আজ ২৪ ফেব্রুয়ারি কবি ও সাংবাদিক রুদ্র হকের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
জ্বর এক হলুদ ভালুক
জ্বর এক হলুদ ভালুক
আজ বনে সে ছাড়া কেউ নেই
একা একা বনের কিনারে তাই এক পাহাড়
জলাধার সঙ্গে নিয়ে আসে
পদতলে ঝর্ণার ধ্বনি
রাত্রি বহমান
দলে দলে ফুল টোপর পরা রমণী
ভালুকের রোমশ বুক খামচে ধরে আছে
বনে সে ছাড়া কেউ নেই
নিদ্রাহীন হলুদ আকাশ
নায়িকা
তোমার জ্বর হলে
পৃথিবীতে শীত নেমে আসে
একা ঘেমে ওঠে গাছের ফুল
হেঁটে হেঁটে ধীর পায়ে
দূরে মিলায় মাথা নিচু এক ওভারকোট
জনশূন্য শহরে
কেবল এক হলুদ আকাশ
নিদ্রাহীন জেগে থাকে
নাক নেই
আমি অনেক ভেবে দেখেছি, আমার কোনো নাক নেই। একটা বারান্দার মতো হাওয়ায় সামান্য গা ভাসিয়ে দেয়া একটা নাক। একটা ফুলের ঘ্রাণ, একটা লেবু পাতার গন্ধ কিংবা অসামান্য কোনো দুপুর হতে ভেসে আসা রান্নার ঘ্রাণ বহুকাল আমাকে তাড়িত করেনি। সারাদিন ঝাঁ ঝাঁ রোদ। সারারাত অন্ধকার গলে পঁচে মরছে। পৃথিবী বহুপুরাতন স্ত্রীর মতো ঘুমুচ্ছে সুগন্ধী মেখে। কিছুই টের পাচ্ছি না। নাক নেই।
দিগন্তের ওপারে ব্যথার শহর
কার ব্যথা বুকে নিয়ে তুমি অতদূর চলে যেতে চাও?
দেয়ালে দেয়ালে ক্রন্দনচিহ্ন এঁকে ফিরছো সন্ধ্যে হলেই..
যে পাখি দিনভর ডানা মেলে উড়ে গেল একা একা
তাকে ফেলে কতদূর গেল মেঘ?
স্তনমুখ পাহাড়?
তারওপর অরণ্যের হেঁটে যাওয়া বহুদূর
আকাশমুখী বৃক্ষের অন্ধকার দেখে ফেরা…
তারও অধিক যাবে তুমি?
দিগন্তের ওপারে ব্যথার শহর
কার ব্যথা বুকে নিয়ে তুমি অতদূর যাবে?
মরে যাবার ছুতো
হাসতে হাসতে কান্নার কাছে
দৌড়ে যাচ্ছে ভুল
ঝরে পড়বে বলে ফুটছে একটা ফুল
শরীর নিয়ে গেল হাওয়ায়
পুরনো পায়ে হেঁটে হেঁটে মলিন হচ্ছে জুতো
সবকিছুই মরে যাবার ছুতো
এই বলে খুব জ্বলে যাচ্ছে তারা
প্রহরী
সারারাত নক্ষত্রের দিকে গুলি তাক করে ঘুমিয়েছি
আর যেন পতনের ঘোরে ঝরে না পড়ে
এ সীমান্ত আমার
তুমি কেন পয়সার ভেতর, ইলিশের পিঠে
মহিলার চোখে-শাপলার মতো হেসে ওঠো?
মাঠের ওইপারে
তবু শোরগোল শোনা গেলো
ফের রাইফেল কাঁধে ছুটে যেতে হবে
দৃশ্যভূক
একের পর এক সন্ধ্যা বইছে জাদুকর
কিছুই পারছো না আর
রুমালের রঙ বদলে জল মোছো চোখের
আকাশে উড়ছে আগুন পোকা
বিবিধ শক্তির অন্ধকার
এই শীতে
আরো নিশ্চুপ কুয়াশা আসবে জেনো
আরো ভোরে, আরো ভোরে
তোমার হা থেকে উড়ে যাবে নীল প্রজাপতির দল…
বেকার দৃশ্যভূক, মরে যাবে তুমি…
সম্পাদক
একটা বোকা মানুষের সাথে দেখা হলো
শব্দ থেকে একটা হসন্ত সরাতে গিয়ে
দিনভর বসে রইলো হাতুড়ি শাবলহীন
সে দীনহীন
অন্ধ ফকিরেরা ফিরে গেলো যে যার ঘরে
হসন্তহীন
কোথাও কোনো মুদ্রণ প্রমাদ নেই
লাফিং
একটা ডিপ্রেশন ভর্তি জাহাজ
একটা মদ ভর্তি জাহাজকে ক্রস করে যাচ্ছে
উলটো পিঠে বসে আছে চাঁদ
তীরে, বসে বুদ্ধর মাথা আঁকছি
নাক এবড়ো থেবড়ো
চোখ স্থির
ঠোঁটে বাঁকা হাসি…
সতর্কীকরণ
মৃত্যুর মুহূর্তে
আমাকে শুধু নারীরা জড়িয়ে থাকুক
পুরুষরা কিছুটা দূরে
আর আমাকে
শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন…
তোমার পায়ের অসুখ