কবি মাহমুদ টোকনের অকাল প্রয়াণে আমরা শোকাহত। ইরাবতী পরিবারের বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
কবি-ঔপন্যাসিক, সম্পাদক। উন্নয়ন গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট। জন্ম- ১১মার্চ ১৯৭১। গোপালপুর, মাদারীপুর। বর্তমান পেশা- গবেষণা ও উন্নয়নকর্ম। সম্পাদনা, সাংবাদিকতা ও কনসালটেনসি। প্রকাশিত গ্রন্থ- আত্মপ্রকাশ (কাব্যগ্রন্থ), আমার আকাশ আমার নদী (ছোটদের বই), জনজদিনের ঘ্রাণ (কাব্যগ্রন্থ/কোলকাতা থেকে প্রকাশিত), বিমূর্ত ইস্তেহার (কাব্যগ্রন্থ), Liberalism: A Closer Look (অ্যাকাডেমিক প্রকাশনা), মাটির স্বর্গ(উপন্যাস), রক্তফুলের দিন ( মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস)
পরিচয়
জীবন তোমাকে আমি কিনে নেবো ওষুধের দামে;
সে হবে না…
অভিনয় ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে
একটি কবিতা তবু অধিক মূ্ল্যবান, নয়?
সম্পর্ক ইনক্রিমেন্ট : পুঁজির বিভ্রম
একলা ইমারত তুমি, খসে পড়ে গোপন পলেস্তারা।
আস্ফালনের নিচে চাপা পড়া গান
রোদ্দুরের মতো, তার পাশে তুমি নিশ্চয়
ফেলে গেছো নিজস্ব ঠিকানা…
ডানায় লেখা মেঘ
অন্ধকার ডানায় লেখা মেঘ
উজ্জ্বল ডানায় লেখা মেঘ
নেমে এসো কথা বলি– সুন্দরে, ঘৃণায়।
দরজায় চৌকাঠে লেখা জয়
চিন্তা-সংক্রমণে লেখা জয়
সময়ের সিদ্ধান্তে কোনো জন্ম অভিশপ্ত নয়।
এসো জল, নেমে এসো বজ্রবিদ্যুৎ
এসো অভিশাপ, ঘৃণা-পরাজয়
আলিঙ্গন করো, আলিঙ্গন করো
আলিঙ্গন করো ভ্রম, আলিঙ্গন করো অভিনয় …
আকাঙ্ক্ষা
শেষবার তোমাকে দেখে, অন্ধ হয়ে যাবো–
প্রেমের মতো, ঈশ্বরের মতো…
স্পর্শের আঙুল থেক জন্ম নেবে
বিদীর্ণ মালভূমি। স্পর্শ থেকে—
সুদীর্ঘ শেকড়, গেঁথে যাবে মাটির গভীরে…
জন্ম নেবে অন্ধসভ্যতা… জন্ম নেবে-
প্রেম ও ঈশ্বর।
লিটমাস
আমার ভেতরে বুনোঝোপ
তার মধ্যে মায়া। পাতাবাহারের পাশে বুনো ডালিম
সরীসৃপ আসে যায় বিষদাঁত ঢেকে।
আমার ভেতরে বুনোঝোপ, তার মধ্যে-
অলৌকিক বাঁশী…
তোমার মন-খারাপ নিয়ে যাচ্ছি, বিষাদসেতার
বেজে ওঠো, নিঝুম পাহাড়।
পাহাড় তোমার পাদদেশে
সরীসৃপ আসে যায় বিষদাঁত ঢেকে।
অতলের সূত্র
সমস্ত শুভেচ্ছা লেখা খাতা
ছুঁড়ে দেই জলে…
এই জল একদিন পৌঁছুবে তোমার সমতলে।
কথা রাখা প্রেমিক জানে না
অভিমান প্রেমিকার গ্রীবায়– উদ্ভাসিত
অচিন শিকারি
বিরহ মোমপ্রদীপ, বিরহ প্রাচীন অলংকার
জল তার বিস্তারিত অলৌকিক দেয়াল।
সমস্ত শুভেচ্ছা লেখা গান–
হাওয়া-ডানা, স্মিত বিস্ফোরক
এই গান একদিন পৌঁছুবে ক্লান্ত শহরে।
ছায়া
আমাদের সবার ভেতরে, চুপ করে বসে আছে-
একজন উন্মাদ…
স্মৃতিভ্রষ্ট হলে পরে মানুষের মায়া-
কমে যায়? দূরত্ব নানাবিধ জালবিদ্ধ হলে
অন্ধকার নামে।
দৃশ্য বদলে যায়; দেখার চোখ…
বিষাদ আর জমানো বারুদ ঘর্ষণে উন্মাদ জাগে-
ভালোবাসাতেও…
আমাদের সবার মাঝখানে ঘুমিয়ে রয়েছে এক
বিষাদ-মানুষ।
কথাসামান্য
ভয় দেখিও না। বহুবার জীবন, মুঠো খুলে-
খসে প’ড়ে গেছে।
রাজনীতি, পরিবার কিংবা সাপের মুখোমুখি
হয়ে দেখি- রোদ্দুর অনেক বেশি দামী।
বীজের বিকাশ হলে মৃত্তিকার গর্ভবেদনা-
আতঙ্ক থেকেও জন্মে কুসুমিত স্বর।
ভয় দেখিও না…
‘রাজা আসে রাজা যায়’; পুস্তক বদলায়। রাজপথে-
অন্য ঘাম, অন্য ভবিষ্যৎ
রোদ্দুর বীজের জন্ম জানে। ভয়ার্ত দেয়াল চেনে-
আগুনের গান। ভয় দেখিও না…
উপাসনা
একা হও… একা হয়ে যাও
বিষাদ রঙিন পাত্রে রাখো।
একা হয়ে ওঠা মহৎ উপাসনা…
গর্ভবেদনা এবং ঈশ্বর সঙ্গীবিহীন
এবং আকাশ সত্যি নিরেট একক।
মরচে-ইতিহাস দ্যুতিময়
ধ্বস্ত হতে হতে জীবাশ্ম যেটুকু শেষতক…
ক্ষয়ে যাও… ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাও
একাকীত্ব অণুবিক্ষণিক…একাকীত্ব বিশুদ্ধ বাসনা।
কালান্তর
প্রতিক্ষায় থাকি…
ঈশ্বরের ঘুম ভাঙলে, হেঁটে হেঁটে আমরা দুজন
নদীর শুভেচ্ছা পৌঁছে দেব শহরের কাছে।
আলোকবর্ষ দূরে জন্ম নেয়া প্রেমের অর্কিড
উপড়ে দেবো, অনন্তবিরহ আর চির-অন্ধকার
দীর্ঘতর হবে। সকল নগরায়ণ— পরিত্যক্ত ভূমি।
অপেক্ষা শেষপর্বে ঈশ্বর বিলম্বিত হলে–
প্রতিটি পথের বাঁকে পুঁতে রাখবো বিশ্বাসের কংকাল।
সম্পর্কহীনতার শীতলযুগ পরে, ঈশ্বর সড়কে
ফুটবে সম্পর্কলতা, শুভেচ্ছা ফুল
আবার গেরস্তচুলো, বাষ্পীভূত হবে, বিশ্বাসের ভুল…
আধুনিকতা
শোকের পাশের ঘরে উৎসব; তুমি আধুনিক!
পুঁজিসিক্ত তুমি হে স্মারক, শোভাময় বিদ্যাউৎসবে
আধুনিক, তুমি আধুনিক…
বিবাহমন্ত্রের শক্তি দলিলে সাক্ষর। শর্ত-চুক্তি, মোহর মোহর।
চুক্তির পার্শ্ববর্তী মায়াভ্রূণ–
মোহরে অন্তর্লীন হাওয়া।
চিন্তাপত্র, তোমার শেকলবিদ্ধ পা
সুন্দর তোমার কী অসুখ!
শোকের পাশের ঘরে তুমি উৎসব
বিভ্রমকে জেনেছ দৈবস্বর; থরে থরে সাজানো বিস্মৃতি…
তুমি একা, উৎসবের শোক।
নির্বাণ
যতো দূরে ঠেলে দাও… নির্বাসন; তারও অধিক কাছে এসে
বাড়িয়েছি মায়া …
সচল সিঁড়ির মতো এগিয়েছি, পেছনে গিয়েছি
কখনও পাথর হয়ে নির্বাণরত কিংবা বিপন্ন শৈবাল
নিয়তি হেসেছে তির্যক।
কাকতাড়ুয়ার পাশে ধানক্ষেত
দুচারটি বাবুই চেনে ব্যাধের লন্ঠন।
বেদনারা জানে অলৌকিক আরক।
ঈশ্বরের সঙ্গে দেখা হলে, স্মিত হেসে ভুল গান গাই
পাথরের কোনো প্রার্থনা থাকে না…
কোথাও যাবো না আমি
হাওয়ায় দুলছে ভাঙ্গা কাঠ, নড়বড়ে সাঁকো
যেন প্রান্তিক কৃষক…
তবু পার হওয়া যায়, দুরুদুরু পথে নির্ভরতা।
গ্রাম-পথের বাঁকে- অর্ধশতাব্দির পাকুড়, গা ছমছম
নিজস্ব নিয়মে ডেকে আনে-
রাখালিয়া, মধ্যাহ্নের নির্জন-বাঁশী।
ধঞ্চে ফুলের ওপর নৃত্যরত গঙ্গাফড়িং
জলে তার ছায়া…
কোথায় পালাও তুমি? স্বর্গে এ সত্যি কিন্তু নেই!
তোমাদের কারখানায় তৈরি- নামে আধুনিক
গরলকে দেয়া যায় না বিষের সম্মান
লজ্জা কাতর আমি… ভুলুন্ঠিত… জীবাশ্ম প্রাচীন?
খানিকটা ঋণ থাক, ক্ষমার স্মারক
চুপিসারে হে অন্তরীণ..
আমার দেশ
বার বার ফিরে আসি, মৃত্যু নয় চিরপ্রস্থান…
মহাকাল যাত্রায় এমন নদী ও নারী, ঋতু জনপদ
এমন শান্তির শোভা, সামান্য-অসামান্য প্রাণ;
অকৃত্রিম- রচিত হয়েছে…কোথায় কোনখানে?
নিসর্গ শতনদী, মেঘ-শামীয়ানা
সাঁওতাল-মাদল আর শঙ্খের ডাক
এমন সরল গান কোথায় কে গায় কোন কালে?
বিবৃত শিরীষ কিংবা চালতার ফুলে
এমন বিষাদঘন মধ্যাহ্নের বিরহ সুন্দর
কিংবা ঘাসফড়িং কিষানি আঁচলে…
রচিত হয়েছে কোন স্বর্গের শিল্পনগরে?
এমন মায়ের মতো সব নারী ভালোবাসে আর
এমন প্রেমের প্রাণ নাগরিক কোন দেশে আছে?
এখানে ভেষজলতা, বিবাদ সমন্বয় বিস্ময় সরল
এখানে ঈশ্বর থাকে ধানক্ষেতে শুয়ে…
সমন্বিত
আনন্দ-বিষাদে মাখা সকল সুন্দর;
মন কেমন করে!
ভেতরে গোপন তবু কী এক শূন্যতা
ভীষণ কুয়াশারঙ, অদৃশ্য কুহক…
সকল আনন্দস্বর শুনে শুনে চোখ ভিজে ওঠে
হঠাৎ চমকে ওঠা পুরনো সংস্কার
কোথাও সুন্দর অচ্ছুত…?
সকল মানুষ তার নিজস্ব নিয়মে-
লুকিয়ে লালন করে অন্য মানুষ
সকল সুন্দর যেমন— বেদনার ইতিহাস প্রসূত।
ঘুমভাঙ্গানিয়া
মেঘ তোমাকে ডাকে, বজ্র অদ্ভুত-
আমাদের নিদ্রাভঙ্গ। আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়…
আমরা ঘুমিয়েছিলাম তক্তপোষে, বিছানায়
ফসলের আলপথে… মাতৃজঠরে
আমাদের নিবিড় ঘুম স্নানঘরে, ফাঁসের রজ্জুতে।
কয়লাখনিতে, আমাদের কালিমাখা ঘুম
শব্দরঙ লেলিহান নিদ্রাচুম্বন… আমাদের ঘর্মাক্ত ললাটে।
দৈহিক কামনাগ্রস্থ আমাদের প্রমত্তঘুম-
পানবরজ সাজাতে সাজাতে। দ্রবীভূত লবণে কী কামারশালায়
ধান রোপনের অক্তে ঘুম।
সুন্দর তোমাকে ডাকে, আমরা সবাই জেগে উঠি
আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়…
মুদ্রাস্ত্র
আমাদেরর সন্তানেরা, ভাইপো-ভাগ্নি কবিতা পড়ে না। আরো যতো সন্তানেরা-
সান্নিধ্যে আসে, অনলাইন চাকরি খোঁজে, প্রবাসের ছাড়পত্র, প্রশিক্ষণ আরো খুঁটিনাটি।
আপাদমস্তক জুড়ে- ফুটে আছে গ্যাজেটের ফুল। রাস্তা-বাসে, ক্লাসরুম, খাবার টেবিলে
ফুটপাত দোকান কিংবা সুপারমল, সকলের মাথা হেট। দেশ-জাতি, পৃথিবীর মাথা হেট…
জীবনানন্দের নাম, শুনিয়াছে প্রতিযোগিতার পরীক্ষায়। গাইড বুক গ্যাজেটের বুকে-
সংরক্ষিত রবীন্দ্রনাথ; সে-ও তো সাম্প্রতিক ঢক্কা রণে ফিউশন বলে।
কবিতা পড়তে হবে বলছি না এমন, তারুণ্যের চোখ- থরে থরে আকাঙ্ক্ষা সজ্জিত
স্বপ্নেরও গভীরতা লাগে; অথচ জানে না তারা কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, মার্ক্সের মূলধন।
ছুঁটতে ছুঁটতে তারা কোথায় যায়? প্রেম তো বোঝে না। উপঢৌকন চেনে বটে, পুস্তকের মায়া-
সম্ভ্রান্ত করেনি সমূদয়। চিন্তারঙ-বিদ্যানন্দ-সংসার সুখ তারা কি চিনেছে?
এ সন্তানেরা কথাহীন, নিজেকে চেনে না। প্রেমও জানে কি? গিফট চেনে, কাঠগোলাপ?
প্রযুক্তির তলোয়ারে সুক্ষ্মতম এসকল চৌকস সন্তানেরা, মুদ্রাস্ত্রে লুটিয়ে পড়েছে…
সকল অন্ধকার প্রত্যুষ
সমস্ত শোকের কাছে মাথা নত করে আছে গান
সকল অন্ধকার দাঁতের ঝিলিকে প্রজ্ঞাপন।
সমস্ত ধানের কাছে গচ্ছিত পোকার ইতিহাস
সমস্ত বিভ্রান্তি এসে পাহাড়ের সানুদেশে গাছ।
সমস্ত শান্তির বীমা শান দিচ্ছে যুদ্ধাস্ত্র, হিংসার বেলুন
সমস্ত জোঁকের রক্ত শুষে নিয়ে ভ্রান্ত হলো নুন।
সমস্ত অধর্মের কাছে- ধর্মের দীক্ষাপত্র, জ্ঞান
সমস্ত বৃক্ষের মূল ভুলে গেছে ধৈর্য্যরে নির্বাণ
সমস্ত পাতার আলোক বিকিরীত প্যারাসাইট রঙ
সমস্ত পদাবলী বিভ্রান্ত মুসকিল আসান।
সমস্ত শৈশব কাঁধে যৌবনের উদ্ধত পৌরুষ
সমস্ত নারী হৃদয় আচ্ছাদিত বিমূর্ত মায়া
সমস্ত রাস্তার বাঁক দিখণ্ডিত ভ্রমে বিস্ময়ে
সকল দরজা বন্ধ, খুলছে না রহস্য আবছায়া
সমস্ত প্রণয়-বচসা আকীর্ণ মুদ্রায় উজ্জ্বল
সমস্ত হাতের মুঠো খুলে দিলে শরীরতত্ত্ব জল
সমস্ত সুতোর ফুল ভেসে যায় মাকুরক্তে রাত
সমস্ত অপেক্ষারা দাঁড়ায়নি, ভুলেছে প্রভাত।
সমস্ত বিচ্ছেদ কাঁধে হেঁটে যায় দেশান্তর মানুষ
সমস্ত রাতের কাঁধে হাত রেখে, উঁকি দিচ্ছে তবুও প্রত্যুষ।
শেয়ালদের গ্রামে
শেয়ালদের গ্রামে গেলে দেখা মেলে ক্বচিৎ হাঁড়গোড়
পালকের নিশানা। আতঙ্কের দেখা মেলে তারও বেশি
পারিবারিক মৌন সমাবেশে ।
সভ্য সমাজে যতো ‘চতুর-শেয়াল’প্রচলিত, জলের শব্দে যতো
ঢেউ ওঠে পাটকেল নিক্ষেপে-
দেখা পাই না এ সকল ‘চাতুর্য’ এসে।
উচ্ছেদ, উন্মূল, মানুষের গল্প শুনে পোশাকের রঙ-
বদলায় দৃষ্টিকোণ দৃশ্যত মনে চাপ পড়ে। শেয়ালেরা-
হারিয়েছে গুহা। ঝোপঝাড়, বনপাংশুল, কাঁকড়ার ডিম
শেয়ালের সন্তানেরা- রূপকথা শোনে…
একটি হাঁসের জন্য মনুষ্য সমাজে-
তর্কাতীত যে বিতর্কে অভিযুক্ত শেয়ালসংসার
তার সত্য-ইতিহাস সভ্যতা লেখে না।
মহাত্মন
মাটির ভেতর যতো লুকোনো কাহিনী আমি জানি
থরে থরে সাজানো অঙ্কুর, তার পাশে আলতো শুয়ে আছে-
অন্ধকার। জীবনের মতো, মৃত্যুর মতো, ছাপোষা কাহিনী।
কী শেখাবে বিদ্যালয়? কী বিষাদ আরওআঁকা বাকি?
যুক্তি-তর্ক প্রযুক্তির শামীয়ানা তলে-
জন্ম, যন্ত্র কিংবা যন্ত্রের বিভাজনরেখা। সম্পর্কের পাশে-
নিযূত সংখ্যারূপবিচ্ছেদ-গণিত চারপাশে–
ভাঙ্গাচোরা আকাশ আর ছিন্নমূল শোকের সঙ্গীত।
পোড়োবাড়ির মতো- একেকটি ফ্লাট, কবরের মতো নীরবতা।
সম্পর্কহীন শিশুতোষ। মায়ের বহুগামিতা, জনকের আকণ্ঠ নিমজ্জন
কী আশ্চর্য কী তমসাময়। কী আছে সূত্রে গাঁথা-
শিক্ষা নিকেতন? আনন্দ খুনে দল প্রাত্যহিক কথা বেঁচে ফেরে।
কী শেখাবে চৌকাঠ, এখনও ফাঁসির দড়ি? অন্ধের প্রার্থনা?
পাতায় পাতায় ভরা অশ্রুজল ভিজিয়েছে ঈশ্বর চিবুক
বুকের গোপনে যারা রেখে গেছে, নীলরঙ, সামান্য আগুন
স্মৃতিআকড়ে অবনত- ধ্বস্ত তরুণ।
জামরঙ শাড়ি দেখে বার বার মায়ের ডালপালা, ঝাপটাচ্ছে
তারপাশে মেঘ। ঘাসের মতন কোনো সবুজ অন্ধকার
ঘন হয়ে খুলে দিচ্ছে জামার বোতাম, শেষ দমে শুষে নাও
যতটুকু পারো- সকরুণ, ওগো সকরুণ।
শিখে গেছে ঝাউগাছ সমুদ্রের লবণসংবাদ। শিলাখণ্ড জমে জমে
ইতিহাস বেড়ালের মতো, নিঃশব্দ পায়ে এসে শিখেছে শিকার।
পাতার ঝুমঝুমি, শান্ত থাকে ভিনদেশী পর্যটক এলে
শিখেছে তাদের গান নোনাধরা বারান্দায় বেড়ে ওঠা অচ্ছুত মানুষ।
বাড়ি ফিরে যাও বলি,বাড়ি ফিরে যাও বিভ্রম। বাড়ি ফেরো-
হে বুনো মাতাল। শান্ত হয়ে বসে থাকো জনক-জননী ব্রাত্যঘাম
পাথরে পাথরে ঘসে আবিষ্কার আজও কম্পমান। সময় সম্পাদ্যেতুল্য
যা কিছু মহান…
এঁকে দিলে সবচিহ্ন যদি হয় খামারের যিশু শিশুতোষ
সকল সংসার যদি আদ্যোপান্ত রোদ্দুরে ভুলগান
ফেরার যে ছায়াপথ আচ্ছাদিত হাঁউ-মাঁউ-খাঁউ
জীবাশ্মে জীবাশ্মে জমে বিলুপ্তির মায়া আখ্যান।
কী তবে অধ্যয়ন, কতটুকু মহাকাল জঠরে তোমার?
নিরেট পাথর গল্প আর কিছু দ্বন্দ্ব-সাম্পান।
আরও কী শেখাবে তুমি, আরও বলো কী শেখার বাকি?
আমরা সবাই আগুন… আমরা সবাই জল… আমরা একাকী…