সফল গবেষক
আমার গবেষণা প্রায় শেষ।
স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে বলে দিয়েছি এখন আমার আশপাশে না আসতে। সফল হলে বিজ্ঞানের ইতিহাসে এ হবে বিশাল সংযোজন।
মৃত্যুর পরও মানুষের অনুভূতি কাজ করে কিনা, সেটাই গবেষণায় বিষয়।
গবেষণা সফল হতে আর মাত্র এক ধাপ!
একটু কড়া কফি খেতে ইচ্ছে হলো।
ল্যাবরেটরী থেকে বেরিয়ে ঘরে ঢুকলাম। স্ত্রীকে বললাম, একটু কফি হবে?
যেভাবে জানালা ধরে দাঁড়িয়েছিল সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকলো সে।
ছেলে আর মেয়েও আমাকে পাত্তা দিল না।
এতক্ষণ খেয়াল করিনি, বাড়িতে উপচে পড়া মানুষ!
কে যেন বলল, ‘লাশবাহী এসি এম্বুলেন্স এসেছে!’
ওরা আমার গবেষণাগার থেকে যে লাশটাকে বের করল, সেটা দেখে আমি জ্ঞান হারালাম!
আমার গবেষণা সফল হয়েছে!
মেসেঞ্জার
‘তোকে আমি চাই!’
‘কেন আলেয়া, সুনয়না, রুপশ্রী কী দোষ করল?’
‘ওরা কেউ তোর মতো “ভালোবাসি” বলতে পারে না!’
‘আমি শুধু ঠিকভাবে ”ভালোবাসি” বলি?’
‘শুধু ”ভালোবাসি” না, তোর প্রত্যেকটা উচ্চারিত শব্দ মনে হয় হৃদয় থেকে বেরিয়ে এসেছে!’
‘আপনি কী করতে বলেন?’
‘রাজি হয়ে যা।’
‘আপনি বললে রাজি না হয়ে পারি? কিন্তু আলেয়া সুনয়নার কী হবে? ওদের জন্য কিছু থাকবে তো?’
‘তোমার মেসেঞ্জারে এসব কী? রত্না কে? তুমি ভেবেছো তোমার এসব ফষ্টি-নষ্টির কথা আমি জানিনা?’ এই বলে মোবাইলটা আবৃত্তি সংগঠক শরাফতের দিকে ছুড়ে মেরে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে দুই সেট কাপ ভেঙে ফেলল অপরাজিতা। তারপর সুটকেস গোছাতে লাগল।
শরাফত প্রথমে ভেবে পেলো না, কী থেকে কী হয়ে গেল। পরে বুঝলো, পরবর্তী রোমান্টিক প্রযোজনায় রত্নাকে নেবে বলে মেসেঞ্জারে রত্নার সঙ্গে যে কথোপকথন হয়, সেটাই চোখে পড়েছে অপরাজিতার।
এরপর কি হলো, তা আর নাইবা বললাম!
মন
তরমুজগুলো ভীষণ বড়। ভাইরাসের কারণে বাজারে ভিড় করা মানা হলেও বিক্রি হচ্ছে দেদার। একটু দূরে গাড়িটা রেখে এক ভদ্রলোক তরমুজ কিনতে এলেন।
পাল্লায় দুটো তরমুজ একসঙ্গে মাপা হলো। ২৮ কেজি ওজন।
পঞ্চাশোর্ধ এই লোক কিভাবে গাড়ি পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবেন তরমুজ!
‘ভাই আমার তরমুজটা দেখো!’ দোকানদারকে এই কথা বলে একটি তরমুজ কোন রকমে টেনেটুনে নিয়ে ভদ্রলোক গেলেন গাড়ির কাছে।
এই ফাঁকে দোকানি পলিথিন থেকে তরমুজটা বের করে কেজিখানেক কম ওজনের একটা তরমুজ ভরলেন।
ওই যে ভদ্রলোক, একটা তরমুজ বয়েই হাঁপিয়ে গেছেন, তিনি আসতে বড্ড দেরি করছেন। কী মনে করে দোকানী আবার পলিথিন থেকে ছোট তরমুজটা বের করে আগের তরমুজটা ভরে রাখলেন। খানিকপর ভদ্রলোক এসে তরমুজটা নিয়ে গেলেন।
দোকানী কিছুক্ষণ তার পথের দিকে তাকিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন নিজের কাজে।
করোনার দিনে ব্যবসা
‘পেয়েছো?’
‘জি স্যার! ৪০০টি পেয়েছি। ২০০ করে দাম। অফিসের সবাইকে দুটো করে দিতে পারব।’
চশমার ফাঁক দিয়ে তিনি তাকালেন কর্মচারীটির দিকে।
‘আগে দুশো আলাদা করো।’
‘সবাইকে দুটো করে দেয়ার কথা বলেছিলেন ডিরেক্টর স্যার…’
‘ডিরেক্টর স্যারকে বলবে, ২০০টা পেয়েছ!’
‘জি স্যার!’
‘অফিসের সবাইকে বলে দাও, ২৫০ টাকা দিয়ে সংগ্রহ করতে হবে।’
‘জি স্যার!’
‘বাকি ২০০টা আমার গাড়িতে তুলে দিও।’
পারচেজ অফিসার সরে যেতেই নিজের মনে হেসে উঠলো কর্মচারীটি। অর্ডার করা হয়েছিল ১০০০টা, সবগুলোই এসেছে। নিজের পকেট থেকে টাকাটা দিয়েছে। ২০০টার দাম অফিস থেকে নিতে হবে, ২০০ টার দাম গোপনে দেবেন পারচেজ অফিসার। বাকি ৬০০টা দ্বিগুণ দামে বিক্রি করলে কত টাকা আসবে, সেটা ভাবতে গিয়ে আনন্দে চোখে জল এসে গেল কর্মচারীটির!
সাংবাদিক, সাহিত্যিক, অনুবাদক