বনের মনে অপার রহস্য: রিমঝিম আহমেদ

Reading Time: 4 minutes

কবি ও কথাসাহিত্যিক রিমঝিম আহমেদের মুখোমুখি  কবি, কথাসাহিত্যিক ও প্রচ্ছদ শিল্পী নির্ঝর নৈঃশব্দ্য। সাক্ষাৎকারটি কথাবলি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত। রিমঝিম আহমেদের জন্মতিথি উপলক্ষে ইরাবতীর পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকারটি পুনঃপ্রকাশ করা হলো।


আপনি কবি হতে চান, নাকি অন্যকিছু?

আমি একসময় ডাক্তার হতে চেয়েছি। কবি হবার বাসনা নিয়ে লেখালেখি শুরু করিনি। কিন্তু একটা বই হয়ে যাওয়ার পর এখন আমি কবিই হতে চাই মনেপ্রাণে।

নির্জনতা নাকি কোলাহল ভালো লাগে?

আমার নির্জনতা খুব প্রিয়। তবে নিঃসঙ্গতা নয়। অনেক মানুষের মধ্যেও নিজের ভেতর ডুব দিতে পারি। কোলাহল তাই খুব একটা খারাপও লাগে না।

প্রিয়ফুলের নাম কী?

প্রিয় ফুল কয়েকটি। কুর্চি, দাঁতরাঙা আর গন্ধরাজ।

ফুল ছিঁড়তে ভালো লাগে?

ফুল ছিঁড়তে ভালো লাগে না মোটেও, ফুলের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগে বেশি।

তাহলে কি কাউকে কোনোদিন ফুল দেন নাই?

ফুল কখনো সেভাবে বিশেষ কাউকে দেয়া হয়নি। যে কবার খুব প্রয়োজন হয়েছে , দোকান থেকে কিনে নিয়েছি।

প্রিয় গাছ কী?

প্রিয় গাছ বটগাছ। কোন গাছের কথা মনে করতে গেলেই আমার গ্রামের সে বটগাছটার কথা মনে পড়ে। যার নিচে বসে পাতার ফুরফুরি বানিয়ে ময়না কাঁটায় গেঁথে বাতাসের বিপরীতে ধরতাম আর সেটা আপনমনে ঘুরত। সে গাছটাতে নানা রকম পাখি ঝাঁক বেঁধে আসত।

 বনে যেতে ইচ্ছে করে?

বন খুব ভালো লাগে। বন নেশার মতো একটা ঘোর তৈরি করে। বনের মনে অপার রহস্য। যা সমুদ্রে পাই না।

এই মুহূর্তে আপনার মাথায় কোন গান ঘুরছে?

এই মুহূর্তে যে গানটা ঘুরছে— ‘ওরে ওরে ওরে আমার মন মেতেছে, তারে আজ থামায় কে রে…।’ কারণ একটু আগে গানটা আমার মেয়ে বাজাচ্ছিল হারমোনিয়ামে।

আপনার মেয়ে কেনো সে গান করে?

আমার মেয়ে ছোটদের সাংস্কৃতিক স্কুল ‘সোনারতরি’তে গান, ছবি আঁকা শেখে। সেখানে ওকে এসব গান শেখানো হয়। এবং সে ভালোবেসে নির্ভুলভাবে গানগুলো করে।

সে বড় হয়ে কী হতে চায়?

বড় হয়ে তিতলি নৃত্যশিল্পী হবে, এমনটাই সে বলছে। কখনো ক্রিকেটার হবারও ইচ্ছে পোষণ করে।

মেয়ে তিতলির সঙ্গে

আপনার প্রিয় রং কী, এবং কেনো?

আমার প্রিয় রং সবুজ। সবুজ রঙটা কেন জানি আরামদায়ক আর আপন মনে হয়। পাহাড়ে জন্ম এবং বড় হওয়ার কারণেও হতে পারে। আসলে কেন প্রিয় ওভাবে ভেবে দেখিনি।

আপনার ১ম কবিতার বইয়ের নাম লিলিথের ডানা। লিলিথকে কী কারণে ভালো লাগে?

লিলিথের ব্যক্তিত্ব ভালো লাগে। তার স্বতন্ত্রতা, বিপ্লবী চরিত্রের কারণে। লিলিথ সৃষ্টির প্রথম নারী যে কিনা সমান অধিকারের জন্য লড়েছিল।

চশমা দিয়ে দেখা আর চশমা ছাড়া দেখার মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন?

চশমা শুধু মাথাব্যথার জন্য বাধ্য হয়ে ব্যবহার করি। দূরের জিনিস কিছুটা দেখতেও সমস্যা হয় চশমা ছাড়া। এমনিতে চশমা থাকলে মনে হয় কানের উপর, নাকে উপর কেউ চেপে বসে আছে।

কবিতা কেনো লিখেন?

কাউকে বলতে পারি না যা, তা কবিতায় বলি। কবিতা আমার একমাত্র অকৃত্রিম আশ্রয়। মানুষ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, কষ্ট দেয়; কিন্তু কবিতা তা করে না। কবিতায় সেসব যন্ত্রণা অনায়াসে নিংড়ে দেয়া যায়। কবিতায় আমি আমার সে সমস্ত যন্ত্রণাকেই লিখি।

আপনার কবিতা লেখার পেছনে কি কারো অনুপ্রেরণা ছিলো?

আমি ছোটবেলা থেকে বই পড়তে ভালবাসতাম। কাগজের ঠোঙ্গা, আমার চেয়ে উপরের ক্লাসে যারা পড়ত, তাদের বাংলা বই ধার নিয়ে গল্প, কবিতা পড়ে ফেলতাম। আর খুব একা হয়ে পড়েছিলাম আট বছর বয়সে মায়ের মৃত্যুর পর। তখন খাতায় মনের কথাগুলো, মাকে উদ্দেশ্য করে যা মনে আসত লিখে ফেলতাম। অনুপ্রেরণা বলতে তেমন কারো পাইনি। নিজের যাপনের ভেতর দিয়ে কবে কবিতা আশ্রয় হয়ে উঠেছে জানিনি। তবে বিয়ের পর একটা সাহিত্যিক পরিমণ্ডলে দিন যাপন করছি, ঘরেই একটা লাইব্রেরি পেয়েছি যেখানে অনেক দুর্লভ বই আছে যা আগে পাইনি। এটা আমার লেখালেখিতে অনুপ্রেরণার যুগিয়েছে ।

আপনার সমকালীন কবিদের কবিতা সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?

আমার সমকালীন কবিদের নিয়ে বলার মতো আমি এখনো নিজেকে সক্ষম মনে করি না। আমি কেবল নিজের মতো করে একটা কবিতার ভাষা তৈরি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সে গন্তব্যে পৌঁছতে আমার আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে, কাঠখড় পোহাতে হবে। আমার মনে হয় গত শতাব্দীর ষাটের দশকে কবিরা যা লিখে গেছেন চলতি শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে এসেও আমরা তাই লিখে যাচ্ছি, বলার ভঙ্গির, ভাষার খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। সে পরিবর্তন আসাটা জরুরি। শুধু লিখে গেলাম, কবিতার সংখ্যা বাড়ল কিন্তু আমি যা বুঝাতে চাইলাম তা বুঝলই না তাহলে লিখে লাভ নেই। যেদিন পাঠক কবির কথা ঠিক ঠিক ভাবে বুঝতে পারবে, সেদিন কবিতা পুরোপুরিভাবে মানুষের হয়ে উঠবে। কবিতা তো শুধু দৃশ্যের পর দৃশ্য সাজানো নয়, কবিতা মানুষকে কিছু বলতে চায় নিশ্চয়।

কবিতার স্টাইল বলতে কী বোঝেন?

স্টাইল প্রত্যেকের নিজস্ব। আপনি যেভাবে কথা বলেন, আমি নিশ্চয় সেভাবে বলি না ! প্রত্যেকের বলার নিজস্ব ভঙ্গি থাকে। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থাকে। এসব মিলিয়েই যে যার নিজস্ব স্টাইল তৈরি করে। আলাদা করে অন্য কোন স্টাইল বুঝি না

বেড়াল ভালো লাগে?

বেড়াল সবচেয়ে অপছন্দের প্রাণি। ছোটবেলায় কুকুর পুষতাম। কুকুর ভালো লাগে।

লাইটপোস্টের আলো কেমেন লাগে?

লাইটপোস্টের আলোয় মাঝরাতে হাঁটতে ইচ্ছে করে। দাঁড়িয়ে চা খাওয়া। হলুদ আলোয় মাঝে মাঝে নিজেকে অচেনা লাগে। অচেনা লাগে সে আলোর নিচে দাঁড়ানো, হেঁটে যাওয়া মানুষগুলোকেও।

আপনি তো গল্পও লেখেন। আপনার গল্পের প্লট কীভাবে মাথায় আসে?

যাপনের ভেতর নানারকম গল্পের উপকরণ খুঁজে পাই। সেসব উপাদান, ঘটানাবহ থেকে আমার গল্প হয়ে উঠে। আর আমি আমার ভাষায় গল্প লিখে যাই।

আধুনিক গল্প কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

গল্প, গল্পের ভেতর-বাহির-কাঠামো, গল্পের ভাষা, বয়ন— সব ক্ষেত্রেই ঘটছে পরিবর্তন। এটা সময়ের কারণে। আমাদের দেখার চোখ (আমি দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলছি) পাল্টাচ্ছে। সে প্রভাব গল্পে তো পড়বেই। আমাদের ভাষায়, ভাবনায় যেমন পরিবর্তন আসছে, গল্পেও আসছে। আগের গতানুগতিক ভাবনা পালটে গেছে। আমি আলাদাভাবে এসব ভেবে দেখিনি।

সামনের বছর কি নতুন বই প্রকাশের কথা ভাবছেন?

প্রথম বই-ই তো বের হলো মাত্র! নতুন বই করার জন্য আরো কয়েকবছর সময় নিতে চাই । পরের বই ২০১৮/১৯ সালের দিকে করব বলে ভাবছি। এখনই না।

কখনো বাঁশের সাঁকে পার হয়েছেন?

বাঁশের সাঁকো পার হয়েছি অনেকবারই। আমার বেড়ে ওঠা গ্রামে। আত্মীয়-স্বজন গ্রামে। ছোট খালার শ্বশুরবাড়িতে যেতে হলে একটা বাঁশের সাঁকো পার হতে হতো।

সাঁকো পার হওয়ার সময় কেমন লাগে?

নিচের দিকে তাকালে ভয় লাগে। আমি গ্রামে বড় হলেও সাঁতার পারি না। সে কারণেও ভয় পাই। তাছাড়া উচ্চতা ভীতি আছে। অন্যভাবে দেখিলে এপার থেকে ওপারে যেতে হলে সাঁকো তো পার হতে হবেই। ভয় নিয়ে, সময় নিয়ে হলেও। জীবনে নানারকম ছড়াই উৎরাই থাকে। সাঁকো পার হবার মতো ভীতিকর পরিস্থিতিতে এসব মোকাবেলা করে মানুষ।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>