আনুমানিক পঠনকাল: 4 মিনিট


আজ ১ মে কবি, গদ্যকার ও সম্পাদক কুন্তল মুখোপাধ্যায়ের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
নহবত
বিয়েবাড়িতে একলা হওয়াই আমার স্বভাব, তবু
সব বাড়িতেই একটি দৃশ্যে থমকে যাচ্ছে প্রাণ
দেখেছি হিন্দু ললনাদের
প্রতিরাত্রে বিয়ে দিচ্ছেন বিসমিল্লাহ খান
অসফল
কিস্যু যাদের হয় না তাদের বাঁদিক ঘেঁষে সময় পেতে বসি
মনের রোগ ? না অবিশ্বাসে
কান্না আসে
ডান-পা দিয়ে বাঁ-পার তলা ঘষি
কিস্যু যাদের হয় না
তারা এক সহস্র লোকের মধ্যে লুকোয় নিজের ভেতর
নিজের জন্যে বের করে নেয় অভাবী ভোর
একলা আতর
পাখি
আড়াল-প্রিয় কান্না, এসো, ততদিন এই অন্ধকারে
সুইসাইডের নকশা তৈরি রাখি

রাগ
তোমাকে বোঝে না কেউ। নিজেও কি বুঝেছ কখনও ?
কোন হাওয়া শান্ত করে কোন হাওয়া হু হু বয় শোনো
বড়ো কথা বল তুমি আবেগের ক্রীতদাস বড়ো
এত প্রতিশ্রুতি তুমি এত কষ্টে, ভয়ে জড়োসড়ো
আবেগ তোমাকে বোঝে? ক্রোধ বোঝে দিনের অতীত?
পড়ন্ত রোদের ছায়া জানে আজ তীব্র ছিল শীত?
জানে না জানে না বলে সে শুধু তোমার রাগ দেখে
আগুন ধরায় মনে খুব দূরে চলে যেতে শেখে
কে কাকে শেখায় রাত কে কাকে মেপেছে কোন স্কেলে
এ কোন গভীর দেশে বিরহিনী ভুল করে এলে !
এসেছ যখন, প্রিয়, কীর্তিনাশা দাও অঞ্জলিতে
আশ্চর্য সান্ত্বনা আছে প্রকৃত কান্নার পৃথিবীতে !
আমি তো তোমাকে দেখি আমি তো আমাকে বেশ চিনি
আমি যে রাতের চাঁদ তুমি সে রাত্রির নিশীথিনী

বিবাহ
আসলে তোমার কথা কানে এলো তখনই যখন
মৃত্যুর খবর হয়ে ছড়িয়ে পড়েছ চারিদিকে
হে তরুণ মৃত ঠিক তখনই তো বিয়ে দিনক্ষণ
স্থির হল তাহেরুল তোমার বিধবা হবে , তুমি
মৃত বর , ও-সাফিন , বয়সে ও মৃত্যুতে তরুণ
সেইমত মালা এলো ফুল এলো , সুগন্ধী , মরশুমি
বাসনা পোড়ার গন্ধ চারিদিকে সূর্যাস্ত এখন
বিবাহ সানাই হয়ে কার যেন কান্না শোনা যায়
মুখে-হাত-চাপা ভিড় , শোকবাড়ি , আত্মীয়স্বজন
মৃত বর জীবিতের ? এ কেমন কল্পনা তোমার ?
আসলে তো মৃত বলে জীবিতেরও ঠিক নেই কোনও

চটকপুর /২০১৮
সবুজ চুল পাইন গাছ আমাকে নাও , দূরের ঝাউ
ডাক পাঠায় স্থির দীঘির অকম্পন প্রেমিক মন
ঝিঁঝি র সুর এমনই এক শব্দদূর দূরত্বের
ঘেরবিহীন পাহাড়পুর ডাক পাঠায় ডাক পাঠায়
এখানে রোদ অলস নীল দুপুরঘেরা রিরংসায়
অল্প ঢুল এসেছে চোখ ফিরিয়ে দেয় না দৃশ্যদের
এখন নীল বিকেল নেমে দিনের শেষ
শেষ রোদের
প্রান্ত ধরে রেখেছে দূর পাইনশীর্ষ মরিয়া হয়
ডাক পাঠায় নীল পাহাড় হেরে যাবার হেরে যাবার
ছোট্ট মুখ শেষ রোদের , ছেলেবেলার মুখের ভিড়
দূর শিবির ফরেস্ট টেন্ট আগুন মাখে আগুন খায়
ডাক পাঠায় পাইন বন ডাক পাঠায় ডাক পাঠায়

বন্ধুত্ব নিয়ে
দরজা বন্ধ হলে সারি সারি অসংখ্য দরোজা খুলে যায়
তবু দেখি
পুরাতন পাখি ক্ষয়াটে মিছরি ঠোকরায়
অনন্ত নক্ষত্রবীথিকা
পপলার সারি, তুষার পড়ছে, কী ভীষণ সম্পর্কের শীত!
এবারে দূরের পাখি আসবে কিনা জানা নেই, তবে
মৃদু আলোয় ভিড় করছে ভুটানিরা,
হলুদ উলের শীত, দূরের বন্ধুরা

বাসাংসি জীর্ণানি
মল মূত্র ছাড়া জীবনে কিছুই যারা ত্যাগ করতে পারেনি
হে প্রিয় শপিংমল তাদের ঈশ্বর হও ভাই
ইংরাজি ও বাংলা জেনে যে মেয়েটি হয়েছে হকার
হে প্রিয় শপিংমল
এ শীতেই বয়ফ্রেন্ড তার পাশে খুব দরকার
জীর্ণ জামা ফেলে দিয়ে কেউ কেউ দেখে
তাদের পোশাক নেই আর
হে প্রিয় শপিংমল, তুমি কি দিয়েছ ওদের নয়া প্যান্ট কুর্তা সালোয়ার?

মিস্টার ম্যাক্সের ভারতীয় গাইড
দেখুন মিস্টার ম্যাক্স এই আমাদের ইন্ডিয়া দ্যাট ইজ ভারত
এই যে আমাদের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ওই যে সাঁইসাঁই ছুটে যাচ্ছে গাড়ি
ওই যে একদল লোক বাড়ি ফিরছে স্যার ,
ওরাই কেরানিদল, আমাদের টার্গেট কাস্টমার
আর ওই যে নরম ভোরের ভিতরে জেগে উঠছে গ্রাম
ওই যে জমি দেখতে যাচ্ছে হেলারাম বাউড়ি
এই দেখুন অপারেশন বর্গায় জমি হারানো মধ্যবিত্ত
অর্ধেক সামন্ত, রোজ পর্ন ফিল্ম দেখে চুপিচুপি
ঘোরান আপনার হুইস্কির জল দেখতে পাবেন
দখল আর রক্তের সহ অবস্থান
মিস্টার ম্যাক্স, এই বারে ওই যে মেয়েটি নাচছে, ওই দেখুন ওর বস্তিঘরে
নেমে আসছে অন্ধকার জল ঘোরান জল ঘোরান
একটা অদ্ভুত আঁধার দেখছি চারিদিকে
নেমে আসছে ব্যান্ড গায়কের গলা মনে হচ্ছে প্রতিবাদ
এ সিজিনে লস খেয়ে যাব না তো স্যার?


কবি, গদ্যকার ও সম্পাদক।