| 24 এপ্রিল 2024
Categories
গল্প শিশুতোষ সাহিত্য

মিশন করোনা নিধন

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

 

ক্যাপ্টেন রজার্স- সব ঠিক আছে তো?

না মহামান্য এলাআরও দুটি করোনাভাইরাস আক্রমণ করেছে।

মহামান্য এলা কনট্রোল সেন্টারের নরম চেয়ারে গা ডুবিয়ে দেন । তিনি মানুষ ননএলিয়েন। তাঁদের গ্রহ জুনো তে আক্রমণ করেছে এক নতুন ভাইরাস। তার নাম করোনাভাইরাস। এই করোনা যাকে পাচ্ছে তাকেই মেরে ফেলছে। গ্রহের প্রধান হিসেবে তার দায়িত্ব হাজারগুণ বেড়ে গেছে। চিন্তায় মাথা দপদপ করছে। একটা মাইগ্রেনের পিল খেলেন তিনি।

ভিডি মডিউলে কল দিলেন ল্যাবরেটরিতে। সেখানে এলিয়েন বিজ্ঞানীরা করোনার প্রতিষেধক বের করার চেষ্টা করছে। এখন তাদের প্রথম কাজ এই ভাইরাসে উৎপত্তি  সম্পর্কে জানা।

কি খবর বিজ্ঞানীরাকিছু জানতে পেরেছ?

মাথা থেকে বের হয়ে আসা চৌম্বকীয় তরঙ্গ দিয়ে আনন্দধ্বনির মত একটা শব্দ করে বিজ্ঞানী জোশি বলল, –সুসংবাদ আছে মহামান্য এলা! এই ভাইরাস এসেছে পৃথিবী থেকে!

পৃথিবীসেটা আবার কি?

ছায়াপথে অবস্থিত। সৌরজগতে সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণায়মান। তৃতীয় গ্রহ। ঐ গ্রহের একটি দেশ চীনে সৃষ্টি হয়েছে ভাইরাসটি।

তাই নাকি?

হ্যাঁ ,আরও একটা চাঞ্চল্যকর খবর আছে। আমরা এর প্রতিষেধক আবিষ্কার করে  ফেলেছি।

বলো কি?

আপনি যা শুনছেন তা সত্যি। সালফার ডাই অক্সাইড আর নাইট্রাস অক্সাইডের সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে এটি। 

খুবই ভাল। আর শোনএক গ্যালন প্রতিষেধক তৈরি করে মিশন কন্ট্রোলে পাঠিয়ে দাও।

ঠিক আছে মহামান্য এলা।

মহামান্য এলা একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন। করোনাকে নির্বংশ করতে হলে প্রথমে এর উৎপত্তিস্থল চীনে গিয়েই সবকটাকে মারতে হবে।

                                                                        

 

পৃথিবীতে তখন গভীর রাত।

আস্তে আস্তে উহান শহরে নেমে আসল একটি স্পেসশিপ। জেগে থাকলে মানুষেরা  নিশ্চয়ই অবাক হয়ে দেখত। যেহেতু কেউ জেগে নেই,তার পর প্রাণঘাতী করোনার ভয়ে সবাই ঘরবন্দিতাই নির্বিঘ্নে কাজ সারতে পারবে এলিয়েনরা।

কিন্তু- মানুষেরা কি ঘুমিয়ে থাকলে অদৃশ্য হয়ে যায়এলিয়েনরা তন্নতন্ন করে খুঁজেও একটা মানুষ দেখল না। বাধ্য হয়ে তারা বের করল মানব ট্র্যাকার । বোতাম টিপতেই যন্ত্রটি তার কাজ শুরু করে দেয় । ফলাফল… অবিশ্বাস্য । পৃথিবীতে মাত্র ৫টি মানুষ আছে। কিন্তু নাতারা  পৃথিবী নিয়ে গবেষণা করে এসেছে- সেখানে প্রায় সাত দশমিক পাঁচ বিলিয়ন মানুষ আছে- আর সে জায়গায় মাত্র  পাঁচজনতারা যন্ত্রটাকে বাড়িধুড়ি দিয়ে দেখলযন্ত্রটা  ঠিকই কাজ করছে। এখন উপায়মহামান্য এলাকে বলতেই হবে।

মহামান্য এলাপৃথিবীতে আর মাত্র ৫ জন মানুষ আছে ।

কি বলছ তোমরা উল্টোপাল্টা?

সত্যিই বলছি। সম্ভবত করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বের বাকি মানুষ মারা গেছে। বাংলাদেশেই অবশিষ্ট মানুষেরা একত্রে আছে। পৃথিবীর আরেকটা দেশ সেটি।

আচ্ছা ওখানে যাও গে। প্রতিষেধক দাও । তবে পৃথিবীর মানুষের জন্যও আমি একটা উপকার করতে চাই আর তা হল বংশবৃদ্ধি। আমি স্পারম  এগ ভর্তি একটা হ্যাচেট পাঠাচ্ছি। মহিলাদের শরীরে ঢুকিয়ে দিয়ো- দশ মিলিগ্রাম করে। ঠিক আছে?

যা বলবেনমহামান্য এলা।

                                                     

 

বাইভারবালে চেপে বাংলাদেশে উড়ে এলো এলিয়েনরা। মানুষগুলোকে ঢাকার খাঁ খাঁ এক রাস্তায় খুঁজে পেতে  বেগ পেতে হয়নি। তাদের অবস্থা দেখে করুণায় চোখে জল আসল এলিয়েনদের। ছেঁড়াখোঁড়া জামাকাপড়ময়লা চুল- এ সব মিলিয়ে অবর্ণনীয়। পেছন থেকে একজন এলিয়েন কেশে গলা পরিষ্কার করল।

শব্দে  একজন মহিলা পিছনে ফিরে তাকাল। তার মধ্যে নেই মানব স্বভাবসুলভ কৌতুহল। মনে হল যেন এমন এলিয়েন তারা রোজই দ্যাখে। নিরাসক্ত গলায় সে বলল, –কি চান ?

আপনাদের পরিচয় কি জানতে পারি ?

আমাদের আর পরিচয় কি? বাঁকা হাসি হেসে সে বলল‘ –আমরা  করোনা আক্রান্ত রোগী। পৃথিবীর আর সবাই মৃত কেবল আমরাই জীবিত। আমাদের ছোঁবেন না প্লিজ।

আরেকজন মহিলা বলল, –যাহোক এই দুর্যোগের আগে আমরা যেভাবে পরিচয় দিতামসেভাবেই দিচ্ছি। আমি ক্লারাআর  ঐ যে আমার স্বামী  ক্লেমেন্টাইন। আমরা পর্তুগিজ। যার সাথে কথা বলছিলেন তিনি রাবেয়া আর তার স্বামী রবিউল ও মেয়ে  রোকসানা ওখানে বসে আছে। আমরা দুজনই আমাদের সন্তান হারিয়েছি। রাবেয়ার আর দুটি বাচ্চা ছিল। তারা আজ আর নেই। আমার সন্তানরাও।

একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে কথা শেষ করলো ক্লারা।

একটা এলিয়েন বলল, –আপনারা কি কিছু পান করতে চান?

এই প্রথম চকচকে চোখে তারা সমস্বরে বলল , –হ্যাঁ ! ঐ এলিয়েনটা অন্যদের ইশারা করলো জুনো গ্রহের পানীয় রিসটা পাঁচটি  গ্লাসে ঢালতে। প্রতি গ্লাসে দেয়া হল একটু প্রতিষেধক । মহিলাদের গ্লাসে বংশবৃদ্ধির জন্যও স্পার্ম এগ । খেয়ে কিচ্ছু বোঝা যাবে না।

কিছুক্ষণ পর  মানুষদের বিদায় দিয়ে এলিয়েনরা উড়াল দিল আকাশে। পাইলট বলল- এখন আমাদের দায়িত্ব শেষ। এখান থেকে করোনা- খতম!

হ্যাঁপাঁচজন হয়ে সুবিধাই- তাড়াতাড়ি কাজ শেষ-

সবচেয়ে বড় কথাতারা কিন্তু খেয়ালই করেনি আমরা এলিয়েন!

করেছে হয়তো – প্রকাশ করেনি-

                                                        

 

পঁচিশ বছর পরের পৃথিবী।

পৃথিবীতে দূষণের ছিটেফোঁটা নেই। করনা থেকে আড়মোড়া ভেঙ্গে ধরার প্রতি মানুষ হয়েছে মমতাশীল। তবুও কীভাবে পৃথিবী জেগে উঠলোসে ব্যাখ্যা যদি রাবেয়ারবিউলরোকসানাক্লারা  বা ক্লেমেন্টাইন দেয় – তাহলে কেউ তা বিশ্বাস করবে না।

ষাটোর্ধ রাবেয়ার হাত ধরে তার নাতনি বলেও নানি বল নাএলিয়েনরা তোমাদের কি খেতে দিল?

জানি  নে বাপু- দিল এক মিষ্টি  শরবত – খেয়ে করোনাও গেলোপটাপট বাচ্চাও হতে লাগল- তা বাপু আমি তার নাম জানি নেযা তুই-

বিশ্বাসযোগ্য কোন ব্যাখ্যা না পেয়ে চার বছরের অবোধ শিশু ছুটে গেলো মাঠে।

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত