আজ ০৭ জানুয়ারী কবি সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
লঙ্কাদহন সারঙ্গ
অওছার
অতিক্রান্ত সন্ধিলগ্ন— বিস্মৃতির তোগলকি উদ্যম
হামলে পড়ে; রুগ্ণ ভুগ্ন কনিষ্ঠার অশিষ্ট ভাষায়,
স্বর্গতা মা, জন্ম দিয়ে জ্বালিয়ে দিলে গোমোরা সদোম!
শুক্রনিঃশেষিত শিশ্ন ঘুরছে একা গর্ত-প্রত্যাশায়—
আস্তাবলে মাংসীকৃত রশ্মি, আহা, ঐশী মতিভ্রম!
বঢ়্হৎ
আবার রাস্তায়। আমি আমান ভাইয়ের হাত ধ’রে
অন্ধ হাঁটি। শিল্পকলা ন্যাকাডেমি। শুষ্ক ওষ্ঠাধরে
না-টানা গোল্ডলিফ। নেভে। প্রদীপদা কি আসছেন, সালাম?
দূরে যারা, তারকারা, কাউকে-কাউকে দেখেও চিনলাম
না, যদিও দেখে থাকি ন’মাসে-ছ’মাসে হয়তো টিভি—
আমাদের প্রাকার-পরিখা-ঘেরা আরেক পৃথিবী।
সুবর্ণা মোস্তফা উনি, আমার তিন-ক্লাস সীনিয়র,
কাছেই— ফরিদী নাকি? কে জানে। আমরা তো খালি ওঁর…
আলী যাকেরের পার্শ্বে উনি সারা, অন্য পার্শ্বে নূর,
কিন্তু আমি আঁত্কে উঠি যাকে দেখে, সে শুধু তৈমুর;
আমার ক্লাসেই পড়ত, নাটক ছেড়েই দিচ্ছি, গানও
শুনতে তাকে কদাপি শুনি নি, তাকে কাজেই রাগানো
ফরজ, তখন আমি, হ্যাঁ আমি তখনই তোমাকেও
আবিষ্কার— তুমি কার সাথে কথা কও? নাকি কেউ
ঊর্ধ্বে-অধে ডানে-বাঁয়ে…? নাকি এটা শিল্পকলা নয়?
এক-আকাশ কাশ? মেঘ? সাদা, আর প্রহেলিকাময়?
মাধব-মালঞ্চী-কন্যা দেখতে গিয়ে দেখতে পাই যাকে
মাধব-মালঞ্চী-কন্যা উবে গিয়ে সে-ই খালি থাকে।
মাধব-মালঞ্চী-কন্যা দেখি নাই আমরা কোনোদিন;
মাধব-মালঞ্চী-কন্যা, হায়, আমরা কামের অধীন।
তান
ঈশ্বরের মতোই তুমি আমার কেউ নয়?
আমি ভাবছি, ভেবে কাঁপছি, গলার কাছে দলা
পাকাল দ্বিধা, কাজেই শেষে বলার অভিনয়—
হায় রে ছায়া, সামনে খোদ সূর্য-উজ্জ্বলা!
ঈশ্বরের গলায় তুমি ফতোয়া দাও— কাফের।
একফোঁটা এ-হৃদয়ে যত অভিজ্ঞতা, পাপের,
তাকেই তুমি হঠাৎ-ভুলে পরিয়ে দিলে যিশুর
কাঁটার মালা, যদিও তার তোয়াক্কাও কিছুর…
সফল হ’ল ঈশ্বরের অভিসন্ধি : আমি
জানতাম যা তোমার থেকে অসীম কমদামি।
শীতল অনল
কৃষ্ণাদ্বাদশীর চাঁদ
জ্বলছে জ্বলছে জ্বলছে জ্বলছে
ফুটপাতে প্রতিমাহারা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে দেউল
ছিন্নমুষ্ক পুজারির অব্যক্ত চিত্কার
হেকসেন-হাওয়ায়
ফলের ঝুড়িটি থেকে জন্মান্ধসুন্দর
একশ’আট ধাপ ভেঙে জলে নেমে যায়
আত্মমুগ্ধ অ্যাস্প্
ল্যাজে বাঁধা তাগা ও তাবিজ
জ্বলছে
খামের ভিতর থেকে উঁকি মারে আরও এক খাম
কুমারীর জ্যান্ত গর্ভফুল
লাল সী-আর্চিন
ধূলিকুহেলিকা
অসংখ্য খুরের মতো দ্রুত দূরযায়ী
একটা ফেলে-আসা দিন
মুছে-যাওয়া ছায়ার চুম্বন
নীল অ্যাস্প নীলতর জল
জ্বলছে
হে প্রভু উত্পাটন করহ আমায়
হে প্রভু উত্পাটন করহ আমায়
এই প্যাপিরাস-লেখ থেকে
খামের ভিতর থেকে উঁকি মারে আরও আরও খাম
জ্বলছে
চর ভদ্রাসন
চারিদিকে চর ভদ্রাসন
নীল নবঘন রাত নামে
আশৈশব যে-নিদিধ্যাসন
ব’সে আছে জীবনের বামে
তারই নিরানব্বই নামে
আমাদের প্রিয়সম্ভাষণ
অতর্কিতে কতগুলি শব
শুয়ে গেছে গাদাগাদি ভ্যানে
মিসা ফেলে এসেছে বিশপ
আমাদের একাট্টা নির্জ্ঞানে
অবলোকিতেশ্বরের ধ্যানে
নিশ্চল চ্যানেলগুলি সব
কারো হুকুমের ইন্তাজার
দরিয়ায় নীরব বারুদ
বেলার বালিতে দশ-হাজার
খোলা-চোখ জন্ডিস-হলুদ
হেরো দ্যাখো তারেক মাসুদ
ইমাম নিজের জানাজার
আমাদের সামনে শুঁড়িপথ
সঙ্গোপন অসুখ-বিসুখ
ঘড়ি-ঘড়ি বোঁচা-নাকে খৎ
আমরা জানি জীবনে কী সুখ
চ’লে যাক যতই মিশুক
আমরা থাকি অমর ইল্লৎ
কেঁপে যায় চর ভদ্রাসন
ধীরে ভাঙে দরিয়ার ঘুম
যোগাযোগ-মন্ত্রীর ভাষণ
গিলে ফ্যালে হঠাৎ-সিমুম
আমাদের আত্মার মরহুম
শুরু করে অশনি-শাসন
সমুদ্রসম্ভবা
❑
অসম্ভব-তৃষ্ণা পেলে, আমি সিঁধ কাটলাম অনলে—
যে-তুমি অগাধ আর টৈটম্বুর অসম্ভব-জলে
উঠে এলে; গায়ে শ্যাওলা, স্বচ্ছ অ্যালগি, দু’কানে সীহর্স,
স্তনবৃন্তে স্বেদবিন্দু—জন্মান্তরে আমার পরশ
আজও তাজা, আগোলাপি, আর মধু, সোনালি ক্রন্দন—
আর অ্যাক্টিয়ন, জলকুহেলিকা, তুরীয় স্যন্দন
ছেয়ে ফেলল—শতাব্দীর দু’মেরুর আনীল বরফ;
মুছে ফেলল—মগজে নাজেল হওয়া তাবৎ হরফ…
‘ভালবাসা একটা মিথ; এ-জাদুকানাত উঠে যাক,
আমাদের কঙ্কালেরা মুখোমুখি একবার দাঁড়াক,
একবার জ্বলুক এক্স-রে আমাদের রেটিনার পিছে,
জানি, আমরা যে গ্র্যাফাইট সব আলো-আলেয়ার নীচে—’
‘চুপ! চুপ!’—তুমি বললে—‘কঙ্কাল কঙ্কালই শুধু যদি,
যদি আমরা ধ্রুবমৃত্যু, যদি আমরা গতাসু ওষধি,
যদি আমরা অ্যালামাটি কিংবা ধামাচাপা সাদা ঘাস
আমরা তবু কুরুক্ষেত্র—বিশ্বাত্মার—পুরো বারো-মাস;
‘আমরা তবু জন্মেছি যে অরমিতা কাসান্দ্রার পেটে,
ঝরেছি দু’ফোঁটা নোনতা ফেটিবাঁধা চক্ষু-মরু ফেটে
এ কি কম?’—আমি বলি, ‘শিঙা-হাতে এসেছে ওডিন—
সাগর শুকিয়ে তীরে প’ড়ে আছে।… শুভ জন্মদিন।’
ভোরের মন্দির
❑
ওরা দরজা ভেঙে ফেলবে, ঢুকে পড়বে আমার নমাজে,
উপড়ে নেবে তোমাকে আমার থেকে ওদের সমাজে
পাঁজরের খাঁজে চাকু চালিয়ে। আমার সুরকি-ইট
খুবলে-খুবলে খুলে নেবে—ভাই যারা, সদৃশ, সুহৃদ্—
ওরা, যারা অতিথি-কে মুখে বলে ওথিতি, কাগজে
অতিথী, যাদেরকে তুমি মেগাসিরিয়ালে দেখে কী যে
কোঁচকাও বিরক্ত ভুরু, হেসেও তো ফ্যালো রেগে গিয়ে—
ওরাই, দেশের সব টিভি থেকে পিলপিল বেরিয়ে
জর্দার কৌটার ধকে জিম্মি ক’রে রেখেছে পাড়াটা,
হাতে-হাতে হকিস্টিক, দাঁতে-দাঁতে ঘোড়া, জালি, কাটা—
ঢিল ছুঁড়ে শার্সি ভাঙছে, লাথি মারছে সদর দরজায়;
আস্তার্তে, তোমার বেদি—কালো রক্ত—সাগর গর্জায়…
নির্বাক্
❑
যে বাক্য দেহ ধারণ করেছে মম
কী ভাষায় তাহা কয়েছিলে, প্রিয়তম,
হে বাগীশ, হে জেহোভা,
বাক্যশরীর হ’য়েও, আমি যে রয়েছি জন্মবোবা!
যে ভাষায় আমি শুনেছি আমার নাম
জন্মের আগে, কখনও না শিখলাম
আমি যে তা আগেভাগে,
ও আলিফ লাম মিমের মালিক, এ বধ কাহারে লাগে?
ফেরেশতাদের কী ভাষায় বলো, স্বামী,
কী ভাষায় কারে জিগাব এসব আমি?
পাতো কোন্ ভাষে কান?
কী ভাষায় তোরে বন্দে তামাম মজনুন আশেকান?
সে কি সংস্কৃত? আরবি? ফরাসি? রুশি?
কোন্ ভাষে তুমি হবা সমধিক খুশি?
নাকি স্রেফ বাংলায়
বললেই ঠিক পড়বে তোমার অভিযোগ-গামলায়?
হয়ও যদি, তবু, এই বাংলার ভাষা
কইতে কি পারে, যারা নয়, ধরো, চাষা?
শেখায়ই-বা কে এ-বুলি?
বিদ্যাসাগর? নাকি টেকচাঁদ? না সুনীল গাঙ্গুলি?
আহ্!
❑
আয়নার ভিতর থেকে বেরিয়ে এলাম
আলোর মেমব্রেন ছিঁড়ে—রইয়ে—সইয়ে—ধীরে—
এমন আলগোছে, যেন কোনো কিশোরীর
হাইমেন ফেটে গেল স্বপ্নের ভিতর
গির্জার স্পায়ার দেখে। বেরিয়ে এলাম
এমন আলগোছে, ঘুমও ভাঙে নি আয়নার;
তারপর আমার পিছে আস্তে খুলে গেল
জন ব্যাপ্টিস্ট্-এর চোখে আস্ত অস্তাকাশ—
কাঁপন লাগল না কাঁটে, এমন সঞ্চার!
আমাদের মাঝখানে কাচের হিজাব,
চামড়ার আড়াল কোনো থাকল না মোটেই,
থাকল না আত্মার বাধা, থাকল না আলোর;
আমাদের মাঝখানে কেবল ঈশ্বর—
আমাদেরই হাতে আজ খুন হ’য়ে যাবে…
চোখ
❑
আজ তোমার সমস্ত থেকে জল ঝরছে
যেন পানি-ভরা কোনো পুতুলে ব্রাশফায়ার করেছে কেউ
আজ আমার রাত্রিভর তোমার জল ঝরছে
একটা আগুন-ডিমের আভায় সবই চতুর্মাত্রিক আজ
দৈর্ঘ্য প্রস্থ বেধের সঙ্গে হল্লা করছে কাল
আর কী-যে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে সব
আজ রাতে আমার রক্তের গোপন সুরগুলি বেরিয়ে পড়ছে সব
না-সারঙ্গ না-মল্লার বরং কিছুটা যেন বিভাস
তোমার পানিতে ধুয়ে কেমন রক্তিম হ’য়ে উঠছে তারা
আর আমি এক ভাসমান বীণা
দিক্-ভোলা নুহের জাহাজ আমি
আমার শেষ দ্বীপটা ঐ ডুবে গেল অস্তসূর্যের মতো
আমার শেষ নির্মাণগুলি
বিনির্মিত হ’তে-হ’তে তিরিশটি সবুজ পাখি
তারও পরে সাতশ’-ছিয়াশি রঙিন তারামাছ
আর জলের উপরে ভাসে বিশ্বরূপার বিশাল দু’টি চোখ
নবজাতকের চেয়ে পবিত্র সুন্দর
মৃত্যুর চেয়ে অমোঘ আর সরল
রাত্রির চেয়ে গভীর
নাগপঞ্চমী
❑
১.
তাতা ধিনতাতাধিন তাতা ধিনতাতাধিন
প্রিয়, আজকে আমার শুধু ভাঙছে দুয়ার,
ধুধু উড়ছে পরাগ কালো পাগলা ঝড়ে,
বুকে বর্শা-সমেত ছোটে মত্ত শুয়ার,
তত শুক্র উছল, যত রক্ত ঝরে!
ফাঁকা বৃক্কে আমার কোনো নক্তাহারী
বাঁকা কুকরি শানায় পাকাপোক্ত হারে :
তুমি আসবে কি আর? ভালবাসবে কি আর?
গোধূলির লালিমায় মধু হাসবে, প্রিয়া?
বহে সন্ধ্যানদীর মোহতন্দ্রামদির
মৃদু মেঘলাটে জল ভরা সর্বনাশের—
কালী-জিহ্বা—প্রথম-রতি-ভয়-তরাসে—
আমি কৃত্তিবাসের বুকে নৃত্যামোদী;
আমি চন্দ্রিকাখোর, আমি রৌদ্রখেকো,
আমি অন্ধকারের পোষা হ্যাংলা মেকুর;
আমি দংষ্ট্রানখর, আমি চৌর্যতুখোড়,
আমি রূপ ও অরূপ-চাঁছা ক্ষিপ্র উখো—
তুলে আর্তনাদের তানে মিড় মণিতের
আমি গান গেয়ে যাই একা শেষ ত্রুবাদুর;
আমি বীর্য ঝরাই জননীর যোনিতে,
মনোনির্জনে এক ভূতপূর্ব বাদুড়…
২.
তাতাধিনতাতা ধিনতাতাধিন তাতাধিন
আমি বস্তুকে বস্তুরূপেই খুঁজি আজ
যত মন-গড়া হাতকড়াদের খশিয়ে;
তবু মন অসতর্ক সুযোগ বুঝিয়া
শত গিট্টুতে নিত্য পেঁচায় রশি এর!
ভরো সৌরভে রৌরবও আজ, কিশোরী,
বেলি-মল্লিকা-বল্লী তোমার কি শরীর?
ঢেলে মস্তানা পূর্বীতে আর পরজে
বোধি-আস্তানা নাস্তানাবুদ করো যে!
তব সঙ্গীতে লঙ্ঘিতে চাই এ-আরাফ,
স্মৃতি-তিতলি হে, উড়তে শেখাও আমারে।
যাব পাল তুলে সাদরা ধ্রুপদ ধামারে,
হবে কাণ্ডারী দীপ্ত তোমার চেহারা।
রাঙা কুর্তা ও ঝিলমিলে নীল সালোয়ার—
তুমি আসবে কি, বাসবে আমায় ভালো আর!
রাজে চারপাশে কার্পেদিয়েম ভয়ানক,
মরু-চাঁদনিতে ধন্ধ-অবোধ, নয়নও।
এসো স্রগ্বিণী, অজ্ঞাতিমির বিদারি’,
দেহো নির্জ্ঞানে তেইশ ক্রোমোজম জুড়ায়ে,
আনো শেষ-তম নৌকাবিলাস-নিদালি,
আলেয়ার মতো, তার পরে যাও ফুরায়ে।
৩.
তাতাধিনতা তাধিনতাতা ধিনতাতাধিন
ছিল হয়তো সুখের দিনে বন্ধু অনেক,
তারা আজকে নিদান-কালে সব বীতরাগ।
কোনো স্বপ্ন না-দেয় আলো অন্ধজনে;
শুধু কুশ্রী হ’য়েই চলে নেগ্রিটোরা।
বুঝি বাজল কোথাও কাফি কিংবা গারা,
যেন খুলছে কেলাস-ঘন প্যাঁচটা দাঁড়াশ;
শোঁকে হিংসা স্নায়ুর অমা-অন্ধ কেনাইন,
তবু শত্রু খোঁজার শেষে বন্ধুকে পাই!
মরু-ফুলটা ভবের ভোমা ডাইনামোতে
ঘোরে উলটা—নয়ন মুদে প্রত্যেকে দ্যাখ্!
মুখে-বহ্নি বিহঙ্গমা কোত্থেকে এক
চোখে ঢুকছে হঠাৎ, যারে চাই না মোটে…
এ কী চিন্তা ঊষর পীত পিত্ত জ্বালায় :
জাগে সংজ্ঞা জীবন্মৃতে—তপ্ত লালায়;
হাড়ে-মাংসে রিরংসাতে খিঁচ এত যে—
দেহে ঘুরছে ঘোরের মতো কোন্ প্যাথোজেন!
কালীসন্ধ্যা সুরোৎসবে আঁৎকা-আকুল,
স্বীয় গল্পে কয়েদ খাটে কাফকা-কামু,
শিলাবৃষ্টি ভবের নাটে চলবে চাকু—
খালি একটি চুমুক দেবে কল্বে আমূল…
৪.
তাতা ধিনতাতা ধিনতাতা ধিনতাতা ধিন
নামে মেঘ-মালা পাখ মেলে খল জুপিটার,
দু’টি অণ্ডে কী গণ্ডগোলের মাজেজা!
পশে কাষ্ঠঘোটক-রূপী কারচুপি তার,
রসে হায় ইহ আর পরকাল ম’জে যায়!
মহাবিশ্বমাতার যদা দিল্ বেচইন
দিয়ে সিন্ধু সাঁতার কত দিগ্বিজয়ী
মেলা মাইফেলে যায় খেলে রঙ্গভরে,
তবু মংগ্রেলে মংগ্রেলে বঙ্গ ভরে!
আঁটে আষ্টে ও পৃষ্ঠেতে ঢের কাঁটাতার,
ঢাকে মসজিদে মন্দিরে জান্নাতি নুর,
আহা মুক্তাবিহীন খোলে পচল ঝিনুক!
হ’ল গেণ্ডুয়া শেষ মসিহের মাথাটা…
শুধু বিশ্বাসে মিলবে সে, তর্কে সুদূর :
যত পথ আছে যাইতেছে ঘরকে শুধু—
আহা ভুল শিবিকায় কী-বিড়ম্বনা রে!
তবু দিনশেষে ভিন্দেশে দমব না রে।
খাখা প্রান্তরে গান ধরে আন্তরিকা
ধ’রে একহাতে শুকতারা একহাতে চাঁদ—
হিয়া-উদ্ভাসনের ইহা কোন্ তরিকা,
যদি শেষরাতে নিভবে এ-দিব্য প্রমাদ?
৫.
তাতাধিন তাতাধিন তাতাধিন তাতাধিন
কবরের আবরণ খোলে লোডশেডিঙে,
কারা তিন সারাদিন থেকে যায় বাহিরে—
সাধিলাম, তা দিলাম খালি নষ্ট ডিমে,
যা-কিছুই আমি ছুঁই, সবই হায় জাহেরি!
কালা এক নালায়েক কলায়েদ চমরী
হেঁটে যায় হিমালয় থেকে কেপ কমরিন—
নিশুতির শিশুটির ঘুমে লীন চোখে লোর :
বসুধার সুধাহীন বুকে দুধ শুকাল।
রে-মাছের মতো এক ভেসে যায় বলাহক,
টানে গা’য় আকাশের পশমের মলিদা;
নীচে তার জনতার চশমের বলিদান,
বেখেয়াল কারো হায় ফেঁসে যায় গলা-ও—
বাজে তিন পাগলের মায়া-বীণ নদিয়ায়,
ম্যাকাবার নেচে সব অভিধায় বধি আয়;
নোনাজল-আচমন—কী-কুহক, পরাশর!
আমি কার? কে আমার? ত্রিভুবন-ভরা শব।
ধরণির ধমনির অব-লাল নিয়নের
কুয়াশায় বোঝা দায় কে বেজায়, ছোট কে;
মরণের করোনার অ্যারিনায় ক্রিয়নের
সবিনয় অভিনয় ত্রুটিময় তোটকে।
ভাটিয়ালি
❑
ব’য়ে চলে ঢিমা স্রোতে
রক্তের ইছামতি
অজানা উজান হ’তে
অজানা ভাটির প্রতি
আহা রক্তের নদী রক্তের নদী বয় রে
ব’সে আছি হাল ধ’রে
বিশ্বের বিচখানে
স্বপ্নের পাল ওড়ে
জানি না কে গুন টানে
আহা রক্তের নদী রক্তের নদী বয় রে
ঢেউয়ে ঢেউয়ে বুদ্বুদ
ক-খ-গ-ঘ-ঙ আর
কত মর্মন্তুদ
অশ্রুত চিৎকার
আহা রক্তের নদী রক্তের নদী বয় রে
কোলাহলগুলি সব
আসমান দেয় ঢেকে
কাফনে যেমন শব
অথবা আত্মা ত্বকে
আহা রক্তের নদী রক্তের নদী বয় রে
চন্দ্রকোষ
❑
কেমন কুটিল, নীল, বাঁকা, চোখা হাসো তুমি, চাঁদ!
হাসিতে মোতি না, ঝরে চাকুর ঝিলিক; সারারাত
রোঁয়া-রোঁয়া কুয়াশায় সায়ানাইড ঢালো তুমি, চাঁদ,
কুয়াশা রঙিন হ’য়ে তার পর অভ্র-অন্ধকার—
অন্ধকার অভ্র হ’য়ে মাশরুমের মতো জাগে, চাঁদ,
আকাশ বুজিয়ে দিয়ে; তোমার চোয়াল-ভাঙা দাঁত
বসে তার অজগর-গলনালি ছিঁড়ে ফেলে, চাঁদ,
আর সারারাত শোঁ-শোঁ জখমি কালগোখরার শীৎকার—
একটা কপোতের মৃত্যু দীপান্বিতা পৃথ্বী থেকে, চাঁদ,
উড়িয়ে দিয়েছে হাওয়া; উল্কার মতন চাঁদনি-পাত
বিস্ফোরণে উপড়ে ফেলছে ভূত্বক্; লাভার মতো, চাঁদ,
ছিটকে উঠছে আমার শোণিত, তীক্ষ্ণ তোমার ধিক্কার…