আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
সমস্ত পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়েছে মারণ ভাইরাস। করোনাতঙ্কে জর্জরিত মানুষ । চিন, ইতালি, স্পেন, ইরানসহ অন্যান্য দেশে মৃত্যুমিছিল। ভারতেও বসিয়েছে করোনা তার নীরব ও নিষ্ঠুর থাবা। মহামারী পূর্ব ধাপ। সরকার ঘোষণা করেছে লকডাউন। অর্থাৎ সবকিছু বন্ধ। ট্রেন-বাস -বিমান চলছে না। লোকজন যদি বাঁচতে চায় ঘরে দরজা বন্ধ করেই থাকতে হবে। সরকার গরির মানুষকে চাল-আলু দিচ্ছে বিনামূল্যে।
আমাদের পাড়ার তেন্নাথ ভ্যান চালায়। তাও নিজের নয়, অন্যের। ওর ছেলে পটল মিড ডে মিলের থেকে চাল-আলু পেয়েছে। ওর বউ রেশন থেকে বিনি পয়সায় চাল-আলু এনেছে। একটা সপ্তাহ বেশ চলে যাবে।
ফকির রেল লাইনের ধারে ছোট্ট একটা ঘরে থাকে। ওর বউ ঠোঙা বানায়। এখন তাও বন্ধ হয়ে গেল। তিনটে পেট আরো আছে। বুড়ো বাবা-মা- বাচ্চা। ফকিরের রোজগার নেই তেমন। ট্রেনে ট্রেনে কখনো শশা, কখনো গজা বিক্রি করে।
রেলগেটের মুখে দেখা। ফকির বাড়ি ফিরছিল হেঁটে। মুখ ভার। ‘২১ দিন কীভাবে চলবে পাঁচটা পেট’। তেন্নাথ ফকিরের সামনে দাঁড়ায়। বলে, কী ভাই ফকির , বাড়ির দিকে যাবি তো? চল। ফকির হাসল। উঠে বসল ওর ভ্যানে। বললে, লক ডাউন চলছে দাদা। মেন রাস্তায় উহ্ কতো পুলিশ। তেন্নাথের ভ্যানের সামনে ব্যাগে পুঁইশাক মাথা দোলাচ্ছে। দেখে ভালো লাগে ফকিরের। বলে, পুঁইশাক কোথায় পেলে?
-ক্যান? বাজারে। শ্যাষবেলায় শিবুদার দোকানে ছেল। কম দাম।
-কীভাবে চলবে তেন্নাথদা? পাঁচটা পেট বাড়িতে। এতদিন লকডাউন, আমরা খাবো কী!
-সত্যিই তো, চিন্তার কথা। বললো তেন্নাথ।
ফকির শুনেছে তেন্নাথের বাড়িতে চাল আছে। সমস্যা হবে না তেমন। আমারে কিছু চাল দেবা তেন্নাথদা? গত শনিবার থেকে কাজকাম বন্ধ। বাড়ি বসে আছি চারদিন হ’ল । হাতে টাকা নাই।
তেন্নাথ ফকিরকে তিন-চার কেজি চাল দিতে রাজি হয়। বলে, রেশনে পেয়েছি। তোরে দেব নে। এই রকম সময় সবাই মিলে বাঁচতি হবে তো। শিবমন্দিরের সামনে নামিয়ে দেয় ফকিরকে। বলে, এখানে থাক। বাড়ি থেকে চাল নে আসি। তাপ্পর তোরে নামায়ে মালিকরে ভ্যান দে বাড়ি যাবো…আমারো একটাও খদ্দের হলনি আজ।
শিবমন্দিরের সামনে চৈত্রের দুপুর রোদে হা করে ক্লান্ত দাঁড়িয়ে থাকে ফকির, তেন্নাথদা চাল নিয়ে আসবে।
কিছুক্ষণ পর চাল ব্যাগে ভরে ভ্যান নিয়ে শিবমন্দিরের দিকে আসতে থাকে তেন্নাথ। পথে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে দেখা। কোনো কথা না। সপাং সপাং লাঠি। তেন্নাথ যথেষ্ট বয়স্ক তবু লাঠি থামেনি পুলিশের। কোনো কথাই শোনে না ওরা। এখন ওদের হাতেই শান্তি রক্ষার ভার। আইন ভাঙা বলে কথা। সরকারী নির্দেশ অমান্য করা। একজন বললো,বাইরে বেরিয়েছিস মুখে মাস্ক নেই কেন? ব্যাগের মধ্যে কি? দেখি-বার কর। আরেকজন বললো, দেখ তো মালের বোতল আছে নাকি ব্যাগে? শালা, লকডাউন, বাইরে বেরিয়েছিস কেন ভ্যান নিয়ে?একজন তো তেন্নাথের ভ্যানের সামনের চাকার হাওয়া খুলে দিল।
লকডাউন। চল শালা, ভ্যান ঘোরা। টানাটানিতে ছিঁড়ে যায় ব্যাগ,রাস্তায় পড়তে থাকে চাল। পড়ে থাকে অসহায়ের কান্নাভেজা যন্ত্রণা।
কবি , গল্পকার ও প্রাবন্ধিক । জন্ম-কর্ম ও বেড়ে ওঠা উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়াতে । পড়াশুনো হাবড়া হাই স্কুলে। শ্রীচৈতন্য মহা বিদ্যালয়ে কলেজ জীবন । বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর । পেশায় গৃহশিক্ষক , নেশায় লেখক । কিছু কবিতা , ছোটগল্প , অণুগল্প ও প্রবন্ধের বই প্রকাশিত । এখনো পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ২৫টি । সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে কাব্যোপন্যাস ” পাখি-যাপনের জার্নাল ” । ২০১৯ এ প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ” বিষাদ-সুন্দরী ও লালপদ্ম ” গল্পগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন ” অনিলা দেবী সাহিত্য সম্মান ” । এছাড়াও পেয়েছেন বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ পুরস্কার , সুতরাং সাহিত্য সম্মান , টেগোর ভিলেজ সাহিত্য পুরস্কার সহ আরো কিছু পুরস্কার ও সম্মান । ১৯৯৬ সাল থেকে সম্পাদনা করে আসছেন ‘ অবগুণ্ঠন সাহিত্যপত্র’টির । প্রকাশিত হয়েছে নির্বাচিত কবিতা ” নির্বাচিত ১০০” । মূলত লিটিল ম্যাগাজিনের লেখক বলতেই গর্ববোধ করেন । তবে বেশ কিছু বানিজ্যিক কাগজেও লিখেছেন । অণুগল্পের বই ” ছক্কুমামা , কর্নেল কাপুর ও অন্যান্য গল্প ” যথেষ্ট জনপ্রিয় ।
Related