| 29 মার্চ 2024
Categories
ইতিহাস এই দিনে

ইংরেজি নববর্ষের গোড়ার কথা

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

ইরাবতী পরিবারের সকল সদস্য,লেখক,পাঠক, শুভানুধ্যায়ী ও বিজ্ঞাপন দাতা সকলকে নতুন ইংরেজি নববর্ষের প্রীতি ও শুভেচ্ছা। সকলের জীবনে নতুন বছর ভরে উঠুক শান্তি,সুখ সমৃদ্ধি, সুস্বাস্থ্য ও আস্থায়।


আমাদের দেশে নববর্ষ হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। তেমনি ১ জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষ। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে উৎসবের মেজাজে সাড়ম্বরে পালিত হয়ে থাকে। কিছু জাতি যেমন চীনা, ইহুদি, মুসলমান প্রভৃতির মধ্যে নিজ নিজ ক্যালেন্ডার অনুসারে নববর্ষ পালন করতে দেখা যায়।

যেসব দেশে গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয়, তারা সাধারণত নববর্ষ ১ জানুয়ারিতে পালন করে থাকে। ঐতিহাসিকভাবে, রোমান ক্যালেন্ডারে নতুন বর্ষ শুরু হতো ১ মার্চ থেকে। এর প্রভাব বছরের কয়েকটা মাসের ওপর দেখা যায়। ল্যাটিন ভাষায় সেপ্টেম্বরের অর্থ হচ্ছে সাত, অক্টোবর আট, নভেম্বর নয় এবং ডিসেম্বর দশ। সেই সময় রোমান সরকারের নতুন অধিবেশন শুরু হতো জানুয়ারি মাস থেকে। জুলিয়াস সিজার খ্রিস্টপূর্ব ৪৭ সালে এ ক্যালেন্ডারে পরিবর্তন ঘটিয়ে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের সৃষ্টি করেন। এতে খ্রিস্টপূর্ব ৪৪ সালে মার্ক অ্যান্টোনির কনসুল এক দফা পরিবর্তন ঘটানোর পর খ্রিস্টপূর্ব ৮ সালে এম্পরর অপাসটাস সিজার আরেক দফা পরিবর্তন ঘটান। সর্বশেষ পোপ ১৩তম গ্রেগোরি ১৫৮২ সালে এই ক্যালেন্ডারে পরিবর্তন ঘটিয়ে এর বর্তমান কাঠামোতে নিয়ে আসেন। এ পরিবর্তিত ক্যালেন্ডারে নতুন বর্ষের শুরু হয় ১ জানুয়ারি।

১ জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষ, আজ যা সাড়ম্বরে পালিত হয়ে থাকে, দুই হাজার বছর আগেও কিন্তু এমনটি ছিল না। এমনকি দিন-তারিখ বছরও। ফিরে দেখা যায় সেসব ইতিহাস।

মধ্য আমেরিকার মেক্সিকোতে এক সভ্যতার উদয় হয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী থেকে এ সভ্যতার বিকাশ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, যা বিস্ময়কর। অতীব বিস্ময়কর। এ সভ্যতার নাম ‘মায়া’ সভ্যতা। মায়া সভ্যতার বহু বিচিত্র কীর্তি-কাহিনীর মধ্যে হায়ারোগি্লফিক লিপি একটি। সম্প্রতি এ দুর্বোধ্য লিপির পাঠোদ্ধার করা হয়েছে। এর ফলে মায়াদের সম্বন্ধে অনেক নতুন তথ্য জানা গেছে। মায়াদের সংখ্যাতত্ত্বের সম্যক জ্ঞান, গ্রহ-নক্ষত্রের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের অসাধারণ দক্ষতা, স্থাপত্য-শিল্পকলার বহুবিধ ব্যুৎপত্তি বিস্ময়ে আমাদের হতবাক করে দেয়। মায়ারা আবিষ্কার করেছিল সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর ৩৬৫ দিন লাগে। নির্ভুল বিচারে এই গণনা ছিল ৩৬৫-২৪২০ দিন। এ সময়কালকে ১৮ মাসে ভাগ করে নিয়েছিল তারা। যার প্রতিমাসের দিন-সংখ্যা ছিল ২০। বলা হয়ে থাকে, খ্রিস্টপূর্ব ৭৫০ সাল নাগাদ তিনি যে ক্যালেন্ডারের উদ্ভাবন করেছিলেন, সেখানে দিন-সংখ্যা ছিল ৩০০। এই ৩০০ দিনকে সমান ১০টি ভাগে ভাগ করে মাসের দিন-সংখ্যা ৩০ করা হয়েছিল। যা কিনা আজকের মাসের গড়দিন। একে রোমুলাস ক্যালেন্ডার বলা যেতে পারে। এ রোমান ক্যালেন্ডারে প্রথম শুরুর মাস ছিল ‘মারটিয়াস’, অর্থাৎ আজকের মার্চ মাস। রোমানদের যুদ্ধদেবতার নামানুসারে এ মাস। ১ মার্চ ছিল বর্ষ আরম্ভের প্রথম দিন। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে জুলিয়াস সিজার এই ক্যালেন্ডারের কিছু সংশোধন করিয়ে নিয়েছিলেন। তৎকালীন প্রখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে তাকে সাহায্য করেছিল। এই ক্যালেন্ডারে পৃথিবীর সূর্য প্রদক্ষিণকাল ৩৬৫ দিন। কিন্তু বছর ৩৬৫ দিনে রেখে অতিরিক্ত দিন-সংখ্যা (১-৪ দিন) প্রতি চার বছর অন্তর ফেব্রুয়ারি মাসের সঙ্গে যোগ করা হয়।

তখন ফেব্রুয়ারি মাসের দিন-সংখ্যা দাঁড়ায় ২৮ থেকে ২৯ দিন। এই একটি বাড়তি দিনকে বলা হয় ‘লিপ’-ডে। আর বছরটি হলো ‘লিপিয়ার’। এ ক্যালেন্ডারটি ‘জুলিয়ান ক্যালেন্ডার’ নামে খ্যাত ছিল। বহু বছর এ ক্যালেন্ডারটি চালু ছিল।

অনেককাল পরে এই জুলিয়ান ক্যালেন্ডারটির পুনরায় সংশোধন করে নিয়ে নতুন একটা ক্যালেন্ডার বাজারে চালু হয়। তৎকালীন মহামান্য ত্রয়োদশ পোপ গ্রেগোরি ১৫৭৭ সালে দুজন জ্যোতির্বিজ্ঞানীর সাহায্য নিয়ে পুরনো ক্যালেন্ডারটি গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত।

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত