| 13 ডিসেম্বর 2024
Categories
এই দিনে কবিতা সাহিত্য

সুপম রায়ের কবিতাগুচ্ছ

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

আজ ৩০ জানুয়ারী কবি সুপম রায়ের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।


 

মেঘ উড়াস

অল্প জলের শব্দগুলো
ভীষণ রকম সন্ধ্যে চায়,
তোর দুয়ারে হাঁকছে আমার
অল্প রঙের পদ্য-ছাই।

গোছানো ছায়া, শান্ত মাঠ,
তোর কপালে রৌদ্র-টিপ।
সমুদ্রে জল শুকিয়ে যাক
বুকের ভিতর ফেলছি ছিপ।

মরুর ওপরে তীব্র রঙ,
গোলাপ টবে উঠল ঘাস।
তোর পাড়াতে আবার আসা
উড়ান পথে মেঘ উড়াস।

অনেক দূরের গল্প মাঝে,
জায়গা রাখা তোর পাশে।
ভিলেন এসে চোপাট করে
এমন ঘুমও প্রায় আসে ।

 

প্রেমিকা

কখনও তোকে খুব মনে পড়লে আমি হেঁটে যাই
অতীতের দরজায়। কড়া নাড়ি।
সাড়া না পেলে দরজার সামনে বসে অপেক্ষা করি কিছুক্ষণ।
ক্ষণে ক্ষণে মনে হয় এই বুঝি কেউ এসে খুলল দরজা,
তুই কিংবা তোর ছোট ভাই।

অতীতের অভিমান খুবই শক্ত হয়।
তুইও কি সেই শক্ত মানসিকতায় মুড়িয়ে নিয়েছিস নিজেকে?
আমি বলতে এসেছিলাম, আমাদের মৃত্যুর কথা …
আরেকবার জন্ম নিলে হয়না!

কেবল বর্তমান থাকবে আর কোনও কালের অস্তিত্ব রাখব না।
আবার আসব আমি। অপেক্ষা করিস দরজায়।
সেইবার নিয়ে যাব সাথে …

 

বন্ধু

চলে যায় তবু ভরসা রাখে ছায়ায়

ঢেউ ভাঙ্গার সঙ্গী । পাহাড় চড়ার সঙ্গী ।

কাঁধ থেকে প্রসারিত হয় আরেকটি কাঁধ

এখানে তফাৎ শুধু দেখার দৃষ্টিভঙ্গি ।

খাঁদের কাছে দুর্যোগ আঁকা মায়া

ভয় দেখিয়ে মুখোমুখি দাঁড়ায় ।

রাস্তা কঠিন শাস্তি পাওয়ার সময়

ছায়ার মতো সে-ই হাত বাড়ায় ।

ভুল ঘটে যায় স্বয়ং নিজের সাথে

জট বেঁধে যায় নিজের শিরায় শিরায় ।

ক্ষতের ওপর বৃহৎ ক্ষতির চাবুক

মলম মাখে বন্ধু কেবল পীড়ায় ।

 

 

যাবার আগেই

 চ্যাপলিনও নই,সান্তাও নই,আমি আমজনতা—

সৎ-এর হাতে বিশ্ব দেবো এই সততা ।

মামলা আমার ভীষণ কঠিন এই বেলাতে,

যাবার আগেই জিতিয়ে দেবো সব খেলাতে ।

রঙের অভাব যাদের ছিল ঐ শাসনে,

শিখিয়ে নেবো আজ দাঁড়িয়ে এই ভাষণে ।

কথার কথায় সই যদি হয় সব আড়ি-ভাব,

যাবার আগেই কাটিয়ে দেবো সব অভিশাপ ।

ফিরিঙ্গিদের উড়তি ফড়িং ঐ আকাশে,

নামিয়ে নেবো এক তীরেতে আজ নিকাশে ।

শ্মশান গড়ার রোগ যদি হয় রোজ সকালে,

যাবার আগেই জ্বালিয়ে দেবো সব অকালে ।

 

 

অন্য এলাকায় 

যেখানে রক্তে লাল মাটি ,
রোজ হ্যান্ডশেক আর অভিনন্দন
আদান প্রদান হয় বন্দুক-তলোয়ারে ,
যেখানে রোজ দানবীর আরতি হয় ,
গান হয় রক্তবোমার ,
সেখানে সংশয় হয় স্বাধীনতা নিয়ে ,
নিজস্বতা নিয়ে , আপনজন নিয়ে ।

বলো – সুখ আসলে কী ?  শান্তি কী ?
বন্ধুত্ব কী ? পরিবার কী ?
আগুনওতো খোঁজে অক্সিজেন ,
পেতে চায় তার নিজস্ব তাঁবু ।
সেও ছোটে সেখানে , যেখানে তার সুখ ,
শান্তি আর অস্তিত্ব নির্ভর করে –
যেমনই করে একজন পরিযায়ী ।
কেটে রাখা আছে শেষ ট্রেনটার টিকিট ।
মৃত্তিকা , তুমি ডেকে পাঠালেই সবাই মিলে
পারি দেবো অন্য এলাকায় ।

 

 

এলোমেলো

তেপান্তরের মাঠ পেরোলাম,

পেরিয়ে এলাম মরুভূমির ক্ষেত ।

অল্প কিছু মেঘ ছুঁয়েছে,

উড়িয়ে দিলাম হাতে অন্ধ রেত ।

লালন সাগর বুকের মাঝে,

নীলচে ঠোঁটে স্পর্শ রাখার ছাপ ।

দু’মুঠো রোদ অন্ধকারে

ঠিক খুঁজে নেয় কালির অভিশাপ । 

কাচের ঘরে বন্দী প্রদীপ,

এলোমেলো রাস্তা হেথায় শেষ ।

পরের দানে খেলবে কে আর !

অল্প জিত আর হারেই আছি বেশ ।

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত