| 29 মার্চ 2024
Categories
গল্প সাহিত্য

অ্যানাটমি

আনুমানিক পঠনকাল: 10 মিনিট

মিকেলাঞ্জেলো বুয়োনারোত্তির মন ভালো নেই।খেয়াল করেননি একটু আগেই পায়ের উপর কাঠ পিঁপড়ে কামড় বসিয়েছে। মানুষের শরীর সম্পর্কে কোনও ধারণাই তো তার তৈরি হয়নি। শুধু চিনেছেন বাইরের চামড়াটা। কিন্তু তার ভিতরে! কী ঘটে চলেছে!কোন হাড়ের সঙ্গে কোন পেশির কী যোগাযোগ। চামড়ার উপর কুঁচকে থিতিয়ে যাওয়া শুকনো ঢেউগুলো, আচমকা শিরার উত্থান ,হাতের উপর কতরকমের কাটাকুটি রেখা ! কীভাবে বুঝবেন! কীভাবে থাকে অলিন্দ নিলয়, ফুসফুস , মাংসপেশি! সারা শরীর জুড়ে রক্তিম চলাচল ! এইসব ভাবতে ভাবতেই নিজের আঙুল কামড়ে ধরলেন ভীষণ রাগে। এই মুহূর্তেই দরকার তিনটি শবদেহ। একটি পুরুষের । বাকি দুটি শিশুর। একটি ছেলে, একটি মেয়ে।
শহরের বেশ কয়েকটি হাসপাতালের মর্গের সামনে গিয়ে অনেকক্ষণ বসে থেকেছেন মিকেলাঞ্জেলো । লাভ হয়নি। একটা ভাস্কর্য তার মনের ভেতর তিলে তিলে গড়ে উঠছে। পৃথিবীর পূর্ণতম সেই মানুষ। সবল সুঠাম ঋজু মেরুদণ্ডের একেবারে অন্যরকমের এক পুরুষ। তার পা জড়িয়ে দুটি শিশু।তাদের মুখে ভীষণ ভয়। বীভৎস কিছু দেখে ফেলেছে তারা। তাদের চোখের জন্য একেবারেই যা সঠিক নয়।শিশুদুটি আশ্রয় চায়। সেই পুরুষটির কোলে ওঠার জন্য তারা এতটাই মরিয়া যে তাদের নখ পুরুষটির পায়ের মাংসে বিঁধে যাচ্ছে।
ফুটপাথে বসে একটা কলা আর দুটো রুটি খেলেন মিকেলাঞ্জেলো । ঠিক পেছনেই টিভির শোরুম। মস্ত বড় টিভিগুলিতে অ্যানিমাল প্ল্যানেট, ক্রিকেট আর খবরের চ্যানেল।শোরুমের সামনেটা এতটাই পরিষ্কার যে মিকেলাঞ্জেলোকেই মনে হল এই মুহূর্তের সবচেয়ে নোংরা আবর্জনা।
এই তুম নিকলো ইহাসে। এটা খাবার জায়গা নয়। গো গো , আউট আউট। শোরুমের ভেতরের দায়িত্বে থাকা মানুষটি বললেন।
ওঠার আগে ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখলেন মিকেলাঞ্জেলো। পাশের গ্রামে আজ সকাল থেকেই দাঙ্গা। তারই খবর একটা টিভিস্ক্রিনে। পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ছে। জনতা পাথর। রাস্তাঘাটে মানুষের লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে। ছেঁড়া চটি। রক্ত লেগে আছে জামা কাপড়ে। মানুষগুলো সব এলোপাথারি ছুটে বেড়াচ্ছে।ভয় পাচ্ছে প্রত্যেকে প্রত্যেককে । এই ভিড়ের মধ্যেই একটা বাচ্চা মেয়ে, শান্ত , তাড়া নেই, সবকিছুর মধ্যেই মাকে খুঁজছে।
মিকেলাঞ্জেলো দেখছেন মেয়েটিকে।
অ্যাই তুম আভি তাক খাড়া হ্যায় ইহাপে। কানপে হাতি ঘুসা হ্যায় কেয়া। আউট আউট।
মিকেলাঞ্জেলো এই গ্রামটা চেনেন। নাম তিলাবনি জামনা। বছর খানেক আগেই এসেছিলেন বিশুদ্ধ রঙের খোঁজে। এখনও তিনি নিজের হাতেই রঙ তৈরি করেন। বাজারে যে রঙ পাওয়া যায় তার অনেক দাম। তার উপর ওই রঙে করা ছবিগুলো টেকেও না বেশিদিন। কম বয়েসি ছেলে মেয়েদের গায়ের রঙ আনতে শহরের মুরগির ডিমের কুসুম মেশাতে হয়। কিন্তু বুড়ো মানুষের কালচে চামড়া আঁকতে দরকার গ্রামের মুরগির ডিম। তার কুসুমের রঙ লাল।সেই ডিমের খোঁজেই আসা এই গ্রামে।বড় ভালো লেগেছিল গ্রামটিকে। পাথর খোদাই করে খেলনা বানিয়ে দিয়েছিলেন গ্রামের সব বাচ্চাদের।তাদের বাবা মায়ের নাছোড়বান্দা অনুরোধে সবার বাড়িতেই কিছুদিন করে থেকেও ছিলেন।মিকেলাঞ্জেলোর জামা কাপড়ের ঠিক নেই। জামায় রঙ, কাদামাটি, শ্বেত পাথরের গুঁড়ো, আলতা এইসব লেগেই থাকে। কালু শেখ একটা কুর্তা বানিয়ে দিয়েছিলেন। ছেঁড়া জুতোটা সারিয়ে দিয়েছিলেন অশোক সর্দার। হ্যাঁ, নামগুলো এখনও ঠিক ঠিক মনে আছে।
তিলাবনি জামনায় ঢোকার মুখেই একটা দিঘি। অনেক উপর থেকে দেখলে মনে হবে একটা বিশাল কাস্তের ছাঁচ কেটে নেওয়া হয়েছে মাটিতে। তারপর সেখানে ঘন শ্যাওলা রঙের জল দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে।সেবার দেখেছিলেন গোটা তিনেক হাঁস মিহি পানা কেটে জলের আসল রঙটা চিনিয়ে দিচ্ছিল।এখন সেখানে গোটা চারেক লাশ । পেটগুলো ফাঁপা। চারপাশে পচা গন্ধ।
দিঘির ঠিক পাশেই ঢালু জমিটায় গর্ত খুঁড়ছিলেন দুজন গ্রামেরই মানুষ। মিকেলাঞ্জেলো কাছে গিয়ে দেখলেন গর্তের ভিতর অনেক শবদেহ। সব ধরণের সব বয়সের লাশ। ফুল তুলতে গিয়ে, মন্দিরে যাওয়ার সময় বা নমাজ পড়তে পড়তে কিছু বুঝে ওঠার আগেই মনে হয় সবাই মারা পড়েছে। বাচ্চাগুলো মনে হয় কুমিরডাঙা খেলছিল।
সেই দুজন লাশগুলোর হাত পা ঠ্যাং ধরে সেঁধিয়ে দিচ্ছিল গর্তের ভিতরে। দুটো ভ্যান এল। ভ্যানের পেছনের দরজা খুলতেই ঝরঝর করে আরও গোটা বিশেক লাশ মাটির উপর পড়ল। এ ওর ঘাড়ের উপর।
মিকেলাঞ্জেলো গালে হাত দিয়ে গর্তের ভেতরটা দেখছিলেন। এই মুহূর্তে দরকার তিনটে শবদেহ। দুজন চলে যেতেই এদিক ওদিক হাতড়ে তিনটে লাশ খুঁজে বার করলেন। একটা মাঝবয়েসি পুরুষের মৃতদেহ। চেক লুঙ্গিটা ছিঁড়ে গেছে টানাটানিতে। একটা বাচ্চা মেয়ে। ফ্রকের নিচে লেগে থাকা রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে এসেছে আর বাচ্চা ছেলেটার মাথায় খুব ভারি কিছুর আঘাত লেগেছে। রক্ত জমাট বেঁধে আছে কপালের পাশে। পুরুষটাকে কাঁধে তুলে নিলেন মিকেলাঞ্জেলো। বাচ্চা দুটোকে কোলে। দৌড়তে থাকলেন পাশের জঙ্গলের দিকে। তলোয়ার গোছের কিছু একটা দিয়ে পুরুষটার পেটটা কাটা পড়েছে । অনেকটা ফাঁক সেখানে। খুব বেশি কাটাকাটি করতে হবে না।ভীষণ ভয় পেলে বাচ্চাদের শরীর কীভাবে বদলে যায় তাও নিখুঁতভাবে বুঝে নিতে হবে। তা বুঝতে চোখের ভেতর জল আটকে চোখ বন্ধ করে বাচ্চাগুলোর ঠাণ্ডা হাতে পায়ে , শরীরের সমস্ত জায়গায় হাত বুলিয়ে নিচ্ছিলেন মিকেলাঞ্জেলো। বিকেলের আলো তখনও ফুরোয়নি।
শহরের সেরা জিমখানা হারকিউলিয়ানের ভেতরটা এই সময় প্রায় পুরোটাই ভরে থাকে। উইকেন্ডের ভিড়। সবাই নিজের দেহের পেশিগুলো আয়নায় দেখে নিচ্ছেন। শহরের নারীরাও পিছিয়ে নেই।
দাঙ্গার খবর একটু আগেই দেখানো হয়েছে জিমের ভেতরের টিভিতে । দেখানো হয়েছে হারবাল স্পা স্যালনে , ফ্লরেন্টিনের উনিশ তলার বিখ্যাত কন্টিনেন্টাল ক্যান্টিনে। আইরিশ কফি খেতে খেতে দাঙ্গার খবরে দুঃখ পেয়ে প্রায় বারো সেকেন্ড সকলেই নীরব থেকেছেন। তারপর শহর আবার ফিরে গিয়েছে জিমখানায়।
শরীরের ভেতরের রহস্যটুকু এখন অনেকটাই পরিষ্কার মিকেলাঞ্জেলোর কাছে। তার কল্পিত সুপুরুষ হবে হারকিউলিসের মতোই অসাধারণ। ইরিন্থিয়ান ভালুক ধরা, নেমিয়ান সিংহকে খালি হাতে মাত করা পরম পুরুষ হারকিউলিস। শহরের উচ্চ শিক্ষিত মানুষেরা মিকেলাঞ্জেলোকে হারকিউলানেই যেতে বলেছেন। হারকিউলিয়ানের আশেপাশে আজকাল তিনি ঘুরঘুর করেন। মাছের দোকানের সামনে ওঁত পাতা বিড়ালের মতো। জানলার ফাঁক দিয়ে মিকেলাঞ্জেলো দেখতে থাকেন পেশির চলাফেরা, ফুলে ওঠা, চুপসে যাওয়া। প্রায় সকলের শরীরের ভেতরের অংশগুলো এখন তিনি আন্দাজ করতে পারছেন। দাঙ্গায় মারা যাওয়া সেই ছেলেটির অন্ত্র ,পিচ্ছিল পাকস্থলী। মেয়েটির অভিমানি নিষ্প্রাণ কনীনিকা। সবই তিনি মাথায় পুষে রেখেছেন। মিকেলাঞ্জেলো খুশি হলেন তার পছন্দের শরীর বানানোর রসদ পেয়ে। সাতদিন ধরে তিনি জানলায় উঁকি দিয়ে সবাইকেই দেখছেন। মুশকিল হল মেরুদণ্ড নিয়ে। শরীর মজবুত হলেও কারোর মেরুদণ্ডে তার মন ভরে না। বেশিরভাগই বাঁকা আর শিথিল।মিকেলাঞ্জেলো বুঁদ হয়ে দেখছিলেন ঠিক সামনের পুরুষটির পিঠের মেরুদণ্ডটি। জিম ইন্সট্রাক্টর ধরে ফেললেন।
কী ব্যাপার মিস্টার।অনেকদিন ধরে দেখছি। কী করছেন বলুন তো এখানে। উঁকি মারছেন কেন?
মিকেলাঞ্জেলো বিড়বিড় করলেন। মেরুদণ্ডটা শরীরের সঙ্গে কিছুতেই মিলছেনা। কোথাও একটা গোলমাল হচ্ছে। সেকথাই বোঝাতে চাইলেন।
শুনুন দাদু, জিম করতে হলে ফর্ম নিয়ে যান। টাকা দিন । ভর্তি হোন। নাহলে কাটুন।
হারকিউলিয়ান ছেড়ে মিকেলাঞ্জেলো রাস্তায় নামলেন। এতদিনের দেখা শরীরের ভেতরের হিসাবগুলো একেবারেই মিলছে না।
ঘোর জ্যৈষ্ঠের দুপুর। গরম পিচ ঢেলে রোড রোলার দিয়ে রাস্তা সারাই করছে জনা পাঁচেক মানুষ।গায়ের রঙ আলকাতরা। মিকেলাঞ্জেলোর চোখ আটকে গেল তাদের শরীরে।এইরকমই একটা শরীর তো তিনি খুঁজছিলেন। উত্তেজনায় তার হাত পা কেঁপে উঠল। পায়ের নিচে গলা পিচ আর মাথার উপরে উন্মাদ সূর্যকে সঙ্গী করে এক মাস ধরে খুব কাছ থেকে ঘামে ভেজা পিঠ চিরে তিনি দেখলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মেরুদণ্ডগুলি । তাকে ঘিরে শরীরের অদ্ভুত সব কারুকাজ।
আর দেরি করা চলবে না। মূর্তি বানানোর জন্য দরকারি সবকিছুই এখন মিকেলাঞ্জেলো মাথার ভেতর জমাট বাঁধিয়ে রেখেছেন। এখন ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে তার কল্পনার ব্লু প্রিন্ট। সতেরো ফুট উঁচু পাথরটা আগেই খাড়া করে রেখেছিলেন খোলামাঠের চালাঘরে । বহু বছরের পরিশ্রমে পাহাড় কেটে সেই পাথর মজুত করেছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেই পাথরের সঙ্গে কথা বলার পর শুরু হল ড্রয়িং। তারপর মাটির মডেল। আবার ড্রয়িং। পাথরের মডেল। আবার ড্রয়িং। দিন কয়েক এইভাবেই যাওয়ার পর পাথরের গায়ে ছেনি ছোঁয়ালেন মিকেলাঞ্জেলো । মূর্তি ছাড়া আর কোনও চিন্তাই নেই তার। স্নান খাওয়া মনেই পড়ে না। পাথরের গুঁড়ো নাকের ফুটোয় জমতে থাকে। হাতুরি চালাতে চালাতে ডান হাত ধরে এলে বা হাতে হাতুরি চালান। পাথর থেকে ক্রমশ ফুটে বেরিয়ে আসতে থাকে অন্যরকমের এক পুরুষ।এইবার আসল কাজ। গরম কালো পিচ দিয়ে তার সারা শরীরে ফুটিয়ে তুললেন শ্রমিকের ঘর্মাক্ত মাংসপেশি। ঋজু মেরুদণ্ড। তার পা জড়িয়ে দুটি শিশু। তাদের গায়ের রঙ সাদা। মেয়েটির ফ্রকে রক্ত শুকিয়ে কালো। ছেলেটির কপালে জমাট রক্ত।তিন মাস ধরে তাদের শরীর পরম স্নেহে পালিশ করলেন। এক বছর নিজেকে বন্দী রেখে টানা কাজ করার পর মিকেলাঞ্জেলো দুদিন দুরাত টানা ঘুমোলেন।
মাঠের ঠিক মাঝখানে রাখা এই ভাস্কর্য দেখতে ভিড় উপচে পড়ল আশপাশের শহর এবং গ্রাম থেকে। মিকেলাঞ্জেলোর নাম ছড়িয়ে পড়তে খুব বেশি দেরি হল না। মাঠের পাশে দেশি বিদেশি গাড়ির ভিড় । কত তরুন তরুণীরা এলেন। মূর্তিটাকে পিছনে রেখে সেলফি নিলেন। হারকিউলিয়ান জিমের ছেলেরা এসে বললেন, অসাম আর্ট। সিক্স প্যাকটা দেখেছিস। জিম করা বডি। কিন্তু মালটা এত কালো কেন? অ্যান্ড হোয়াট আর দ্য কিডস ডুইং দেয়ার?
ছবি তুলছিল পাপাই আর জুলিয়া। পাথরের বাচ্চাগুলোকে খুব পছন্দ হয়েছে। এত বড় টয় বাবা কখনও কিনে দেয়নি তাদের। জেদ চেপে বসল । এইরকম টয় তাদের চাইই চাই।
সাতাশ তলা পাপাল প্যালেসের সদর দরজায় ডিসাইনার ফন্টে লেখা মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আমিরচাঁদ গিডওয়ানি,পাপাই অ্যান্ড জুলিয়া । আমির তখন তিন তলার অফিস ঘরে মিটিঙে ব্যস্ত। বারো লক্ষ গাছ কাটতে প্রচুর খরচ, প্রচুর হ্যাপা। তার ওপর মিডিয়া,পরিবেশ রক্ষা কমিটি, গ্রামের লোক, পলিটিকাল পার্টি। সবই ম্যানেজ করতে হবে। আশপাশের গ্রামের লোকজনকে দিয়েই গাছগুলো কাটাতে হবে। তিনশো দিনের টেম্পোরারি যব দিলে সবাই খুশ। আমিরের বাবার অনেকদিনের স্বপ্ন। রোবোটিক্স হাব এই দেশে প্রথম করবে আমির ইন্ডাস্ট্রিস। প্রেসিডেন্টের খাস আদমি আমির। আগের বছরই দেশনায়ক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। তারপরেই এই ম্যামথ কনট্র্যাক্ট । দেশের লক্ষ বেকার ছেলের কাজ জুটবে এই রোবট কারখানায়।
পাপাই আর জুলিয়া আমিরের পা জড়িয়ে ধরল। কোলে উঠতে চায়। অফিস ঘরে তারা যখন তখন ঢোকে। গোলটেবিল ঘিরে বোর্ড অফ ডিরেক্টরস। তাদের চোখ ল্যাপটপে। স্যার এখন সংসারে মন দিয়েছেন।
এক্সকিউসমি জেন্টলম্যান, কী হয়েছে মাই ডার্লিং সুইটি?
পাপা পাপা আমার এইরকম একটা টয় চাই রুমে।
অ্যান্ড হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট সুপার ম্যান?
ক্যাপ্টেন আমেরিকার একটা বিগ টয় চাই রুমে।অ্যান্ড ফুল সেট অফ অ্যাভেঞ্জার্স।
আমির মিকেলাঞ্জেলোর ছবি দেখলেন পাপাইয়ের ফোনে। শিশু দুটির মুখের সঙ্গে পাপাই আর জুলিয়ার মিল আছে। এভাবেই তো একটু আগে তারা আমিরের পা জড়িয়ে ধরেছিল। কিন্তু এই ব্ল্যাক আদিবাসীটা কেন? এইরকম স্কাল্পচার আমির আগে কখনও দেখেননি। চিফ আর্কিটেক্টকে ফোন করলেন আমির।
তোমাকে হোয়াটসঅ্যাপ করেছি একটা ইমেজ। খোঁজ নাও কে বানিয়েছে।
স্যার , এ তো মিকেলাঞ্জেলোর কাজ।
হু?
নতুন এসছেন মনে হয় শহরে। এর মধ্যেই ফেমাস হয়ে গেছেন। সারা দেশের আর্টিস্টরা তাকে স্যালুট করছে। আমি স্কাল্পচারটা সামনে থেকে দেখেছি স্যার। স্পিচলেস হয়ে গেছিলাম। একমাত্র ঈশ্বরের পক্ষেই এই কাজ করা সম্ভব। এত নিখুঁত মানুষের শরীর আমি আর কোথাও দেখিনি। একমাত্র দা ভিঞ্চির কাজের সঙ্গেই এর তুলনা চলে। কত লোক ওই মূর্তিটার নিচে শেলটার নিয়েছে স্যার। মূর্তিটা দ্যাখে আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে।
হোয়াট রাবিশ ইউ আর টকিং! ডু ওয়ান থিং, লোকটাকে আমার কাছে নিয়ে এসো।
স্যার উনার থাকার থাকার কোনও ঠিক নেই। আমি খোঁজ নিয়েছি অলরেডি। ভবঘুরে টাইপ। কোথায় ঘাপটি মেরে আছে, কোথায় পাই স্যার বলুন তো?
দ্যাট আই ডোন্ট কেয়ার। আকাশে দ্রোণগুলো সব ছেড়ে দাও। পুলিশে খবর দাও।দরকার হলে মিলিটারি, নেভি এয়ারফোর্সের হেল্প নাও। যা ইচ্ছে কর। যত টাকা লাগে নাও। আই নিড দ্যাট ম্যান।রাইট নাউ।
মিকেলাঞ্জেলোকে পাওয়া গেল মাঠের পাশের একটা গাছের কোটরে। কুঁকড়ে শুয়েছিলেন। মাথার মধ্যে এই মুহূর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে চারটি মূর্তি। রাত্রি, দিন, ঊষা , সন্ধ্যা। দুটি নারী মূর্তি, দুটি পুরুষ।
পাঁচ ফুট চার ইঞ্চির শরীরটা নিয়ে খুব বেশি টানাহ্যাঁচড়া করতে হল না পুলিসকে। পেটে খাবার নেই। শরীর দুর্বল। রাত্রি, দিন, ঊষা, সন্ধ্যার ঘোরের মধ্যে আছেন।
পাপাল প্যালেসের ভেতরে ঘোর কাটল মিকেলাঞ্জেলোর ।এত বড় বাড়ি কারোর হতে পারে! কে থাকে এখানে!
আমির বসতে বললেন মিকেলাঞ্জেলোকে। বললেন, শুনলাম তোমার খুব নামডাক হয়েছে। আমার ইচ্ছে, শুধু আমার না, আমার বৌ ছেলে মেয়ের ইচ্ছে তুমি আমার একটা কাজ করে দাও। কাজটা শেষ করতে পারলে অ্যাওয়ার্ড পাবে। ইউ মাস্ট বি আনএমপ্লয়েড। একটা চাকরিও দেব। চিফ আর্কিটেক্টের। এখন যেটা আছে ওটাকে স্যাক করব। ভীষণ ফাঁকিবাজ। শোনো, আমি একটা হাব বানাচ্ছি।রোবট প্রোডাকশন। ওটার ডিসাইন তুমিই করবে। কিন্তু তার আগে আমার কাজটা।খুব বড় কাজ।
মিকেলাঞ্জেলোর ঘোর কেটেছে। শুধু বললেন, মূর্তি?
না না ওসব মূর্তি ফুর্তি লেবারের কাজ। তুমি হলে আর্টিস্ট। তোমার ভ্যালু আমি জানি। আমার এই বাড়িটা দেখছ তো। এই বাড়ির সেন্টার অফ অ্যাট্রাক্সন হল আমার ড্রয়িং রুম।বলতে পারো ওটাই আমার কাজের জায়গা। ওখানে বসলেই আমার মাথায় আইডিয়া আসে। ওই হলটার পুরো সীলিং আর সবকটা দেওয়াল ছবি এঁকে ভরিয়ে দিতে হবে। যত লোক লাগে আমি দেব। টাকা পয়সার চিন্তা করবে না।
কিন্তু—
বড় টেটিয়া লোক তো তুমি। তোমাকে যব অফার করছি। পার্মানেন্ট যব। পি এফ, গ্রাচুইটি, ফ্রি মেডিক্যাল ইনস্যুরেন্স। সব ফেসিলিটি । পৃথিবীতে এত বড় প্রাইভেট রেসিডেন্স আমার ছাড়া আর একটাও নেই। এই কাজটা করলে তুমিও পৃথিবীতে একটাই পিস হবে।ইউ উইল বি ফেমাস লাইক মি।
কিন্ত—
শাট আপ। একটা মাত্র ফোনে তোমাকে সোজা জেলে ভিতর পচিয়ে মারতে পারি। তুমি যে মূর্তিটা বানিয়েছ ওটা কন্ট্রোভারসিয়াল। প্রোভোকেটিভ। দাঙ্গা লাগতে পারে। কোথা থেকে এসেছ তার ঠিক নেই। বংশ পরিচয় চেক করলে দেখব হয়ত তুমি ব্যাটা ইমিগ্রান্ট। এসব ঝুট ঝামেলা থেকে আমিই, একমাত্র আমিই তোমাকে বাঁচাতে পারি। রাজি না হলে জেলে গিয়ে পচবে। সারাজীবন শুধু পাথরই কাটতে হবে। কী? এবার বল, তুমি রাজি তো?
মিকেলাঞ্জেলো মাথা নিচু করলেন।
গুড। কী ছবি আঁকতে হবে সেটাও বলে দিচ্ছি। বুঝে নাও। তুমি তো এদেশে নতুন,কিছুই জানো না মনে হয়। এই দেশের এডুকেশন , হেলথকেয়ার সবই আমার দান। বড় বড় হসপিটাল, স্কুল , ইন্ডাস্ট্রি সব আমার টাকায়। দেশের সব বেকারদের আমিই চাকরি দি। গ্রাম শহরের সবাই আমার জন্যই খেতে পাচ্ছে। বেঁচে আছে। তোমার ছবিতে আমার এই হিউজ সোশ্যাল ওয়ার্কের খুঁটিনাটি নিখুঁত ভাবে ধরা পড়া চাই। ডেপিক্ট করতে হবে আমার এই ফিলান্থ্রপিক পারসোনালিটি। মগজে ভালো করে ঢুকিয়ে নাও আমিই এই দেশের ঈশ্বর। আমার হাত দিয়েই সব কিছুর সৃষ্টি। আমার শরীরের প্রত্যেক শিরায় ধমনীতে রক্ত নয় দেশপ্রেমের বন্যা বইছে। এইসবই ছবিতে আসা চাই। সুইজারল্যান্ড যাচ্ছি ফ্যামিলিকে নিয়ে। এখানে ভীষণ গরম। সাত আট মাস পর ফিরব। তার মধ্যে কাজ শেষ হওয়া চাই। এই নাও আমার বায়োগ্রাফি। এটাকে বাইবেলের মতো পড়বে। একটা ফিল পাবে। এখন যাও। নেক্সট উইক থেকেই কাজ শুরু। আমার সেক্রেটারি সব বুঝিয়ে দেবে। ডেডলাইন যেন মিস না হয়। ও হ্যাঁ, লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট। আমার পাপাই আর জুলিয়ার জন্য, ওই ওরা কীসব বলছিল, আয়রন ম্যান, ক্যাপ্টেন আমেরিকা, অ্যাভেঞ্জারস ওইগুলো একটু বানিয়ে দিয়ো তো। আর গীতার জন্য একটা পার্সোনাল এয়ারক্র্যাফটের নকশা।
আমিরচাঁদ যেন ভ্যাটিকানের পোপ আর মিকেলাঞ্জেলো তার বাধ্য ছেলে। ভাবখানা এমনই দাঁড়ালো।মিকেলাঞ্জেলোর মনে হল তিনি বমি করে ফেলবেন।
পাপাল প্যালেসের ভেতরে একা একা বসে ভাবেন মিকেলাঞ্জেলো।ছবি আঁকতে ভালো লাগে না বলে এত বড়ো কাজটা তো তিনি যেমন তেমন করে করতে পারেন না।কাজ যখন ধরেছেন তা নিখুঁতভাবে শেষ করাই তার অভ্যাস। ছাদ অনেকটা উঁচু। প্রায় ছ তলার সমান। প্রথমে ভারা বাঁধতে হবে। এমনভাবে বাঁধতে হবে যাতে সেটা নিজেই দাঁড়িয়ে থাকে। ছাদে ঠেশ দিতে না হয়। মিকেলঞ্জেলো কল্পনা করলেন আমিরের প্রতিকৃতি। অনেকটা ঈশ্বরের । তিনি সৃষ্টি করছেন জগত—আলো অন্ধকার সূর্য তারা চাঁদ, পৃথিবী… গাছপালা, পশুপাখি… আর অসংখ্য মানুষ। তারই হাতের ছোঁয়ায় বড় হয়ে উঠছে সবাই। স্বাস্থবান শিক্ষিত হয়ে উঠছে। সবাই তার কাছেই পৌঁছতে চায় । আমিরের কাছে।
এখানে মিকেলাঞ্জেলোর সহকারী অনেক। বেশীরভাগই দাঙ্গায় বেঁচে যাওয়া ছেলে মেয়েরা। যে গ্রামের আশপাশ থেকে বারো লক্ষ গাছ কেটে নেওয়া হবে সেখান থেকেও এসেছেন অনেকেই। বাচ্চারা মিকেলাঞ্জেলোকে রঙের তুলি পৌঁছে দেয়। বালতি ভর্তি রঙ পৌঁছে দেয় তারা ভারায় উঠে। যাদের বয়স একটু বেশি তারা দেওয়াল ছাদ পরিষ্কার করে। তুলি বানায় বুড়ো মানুষেরা।
কেউ ঢোকেনা পাপাল প্যালেসে। আমিরের কড়া নিষেধ। সবার জন্যেই খাবার আসে বাইরে থেকে। মাসের পর মাস কাটে।খাবারের পরিমাণও কমতে থাকে। খাবারগুলোয় দুর্গন্ধ। খাবার জলে মশার লার্ভা ঘুরে বেড়ায়। বাচ্চারা বমি করে । বমির সঙ্গে বেরিয়ে আসে রক্ত। বুড়ো মানুষগুলোর পাঁজরার হাড় গোনা যায়। তাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। বদ্ধ ঘরে কাজ করতে করতে তাদের প্রায় কারোরই মাথার ঠিক নেই।
প্যালেসের সদর দরজার বাইরে পুলিস আর প্যালেসের চারদিক ঘিরে রয়েছে আর্মির কড়া পাহারা। দরজায় একটাই গর্ত । তার ভেতর দিয়েই খাবার আসে । হুকুম আসে। মিকেলাঞ্জেলো সেই গর্তে মুখ ঢুকিয়ে চিৎকার করে খাবারের জন্য। বাচ্চাদের চিকিৎসার জন্য ওষুধ চেয়ে গলা ফাটায়। উত্তর আসে না।
এভাবে কাজ করা মোটেই সহজ নয়। সোজা মাথার উপরে ছবি আঁকতে হয় — ঘাড় বেঁকিয়ে। হাত মাথার উপর তুলে। খুব তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়েন মিকেলাঞ্জেলো। বাচ্চারা তার মাথায় হাত বোলায়। নিজেদের খাবারের ভাগ সবাই মিকেলাঞ্জেলোর দিকে এগিয়ে দেয়। রঙ পড়ে মনে হয় জামাটা কোনও এক খ্যাপার। আসল রঙ আর বোঝা যায় না। মিকেলাঞ্জেলো কাজ এগিয়ে নিয়ে যান। খোলামাঠে করা মিকেলাঞ্জেলোর করা মূর্তি তারা সবাই দেখেছে।মিকেলাঞ্জেলোর কাজের ক্ষতি তারা কোনোভাবেই হতে দেবে না। সারাদিন একসঙ্গে কাটিয়ে সন্ধ্যাবেলায় মিকেলাঞ্জেলো কবিতা লেখেন। গান গেয়ে ওঠেন হঠাৎ আনন্দে।
মেয়াদ ফুরিয়ে আসে।ছ হাজার বর্গফুটের শূন্যতা ভরে ওঠে মিকেলোঞ্জেলোর সৃষ্টি করা নতুন পৃথিবীতে। তার খুদে বড় সহকারীরা অবাক চোখে সারাদিন ধরে তাকিয়ে থাকে সেদিকেই। একজন কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠেন, মিকালোঞ্জেলো , মনে হয় তোমার আঁকাটাই শুধু সত্যি। আর বাকি সব মিথ্যে। চরাচরে আর কিছুই নেই।
সদর দরজা খুলে যায় । ঘরে ঢোকেন আমিরচাঁদ। পাপান , জুলিয়া , গীতা , চিফ আর্কিটেক্ট। মিকেলাঞ্জেলো শুয়ে ছিলেন হলের এক কোণায়। হাতগুলো ফুলে উঠেছে।ঘাড় নিচু করতে পারেন না। তাকে ঘিরে ঘুমোচ্ছে বাকিরা। এ ওর ঘাড়ের উপর।
হলের সমস্ত জানলা খুলে দেওয়া হল। সমস্ত দিক থেকে সূর্যের আলোয় ছাদ দেওয়ালের ছবি যেন পরিষ্কার হয়ে ওঠে। আমিরের হুকুম । তিনি আজকাল সবকিছুই ঝাপ্সা দেখছেন। সবার চোখ এখন মিকেলাঞ্জেলোর কাজের দিকে।
সারা দেওয়াল আর ছাদ জুড়ে প্রায় তিনশো মানুষ । কেউ ধানক্ষেতে , কেউ কারখানায়, কেউ গরম পিচ ঢেলে রাস্তা সারাই করছে। কেউ ছবি আঁকছেন। ভাস্কর্য বানাচ্ছেন আর একজন। মানুষগুলোর চামড়ার রঙ সাদা কালো বাদামি সব রকমেরই। শরীর খুব মজবুত না হলেও সোজা মেরুদণ্ডগুলো যেন পিঠ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে। গাছপালা পশুপাখিতে ঘেরা চারপাশ। সবকিছুই এরা সকলেই যেন মিলেমিশে তৈরি করছে। সব মানুষের ঠোঁটের কোণে কাজ করার আনন্দ লেগে রয়েছে।
আমির নিজেকে খুঁজছিলেন এইসবের মাঝে। কোথায় তার ঈশ্বরের মত ব্যাক্তিত্ব। এইসব তো তারই তৈরি । কোথায় তার প্রতিকৃতি।
পাপান আর জুলিয়া এমন ছবি কোথাও দেখেনি। তাদের দুজনেরই মুখে হাঁ। চোখের পলক পড়ছে না।
পাপান খুঁজে পেয়েছে তার বাবাকে। চিৎকার করে উঠল সে,পাপা দেয়ার ইউ আর।
আমিরচাঁদ কয়লা ভাঙছেন। সাদা মুখটা কালো হয়ে গিয়েছে কয়লার গুড়োয়। সারা শরীরের পোশাকেও কয়লার গুঁড়ো। এ যেন তার রোজকার কাজ। মুখের ভাব এমনই।
আমির খেয়াল করলেন তার বায়োগ্রাফিটার পাতাগুলো ছেঁড়া। এদিক ওদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে । কয়েকটা পাতা এখনও উড়ছে গরম হাওয়ায়।
আমিরের চোখ লাল। রগ ফুলছে। হাত পা কাঁপছে।মুখটা বিকৃত। অ্যারেস্ট দ্যাট ব্লাডি স্কাউন্ড্রেল!
পুলিশ আর আর্মি সবাই এখন পাপাল প্যালেসের ভেতরে।হাতকড়ায় প্রায় আড়ষ্ট মিকেলাঞ্জেলোর হাত দুটো। এগিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ জিপের দিকে। তাকে ঘিরে পুলিশ এবং আর্মি জওয়ানরা। তারা যেতে যেতেই অবশ্য ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখছেন ছাদ আর দেওয়াল। মুগ্ধতা তাদেরও বেশ গ্রাস করেছে। কিন্তু দেখার সময় বেশি নেই । আমিরের হুকুম এখনই মিকেলাঞ্জেলোকে জেলে পাঠাতে হবে। মিকেলাঞ্জেলোর এতদিনের সহকারীরাদের চোখে জল কিন্তু কেউ ভেঙে পড়েননি।
জিপের ভেতর চালান করা হয়েছে মিকেলাঞ্জেলোকে। পাপান জুলিয়া দাঁড়িয়ে ছিল জিপের ঠিক পেছনেই। ভেজা চোখে মিকেলাঞ্জেলো দেখছিলেন তাদের। মোলায়েম মুখ, চোখের শ্বেতপটল, শরীরের ভেতরের রেশম ঝিল্লী, সমস্ত অস্থি তরুণাস্থি কার্টিলেজ। বুঝে নিচ্ছিলেন, খুব সুখে বড় হওয়া শিশুমুখের নরম পেশিগুলো মানুষের যন্ত্রণার প্রথম অনুভবে কীভাবে আস্তে আস্তে শক্ত হতে থাকে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত