| 29 মার্চ 2024
Categories
ইরাবতীর বর্ষবরণ ১৪২৮

ইরাবতীর বর্ষবরণ গল্প: কে কি সে ভয় পায় । বিশ্বদীপ চক্রবর্তী

আনুমানিক পঠনকাল: 11 মিনিট

 

 

কে যে কিসে ভয় পাবে সেটা বলা মুশকিল।

আমার এক পিস্তুতো দাদা লিফটে উঠতে ভয় পায়। সব সময়ে যে পেতো তা কিন্তু নয়। দাদার অফিস আট তলায়। লিফটে করেই যেতো রোজ। বিশ বছরেরও বেশি। এই বিষয়ে কোন টুঁ শব্দটি শোনা যায় নি কোনদিন। এবার দেশে গিয়ে অনেকদিন বাদে দেখা হতে বৌদি হাঁপাতে হাঁপাতে কমপ্লেন করল, দ্যাখ না তোর দাদাকে, কোন জায়গায় একসঙ্গে যাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে। লিফট ছেড়ে তোদের বারো তলা সিঁড়ি ঠেলে উঠতে হল আজ।

মলয়দা কাঁচুমাচু মুখে দাঁড়িয়েছিল, এতদিন বাদে দেখা হল রানার সাথে, শুরুতেই একটা মামলা ঠুকে দিলে আমার নামে?

মলয়দা বেশ গপ্পের মানুষ। কাঁচুমাচু ভাবটা বেশিক্ষণ থাকেনি, বরং লিফটে ভয় পাওয়ার ইতিহাস রসিয়ে রসিয়ে বলল চায়ে সড়াত সড়াত চুমুকের সঙ্গে। 

একদিন বুঝলি না অফিস থেকে বেরিয়েছি, সে কি কেলো! লিফটটা গেল পাঁচ আর ছ তলার মধ্যেখানে আটকে। হবি তো হ, আমি সেই লিফটে একা। হবে নাই বা কেন? বেরোতে দেরী হয়ে গেছিল, বসের জন্য একটা কাজ তুলে দেওয়ার ছিল। এমন এঁটে খচ্চর না আমার বসটা –

এখানে বৌদি তড়িঘড়ি মলয়দাকে আটকে দিল, অ্যাই নিজের ছোট ভাইয়ের সামনে মুখ খারাপ করবে না একদম।

তালুকদারের জন্য খচ্চর কথাটা কোন গালি নয়, আমি কম করেই বলেছি। নিজে ব্যাটা একটা কামচোর, তার উপরে একগাদা কাজ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে নিজে সময়মত অফিস ছেড়েছে। সে যাই হোক, লিফট আটকে যেতেই আমার বুকটা ধকাস ধক। কি হবে এবার? রাত তখন আটটা, কেউ কি আর অফিসে থাকে এই সময়? বলতে বলতে লিচু লিচু হয়ে উঠল মলয়দার চোখ। কিছু নাটকীয় ভাবে গল্প বলতে পারে বটে! অবশ্য যে কোন ভয়ের কথা বলার সময়েই একটু নাটকের দরকার, না হলে নিজের ভয়টা অন্যদের মধ্যে চাড়িয়ে দেওয়া যায় না।ভয়টা বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা যায় নামোটেই।  

বুঝলি রানা, সেই সময়ে আমার অবস্থা যাকে বল বিপর্যস্ত, কাঁচা বাংলায় প্যান্টে হলুদ। জোরে জোরে বারবার এমেরজেন্সি সুইচ টিপছি, হতচ্ছাড়া কোথাও কোন টুঁশব্দ নেই। আমার প্রাণপখেরু দম আটকে ছটর ফটর একেবারে!

কতক্ষণ হয়েছিল মলয়দা? এত তাড়াতাড়ি অক্সিজেনের অভাব হওয়ার কথা তো নয়।

ধুত্তারি তোর অক্সিজেন! মলয়দা এমনভাবে বলছিল যেন নিজে আবার ওই সময়টার মধ্যে ঢুকে গেছে। মুখে চোখে তেমনি দমচাপা ভাব। আমার কি তখন মাথার ঠিক আছে রে? ঘামে ভিজে জামা সপসপ করছে, চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসছে, এমনি বুঝলি, এমনি করে –

দাদু ঠিক এমন ভাবে ভুতের গল্প বলতো ছোটবেলায়, চোখের কালোটা মার্বেলের মত ঠিকরে বেরোতে যা বাকি!

আমি তখন দমাদ্দম লিফটের দরজায় লাথি মারতে শুরু করেছি। তাতেও ফারাক হল না। আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম, মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে বসে পড়েছিলাম লিফটের মেঝেতে। মনে হল অদ্যই শেষ রজনী। চোখের সামনে রুমা, মন্টি, বাবলির মুখ ফটাফট ভেসে উঠল।

রুমা হল বৌদির নাম। এই সময়ে একটু সলজ্জ হাসি হেসে বৌদি বলল, ইস ন্যাকা!

তারপর, তারপর কি হল মলয়দা?

চায়ের কাপটা শেষ করে টেবিলে রেখে গোঁফের প্রান্ত থেকে শেষটা মুছে নিতে নিতে বলল মলয়দা, তারপর আর কি! যখন একদম আশা ছেড়ে দিয়েছি, তখন লিফটটা সড়সড় করে আবার নিচে নাবল, পাক্কা পনেরো মিনিট ওই নরক যন্ত্রণা ভোগ করার পর। ব্যাস, ওই শেষ। আর কোনদিন লিফটের ছায়াও মাড়াইনি।

তাহলে এখন অফিসে যাও কি করে?

কেন সিঁড়ি দিয়ে উঠি। একদিকে ভালই তো হল, ফিজিক্যাল ফিটনেসটা বাড়ছে।

এবার রুমাবৌদি ঝাঁঝিয়ে উঠল। হ্যাঁ, এই করে আমার রাজারহাটের ফ্ল্যাটটা গেল। এতো যদি ফিটনেস বাড়ছে, তাহলে এমন হাতের পাঁচ ফ্ল্যাটটা ছেড়ে দিলে কেন?

আহা, এখন সিঁড়ি ভাংতে পারি। কিন্তু বুড়ো বয়সে কি আর পারবো নাকি?

শুধু মলয়দা বলে নয়, কথা হচ্ছে এইভাবে একটা ব্যাক্তিগত ঘটনার স্মৃতি থেকে যে কোন কারোর মনে ভয়ের জন্ম হতে পারে। তারপর সেটা হয়তো রয়েও যায় সারা জীবন। সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ লোক লিফটে রোজ উঠছে আর নাবছে, তাদের কোন চ্যাদব্যাদ নেই। কিন্তু মলয়দার জীবন থেকে লিফট বিলুপ্ত। আমরা এটাকে বলবো ব্যক্তিগত ভয়। এরকম ভয় ব্যক্তি অথবা পরিবারে সীমাবদ্ধ।

আরেক রকমের ভয় থাকে যেটা তৈরী করে দিতে হয়। যেমন আমাদের পাড়ার পল্টুদা। চেহারায় কোন গামা পালোয়ান ছিল না। কিন্তু একদিন বাজারের রাস্তার মধ্যিখানে একটা পেটো ঝাড়ল। কাউকে উদ্দেশ্য করে নয়, কিংবা সবাইকে লক্ষ্য করেই। এর পর থেকে সবাই পেটো পল্টুকে ভয় পেতে শুরু করল। তোলা আদায় করা সহজ হয়ে গেল। এমন কি পল্টুদা নিজেও আসত না আর। তার সাঙ্গো-পাঙ্গোদের পাঠাতো। সেগুলো চেহারায় আরও ন্যাংলা প্যাংলা হতে পারে। কিছু যায় আসে না তাতে। ভয় একবার দেখিয়ে দিলে জারি থাকে অনেকদিন। যতদিন না এক বসন্তের সকালে গুটে মস্তান পল্টুদার গলার নলি ফাঁক করে দিল, রাজ করে গেছিল গোটা চত্বরে। এখন আবার সবাই গুটেকে ভয় পায়।

ভয় প্রতিষ্ঠা করার নানান রকম টেকনিক হয়। পল্টুদারটা এক রকমের। কিন্তু ওটাই একমাত্র পথ নয়। যেমন আমার পুলিশে ভয়। খুব ছোটবেলায় মা চারদিকে খড়ি দিয়ে এঁকে দিত, ঠিক যেন লক্ষণরেখা। দেখিস এর বাইরে যাবি না কিন্তু, তাহলেই –

এই তাহলেইটা বিভিন্ন লক্ষণ রেখার জন্য আলাদা আলাদা হয়। আমার জন্য পুলিশ। মা চোখ গোলগোল করে বলতো, পুলিশ! ব্যাস, পাঁচ বছরের আমি, তখনো পুলিশ দেখিনি। কিন্তু ওই যে ঢ্যাঁড়া টেনে দেওয়া রইল, তার বাইরে আর বেরোলাম না। পুলিশের ভয়টা হয়তো বেশিদিন ধোপে টিঁকত না। কিন্তু ওই যে নকশাল আমলে পুলিশ পাড়ায় টহল দিতে আসত আর আমার সদ্য ফুলপ্যান্ট পড়া দাদা পায়খানায় গিয়ে ঠকঠক করে কাঁপত সেটা একেবারে মনে গেঁথে গেল এমন, লাল টুপি শুনলেই পেটের মধ্যে গুড়গুড়।

মার্কিন দেশে আসার পর টুপির রঙ বদলেছে। এখানের ডেপুটি আর শেরিফ সবাই গাড়ি হাঁকিয়ে নীলরঙ্গা ইউনিফর্মে ঘোরে। রাস্তায় বেশ কয়েকবার স্পিড ব্রেক করে তাদের সঙ্গে মোলাকাত হয়েছে। প্রথম প্রথম পেট গুড়গুড় করত, কিন্তু আলাবামাতে এক পুলিশ আমাকে ডান হাতের মধ্যমা দেখান ছাড়া এমনিতে খুবই মিষ্টি ব্যবহার করে আমার হাতে ফাইন গুঁজে দিয়ে যান তেনারা। তাই পুলিশের প্রতি আমার ভয়টা একটু কমতির দিকে যাচ্ছিল।

কিন্তু দেখলাম এদেশে অনেক লোক পুলিশকে খুব ভয় পায়। প্রচন্ড। বিশেষ করে এদেশের কালোরা। আমার অফিস কলিগ ফেথফুল লরেন্স বলেছিল আমায়, ইউ নেভার নো ম্যান, এনিথিং ক্যান হ্যাপেন ইফ ইউ আর ব্ল্যাক। আমার দিকে একবার চোখ কুঁচকে তাকিয়েছিল, আমার গায়ের রংটা যথেষ্ট কালো কিনা সেটা বোঝার জন্যে। ইউ নেভার নো ম্যান, ধীরে ধীরে মাথা নেড়েছিল, মানে আমার গায়ের রংটাযথেষ্ট সাদা নয় আরকি। চিন্তিত মুখে বলল, তুমি তো অনেক দূর দূর গাড়ি চালিয়ে যাও। সাবধান, তোমার গাড়ি থামালে দুটো হাত একেবারে স্টিয়ারিঙ-এ রাখবে।

কেন?

বোঝাতে যে তুমি কোন বন্দুক বের করতে যাচ্ছো না।

আমি বন্দুক কোথায় পাবো? বন্দুকের নাম শুনেই আমার বাঙালি পেট গুড়গুড় করে উঠল।

সেটা কথা নয়, কালো হলে তোমার হাত সবসময়ে দেখতে পাওয়া চাই, না হলেই নিশ্চিত বোঝা যাবে তুমি বন্দুক বের করতে চাইছ।

তোমার সঙ্গে এরকম হয়েছে?

কোনটা? পুলিশ গাড়ি থামিয়েছে কিনা?

হ্যাঁ।

সেতো আমি হেঁটে গেলেও থামাবে। বছরে তিনবার পুলিশে তোমার বডি সার্চ না করলে তুমি এদেশে কালোই নও মোটে। হাসতে হাসতে বলেছিল ফেথফুল। হাসতে হাসতেই, মানে আমার তো সেরকমই মনে হল। আসলে সব কথাতেই চোখে মুখে হাসি উপচে পড়ে ছেলেটার।

তোমরা তাহলে পুলিশকে ভয় পাও?

একদম। আমার মা ভয় পায়, বাবা ভয় পায়, ভাই, বোন, প্রতিবেশী সবাই। আমাদের রীতিমত ক্লাস হয় বাড়ির বাইরে বেরোলে নিরাপদে বাড়ি ফেরা নিয়ে। পুরোপুরি মেনে নিল ফেথফুল লরেন্স। হাসতে হাসতেই।

এটাকে আমি বলি প্রাতিষ্ঠানিক ভয়। তুমি গুন্ডাই হও কি পুলিশ হও, এইরকম ভয় তৈরী করে দিতে হয়। কখনো সেটা একটা পেটো ছুঁড়ে হয়, হিরোসিমায় অ্যাটম বম্ব ফেলে হয় কিংবা বারংবার বডি সার্চের মাধ্যমে একটা আতঙ্ক তৈরী করে দিয়েও হয়। এই প্রত্যেকটা পন্থাতেই কিছু লোকের মরে যাওয়াটা দরকার পড়ে, না হলে ভয়ের গোঁড়া শক্ত হবে না।

এবার পাঠক বলুন, ব্যক্তিগত ভয় আর প্রাতিষ্ঠানিক ভয়ের মধ্যে কোন যোগ দেখতে পাচ্ছেন?

পৌনঃপুনিকতা।

এই যেমন মলয়দার অফিসের লিফট যদি রোজ থামত তাহলে কি ওটা আর ব্যক্তিগত ভয় থাকত? বহু লোকই হাঁপাতে হাঁপাতে রোজ অফিস করত। এরকম সব কটা অফিসে যদি রোজ লিফট বন্ধ হত, তখন?

বাঙালি স্বাস্থবান হত? হা, হা বেশ বলেছেন। কিন্তু ওটা তো করোলারি, আসল উপপাদ্যে আসুন। মানে আমি যেটা বলতে চাই, এই রকম অবস্থায় ব্যক্তি মানুষের ভয়ভীতি দিনে দিনে একটা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়াত।   

সমষ্টিগত হলেওপ্রাতিষ্ঠানিক ভয় কিন্তু একটা সামাজিক গন্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যেমন কালোরা আমেরিকান পুলিশকে ভয় পাবে, কিন্তু ফ্রেঞ্চ পুলিশকে ভয় নাই পেতে পারে আরকি। কিন্তু কিছু ভয় আছে যেটা কোন দেশ কাল সমাজের সীমারেখায় আটকে থাকে না। এরকম ভয় যেটা সবাই বহুকাল ধরে পেয়ে এসেছে, অন্যদেরও পেতে দেখেছে, দেখতে দেখতে বড় হয়েছে। এই রকম জাম্বো সাইজের ভয় শুধু জৈবিক নয়, এর পিছনে ইতিহাসের ঠেকনা লাগে।

পাঠক, এরকম কোন ভয়ের কথা বলতে পারেন?

ভাবুন, ভাবুন!

আমি আপনাদের মুখেই শুনতে চাইছিলাম, আপনারা বললেই ভাল হত। কারন আমি যে ভয়ের কথা বলবো সেটা শুনেই আপনারা অনেকে আমাকে সেক্সিস্ট হিসাবে চিহ্নিত করবেন। বিশেষত পাঠিকারা। কিন্তু হে আমার বিদগ্ধ পাঠিকাবৃন্দ, একবার হৃদ মাঝারে হাত দিয়ে বলুন, আপনারা সবাই কি আরশোলা দেখে ভয় পান না?

শুনেছি সব মেয়েই নাকি আরশোলা দেখলে ভয় পায়। এটা সত্যি কিনা জানিনা, মানে সব মেয়েই পায় কিনা সেটা কি করে নিশ্চিতভাবে জানব। কিন্তু আরশোলা দেখে শান্ত স্বাভাবিক রম্য আলোচনার মাঝখানে উন্মাদের মত লাফালাফি করে উঠতে অনেক মেয়েকে দেখেছি। বলতে কি, একবার এরকম অবস্থায় এক সুন্দরী মহিলা আতঙ্কে আমাকেই জড়িয়ে ধরেছিলেন, তাও মনে আছে। এটা সুখস্মৃতি হতে পারতো, কিন্তু সেখানে তার স্বামীও উপস্থিত ছিলেন। ওনাকে না জড়িয়ে আমাকে জড়ানোর ফলে ওর বাড়িতে গৃহশান্তি বিঘ্নিত হয়েছিল এরকম শুনেছি। আমার সঙ্গে যে ওই মহিলার কোন বিশেষ সম্পর্ক ছিল এমনটা নয়। আমার মনে হয় ভয়ে যে মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যায় সেটা এর প্রমান। কিন্তু সেটা যে ভয় না পেয়েছে তাকে বোঝানো মুশকিল। অবশ্যই ওনার স্বামী মনে করেছেন আরশোলা দেখে লাফালাফি করাটা হয়তো আমাকে জড়িয়ে ধরার একটা ছলনা মাত্র। সেইখানে আর কোন মহিলা উপস্থিত ছিল না এবং উপস্থিত কোন পুরুষ ওইভাবে আতঙ্কিত হয়ে ওঠেনি, তাই ওর চোখে স্ত্রীয়ের এই আচরণ বাড়াবাড়ি লেগে থাকবে।

তাই বলে ভাববেন না, এই একটা ঘটনা থেকেই আমি এটাকে ধ্রুব সত্য বলে মেনে নিয়েছি। আমি এটা নিয়ে চুলচেরা করেছি। মলয়দা লিফটে উঠতে ভয় পায়, নিজের একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে। ফেথফুল বা ওর মত আরও আমেরিকান কালোরা পুলিশকে ভয় পায় সেটা একটা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাপার। কিন্তু মেয়েরা কিংবা এই যে ভদ্রমহিলা আরশোলা দেখে ভয় পেলেন সেটার পিছনে কি কোন ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা ছিল? সেটাই খুঁড়ে দেখি আসুন। 

আরশোলা দেখে মেয়েরা কিভাবে ভয় পেতে শুরু করল, কেন আরশোলাকে ভয় পেতে হবে সেটা নিয়ে আমার কিছু পরিচিতাকেবিশেষভাবে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। সত্যি বলছি আমি শুনতে চেয়েছিলাম তাদের ভয় না পাওয়ার কথা। আমি এমন কিছু মহিলাকে বেছেই আমার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছিলাম, যারা বলবে, অন্তত আমি আশা করেছিলাম যে তারা জোর গলায় প্রতিবাদ করবে, কই আমার মধ্যে কোন আরশোলা বিদ্বেষ বা ভীতি নেই! সেসব আগেকার দিনের কথা, এখনকার মেয়েরা মোটেই –

যেমন আমার অফিসের জেনিফার স্টেইন। খুবই ঝকঝকে চেহারার মেয়ে, ওর যে কোন কিছুতেই ভয় থাকতে পারে সেটাই অবিশ্বাস্য। আমি জিজ্ঞেস করাতে হয়তো সেই কারণেই একটু লজ্জা পেয়ে গেল। কিন্তু খুব সোজা সাপটা মেয়েটা। ভয় পাওয়ার কথাটা স্বীকারও করে নিল।

কিন্তু কেন? আরশোলা কিছু করেছে তোমাকে? কখনো?

জেনিফার ওর সোনালি চুলের একগোছা ডান হাতের তর্জনীতে পাকিয়ে ভাবল একটু, ও যে ভাবছে মন দিয়ে সেটা ওর চোখের দৃষ্টি থেকেও স্পষ্ট বোঝা যায়। তারপর খুব গোপন কথা বলার মত ফিসফিস করে বলল, হয়তো আমার স্মৃতিতে রয়েছে কিছু। অনেক ছোটবেলার কথা –

জেনিফার এখানে থেমে গেল। অনেকদিন আগেকার কথা তাই মনে আনতে সময় লাগতে পারে। যদিও আমার ধারনা, সেটা নয়। মনে আছে ওর খুব ভাল করেই, কিন্তু কি ভাবে বলবে সেটা সাজিয়ে নিচ্ছে। ভয়ের কথা গুছিয়ে না বলতে পারলে, দম থাকে না। তাড়া না দিয়ে অপেক্ষায় রইলাম।

কি বা আমার বয়েস হবে তখন, তিন কি সাড়ে তিন। খুব দুষ্টু ছিলাম তো, তাই মা খুব চোখে চোখে রাখত। এইখানে একবার ফিক করে হাসল জেনিফার। আমি আশ্বস্ত হলাম, অন্তত খুব ট্রমাটিক কোন স্মৃতি জাগিয়ে তুলিনি।

মা স্নানে গেছে আর আমি আমাদের বাড়ির সবুজ কার্পেট পাতা মাস্টার বেডরুমে পা ছড়িয়ে বসে খেলছি। বাথরুমের দরজা খুলে মা স্নান করে হাসিমুখে বেরোচ্ছে। আমি খুশিতে ছটফট করে মাম্মা বলে মার দিকে হাত বাড়াতে গিয়ে দেখলাম মা যেই র‍্যাক থেকে গোলাপি রঙের তোয়ালেটা ধরে টান দিয়েছে, সেই মখমলি তোয়ালেটার উপর কালো দাগের মত কি একটা!  মা দেখার আগে আমি দেখেছি, আর আমার চোখকে অনুসরন করে মা। দেখেই মা ভীষন জোরে চিৎকার করে উঠল, চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কি বলছে বোঝারও উপায় নেই। একটু আগের নিশ্চিন্ত নিরাপত্তা এক মুহূর্তে কোথায় চলে গেল! দেখে আমিও ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে শুরু করে দিলাম।

আরশোলাটা কি করল?

বোধহয় ফরফরিয়ে উড়ে চলে গেল, মাকে দেখে ওটাও ভয় পেয়েছিল হয়তো। এবার খুব একচোট হাসল জেনিফার। একটু আগের বিশ্রস্ত ভাবটা কেটে যাচ্ছিল।

তাহলে তোমার মা কেন ভয় পেল বা তুমি এখনো পাও? শুধু ওই স্মৃতি থেকে?

কে জানে! আমি কিছুদিন আগে মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম সেদিনের ঘটনাটা। অত বছর আগের কথা, মার ওই বিশেষ দিনটার কথা মনেও নেই। মনে হয় একবার নয়, এরকম অনেকবারই ঘটেছে।তখন আমরা মিসিসিপিতে থাকতাম তো। তুমি যেখানেই যাও না কেন, যতরকমের ওষুধপত্র ছড়াও, আরশোলা এড়াতে পারবে না। তবু আরশোলা কাছে এলেই কি যে একটা ভয় চেপে ধরত! এখনো করে –

কিন্তু শুধু জেনিফার বলে নয়, আমার প্রতিবেশিনীএমি গেসনারকে একই প্রশ্ন করায়বলেছিল, গা ঘিনঘিন করে একদম! ডিসগাস্টিং।

এমিকে দেখেছি সব ব্যাপারেই একটু পিটপিটে, বাড়ি পরিষ্কার করাটা ওর একটা পাস্ট টাইম। তাই ওর বাড়িতে আরশোলা থাকবে আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

না, না এই বাড়িতে নয়। আমি ত্রিসীমানায় আসতেই দিই না মোটে। বেশ একটা আত্মতৃপ্তির সঙ্গে বলেছিল এমি।

তাহলে? মানে বোঝার চেষ্টা করছি গন্ডি কেটে দেওয়ার পরেও এরকম গা ঘিনঘিন করার সুযোগটা কোথায় পেলে তাহলে – এটা আমি মনে মনেই বলেছিলাম।

বলছি তোমায় একবার কি হয়েছিল। তখন আমি মিনিয়াপোলিসে থাকি। জ্যাকের সঙ্গে আমার প্রথম ডেট সেটা। ওর জন্য ডিনার বানিয়েছিলাম। খাওয়ার পরে ডেকে ওয়াইন নিয়ে বসলাম দুজনে।সন্ধ্যার ফুরফুরে বাতাসে ম্যাগ্নোলিয়ার সুবাস। গবলেটটা তুলে মোটে একটা চুমুক দিয়েছি, বিশ্বাস করবে না, ঠিক তখনইএকটা আরশোলা একেবারে আমার নাকের থেকেএক বিঘত দূরে। আমি ভয় পেয়ে তড়াক করে লাফালাম।আমার হাতের রেড ওয়াইন পুরো চলকে পড়ল জ্যাকের ফটফটে সাদা জামার উপর।

আমি পুরো ছবিটা মনের চোখে দেখতে পেলাম যেন। আরশোলাটা এরকম ভুল মুহূর্তে শুধু ডেকেই আসেনি, এমির এত কাছাকাছি চলে এসেছে। একটা রোমান্টিক সন্ধ্যার হাতে হ্যারিকেন। জ্যাক কি করল?

হি ওয়াজ ভেরি শিভালরাস অ্যাবাউট ইট। তাছাড়া ও মোটেই আরশোলাকে ভয় পায় না। বলে হাসল এমি। বরং মারতে পারলে খুব মজা পায়। ওখানেই আরশোলাটাকে জুতোর তলায় পিষে মেরে ফেলল।

বেচারা আরশোলাটা নিজের প্রান বকশে এমির ব্যাক্তিগত পরিসরে প্রবেশ করার মূল্য দিয়েছিল সেদিন। তবু আমি এমিকে প্রশ্ন করতে ছাড়লাম না। কিন্তু তুমি এতো ভয় পেলে কেন এমি? একটা আরশোলা তোমার কি করতে পারত?

ইস ঘিনঘিন করে না কেমন? কি রকমের নোংরা কালো! আর কি বিশ্রি ওর গোল্লা গোল্লা চোখগুলো!

আরশোলাকে এমির ভয় পাওয়ার একটা যথাযথ কারণ পাওয়া গেল। চেহারাটা ঠিক ভদ্রগোছের নয়। এর জন্য মূল্য তো চোকাতেই হয়। কিন্তু এরকম গোল্লামার্কা চোখ তো আরও অনেক পতঙ্গেরও আছে। কোন পোকাটা দেখতে সুন্দর হয়! তাই এমির উত্তরে একটা সন্দেহের জায়গা রয়েই গেল আমার মনে। আরশোলা না হয়ে যদি একটা মাছি এসে যেতো ওই দূরত্বে, তাহলে কি হত? 

আমার সন্ধান আমি চালিয়ে যাচ্ছিলাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম আমার বন্ধু সুরভিকে। সে তো শুনেই খিলখিল করে ফোনের অন্য প্রান্তে হেসে গড়িয়ে পড়ল। একবার কি হয়েছিল জানিস রানা?

সুরভি না বলা অবধি আমার জানবার কোন উপায় ছিল না। তাই ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছিলাম।

সেবার অফিসের কাজে দিল্লি গেছি, কনফারেন্স ছিল ওখানে। তৈরী হয়ে বেরোচ্ছি। ওমা! দেখি একটা আরশোলা চুপ করে বসে আছে ওই দরজার হাতলটার উপর। আমি দেখেই এক চিৎকারে চার পা পিছনে। তখনো আমার পেন্সিল হিলটা পায়ে গলাই নি ভাগ্যিস, না হলে ওখানেই পা মচকে একেবারে –

এরপর কি করলি?

আবার খিলখিল করে হাসল সুরভি। পুরো হোটেল মাথায় তুলেছিলাম সেদিন, তুলকালাম। রিসেপশান থেকে লোকজন দৌড়ে এলো।

আচ্ছা, ওরা বাইরে থেকে দরজা খুলতেই –

পাগল? আমি পইপই করে না করে দিয়েছিলাম। ওরা বাইরে থেকে হ্যান্ডেল ঘোরাবে, আর ওই আরশোলাটা সারা ঘরময় উড়ে বেড়াবে। তখন? আমার কি হবে?

এতক্ষণ ওই ভাবেই বসেছিল আরশোলাটা?

একেবারে, যেন বুদ্ধদেব ধ্যানে বসেছেন, নট নড়ন চড়ন নট কিচ্ছু।

তবু ভয় পেলি?

থাকিস একটা আরশোলার সঙ্গে এক ঘরে, তাহলে বুঝবি।

আমার মনে হল, আরশোলা নিজেও কি ভয় পায়? হয়তো সুরভির চ্যাঁচামেচি শুনে আরও জড়সড়ো হয়ে ওখানেই বসেছিল, ভেবেছিল এইভাবে যদি পার পাওয়া যায়। অনেকসময় আমরা যাকে ভয় পাচ্ছি, সে নিজেই কিন্তু আরও বেশি ভয় পেয়ে থাকতে পারে। জানি না, আরশোলার মনের কথা জানা তো সহজ ব্যাপার নয়।তবে আমার মনে হল এরকম হওয়াটা বিচিত্র নয়। 

ওদিক থেকে একটা আত্মপ্রসাদের হাসি গুড়গুড়করল সুরভির গলায়। ওরা ফায়ার এস্কেপের সিঁড়ি দিয়ে আমাকে জানালা পথে নাবিয়ে নিয়েছিল সেদিন। ওদের একদম আচ্ছা করে দিয়েছিলাম। ইয়ারকি হচ্ছে বল, ফাইভ স্টার হোটেলে যাবো ওখানেও কেন আরশোলা থাকবে?

আমি সুরভির এই প্রত্যাশাটার সমর্থন করি। সত্যিই তো তাহলে আর লোকে এরকম হোটেলে যাবে কেন? অন্তত কিছু কিছু জায়গা তো এক্সক্লুসিভ থাকবে যেখানে এইসব কীট পতঙ্গের থেকে দুদন্ড শান্তি পেতে পারে লোকে। হোটেল যেমন অবাঞ্ছিত বাইরের লোকেদের আটকে দেয়, দেয় না কি? এরকমই অপ্রত্যাশিত কীটপতঙ্গ যা হয়তো বাইরের আমদানি নয়, তাদের দাবিয়ে দেওয়াটাও হোটেলের অবশ্য করনীয়। এইটুকু আশা তো করতেই পারে সুরভিরা।

তবুও একটা প্রশ্ন করতেই হল। আচ্ছা সুরভি ওই আরশোলাটা তোকে কি করতে পারত?

কি করতে পারতো না? আমি একা ঘরে একটা মেয়ে –

না, না সেটা তো বুঝলাম। কিন্তু ওইটুকু তো একটা কীট!

আর দাঁড়াগুলো? যদি বসিয়ে দিত তখন? দেখলেই কেমন গা শিরশির করে না?

দাঁড়াগুলো? সত্যিই কি তাতে এতো ধার? বটি ছুরি কাঁচি এসব পড়ে থাকে যত্রতত্র, অনেক সময় অন্য লোকের হাতেও থাকে। আরশোলার পা কিংবা শুঁড়ের থেকে সেগুলো অনেক বেশি ধারাল আর ভীতিকারক?আমি অনেক মা মাসিমা বৌদিদের দেখেছি গড়িয়াহাট বাজারে মাছুড়ের বঁটির সামনে দাঁড়িয়ে গলা বাড়িয়ে দিয়েছেন, দাদা, মাছটা ঠিক করে কাটুন। পিত্তটা গলে না যায়! এই রকম সময়ে তাদেরমুখে তো কোন ক্লেশ দেখা যায় না!

ভেবে দেখতে গেলে আমরা আরশোলাদের বিষয়ে যতটুকু জানি, এরকম বিশ্বব্যাপী ভয়ের কোন কারন নেই কিন্তু। মশা, মাছি, এঁটুলে পোকাদের মত রোগব্যাধি বয়ে ওরা বেড়ায় না। রক্ত চোষে না, চামড়ায় ক্ষত তৈরী করে না। মশা দেখলে কই আমরা চিলচিৎকার জুড়ি নাতো। অথচ ওদের থেকেই তো যত ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু এইসব মহামারী!

এইভাবে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কলকাতা, ডালাস থেকে দিল্লি খুঁজে খুঁজে অনেককে জিজ্ঞেস করে দেখেছি। নানারকম উত্তর পেয়েছি। কিন্তু মেয়েরা যে আরশোলা দেখে ভয় পায় সেই বিষয়ে ধারণাটা আরও বেশি গেড়ে বসেছে। এমন কি অনেকে ভয় পাওয়ার কোন যুক্তিসঙ্গত গল্পও ফাঁদতে পারেনি।

টিঙ্কি দুবে বলে এক বন্ধু আমার। সে বলল, কেন ভয় পাই জানি না বাবা। দেখলেই দিমাগ বিগড়ে যায় একদম,ব্যাস! (এটা সেই কোন এক কোম্পানির বিজ্ঞাপন ছিল না, আমি তো এমনি এমনি খাই, অনেকটা সেরকম)।

আমার অফিস কলিগ টেরেসা চোখ যতটা পারে বড় বড় করে বলেছে, কখন কি করে বসবে কোন ঠিক আছে? দেখলেই মনে হয় এখুনি আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে, ছুঁয়ে দেবে চাইলেই। ওইরকম পেটমোটা চেহারা, অথচ কি রকম ফড়ফড়িয়ে ঘুরে বেড়ায়। হাত লেগে গেলে শরীর থেকে আবার পুচ করে সাদাটে কি একটা বেড়িয়ে আসে! এম্যা! নোংরা লাগে না দেখতে! বলতে বলতে মুখ বিকৃত হয়ে চোখ হারিয়ে গিয়েছিল টেরেসার।

ভাবুন একবার! টেরেসা আদতে চাইনিস, টেরেসা হোয়াং। মা ঠাকুমা আরশোলা খাওয়া নারী, আরশোলা না খেলেও উচ্চিংড়ে খেয়েছে আমি নিশ্চিত। কিন্তু সেও এখন আরশোলাকে ভয় পাচ্ছে। ভয় কি ছোঁয়াচে নাকি রে বাবা?

এই সব দেখে দেখে আমার মনে হল খুব কম মেয়েই আছে যারা আরশোলা দেখলে ভয় পাবে না। আবার ঠিক তেমনি খুব কম ছেলেই আছে, যারা আরশোলা দেখলেই তার বিনাশ করে ভীত সন্ত্রস্ত মহিলাদের আশ্বস্ত করায় কোন ত্রুটি রাখে। পুরুষজাতির হয়েমহিলাদের এই কষ্টে আমারও বুক ফাটলে কি দোষ দেওয়া যায়? আমার মনে হল কিছু একটা করতেই হবে। এদের ভয় কি কিছুতেই তাড়ানো যাবে না?

আমি এটা নিয়ে সাইন্টিস্ট বন্ধু সাইমনের সঙ্গে কথা বলছিলাম। তার মতে এইধরনের ভয়ের বীজ লুকিয়ে আছে আমাদের সমাজে, বাবা মার ব্যবহারে। যদি আরশোলাকে ভয় পেতে দেখতে দেখতে বড় হই, আমাদের কাছেও এভাবে আঁতকে ওঠাটা যুক্তিসঙ্গত মনে হয়। এরকম একটা ভয় থেকে বেরিয়ে আসা তাই খুব শক্ত।

আমি সাইমনের এই কথায় দমলাম না। বরং অন্য পথ খোঁজার চেষ্টা করলাম। আচ্ছা সাইমন, আরশোলা আমাদের জীবনে কি কাজে লাগে বলো তো? ফালতু, অপ্রয়োজনীয়, নগন্য জীবন। আমাদের কি উচিত না এমন কিছু একটা করা, কোন যুগান্তকারী কীটনাশক টীটনাশক যা দিয়ে আরশোলাকে নির্বংশ করা যায়? একেবারে ঝাড়ে বংশে উপড়ে ফেলা আর কি! বলতে বলতে আমার চোখ চকচক করছিল, চোখের সাদাটা ছড়িয়ে পড়ছিল বেশি বেশি করে। ,

সাইমন খুব এক চোট হাসল। হাই হোপস ডিউড! জানো তো আরশোলারা সেই জুরাসিক কাল থেকে চলে আসছে। খাবার জোটে চাই না জুটুক, নিশ্বাস নিতে পারুক কি না পারুক একদম মাটি কামড়ে পড়ে থাকে ওরা।

নিশ্বাস না নিয়েও বেঁচে থাকে? কতক্ষণ পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট? ভেবে আমার নিজেরই কেমন দমবন্ধ লাগল।

থাকতেই পারে। আট দশ মিনিট তো নস্যি, অনেক আরশোলা চল্লিশ মিনিটেরও বেশি সময় নিশ্বাস না নিয়েও পুরোদস্তুর বেঁচে থাকে। বলছি কি তোমায়, নিউক্লিয়ার ওয়ার হয়ে মানুষজাতি লুপ্ত হয়ে গেলেও আরশোলারা মারা যাবে না।

বলো কি, এটা সত্যি?

একদম! বেঁচে থাকার অপরিসীম ক্ষমতা এদের। আল্টিমেট সারভাইভারস!

এটা শুনে আমার বন্ধু ফেথফুল বড় বড় দাঁত বের করে বলেছিল, আমরাহলামওই আরশোলার জাত। দেখে ভয় পেতে পারো, কিন্তু দাবাতে পারবে না।

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত