| 20 এপ্রিল 2024
Categories
ইতিহাস নারী লোকসংস্কৃতি

রামায়ণে অবহেলিতা রামের দিদি

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

শুভাশিস মৈত্র


রামায়ণের এই খবরটা অনেকেরই জানা নেই। রামের এক দিদি ছিলেন। তাঁর নাম ছিল শান্তা।শান্তা দশরথের প্রথম সন্তান। এবং মেয়ে। মানে কন্যা সন্তান। আজ আমরা নিয়মিত খবরের কাগজে পড়ি, কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য মায়ের নানা হেনস্তার কথা। কন্যা সন্তান যে কাম্য নয়, সেই অমানবিক মানসিকতার প্রথম শিকার কী রামের দিদি শান্তা?

মাঝে মাঝে মনে হয় রামের দিদি শান্তার কথা মহাকবি বাল্মীকি এত কম লিখলেন কেন? এর কোনও উত্তর খুঁজে পাই না। রাজশেখর বসুর রামায়ণে শান্তার উল্লেখই নেই। সত্যি কথা বলতে কী, বিপুলায়তন  কোনও বাল্মীকি রামায়ণে দু’লাইনও জায়গা পাননি দশরথের এই এক মাত্র কন্যা। শান্তাকে রামের দিদি বলা হচ্ছে। ব্যাস এখানেই শেষ। শান্তার স্বামী ঋষ্যশৃঙ্গ মুনিই দশরথের আবেদনে সাড়া দিয়ে সপরিবারে শান্তাকে সঙ্গে নিয়ে অযোধ্যায় এসে প্রথমে অশ্বমেধ যজ্ঞ, তার পরে পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করেন। যে যজ্ঞের প্রসাদ খেয়ে দশরথের তিন রানি রাম লক্ষ্মণ ইত্যাদি শান্তার ভাইদের জন্ম দেন।

বাল্মীকি রামায়ণ বলছে শান্তা ছিলেন রাজা দশরথের ঔরসজাতা ও দশরথের পরম বন্ধু রাজা লোমপাদের পালিতা কন্যা। রাজা দশরথ শান্তাকে দান করেছিলেন রাজা লোমপাদকে। কেন? উত্তর নেই। মেয়ে হয়েছিল বলে? তারও উত্তর নেই। একদা রাজা লোমপাদ যজ্ঞ করবার জন্য বিভাণ্ডক মুনির ছেলে ঋষ্যশৃঙ্গকে নিজের রাজ্যের রাজধানীতে নিয়ে আসেন। যজ্ঞ শেষে তিনি নিজের পালিতা কন্যা শান্তাকে ঋষ্যশৃঙ্গের হাতে সমর্পণ করেন। মানে তাদের বিয়ে হল। শান্তা দশরথের কোন রানির সন্তান, তা কোথাও স্পষ্ট নয়। কেউ কেউ বলছেন তিনি কৌশল্যার প্রথম সন্তান। কিন্তু তেমন জোর দিয়ে বলতে পারেননি। শান্তার জন্মের সময় দশরথের কত জন মহিষী ছিলেন জানা যায় না। তবে রাম যখন ২৫ বছর বয়েসে  পিতার সত্য রক্ষা করতে বনে যাচ্ছেন, তখন দশরথের রানির সংখ্যা ৩৫২। পুত্রেষ্টি যজ্ঞের আগে দশরথের শান্তা ছাড়া আর কোনও সন্তান ছিল না। বনবাসের জন্য বিদায়ের মুহূর্তের বিবরণে আছে, কৌশল্যা কাঁদছেন, কৈকেয়ী দাঁড়িয়ে আছেন আর বাকি সাড়ে তিনশো ‘মাতা’ কেঁদে কেঁদে চোখ লাল করে এগিয়ে আসছেন। রাম সবার কাছেই বিদায় চাইছেন। দশরথের গুণের অভাব ছিল না। কিন্তু মহিলাদের প্রতি তাঁর যে বিশেষ দুর্বলতা ছিল তা রাম বনবাসে থাকাকালীন বেশ কয়েক জায়গায় প্রায় বিলাপের সুরে স্পষ্ট ভাবে বলেছেন। দেবদত্ত পট্টনায়ক সীতা নামে যে রামায়ণ লিখেছেন (পেঙ্গুইন) তাতে অব্শ্য আছে দণ্ডকারণ্যে থাকাকালীন শান্তা তাঁর দুই ভাই এবং সীতার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। সেখানে পৌঁছে সীতাকে নানা বিষয়ে প্রচুর জ্ঞান, পরামর্শ, নীতি-শিক্ষা ইত্যাদি দিলেন শান্তা। থাকলেনও বোধ হয় কয়েক দিন। তিনিই সীতাকে অনসূয়া আর অত্রিমুনির আশ্রমে নিয়ে গেলেন। সেখানে অনসূয়া সীতাকে একটি পোশাক দিলেন যা কখনও ময়লা হবে না। একটি ফুলের মালা দিলেন, যা কখনও শুকোবে না। একটি ক্রিম (pot of cream) দিলেন, যা বছরের পর বছর ত্বককে সুন্দর রাখবে। এই সবই দিলেন এই কারণে যাতে বছরের পর বছর বনবাসে থাকাকালীন সীতার কোনও অসুবিধা না হয়। দেবদত্ত পট্টনায়ক বলেছেন, এসব বাল্মীকি রামায়ণে না থাকলেও, তিনি পেয়েছেন দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন লোক কথা এবং লোক গান থেকে।

 

 

 

 

কৃতজ্ঞতা: বঙ্গদর্শন

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত