| 29 নভেম্বর 2024
Categories
জীবন যাপন

চা নিয়ে অজানা দশটি তথ্য

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

চা খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয়। এমন অনেকেই আছেন যাদের দিন শুরু হয় এক কাপ চা দিয়ে। তাছাড়া মেহমানদের আপ্যায়নে কিংবা বন্ধুদের আড্ডায় চা ছাড়া চিন্তাই করা যায় না।
চায়ের রয়েছে নানা রকমফের। কারোর লেবু চা, কারোর আদা ও লেবু মেশানো চা, কারোর শুধু লিকার চা, কারোর দুধ চা, কারোর আবার চা-কফি-দুধ মেশানো চা পছন্দ। এছাড়া সিলেটের রয়েছে সাত রঙের চায়ের ঐতিহ্য। এই চা কিন্তু ব্রিটিশদের মাধ্যমে সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। তবে চা নিয়ে রয়েছে চমকপ্রদ কিছু তথ্য, যা অনেকেরই অজানা। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক চায়ের অজানা তথ্যগুলো-

১. চীনে ২০০ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে চা পান শুরু
মধ্য চীনের ইয়াং লিং সমাধিস্তম্ভে প্রাচীনকালে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে যেসব নৈবেদ্য দেয়া হত তার মধ্যে পাতা দিয়ে তৈরি শুকনো কেক দেখা যেতো। এসব পাতার মধ্যে থাকা ক্যাফেইন এবং থিয়ানিন প্রমাণ করে যে, সেগুলো প্রকৃতপক্ষে ছিল চা পাতা। যা মৃতদেহের সঙ্গে দেয়া হত তাদের পরলৌকিক ক্রিয়ার অঙ্গ হিসেবে।

২. সব চা আসে এক প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে
যত ধরনের চা আছে সবই তৈরি হয় ক্যামেলিয়া সিনেসিস থেকে। এই চির-হরিৎ গুল্ম বা ছোট গাছ থেকে পাতা এবং পাতার কুঁড়ি সংগ্রহ করে তা চা উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের চায়ের মধ্যকার পার্থক্যগুলো উদ্ভিদের চাষের ধরন, পরিস্থিতি এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ার ভিন্নতার জন্য।

৩. ধর্মীয় অনুষঙ্গ
জাপানে চা আসে চীন থেকে ফিরে আসা জাপানি ধর্মগুরু এবং দূতদের হাত ধরে। সেটা ষষ্ঠ শতকের দিকে এবং দ্রুত তা ধর্মীয় শ্রেণীর মানুষদের পছন্দের পানীয় হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। আর গরম পানির সংস্পর্শে এসে হালকা সবুজ রঙ ধারণকারী গ্রিন টি, কয়েক শতাব্দী ধরে সংস্কৃতিবান এবং উচ্চবিত্ত সমাজের মানুষদের কাছে প্রাধান্য পেয়ে আসছে।

৪. রাশান ক্যারাভান চা
রুশদের কাছে বেশিরভাগ চা পৌঁছাতো চীন থেকে রাশিয়ার পথে ক্যারাভান রুটে। উটের কাফেলা মাসের পর মাস ধরে ভ্রমণ করে মহাদেশ জুড়ে চা বহন করে চলত। তাদের রাতের ক্যাম্প-ফায়ারের ধোঁয়া চায়ের ওপর পড়তো এবং যতক্ষণে তারা মস্কো কিংবা সেন্ট পিটার্সবার্গ পৌঁছাতো, পাতাগুলোতে ধোঁয়াটে স্বাদ তৈরি হতো আর সেখান থেকে তৈরি হওয়া সেই চায়ের স্বাদ যা আজকের দিনে রাশান ক্যারাভান চা হিসেবে পরিচিত।

৫. ভারতবর্ষে চা গাছের আগমন
সপ্তদশ শতকে চীন এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মধ্যে কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরলে ব্রিটিশদের চায়ের জন্য অন্য দেশের দিকে মনোযোগ দিতে হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, যারা বিশ্ববাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতো তারা একজন স্কটিশ উদ্ভিদ বিজ্ঞানী রবার্ট ফরচুনকে নিয়োগ করলো। যিনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিদেশি বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করতেন এবং সেগুলো পরে অভিজাতদের কাছে বিক্রির করা হতো। তার উপর দায়িত্ব পড়ল গোপনে চীনে যাওয়ার জন্য এবং সেখান থেকে ভারতে চা গাছ পাচারের জন্য। উদ্দেশ্য ভারতবর্ষে বিকল্প একটি চা শিল্প গড়ে তোলা। আশ্চর্যজনকভাবে, তিনি ২০ হাজার চা গাছ ও চারাগাছ চীন থেকে দার্জিলিং-এ রপ্তানি করেন।

৬. দুধ চায়ের উৎপত্তি
ভারতে প্রচুর পরিমাণে জন্মানো চায়ের উদ্ভিদটি ছিল ক্যামেলিয়া সিনেনসিস অসমিকা নামে একটি উপ-প্রজাতির উদ্ভিদ। গ্রিন টি’র চেয়ে আসাম টি বেশি স্বাদযুক্ত কালো রঙের ছিল। আসাম চা-এর রঙ কড়া থাকায় তা লোকজনকে দুধ সহকারে পান করতে প্ররোচিত করেছিল ব্রিটিশরা। বর্তমানে ব্রিটেনে সাধারণ ইংলিশ ব্রেকফাস্ট বা প্রাত:রাশে দুধ চা পান করা হয়। কিন্তু ইউরোপ মহাদেশের অন্যান্য স্থানে চায়ের সঙ্গে দুধ খুব কমই পরিবেশন করা হয়।

৭. টোস্টের সঙ্গে চা
যখন ১৬৫৭ সালে লন্ডনে টমাস গ্যারাওয়ে নামের এক লোক খুচরাভাবে চা বিক্রি শুরু করেন, তখন অনেকেই বুঝতে পারেননি চা কীভাবে খাবেন। তখন পাউরুটির উপর মাখন মাখিয়ে তার উপর ভেজানো চা পাতা ছড়িয়ে অনেকে খেতেন। এরপর তাদের শেখানো হয় ওই পাতা থেকে আলাদা করে লিকার চা বানিয়ে টোস্টের সঙ্গে তা খেতে। কিছুদিনের মধ্যেই টোস্টের সঙ্গে চা খাওয়া বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

৮. কফির চেয়ে চা জনপ্রিয়
ঐতিহ্যগতভাবে তুরস্ক বিশ্বের বৃহৎ চা বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম। কৃষ্ণ সাগরের উপকূলের উর্বর ভূমি থেকে অধিকাংশ টার্কিশ ব্ল্যাক টি আসে। তুর্কী কফিও বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত, তবে তুরস্কে সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় হল চা। শুধু তুরস্কেই নয়, সারাবিশ্বে কফির চেয়ে জনপ্রিয় হলো চা।

৯. চায়ের জন্য বিপ্লব
১৭৭৩ সালে আমেরিকার বোস্টন শহরের বাসিন্দারা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে। কারণ ব্রিটিশরা চায়ের উপর অতিরিক্ত কর আরোপ করেছিল। তখন রাতের অন্ধকারে ব্রিটিশ জাহাজে অভিযান চালিয়ে প্রচুর চা পাতা ফেলে দেয়া হয়েছিল।

১০. চুক চুক শব্দে চা পান
অনেকে শব্দ করে চা খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু এতে বিরক্ত হন আশপাশের অনেকেই। তবে চা বিশেষজ্ঞরা বলছেন চায়ের স্বাদ এবং ঘ্রাণ মন খুলে নিতে চাইলে এই ভাবেই চা খাওয়া উচিত। তবেই আপনার মনের রন্ধ্রে ঢুকবে চায়ের প্রতি ভালোবাসা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত