Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,Irabotir Chupkotha

অণুগল্প: ইরাবতী দিন । কিযী তাহনিন

Reading Time: 2 minutes
ভাগ্যিস আউল বাউল ভাবনার কোন পাসপোর্ট লাগেনা। মসজিদ থেকে টুকরো শোনা জোহরের আজানের, পরপর প্রতিদিন যে হলদে দুপুর আসে, সেও কারো তোয়াক্কা করেনা। ভাগ্যিস। জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে তাই তাকালে পোড়া রোদ আর সোনা আলোর দিনে যা ইচ্ছা তাই ভাবা যায়।  
আর এই ঝন্টু মালীর এই আকাশভাঙা চিৎকারও কারো পরোয়া করেনা।  দিনের প্রথম ভাগে, এই গাছ, সেই গাছ, জল- মাটি দিয়ে সে নাড়াচাড়া করে।  আলোর দিনে, বাদলের দিনে, কুয়াশায়।  প্রতিদিন। পাতা পচা সার, ডিমের খোসা, সবজি পচা রস, চাল ধোয়া জল, সারাদিন এই গাছগুলোর জন্যই। কখন রোদ কখন ছায়া ঝন্টু মালী ঠিক জানে।  আর তার সাথে চলে ঝন্টু মালীর  হুলুস্থূল চিৎকার।  বোঝা যায়, দিন শুরু হয়েছে।  শুধু তীব্র ঝড়ের দিনে, মেঘজাগা আর্তনাদের কাছে সে পেরে উঠে না বলে, চুপটি করে ঘরে থাকে। 
পাড়ার সবাই বলে, ঝন্টু মালী গাছের পাতা ধরে ধরে ঝগড়া করে। “এই এখানে পলিথিন কে ফেলে গেল, কোন শালার পুত এখন এইডা সাফ করবে?” “কোন ফইন্নি এই গাছের ডাল ভাঙসে।  সামনে আয়, তোর ঘেটি এমনে ভাঙি।” “নিমকহারামের দল, মায়া নাই।” 

আরো পড়ুন: কিযী তাহনিনের গল্প বুধ গ্রহে  চাঁদ উঠেছে

নিমকহারাম ফইন্নির দল ডাল ভাঙে, কলাবতীর পাপড়ি ছিড়ে, এর তার কপালে ফুটিয়ে মজা পায়, আর খিলখিল হাসে। গালি খায়, তাড়া পেয়ে দৌড়ে পালায়।  ঝন্টু মালী আবার গাছের পাতা ধরে ধরে ঝগড়া করে।  
আর এই অসময়ে, হঠাৎ একদিন বৃষ্টির তোড়ে সব ভেসে যায়।  টিনের চালে ঝুপঝাপ, শীত শেষের বৃষ্টি, ভেজা কাপরের স্যাতস্যাতে গন্ধ। নিমকহারামের দল সেই বৃষ্টির তোড়ে ভুলেই যায় ঝগড়ুটে ঝন্টু মালীর কথা। তার কণ্ঠও কেমন বৃষ্টির ঝুপুর ঝাপুর বেতাল সুরে হারিয়ে যায়।  
আর দু’দিনের অসময়ের বৃষ্টি শেষে, যেই জানালার ওপার স্বচ্ছ হয়েছে, তাতে আড়মোড়া ভাঙছে বসন্ত।  গাঁদা উঁকিঝুঁকি লুকোচুরি খেলে। নয়নতারা  জাগছে, পলাশ কেমন কমলায় খেলছে।  আর ঝন্টু মালী, বৃষ্টিতে, জলে-মাটিতে  সবুজ পাতায় মাখামাখি।  
জানালার ওপারে যতটুকুতে বসন্ত দেখা যাচ্ছে, এক বালতি সবুজ রং যেন উপচে ঢেলে দিয়েছে তাতে। নিখাদ গাঢ় রং।  দিন এগুচ্ছে, বৃষ্টি শেষ।  ঝন্টু মালীর বাজখাই চিৎকার, “কইরে ফইন্নির পুত, আবার  ফুল ছিড়স?” পাতা ধরে  ঝগড়ার এমন দিনে,  ডিমের  কুসুমের মতন একখান বসন্ত ফুটছে।  ভাগ্যিস আউল বাউল চিন্তার কোন পাসপোর্ট লাগেনা।  তাই এমন স্বচ্ছ দিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে, আমি তার নাম দিলাম ‘ইরাবতী দিন’। 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>