Reading Time: 3 minutes
আজ ০৩ মার্চ কবি মানিক সাহার শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
ঝুলবারান্দা
একটি ঝুলবারান্দায় পড়ে থাকা বিকেলের রোদ
তাতে তোমার চুলের গন্ধ লেগে আছে
তুমি এসে দাঁড়ালে কিছু বিবাগী পাখি
কিংবদন্তীর ঘোড়া পিঠে করে শ্লোক নিয়ে আসে
মগ্ন ভিখিরি চোখ বুজে পদাবলী গায়
যেন কতদিন হল সে তোমাকে মাধুকরী শিখিয়ে চলেছে
তার ঋতুর সময় হলে তুমিও কেমন যেন ম্লান হয়ে থাকো
তোমার গন্ধ চেনা ফুটপাত একা পড়ে থাকে!
একটি গাছ ক্রমশ একটি বৃক্ষ হয়ে উঠছে –
গলিত রোদের স্পর্শ লেগে আছে তার ডালে। তার পাতায়
তার ছায়া নিয়ে শিশুদের দল ছোঁয়াছুঁয়ি খেলছে
তার ফলে কত রং লেগেছে। অথবা রং গুলে নেবার
খেলায় মেতে উঠছে কয়েকটি পাখি ও তার চিকন সন্তান…
এইভাবে একটি পরিচয় ক্রমশ একটি সম্পর্ক হয়ে উঠছে
কেউ সেভাবে তার বেড়ে ওঠা টের পাচ্ছে না!
যন্ত্রণা
কানের পাশ দিয়ে শয়তানের দূত ছুটে যায়
রাস্তাগুলি দিনদিন জঙ্গলের বুকের মতো
অন্ধকার ও রহস্যে ঘন হয়ে উঠেছে
নির্বাণের কথা বলেছে যে পাখি
সে এখন খাঁচায় বন্দী
তার ডানা থেকে অন্ধকার মুছে দেবে
এমন কোন চাঁদ উঠছে না!
লাশ
চশমার কাচ যতটা হালকা
গোধুলি ততটা মোহময়
গান গাইতে গাইতে সাম্রাজ্যের সওদাগর
মানুষ খুন করে চলেছেন
তাকে হাত ধোয়ার জল দিতে হবে
গরমে দিতে হবে শান্ত শীতল পাটি….
নয়তো এই তুমি বা এই আমি
আমরা দুজনেই লাশ হয়ে যাব।
আমাদের ছায়াগুলি
কখনো কখনো এমন হয়
সন্ধ্যার বাতাস গায়ে মেখে
আমাদের রঙিন ঘুড়ির দিন ফিরে আসে।
দেয়ালের রংচটা অংশ থেকে
কেউ কেউ ছায়ারোদের খেলা চুরি করে।
অস্তিত্বের মুগ্ধতার দিকে তাকে ছড়িয়ে দেয়
যেভাবে স্নানের সময় পাড়াগাঁ’র বৌ আঁচল বিছিয়ে রাখে পুকুরের জলে।
সেই জল, ছায়া নিয়ে যে করুণ কোলাহল করে
তাতে আকাশ আকাশ গন্ধ মনোরম।
অথচ দেখো,
আমাদের ছায়াগুলি কীরকম নীচ ও প্রতারক –
আমাদেরই ফেলে রেখে, একবারও না-ডেকে
রোদের বাড়ির দিকে হাসিহাসি মুখ করে প্রতিদিন হেঁটে চলে যায়!
আমাদের ঘুম পেয়ে যায়
সেও এক ছোটবেলা –
কুরুক্ষেত্র, দুঃশাসন, দ্বৈপায়ন হ্রদের জলে
ফুটে থাকা নীল পদ্মফুল
কিংবা সহজ সুরের ভাটিয়ালি
দূর থেকে নাম ধরে ডাক দিচ্ছে কেউ
আমাদের সন্ধ্যেগুলি মাঝে মাঝে মোহময়ী লজেন্স হয়ে যায়
তাকে চুষে চুষে জ্যোৎস্না বানাই
অন্ধকার রাত হলে কেউ কেউ হরবোলা
গুলি-খাওয়া হাঁসের পালক থেকে স্তব্ধতা বের করে আনে
অতিরিক্ত স্তব্ধ হলে আমরাও চুপ করে বসি
জীবন ও মৃত্যুর মায়াময় অনুবাদ খুঁজি
অতঃপর স্তব্ধতা ঘন হয়ে এলে
আমাদের ঘুম পেয়ে যায়।
আমার বিবর্ণ যা তা দিয়েই ভিজিয়ে নিচ্ছ মেঘ
এভাবে পবিত্র হলে হোমকুণ্ডে বিশ্বাস থাকে না
আগুনের শিখাগুলি জ্বলে নেভে আর
নিদ্রিত পাখিঘর অজানা বিপদে কেঁপে ওঠে।
লাবণ্য ছড়িয়ে রাখা প্রজাপতি ও ফুলের মিলন নেই
এখানে বোমের সাথে রাত যূথচারী
অপরাধ নির্মম ও নিবিষ্ট চিত্তে ছিঁড়ে দিচ্ছে ডানা
তুমি পা রাখছ গোধূলির গায়
গুছিয়ে নিচ্ছ নিজস্ব স্বার্থ যেটুকু
প্রতিটি মানুষ শুধু ভালবাসা চায়।
বিগত নদীর স্রোতে কৃশ হয়ে পড়ে থাকে ছায়া
উঁচু মূর্তির নিচে যেটুকু রোদের রেশ
মালিকের আজ্ঞাবহ ভৃত্যের মতো
একে অপরের গায়ে মিশে থাকে
দানা ছড়িয়ে দেওয়া চাতালের উপর
পায়রার মতো উড়ে আসে, উড়ে চলে যায়।
যারা বলে কবিরা স্বপ্নে বেঁচে থাকে
যে জালে চাঁদের আলো এসে পড়ে
সে জালে মাছের মৃত্যু মনোমুগ্ধকর
তাতে চোখ এঁকে দিতে যে এসেছিল
এই হত্যার দেশে এইসব বিলাসিতা
Related