আজ ১৬ মার্চ কবি স্বপন রায়ের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
আবহাওয়া
যে আমার শিথিল ট্রিঙ্কাস…চিল্ড কিন্তু শাড়ি না পরার অবহেলায় ঠেসে ধরা মার্জিন, পুরু টেন্টে লাগানো বঙ্গীয় চাঁদ, চাঁদু
তাতে শ্যাম ঘন হ’য়ে শাড়িকে উদার লীলা ধিকিধিকি প্যাঁচ, যে ওখানে থাকে সেকি ওখানেই থাকে নাভিবেকার হয়ে, স্ট্রিটে চুরুট ধরাবার অপেক্ষায়
বৃষ্টিঘের মৌসিন যেন, ব্রামরাম বৃষ্টি আর ঘুরে বসবে না
রংতো সেই স্টিলেটোর হাই
আজ সোঁদা গন্ধে মেশানো, আজ আর ফস্কাবে না শেষ লোকাল
চাঁদের ফাটাফাটিতে ঢুকছে বারাসতের লম্বা মেয়েলি ভয়…
পাঁচু মন্ডল-১
ফেরার সময় প্রায়ই মনে হতো যে হলে হয়
নদিতে একলা স্নান
গানে বেমক্কা ঢুকে যাওয়া রাই শব্দটা
হয়
জীবনের রঙ খয়েরি হলেও
হয় আমাদের রঙে রাইকে ডাকার রাস্তা
শেষে রাই তো থাকেই
আর ভ্রমরের অবসান মাখা দুটো চোখ
ফেরে না নদী আছে শুধু সে নেই
ডুবেও যায়নি ও
পুলিশ বাঁশির কথা জিগগেস করছে কেন হাসছে কেন
অরুন্ধতির ঘর
কাচ ভাঙার শব্দে অরুন্ধতি ঘিয়ে রঙের চমক দিল
আকাশপারে
আকাশ পারে!
আমি মি
মি কি কারো নাম, কোন চাউনিগহন কোড
মি’র সঙ্গে মিমির সঙ্গে মিমিদের সঙ্গে
আমি
মনে হয় যেদিন রোলকল হল, কে যেন বলল,স্যার একটা ছিটকিনি না দিলে
অবন তো হেসে উঠবে
আমি তুলি আর ব্রাশ আর অনেক কাঁচা রঙ নিয়ে
আর মিমিদের নিয়ে
আমিই তো আকাশপারে কি যে বানালাম, কার ঘর কিসের বাড়ি
অবন হেসে উঠল
ঠাকুর হাসে
অরুন্ধতি জানলা বোনে পার ধ’রে আকাশের
আকাশপারে আকাশই পারে…
উদাসীন মল্ট
উড়ে যাওয়ার পরেই পাখি হলাম। সারংশময় এক সাঁতারু আকাশের। তুমি যাওয়ার পরেই। ডানা বৈষ্ণব, ঠোঁট শাক্ত পদাবলী। কখন তুমি চলে গিয়েছ কে জানে, শুধু বৃষ্টি বেজেছিল পায়ের পাতার মতন, লিখেই ভেজা বাইলেনে কে যেন, ডাকল। বৃষ্টিফেরার ডাক। চলে গেল ট্রামের মাথায় জড়িয়ে। এই মিয়াঁ তো ওই মালহার, চা ফুটছে। রাস্তার আর কি, জল চুষবে। আকাশ বদলাচ্ছে, তাই।
পাখি হয়েই ডানা ঝাড়লাম। হাত ডানার কবরে শুয়ে আছে। তুমি হাতের ব্যবহার নিয়ে বলতে।কত পুরনো আমাদের সভ্যতা, বলতে।তোমার বুকে আমি একটা শব্দ আর একটা গন্ধ পেতাম। গন্ধটা হিমনাশক। শব্দটা পাল্কির। হু হু হু হু হুমনা। অসভ্য, বলতে। আমার বাড়ি এখন পাখির বাসা। বাড়ি আর বাসার মধ্যে শুধু একটা গান।‘মন খারাপ করা বিকেল মানেই মেঘ করেছে..’। শধু এই গানটা, আমি পেরোতে চাইছি…
১৪.
মৌকাল, একটা বাংলোর নাম। আজ চাঁদ আর চার্চের বিয়োগব্যথায় শাদা। শালের পাতায় মহুয়া ঢুকে বসে আছে। শালশরাবী রাত আজ, হাতি এলে সেই হস্তীনির কথাও ভাববো যে প্রথম ভালবেসেছিল।‘কি কি হবে’ থেকে ‘কি হবে’ অব্দি এই জঙ্গল। নেশা পাতা, নেশানিমীল পাতায়। চোখ এবার সায়র হবে, দিঘি হবে, আমি রাস্তার ধারে আলকায়দা। না, আলকায়দা নয়, আলটপকা ব্লুজ। বাংলো শব্দটা সেক্সি। কেন, বাংলো খুলে ঢুকতে হয় বলে?- তুমি। ঢুকে বন্ধও করতে হয়, বললাম। তুমি উঠে এলে। চাঁদ আর চার্চের মাঝখানে, হোমস আর ওয়াটসনের মাঝখানে। সারা গায়ে রহস্যকাতার। খুলোনা, থাক। পাইপের ধোঁয়া ঘুরছে, বাইসন ঘুরছে, চিতাবাঘ ঘুরছে, হাতিও। আর মৌকাল, মৌকাল নামটা?
আমি ডেকে উঠলাম। তুমি শুনলে কি শুনলে না, চার্চের মাথায় চাঁদ লটকে গেল। বাঘ ফুরিয়ে যাচ্ছে। বাঘের প্রেম। আমি তাই ডাকলাম। বাঘ গড়ে উঠছে যেন।তুমি কি ভয় পেলে, বাঘ কখনো রেপ করেনা, ভয় নেই। বলেই দেখলাম, বাঘিনী দাঁড়িয়ে আছে।
দূর দূর তক ইহাঁ কোই নহি হ্যায়, মনে হল বলছে বাঘিনীটা..
১৫.
বাকি ইস্তাম্বুলে, দিয়ে বললাম। কি দিলাম আমি, কি দিতে পারি যখন ট্রাম্প আর পুতিন মাছ ধরছে। কুয়াশা থাকায়, দিঘির একটাই রঙ। মাঝে মাঝে ধাক্কা দিচ্ছে শাদা হাঁসেরা, কুয়াশাকে।
রাজহাঁস, সঙ্গে দিঘি। অপেরামেরুণ বলশয়, আমি তার কাছে কয়েকশো হাঁসের জলছবি নিয়ে, প্লেন ড্রেসে, যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে আমি স্বপন। আমার বাড়ি খড়গপুরে। আর আমি মাছ খেতে ভালবাসি। ট্রাম্প আর পুতিন মাছ ধরছে। ওডেট আর ওডিলও এল। একই নাম, সেই কবে থেকে। আমি পাল্টে দিলাম। হিয়া আর চূয়া। ওরা খুব খুশি। আমায় প্রিন্স ট্রিন্স ভাবছে নাতো? বলে দিলাম, আমি ইস্তাম্বুলে চলে যাবো, তার আগে হাঁস আর দিঘিটা মেপে নিচ্ছি। ট্রাম্প পুতিনকে কি যেন বলছে। নাক ডাকা নিয়ে। পুতিন হাসল। নাক নিয়ে কোন সমস্যা নেই, রাশিয়ার। চাইকোভস্কি জাগিয়ে রাখবে।
সরু সরু আত্মহত্যার রেশ বলশয়ে। হাঁসেরা রাজপরিবারে উড়ছে। মাছ ধরার ছিপে চারা পুঁতে দিচ্ছে নুডলসবিহারী লালঝাণ্ডা। ব্যালেরিণা, ফুটে ওঠার প্রকাশ দিল। নেভানিভু বলশয়ের শিহরাতুর চেলো, অনাদি ভায়োলিন, শরণাগত পিয়ানো। মাছের সাঁতার ব্যালেরিণার পায়ে। ট্রাম্প, পুতিন, স্বপন, নাজমুল, পিওতের, স্তেফান। কোন মানে নেই, নামগুলো চলে যাচ্ছে এখন। রাত হল। খিদে বাড়ল মানবজাতির।
বাকি ইস্তাম্বুলে। কবিতাকে নিয়ে পালাচ্ছি। কবিতা ব্যালেরিণা। কবিতা মীণ। কবিতা শিকার। ইস্তাম্বুল একটা জায়গা। উচ্চারণ করতে ভাল লাগে, তাই…
গানবাড়ি
১.
এই বাড়ির নাম গান। জানলার নাম পাখোয়াজ। দরজার, বীণা। তোমার নাম ‘সখী’। মধ্যে, ‘ভাবনা’। পদবী, ‘কাহারে বলে’। কলে জল পড়ছে, ভৈঁরোল। রেওয়াজি দেওয়াল। কয়েকটা গলাবসা, খুকখুক লেগে আছে। জানলার ক্যাঁচকোঁচও গিঁটখোলা হারমোনিয়ামে মিশলো। এল এল মৌসুমী, ঝড় এল হঠাতই। ওড়নায় চাপা বিদ্যুৎ কি মিশবে না আকাশে, যুগলবন্দী তারপর, মিশলে। ঝড় গেল, ঝর ঝর এল।উধাও উধাও। জলস্বর, জলসুর। কে যেন মুছে দিচ্ছে, এই গানউধাও বাড়ি, আমার বেগানা সাইকেলটাও…
২.
কোনও একটি দূরে, কোনও একটি সুর। কোনও একটি বাড়ি, একটাই কোনওদিন। রিডখোলা, জলছুম ঘোর, গ্রীলে, ঘোরসিপিয়া বারান্দায়। সুর বসে। গান হাত নাড়ে। হাতে বন্দর, আঙুলে নৌকো, ফোঁটাবৃষ্টি নখ ছাড়িয়ে, রঞ্জনী ভিজিয়ে একটি, দুটি হাহাকার। দূর, কোনও একদিন, সুর কোনও একটি। বৃষ্টিতে ভেজে। রক্তেও। চিৎকার চাপা দেয় তারসানাই। কার্তুজ গান শোনে, ঘিলু ফাটিয়ে। একটি সুর, একটা দূর, ‘রহিয়া রহিয়া’ বৃষ্টি বাড়িটিতে। সন্ধ্যা আসে। মেঘ চলে যায়। আর্তনাদ আর নাদ আলো জ্বালায়, কোনওদিন।