

উন্মুক্ত শুয়ে আছি আমি। 

মধ্যরাতের শীতল বাতাসে সব ফুলের পাপড়ি বুজে আছে

কিন্তু একটা সুপ্ত ফুলকে তুমিই খুঁজে বের করেছ।

সেই ফুলের বেগুনী গর্ভাশয় কেঁপে কেঁপে ওঠে,

তুমি… হ্যাঁ তুমি এসেছিলে।

পরিপূর্ণ অনুভবে নারী হয়ে উঠছিলাম।

আমার চঞ্চল আঙুলগুলো দুধসাদা পোর্সিলেন

কানায় কানায় পূর্ণ করে তুলেছিল

অভিলাষের সুস্বাদু মশলা সহযোগে

ছড়িয়ে পড়েছিল এক ঐন্দ্রজালিক মোহ,

সিক্ত বাষ্পে ছেয়ে গিয়েছিল চরাচর।

তোমার মেলে দেওয়া ঝাপটানো ডানায়

মুড়ে রেখেছিলে আমাকে,

সুখ আর সৌভাগ্যের বিশাল জাহাজ যেন ডুবে যাচ্ছিল

আমার বুকেআমার অন্তরের গভীরে।

এখন জোয়ারের স্রোত তোমাকে শান্তভাবে বয়ে নিয়ে আসে।

পরম যত্নে আদর করে জাহাজের কিনারে।  

টালমাটাল ঝড়ো হাওয়ায় সেই জাহাজ

বিরাট বিরাট উঁচু মিনারের-

সেই বন্দর থেকে ভেসে এসেছিল,

সেই জাহাজেও ছিল বিশাল উঁচু ভাবনার মাস্তুল।

ও জাহাজ, তুমি কি টের পাও

যে তোমার ধূমল ঘূর্ণায়মান কেশের  

মধ্য দিয়ে সিগাল ডানা মেলে পাক খায়?

ম্যানহাটাননিউ ইয়র্কবালটিমোরে…

বন্দরে বন্দরে এখন ঘুরে ঘুরে বেড়ায় জাহাজটা।

জমে উঠছে আগামীর ধূসর কুয়াশা।

আমার ঝকঝকে আয়না ধীরে ধীরে

ঝাপসা হয়ে উঠছে।

আহাঢেউপ্রিয় ঢেউ… মরমে মরে আছে

শেষ দেখাশেষ কথাগুলো।

আহাআমি বুঝি… বুঝি  

দূরের ডাক শুনেছ তুমি।

দূরের পরিযায়ী হাঁসের ঝাঁকে,    

দূরের তীর্থক্ষেত্রে তোমার নিমন্ত্রণ।

আমার ঘন কালো কেশের থেকে খসে পড়ে

ঝিনুকের মুকুট।

তুমি ঘুমোচ্ছবেশঘুমাওবিশ্রাম নাও…

এখন আমায় একটু কাঁদতে দাও।

(‘ন্যাখটে’ কবিতা অবলম্বনে লেখা)

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত