Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

কবিকে মুক্ত কর মুক্ত কর অন্ধকারের এই দ্বার

Reading Time: 3 minutes

পুণে-র ইয়েরাওয়ারা জেলে বন্দী কবি ওয়রওয়রা রাও গুরুতর অসুস্থ। গত ক’মাসে এই অশীতিপর মানুষটির ওজন কমেছে ১৩ কিলো! বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জেল সাক্ষাৎ, চিঠিপত্র। কবিপত্নী হেমলতা এক সপ্তাহে মাত্র দু’মিনিট মাত্র কথা বলতে পেরেছেন।

এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে কবি ওয়রওয়রাকে নিঃশর্ত মুক্তি জানিয়েছেন ২০ বিশিষ্ট নাগরিক। বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেছেন অধ্যাপক আনন্দ তেলতুম্বড়েকে গ্রেফতারের পর দেশজোড়া আওয়াজ না ওঠায়। রাষ্ট্র এই লকডাউনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে তার নিজস্ব উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়ন করছে। কারা অন্তরীণে কবি ওয়রওয়রা রাও এর সুচিকিৎসা এবং অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন তারা।

বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, কবি ওয়রওয়রা রাও এর প্রথম কবিতার বই ‘চালি নেগালু’ (ক্যাম্প ফায়ার) বেরিয়েছিল ১৯৬৮-তে। শেষ সংকলন ‘বীজভূমি’ ২০১৪-য়। এই অর্ধশতকেরও বেশি সময় ধরে পাঠকের কাছে কবি ওয়রওয়রা রাও পরিচিত হয়ে উঠেছেন প্রতিরোধের কবিতার এক অগ্রণী মুখ হিসাবে। যাঁরা তার কবিতার সঙ্গে পরিচিত নন, তাঁরাও আজকে তাঁর নাম জানেন- জার্মনির রাইখস্ট্যাগ ট্রায়ালের আদলে সাজানো ভীমা কোরেগাঁও ও প্রধানমন্ত্রী হত্যা চেষ্টা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত একজন বন্দি হিসাবে বর্ষীয়ান এই কবি সেই ১৯৭৩ থেকে গ্রেফতার হয়েছেন, বহু দফায় কারাবন্দী থেকেছেন বহু বছর। এ’দেশের আর কোনও কবিকে এতদিন বন্দি হয়ে থাকতে হয়নি। তেলুগু সংস্কৃতিতে মৌখিক ভাষ্য বিষয়ে তাঁর পোস্ট ডক্টরাল পেপার, এবং পরবর্তীতে তাঁর থিসিস ‘তেলেঙ্গনা মুক্তিসংগ্রাম ও তেলুগু উপন্যাস: সমাজ ও সাহিত্যের আন্তঃসম্পর্কের একটি পাঠ’-কে সমকালীন মার্কসীয় সাহিত্যচর্চায় মাইলফলক বলে ধরা হয়। ১৯৬৬ থেকে ‘৯২, ওয়রওয়রা রাও প্রতিষ্ঠিত ও সম্পাদিত ‘স্রুজনা’ পত্রিকা আধুনিক তেলুগু সাহিত্য চর্চার সবচেয়ে মননশীল সাময়িকী বলে বিবেচিত হয়েছে। সমকালীন বিশ্ব প্রতিরোধ সাহিত্যের সঙ্গে তেলুগু পাঠকদের পরিচয় করিয়ে গেছেন ধারাবাহিকভাবে, জেলে বসেও অনুবাদ করেছেন কেনিয়ার সাহিত্যিক নগুগি ওয়া থিংগো-র উপন্যাস ডেভিল অন দ্য ক্রস বা জেল ডায়েরি ডিটেইনড। তাঁর নিজের কারাবাসের দিনলিপি সহচরলু ‘ক্যাপটিভ ইমাজিনেশন’ নামে অনুদিত হয়ে আন্তর্জাতিক পাঠকের সম্ভ্রম আকর্ষণ করেছে।

মার্কসবাদে আস্থাশীল কবি ওয়রওয়রা রাও কোনোদিন তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাসকে লুকোতে চান নি, গণতান্ত্রিক অধিকার, ও আরো প্ৰসারিতভাবে বললে বুনিয়াদি মানুষের অধিকারের পক্ষে ধারাবাহিকভাবে সমর্থন ও সক্রিয়তা জুগিয়েছেন, সরব থেকেছেন। ১৯৬৭-তে নকশালবাড়িতে ঘটে যাওয়া কৃষক বিদ্রোহ যখন ভারতীয় রাজনীতিতে একটি নির্ণায়ক বাঁকবদল ঘটিয়েছিল, অন্ধ্রপ্রদেশের প্রগতিশীল সাহিত্যকর্মীদের বড় অংশটাই সে সময়ে পক্ষ অবলম্বনে দ্বিধা করেন নি, সেই কাতারের দুই তরুণ মুখ ছিলেন চেরবন্ডা রাজু ও ওয়রওয়রা রাও। ‘৬৭ থেকে আজ, অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ওয়রওয়রা রাও ক্রমশ থেকে গেছেন বিদ্রোহের ভাষ্যকার। তাঁর বিদ্রোহের ভাষা শাসকের ঘুম নষ্ট করেছে। জীবনের প্রতি যে আবেগ, যে জীবনীশক্তি এই ভাষার জন্ম দেয় তা ফ্যাসিবাদের পক্ষে তা হজম করা কঠিন। তাই, আজ আশি পেরুনো বয়সে বন্দী রেখে, জেল থেকে জেলে ঘুরিয়ে তাঁর জীবনীশক্তিকে নিংড়ে নেওয়া হচ্ছে, যাতে জেলের বাইরে বের করার আগে তাঁর মৃত্যুশয্যায় শোওয়া নিশ্চিত করা যায়। ঠিক যে পরিণতি হয়েছিল তাঁর বন্ধু ও সহযোদ্ধা চেরবন্ডা রাজুর।  আজ চুপ থাকলে কাল ফ্যাসিবাদের দেওয়াল চারপাশ থেকে চেপে ধরে আমাদেরও শ্বাস বন্ধ করে দেবে। আমরা, পশ্চিমবাংলার কবি, লেখক, শিল্পী ও সম্পাদকেরা চাই বিদ্রোহের কবিতা মুক্ত হোক। তাই আমরা স্পষ্টভাষায় কবি ওয়রওয়রা রাও-এর মুক্তির দাবিতে মুখর হচ্ছি। মুখর হচ্ছি, ভারতের জেলে বন্দী প্রতিটি লেখক, কবি, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীর মুক্তির সপক্ষে। গলা মেলান আমাদের সাথে, এ আওয়াজ আরও উচ্চকিত হোক। দুঃশাসন শুনুক, তার প্রাসাদের বাইরে প্রতিরোধের কন্ঠস্বর জাগছে, কলরব হয়ে বাড়ছে, রণধ্বনি হয়ে ফেটে পড়ছে।
এই সময়ে ‘না’ বলতে পারা কবিদের, শিল্পীদের, চিন্তাকর্মীদের খুব দরকার। তাই, কবিকে মুক্ত কর। মুক্ত কর অন্ধকারের এই দ্বারকে। এই বিবৃতি এখন সামাজিক মাধ্যমে ঘুরছে, এই বিবৃতিতে একমত যারা তারা নিজ নিজ ওয়ালে শেয়ার করছেন স্বাক্ষরের জায়গায় নিজের নাম যুক্ত করে। এবং যারা এই প্রতিবাদে যুক্ত হতে চান তারাও বিবৃতিটি কপি করে স্বাক্ষরের জায়গায় নিজের নাম যুক্ত করে পোষ্ট করতে পারবেন বলে জানা গেছে।

এই বিবৃতিতে একমত হয়ে এখন পর্যন্ত  স্বাক্ষর করেছেন – 
শঙ্খ ঘোষ, সব্যসাচী দেব, কবীর সুমন, হিরণ মিত্র, কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বপন দাসাধিকারী, রাহুল পুরকায়স্থ, শুদ্ধব্রত দেব, শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ, মৃদুল দাসগুপ্ত, বিভাস রায়চৌধুরী, বিপ্লব ব্যানার্জী, সোমরাজ শূর, বিপ্লব শিকদার, দেবাশিস মৈত্র,সৌভিক রায়, অর্কদীপ, সুপ্রিয় ব্যানার্জি, শুভ নাথ, স্বপ্ননীল, অরিজিত কুণ্ডু, সুস্মিতা বিশ্বাস, কিঙ্কিণী সেনগুপ্তসহ আরো অনেকে।

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>