Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

ইনসেনসিবল্

Reading Time: 4 minutes

তারপর…

কেমন আছো?

চলছে। তোমার নিশ্চয়ই হ্যাপেনিং অ্যাস ইউজুয়াল।

…কী হল? বাইরের দিকে মুখ ফিরিয়ে রাখলে?

… উত্তর দেবে না?

এসব কথার উত্তর অপ্রয়োজনীয়। আচ্ছা, এত বছরে নতুন একটা প্রশ্ন সংযোজন করতে পারলেনা জীবনে?

তোমার মতো স্মার্ট, বাগ্মী তো কোনদিন ছিলামনা আমি।

আচ্ছা, বলো তবে, রোজ বাজার করো?

তিনদিনে একদিন।

ছেলে-মেয়ে সেটলড্?

ছেলে ব্যাঙ্গালোরে একটা আইটি ফার্মে। মেয়েটার অ্যাসপিরেশন কম , কিছুতেই মা’কে ছেড়ে যাবেনা। দাদার কোম্পানি তেই কাজ পেয়েছিল, গেল না, কলকাতায় অপেক্ষাকৃত কম মাইনের কাজ করছে।পেটি ইমোশনস, ইউ নো।আমি যেন ওর মায়ের দেখভাল করতাম না।

মায়ের কাছে থেকে যাওয়া , এই বয়সে তাকে সঙ্গ‌ দেওয়ার জন্য,সেটা পাতি একটা আবেগ তোমার কাছে। তোমার মেয়ে তো বুদ্ধিমতী বলতে হবে, তোমার ভরসায় মা’কে ছাড়েনি।

এত বছর পরে দেখা হয়েও ঠুকছো? ডু ইউ রিয়েলি থিঙ্ক আই অ্যাম ইরেসপনসিবল?

উঁহু, ইনসেনসিবল।

হাউ ক্যান ইউ সে দ্যাট?

আমি কেউ না বলার। তোমাদের পুরোন বাড়িটা এখনো আছে, আর তার পুকুর টা?

ওটা পুরসভা সংস্কার করিয়ে অনেক আগে পাড় বাঁধিয়ে দিয়েছে। ওই অঞ্চলের ওই একটাই জলাভূমি বোধহয়।

পাড় বাঁধিয়ে দিয়েছে? মানে আরেকটা ইকো সিস্টেম এর মৃত্যু।যাই হোক, সেই পুকুরের শান্ত জলে নিজের মুখটা দেখো।নিজেকে দেখতে পাবে সঠিকভাবে। চিনতে পারলেও পারতে পারো।

ও। তা তুমি তো সেনসিবিলিটির পরাকাষ্ঠা। কী করেছ আমার জন্য? একদিন হঠাৎ গুটিয়ে গিয়ে চলে গেলে।এত বছর আর কোন খোঁজ ই রাখলেনা। আমি কত কষ্ট পেয়েছি ,কখনো ভাবোনি তো।

কে বলল, ভাবিনি।‌ভেবেছি। তার সঙ্গে এ ও ভেবেছি, যে মানুষ নিজের ইগো পার করে এত বছরে ফোন করে বলতে পারলোনা “আমি তোমাকে মিস করছি, আমার তোমাকে দরকার”, তার আর যাই হোক, আমাকে ছাড়া বাঁচতে তেমন কোন অসুবিধা নেই।

কেন করব ফোন? তুমি চলে গিয়েছিলে। তোমার করা উচিৎ ছিল।

নো। আই ওয়াজ নট স্যরি পর মাই ডিসিশন। তোমার সঙ্গে থাকাটা একটা অভ্যাস ছিল, তোমার সঙ্গে না থাকাটাকে করে ফেললাম তারপর। ব্যস।

এতটাই সহজ তোমার কাছে!

হ্যাঁ।সহজ।

একটা লম্বা প্রস্তুতি পর্ব চলেছে তো। তারপর সহজ হয়ে গিয়েছিল। আসলে তুমি ঠিক বলতে, সম্পর্ক বলে কিছু হয়না, লোকে বানিয়ে তোলা একটা বিশ্বাসে ভালো থাকার চেষ্টা করে। আমার এই ভালো থাকাটা তোমার পরিবার কে কোনদিন অসুবিধায় ফেলেনি, তোমাকে কখনো কোন বিড়ম্বনায় ফেলেনি, তবু আমার এই ভালো থাকাটাকে তুমি বারবার দেখিয়েছ, এটা আসলে বানিয়ে তোলা ,তাসের ঘর। আর আমি যেদিন তোমার বিশ্বাসটাই মন থেকে মেনে নিলাম, তোমার সমস্যা হতে‌ থাকলো।

তুমি সরাসরি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে গেলে তো।

সম্পর্ক? কীসের সম্পর্ক? তুমি তিন বছর ধরে আমাকে প্রতিটা দেখা হওয়াতে বুঝিয়েছ, আমাদের কোন সম্পর্কই নেই, মানে তুমি নেই কোন সম্পর্কে, তুমি সব কিছুর মধ্যে থেকে ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলতে চেয়েছ।অথচ তুমি চেয়েছ, আমি কারো ঘনিষ্ঠ না হই ফিজিক্যালি। মানে মনের দায়িত্ব নেই, শারীরিক দখলদারি শুধু। তুমি আমাকে কখনো বলোনি ভালোবাস, কখনো বলোনি আমার প্রতি তোমার কমিটমেন্ট আছে কোন, অবশ্য কমিটমেন্ট শব্দে পুরুষের সবসময়ই ভয়। তারা ভাবে কমিটমেন্ট মানে ঘাড়ে চেপে বসবে বুঝি। তুমিও আর পাঁচজন সাধারণ পুরুষের মতোই বিহেভ করেছ। ঠিকই আছে।

শোন, আজ এত বছর পরে একতরফা দোষ দিওনা। তুমি বললে আমি সবসময় না হলেও বেশিরভাগ সময় আসিনি অফিস, বাড়ি ম্যানেজ করে তোমার সঙ্গে দেখা করতে? তোমার সব কথা ধৈর্য্য ধরে আমি ছাড়া কে শুনতো? তোমার মন খারাপ হলে ফোন করিনি কখনো? আমি প্রথাগত সম্পর্কে র এক্সপেক্টেশন এর বিরোধী। সেটা ঠিক ধীরে ধীরে সম্পর্কটার শ্বাস রোধ করে দেয়। আর তাইই হয়েছে তোমার জন্য এক্ষেত্রে ও।

সম্পর্ক হয় আছে, নয় নেই।‌’নেই’ টা যখন বড় হয়ে ওঠে মানুষ বড় বড় থিওরি বানায়। সম্পর্কে র আবার প্রথা কী? দুটো মানুষ দেখা করছে, চুমু খাচ্ছে, চূড়ান্ত ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, আর তাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই? আর যদি নেইই হয়, তবে আর পাঁচটা ওয়ান নাইট স্ট্যান্ডের মতোই এই সম্পর্ক টা,যে আমরা শরীর পেলে দেখা করি। তবে সেটাকেই স্বীকার করতে হত। তবে লয়ালটি এক্সপেক্ট করতে কেন? আমি তোমার বৌ ও নই , প্রেমিকাও নাকি ছিলাম না!

আমার পয়েন্ট টা তুমি কোনদিন বোঝনি, তোমার মতো আমার ভাষা-শব্দ নেই বলে নিজের সমস্যা গুলো ও বলতে পারিনি কোনদিন, নিজের অসহায়তাটাও।

শুধু আঘাতের শব্দগুলো বেছে বেছে শেখানো হয়েছিল তোমার স্কুলে? যাক গে, তারপর, কেমন কাটাচ্ছ রিটায়ার্ড লাইফ?

শরীরে আর পারছিলাম না।‌তাই বাহান্ন তেই ভলান্টারি রিটায়ারমেন্ট নিয়ে নিলাম। এত বছরে খুব ক্লান্ত হয়ে গেছিলাম। অবশ্য কর্পোরেট চাকরি,না ছাড়লেও বুড়ো ঘোড়াকে কতদিন টানতো কে জানে?

এখন সময় কাটাও কী ভাবে?

বিশ্বাস করবেনা। তাই বলে লাভ নেই।

কেন করব না?

তোমার পুরোন সব লেখা পড়ে কাটাই। যত কবিতা, গল্প , চিঠি, সিরিজের পর সিরিজ তুমি ওই সম্পর্কে র টেনিওরে লিখেছিলে সব পড়ি, বারবার।

তাই নাকি? নাহ্। বুড়ো হয়েছ।

আর ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখলাম তোমার নতুন কী কী বই বেরিয়েছে , সেগুলো ও পড়লাম , খুব মন দিয়ে। গত মাসে প্রকাশিত উপন্যাসটাও পড়েছি।

আই মাস্ট ফিল অনার্ড।

তোমার লেখার আমি বরাবর ফ্যান‌ ছিলাম, এটায় কোন মিথ্যে নেই। তোমার সময় কাটে কী করে?

মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করে। এতগুলো বছর শুধু মেয়েদের অধিকারের জন্য, মেয়েদের পাশে মরমী হাতটুকু নিয়ে দাঁড়ানোর জন্য ছুটে বেড়িয়েছি। আজকাল আর পেরে উঠছিনা। সবার অসীম এক্সপেক্টেশন আমার উপর। আমি বুঝি, আমার সময় ফুরিয়েছে। তুমি আমাকে রিজেক্ট করে ভালো ই করেছ। আজ এত বছর পর ধন্যবাদ দিতেই এসেছি। নাহলে এত বৃহত্তর একটা অর্থ জীবনে খুঁজে নেওয়া হতনা। আমার সীমিত ক্ষমতায়, কোন অর্গানাইজেশন না তৈরি করে অনন্ত পাঁচশো মেয়েকে লড়তে শিখিয়েছি নিজের শক্তিতে, তারা আজ বোঝে নিজের লড়াই নিজেকেই লড়তে হয়, আমি শুধু পাশে থেকে, কখনো বা লিখে তাদের সাহস জুগিয়েছি। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সংগঠন তৈরি করেছে, আমি পরামর্শ দিই মাত্র। উইমেন ট্রাফিকিং ও কিছু আটকাতে পেরেছে ওরা।

বাহ্। এ বেটার রিজন ফর সারভাইভাল, শুধু আমাকে ছাড়া সবাই কে ভালো রাখা…

সুরঙ্গমা আশ্চর্য চোখে তাকায়। ওই পাচার হয়ে যাওয়া মেয়েটার আমাকে দরকার যে! তোমার দরকার নেই তেমন।

আমার ও দরকার ছিল সুরঙ্গমা। শুধু সুরটুকু মেলেনি কোনদিন।একটা অনুরোধ করব?

করো। শুনি।

একটা কবিতা শোনাবে?

সুরঙ্গমা উঠে পড়ে। চশমার কাচ মোছে। নাহ্। আমাদের মধ্যে কোনদিন আর কবিতা পড়া হবেনা। এটাই আমার একমাত্র জিঘাংসা। ভালো থেকো।আসি। দেখা হবে আবার।
হাত বাড়িয়ে দেয় সুরঙ্গমা, সুদীপ্তর দিকে।

সুদীপ্ত মুখ ঘুরিয়ে নেয়।

ইনসেনসিবল্! খুব আস্তে কথাটা বলে সুরঙ্গমার শাড়ি পরা চেহারাটা ধীরে ধীরে কফিশপ থেকে বেরিয়ে মিলিয়ে যায় সন্ধের ভিড়ে।

 

 

 

প্রচ্ছদ: মৃণাল শীল

 

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>