| 29 মার্চ 2024
Categories
গল্প সাহিত্য

সংসার

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট
বেশ কিছুদিন ধরেই শরীরটা একদম ভালো নেই রাখির। জ্বর আসছে বেশ ঘন ঘন।জ্বরের ঘোরে বেহুঁশ হয়েও যাচ্ছে সময় সময় আজও তেমনি একটা দিন। সকাল থেকেই জ্বর। প্রায় নটা বাজে। এখনও বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেনি। প্রতিদিনকার মতোই হাসপাতালে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন  মানস। ডঃ মানস ব্যানার্জী। রাখির হাজব্যান্ড। এ শহরের নামকরা অর্থোপেডিক সার্জন।আজ শুক্রবার।আজ তার ও পি ডি আছে হাসপাতালে।বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে আছে তার … রাখি এখনও বিছানায়!ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার কাজের মেয়ে ঝিমলিকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছে কিরে বউদি ওঠে নি এখনও?ঝিলমি ঘাড় নেড়েছে।যার অর্থ হল না ;কয়েক দিন ধরে কি যে হয়েছে রাখির… আরে বাবা অসুখ হলে ডাক্তার দেখাক, ওষুধ খাক। সে নিজেও তো দেখে দিতে পারে!তা সেসব শুনলে তো মহারানী!প্রতিদিনকার এই ব্যস্ততার মধ্যে আরেক উৎপাত!বেরোনোর সময় তার যে হাতের কাছে সব কিছু লাগে রাখি বোঝে না!স্নানের হালকা ঠান্ডা গরম জল .. ইস্ত্রি করা পাট ভাঙা শার্ট প্যান্ট,গোছানো রুমাল,হেভি ব্রেকফাস্ট, ছানা কর্নফ্লেক্স আপেল.. তার নিয়ম মাফিক জীবনে সব কিছু গোছানো চাই!এসব তো রাখি বিয়ের প্রথম দিন থেকেই জানে আর গত ত্রিশ বছর ধরে মেনেও এসেছে,.. তবে? সব কি কাজের লোক দিয়ে হয়?
যদিও ঝিমলি অনেক দিনকার লোক এবং বউদি মনি তাকে মনের মতন করে তৈরি করেছে.. তবুও …
নাঃ ব্যাপারটা  আর  অত সহজ নেই।নিজেই গিয়ে দেখতে  হচ্ছে ।রাখির ঘরে গিয়ে দেখেন  বিছানায়  শুয়ে  আছে  রাখি…চোখ বোজা । কপালে হাত রাখেন  ডঃ মানস  ব্যানার্জী। নাঃ জ্বর তো নেই।কপালে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলেন রাখি… ওহ  তুমি ! মনে  মনে  বিরক্ত হলেও মুখে বিরক্তির ভাব প্রকাশ  করেন  না  ডঃ মানস ব্যানার্জী। স্মিত হেসে বলেন কি শরীরটা খারাপ লাগছে? জ্বর তো এখন নেই দেখছি।ওঠো। কিছু খাও। দেখবে ফ্রেশ লাগবে। মানসের কথাতেও উঠে  বসেন  না রাখি। বরং চোখটা   বুজিয়ে ফেলেন  আবার। তার কিচ্ছু ভালো লাগছে  না। বেশ কিছুদিন হল। মানস কি তার  খবর রাখে? মনের মধ্যে কি করে ঘুণ পোকা একটু একটু করে  চারিয়ে যায়! তার খবর রাখার সময় কই মানসের? রাখির হাব ভাব দেখে উঠে পড়লেন  ডঃ মানস ব্যানার্জী। আর দেরী করলে হাসপাতালে  লেট হয়ে যাবে তার। সময়ের কাজ সময়ে করার  জন্য ডাক্তার মহলে যথেষ্ট সুনাম আছে   তার। এই রকম বিনা কারণে লেট করা   তার  একবারে না পসন্দ।দ্রূত পায়ে  নীচে নেমে ড্রাইভার  সিং জিকে বলেন  হাসপাতাল চলো…
মানস চলে যাওয়ার পর অনেকক্ষণ পযর্ন্ত বিছানায় গড়াগড়ি খেলেন রাখি। ভাবছিলেন নিজের  জীবনের  কথা। মানসের সঙ্গে যখন তার বিয়ে হয় তখন তার কতই বা বয়স! মাত্র ছাব্বিশ বছর! তখন মানসরা থাকতেন যোধপুর  পার্কে। একান্নবর্তী পরিবার! শ্বশুর শাশুড়ী  দেওর ননদ  মিলে জমজমাট সংসার। দেখতে সুন্দরী রাখির গ্র্যাজুয়েশানের পরেই  হুট করে  বিয়ে হয়ে যায় ডঃ মানস ব্যানার্জীর  সঙ্গে।সুদর্শন ডাক্তার  পাত্র হাতছাড়া করতে চান নি রাখির  বাবা মা। বিয়ের পর থেকেই শুরু মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়া। উচ্চাকাক্ষী ডাক্তার মানস ব্যানার্জীর  ইচ্ছে   আর চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে নিজের সাধ আহ্লাদ সব বিসর্জন দিতে হয়েছে  রখিকে! তবুও মানসের  মন পেলেন কই ! মাঝে মাঝে  ভাবেন রাখি ডাক্তাররা বোধহয় সবাই যন্ত্র! মানুষের মনটাই হারিয়ে ফেলেন বড় ডাক্তার  হতে  গিয়ে! গত ত্রিশ বছর ধরে সাধনা করে  চলেছেন  রাখি! কোত্থাও যেন ডঃ ব্যানার্জীর  এতটুকু কষ্ট না হয় , অসুবিধা  না  হয় ; খুব সকালে মর্নিং ওয়াকে যান ডঃ ব্যানার্জী। রাখির সকাল হয় তারও আগে। মর্নিং ওয়াক থেকে  ফিরে এসে দুধ চিনি ছাড়া লিকার চা ; ব্রেক ফাস্টের টেবিলে ব্রেড, পোচ, মার্মলেড, ফল, সব নিখুঁত কায়দায় পরিবেশন চাই ডঃ ব্যানার্জীর। না হলেই রাখি রাখি করে বাড়ি মাথায় করবেন। বিয়ের পর প্রথম প্রথম রাখি ভাবতেন তিনি মানসের বড় প্রিয়জন। আজ বুঝতে পারছেন প্রিয়জন  নন আজীবন তিনি ছিলেন প্রয়োজন। বন্ধু বান্ধবদের   নিয়ে বাড়িতে   আড্ডা চলছে  পানাহার  চলছে রাখি গ্লাসে  ড্রিংক মেপে ঢেলে দিচ্ছেন। পার্টি শেষে  মধ্যরাতে  বাড়ি ফিরছেন  ডঃ ব্যানার্জী রাখি  জুতো মোজা ছাড়িয়ে  বিছানায় শুইয়ে  দিচ্ছেন। গত ত্রিশ বছরে শরীরও দিয়েছেন  রাখি ,মানসের  ইচ্ছে  মত ;প্রয়োজন  অনু্যায়ী। বিনা প্রশ্নে। রাখি জানেন এখানে  প্রশ্ন করা  চলবে না। এ অভ্যাস  তো তিনিই তৈরি করে দিয়েছেন গত ত্রিশ বছরে! আজ  তবে   নিয়মের  অন্যথা হলে চলবে কেন?  সন্তানও  আসে নি তাদের  ত্রিশ  বছরের দাম্পত্য জীবনে। রাখি অনেকবার  বলেছেন , “আজকাল  তো অনেক রকমের  চিকিৎসা হয়েছে,  চল না  একবার  ডাক্তারের কাছে”….. মানস   হেসেই উড়িয়ে  দিয়েছেন।  বরং  বলেছেন , “ডাক্তারির   তুমি কি বোঝ?” আজ  ফিরে তাকালে ফলহীন  দাম্পত্য জীবন কেমন মরুভূমির  মতো ঊষর  শুষ্ক মনে  হয় রাখির ।আজ বুঝতে পারেন  মানস কোনোদিন সন্তান চায় নি। এই খর জীবনে একমাত্র করূনা ধারা বোধহয় গুরুদেবের কৃপা। অনেক বার ভেবেছেন রাখি চলেই যাবেন হাজারিবাগ  আশ্রমে। হয়ে ওঠে নি। আটকে পড়েছেন মায়ার বাঁধনে ! মায়ার  বাঁধন  না চিরাচরিত  অভ্যাস  কে  জানে ?
২ 
ওপিডিতে  আজ কিছুতেই মন  বসছিল না  ডঃ মানস ব্যানার্জীর। এরকম সচরাচর  তার  হ্য় না। এ বয়েসে   এমন চিত্ত চাঞ্চল্য? বার  বার  রাখির মুখটা মনে  পড়ছিল। রাখি বেশ বাধ্য মেয়ে! তার  এতদিন  ধরে এমন একটা ডিপ্রেশান! অথচ  এর কোনো কারণ নেই! তিনি কি রাখিকে  ভালোবাসেন  না? তবে? গত ত্রিশটা বছর ধরে যে দিন রাত এক করে পরিশ্রম করে  চলেছেন   এ  কার  জন্য? বুকে হাত রেখে  বলতে পারবে রাখি  যে কোনো অনুষ্ঠানে সব্বাই যখন তাকে মিসেস ব্যানার্জী বলে  সম্মান করে   তখন সে  মনে  মনে  শ্লাঘা   অনুভব করে না? এই অর্থ যশ প্রতিপত্তি এর  কিছু কি তার   নিজের  যোগ্যতায় হয়েছে? অথচ তার সহধর্মিনী হিসেবে   সারাজীবন তো এসব ভোগ করে এল! হ্যাঁ তার পরিবর্তে তাকে  দিয়েছে  নিরঙ্কুশ বাধ্যতা। সে তো সবাইকেই দিতে হয়  কিছু না কিছু  এ সংসারে! সিম্পল গিভ অ্যান্ড  টেক পলিসি! তিনি যদি এত উদয়াস্ত পরিশ্রম  না করতেন,  পারতেন ওই যোধপুর পার্কের বাড়ী থেকে  বেরিয়ে  এই সাফল্যের শীর্ষ স্পর্শ করতে? এই ভোগ ঐশ্বর্যে মোড়া জীবন , কথায়  কথায়  বিদেশ ভ্রমণ  এসব  হতো? তবে? রাখি যে কেন বোঝে  না!
ঘুম থেকে উঠে  রাখি খানিক্ষন আয়নার সামনে  বসেন। কি চেহারা হয়েছে ! চোখের কোণায় কালি! মুখের  বলিরেখাগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে! কি বা বয়েস  হয়েছে   তার ! সবে বাহান্ন। অথচ বিয়ের সময়  কি সুন্দরীই না দেখতে ছিলেন! ছেলেরা যখন তার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে  থাকত   তখন মনে মনে গর্ব অনুভব করতেন বই কি! অল্প বয়েসের সেই উজ্জ্বল ফর্সা রং বয়েসের সঙ্গে সঙ্গে ম্লান স্তিমিত হয়ে   এসেছে। আসলে রূপ যৌবন অর্থ কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। সময়ের   সঙ্গে সঙ্গে সবই চলে  যায় … এই যাওয়াটাই চিরসত্য। এতটা বু্ঝতেন না আগে রাখি। গুরুদেব সব বুঝিয়ে দিয়েছেন ।হাজারি বাগে  গুরুদেবের   আশ্রমে যাওয়ার পর আর সংসারে মন টেঁকে না রাখির। মনে  হয় সবই অনিত্য। স্নান সেরে পুজোর ঘরে আসেন রাখি। গুরুদেবের ছবির সামনে চোখ বুজিয়ে  ধ্যানে  বসেন। ইদানীং ধ্যানে বসলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে  এক বিশালাকায় নীল পদ্ম। সেই পদ্মের ওপর  বসে  আছেন গুরুদেব স্বয়ং। চারিদিকে এক অপূর্ব অপার্থিব পদ্ম গন্ধ। সেই মায়াময় পরিবেশে ক্রমশঃ হারিয়ে যেতে থাকেন রাখি …
ভোরের আলো তখনও ফোটে  নি ভালো ভাবে। সারা আকাশ জূড়ে একটা চাপা আলো ছড়িয়ে  আছে। হেমন্তের   শেষাশেষি, বাতাসে শীতের   আমেজ রয়েছে। হালকা শব্দ করে সদর দরজার   তালা খুললেন  রাখি। যাতে  বাড়ির  কারও ঘুম না ভাঙ্গে। সারা বাড়ি এখন  ঘুমে অচেতন। মানস  কাল অনেক রাত্রে বাড়ি ফিরেছেন; চূড়ান্ত  মদ্যপ অবস্থায়।বাজখাঁই গলায় তাকে গালাগালি দিতে দিতে সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলেন। নিজের  ঘরের বিছানায় শুয়ে  সব শুনেছেন  রাখি, কিন্তূ একবারও খোঁজ নেওয়ার   তাগিদ   অনুভব করেননি।  ইদানীং একটি জুনিয়ার ডাক্তার মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে  জড়িয়েছেন মানস। মেয়েটি ভারী মিষ্টি দেখতে। নাম কণিকা। বাড়িতেও এসেছে  কবার। মেয়েটির চোখ দেখেই বুঝতে পেরেছিলেন রাখি। এ সব দেখলে  এখন তার   হাসি পায়। সারা জীবন কম  তো দেখলেন   না ডঃ মানস ব্যানার্জীর কীর্তি! জুনিয়ার মেয়েগুলোর ওপর  তার   এখন কেমন যেন  করুণা   হয়! এত ব্রাইট কেরিয়া্রের  মেয়েগুলো এত বোকা! কি আছেটা কি মানসের মধ্যে? একটা আত্ম সর্বস্ব ভোগী লোক! এই লোকটাকে  পড়ে  ফেলতে  এত দেরী লাগে  মেয়েগুলোর?
কাঁধের ব্যাগটা সামলে  নিয়ে  দরজা খুলে রাস্তায় পা রাখেন রাখি। আজ থেকে তিনি স্বাধীন। আর ফিরবেন না  ঐশ্বর্য্যে মোড়া সল্টলেকের   এই জেলখানায়। ব্যাগে কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়াও হালকা কিছু জামাকাপড় নিয়েছেন আর কিছুটা তার নিজস্ব সঞ্চিত অর্থের  অংশ। বাইরে  বেরিয়ে  নিজেকে  কেমন নির্ভার  আর হালকা লাগে। আজ থেকে তিনি মিসেস মানস ব্যানার্জী নন। শুধুই রাখি। দ্রুত পায়ে পা চালান রাখি। ছটা পঞ্চান্নের ট্রেন, হাওড়া থেকে। 
কাজের মেয়ে ঝিমলির  হাঁক ডাকে ঘুম ভাঙ্গে  মানসের। কাল রাতে একটুও  ঘুম হয়নি  তার। মদ্য পানের  মাত্রাটা   বেশ  বেশী হয়ে গিয়েছিল। মাথাটা সকাল থেকেই ভারী হয়ে আছে।  আজ রবিবার। তাই বাঁচোয়া। হাসপাতাল, চেম্বার  কিছুই নেই। দরজা  খুলে  বেরোতে  বেরোতে মানস শুনতে পেলেন  ঝিমলি বলছে  দাদাবাবু বৌদিকে কোত্থাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে  না। ভোরবেলা  আমি উঠে   দেখি সদর দরজা আলগা  করে ভেজানো। কোথায় গেল বৌদিমণি এই ভোরবেলা? এর পরের কথাগুলো  আর মানসের কানে ঢুকছিল না! সেন্টার টেবিলের  ওপর রবীন্দ্র নাথের গল্পগুচ্ছটা  পড়ে ছিল। তার মাঝখনে একটা চিঠি। রাখির হাতের লেখা।
“চললাম। হাজারি বাগ। গুরুদেবের  আশ্রমে। খোঁজ করার চেষ্টা কোরো না। অনেক দিন তোমার  পরিচয়ে  বাঁচলাম। এবার  মুক্তি চাই।”  গল্পগুচ্ছের   যে  পাতায় চিঠিটা  রাখা  ছিল, সেটা  ” স্ত্রীর পত্র “…
“আজ আমি এসেছি তীর্থ করতে শ্রীক্ষেত্রে, তুমি আছ তোমার আপিসের কাজে। শামুকের সঙ্গে খোলসের যে সম্বন্ধ কলকাতার সঙ্গে তোমার তাই, সে তোমার দেহমনের সঙ্গে এঁটে গিয়েছে; তাই তুমি আপিসে ছুটির দরখাস্ত করলে না। বিধাতার তাই অভিপ্রায় ছিল; তিনি আমার ছুটির দরখাস্ত মঞ্জুর করেছেন।
আমি তোমাদের মেজোবউ। আজ পনেরো বছরের পরে এই সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে জানতে পেরেছি, আমার জগৎ এবং জগদীশ্বরের সঙ্গে আমার অন্য সম্বন্ধও আছে। তাই আজ সাহস করে এই চিঠিখানি লিখছি, এ তোমাদের মেজোবউয়ের চিঠি নয়।
ওরে মেজোবউ, ভয় নেই তোর! তোর মেজবউয়ের খোলস ছিন্ন হতে এক নিমেষও লাগে না।
তোমাদের গলিকে আর আমি ভয় করি নে। আমার সন্মুখে আজ নীল সমুদ্র, আমার মাথার উপরে আষাঢ়ের মেঘপুঞ্জ।
তোমাদের অভ্যাসের অন্ধকারে আমাকে ঢেকে রেখে দিয়েছিলে। ক্ষণকালের জন্য বিন্দু এসে সেই আবরণের ছিদ্র দিয়ে আমাকে দেখে নিয়েছিল। সেই মেয়েটাই তার আপনার মৃত্যু দিয়ে আমার আবরণখানা আগাগোড়া ছিন্ন করে দিয়ে গেল। আজ বাইরে এসে দেখি, আমার গৌরব রাখবার আর জায়গা নেই। আমার এই আনাদৃত রূপ যাঁর চোখে ভালো লেগেছে সেই সুন্দর সমস্ত আকাশ দিয়ে আমাকে চেয়ে দেখছেন। এইবার মরেছে মেজোবউ।
তুমি ভাবছ আমি মরতে যাচ্ছি— ভয় নেই, অমন পুরোনো ঠাট্টা তোমাদের সঙ্গে আমি করব না। মীরাবাঈও তো আমারই মতো মেয়েমানুষ ছিল—তার শিকলও তো কম ভারী ছিল না, তাকে তো বাঁচবার জন্যে মরতে হয় নি। মীরাবাঈ তার গানে বলেছিল, ‘ছাড়ুক বাপ, ছাড়ুক মা, ছাড়ুক যে যেখানে আছে, মীরা কিন্তু লেগেই রইল, প্রভু— তাতে তার যা হবার তা হোক।’
এই লেগে থাকাই তো বেঁচে থাকা।
আমিও বাঁচব। আমি বাঁচলুম।
তোমাদের চরণতলাশ্রয়ছিন্ন-
মৃণাল।”

লেখাটা পড়তে পড়তে কোথাও ডঃ মানস ব্যানার্জীর মনে  হল স্ত্রীরা যুগে যুগে একই হয়… একটুও বদলায় না …।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত