Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

জগদীশ গুপ্তের তিনটি গদ্য

Reading Time: 6 minutes

গল্প কেন লিখিলাম

এত লোক থাকিতে আমারই এই গল্পগুলি লিখিবার কি দরকার পড়িয়াছিল তাহার একটু ইতিহাস আছে।… সেই অনাদি নর ও নারী।

আমার স্ত্রী আলসে মানুষ দু’চক্ষে দেখিতে পারেন না। আমি হাত পা গুটাইয়া নিস্তব্ধ হইয়া বসিয়া আছি দেখিলেই তিনি আমার হাতে একটি পয়সা দিয়া বাজারে পাঠাইয়া দেন; বলেন, ধনে নিয়ে এস; কোনোদিন বলেন, পান; কোনোদিন, কাঁচালঙ্কা; কোনোদিন, সোডা; কোনোদিন, মউরি; কোনোদিন আর কিছু।… কিন্তু ঐ এক পয়সার; কোনোদিন তার বেশী নয়।

হঠাৎ একদিন আপত্তি করিয়া বসিলাম, এবং আমার সে দুর্মতির শাস্তি তিনি হাতে হাতেই দিলেন; তাঁর সেই অননুকরণীয় ভ্রূভঙ্গী সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিল; বলিলেন, – আর কোনো উপকার না হোক, বাতের হাত থেকে বাঁচবে।[pullquote][AWD_comments][/pullquote]

পয়সাটি হাতে করিয়া ধনে আনিতে রওনা হইলাম।… আসা-যাওয়ার বাজার সওয়া ঘণ্টার পথ; এবং পথের সমস্তটাই বাত-নিবারক।

এমনি করিয়া অমূলক বাতের ভয়ে বাজারে হাঁটিতে হাঁটিতে হঠাৎ ফাঁকি দিবার একটি ফন্দি মিলিয়া গেল।…

পরদিনই কাগজ আর পেন্সিল লইয়া উদ্ধনেত্র এবং চিন্তাগ্রস্থ হইয়া বসিলাম, এবং বসিয়াই রহিলাম।… প্রিয়ম্বদা ঘরে ঢুকিয়া লিখিবার সারঞ্জামগুলি লক্ষ্য করিয়া বলিলেন, – ও-গুলো নিয়ে কি হচ্ছে?

উদ্ধনেত্র তাঁহার দিকে নামাইয়া মনে মনে হাসিয়া বলিলাম, – বাজারে আর যাচ্ছিনে। – প্রকাশ্যে বলিলাম, – একটা গল্পের কথা ভাবছি।

… এবং, প্রিয়ম্বদার ঠোঁটের কোণে হাসির উদয়শিখরে অতিশয় তীক্ষ্ম হাসির একটি অঙ্কুর উঠিতে দেখিয়াই মনের লঘু ভাবটা একনিমিয়ে কাটিয়া গেল; তাড়াতাড়ি করিয়া বলিলাম, – সবাই ত’ গল্পটল্প লেখে দেখি, দেখি আমিও যদি দৈবাৎ পেরে উঠি – বলিয়া অত্যন্ত কাপুরুষের মত শুষ্কমুখে তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিলাম, যেন গল্প লিখিতে পারিয়া উঠিব কি না সেই মুহূর্ত্তে সেইটাই আমার নিদারুণ ভাবনা।

…কিন্তু আসল কথা, আসা-যাওয়ার বাজার পুরো সওয়া ঘণ্টার পথ, এবং বাতের ভয় আমার নাই।

কি ভাবিয়া প্রিয়ম্বদা আমাকে সে-যাত্রা ক্ষমা করিয়া ফিরিয়া গেলেন।

* * *

হঠাৎ এক ধাক্কা –

ধড়ফড় করিয়া উঠিয়া বসিয়া দেখিলাম, প্রিয়ম্বদা সম্মুখে দাঁড়াইয়া হাসিতেছেন।

চারুবালা ও তাঁর স্বামী জগদীশ গুপ্ত

চারুবালা ও তাঁর স্বামী জগদীশ গুপ্ত

বলিলাম, – একটু তন্দ্রামত এসেছিল। – বলিয়া এমনি করিয়া একটু হাসিবার চেষ্টা করিলাম, যাহার মত হৃদয়বিদারক ব্যাপার জগতে খুব কম ঘটে।

গল্পের প্লট যাহার উপর লিপিবদ্ধ করিবার অভিপ্রায় ছিল, সেই কাগজখানা প্রিয়ম্বদা ফস করিয়া টানিয়া লইয়া সশব্দে পড়িতে লাগিলেন, – শ্রীশ্রীদুর্গাপূজার ঘটনা, হাইকোর্ট; ওয়াটার-টাওয়ার; এক পয়সার মিঠেকড়া তামাক; ঢোঁড়া মিয়া; মালিনী তোর রঙ্গ দেখে অঙ্গ জ্বলে যায়; পয়সার দুটো শঁশা, বিভূতি চৌধুরী, রামনবমী; তারি সনে দেখা হ’লে; হাতুড়ে…

টানিয়া টানিয়া পড়িতে লাগিলেন; আর, আমার মনে হইতে লাগিল মানুষের সব দুর্গতিরই যদি সীমা থাকে তবে তা আসিতে কত দেরী? –

–    এ-সব গল্প বিলেত পাঠাবে না দেশী কাগজেই দেবে? বলিয়া কাগজখানা আমার পাশে ছুড়িয়া দিয়া প্রিয়ম্বদা চলিয়া গেলেন। –

ঘাড়ের উপর জগদ্দল বিপদের পাথর চাপিয়া রহিল, কিন্তু দমিলাম না, – বহুক্লেশে পাঁচদিনের দিন গল্প একটী তৈরী হইল; এবং তাহাকেই অবলম্বন করিয়া আরো চারদিন বাজারকে ফাঁকি দিলাম। –

কিন্তু সে যন্ত্রণাও ভুলিবার নয়।

এই হইল সুরু; এবং এখনও সেইভাবে চলিতেছে। – বসিয়া বসিয়া খুঁটি ঠেস দিয়া কলম নাড়িয়া যদি ফাঁকি দেওয়া যায় তবে কে এখন ধনে আনিতে বাজারে দৌড়ায়? –

যাহার জন্মের ইতিহাস এইরকম সে যে মানুষকে আনন্দ দিবে, নূতন কিছু দিবে সে বিশ্বাস আমার কদাপি নাই।

আমার দুইটি অশেষ হিতৈষী পরমবন্ধুর সহায়তায় এই গ্রন্থ i মুদ্রিত হইল; শ্রীযুত শান্তিরাম চক্রবর্ত্তী মহাশয়ের উদ্যোগ এবং শ্রীযুত ব্রজজনবল্লভ বসু মহাশয়ের অর্থানুকুল্য। আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং শুভেচ্ছা তাঁহারা গ্রহণ করুন।

আবরণপত্রের চিত্রখানি পরিকল্পনা করিয়াছেন প্রসিদ্ধ শিল্পী শ্রীযুক্ত দীনেশরঞ্জন দাস। আমি তাঁহার নিকট ঋণী রহিলাম।

বোলপুর

১২ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৪।

ভূমিকা (স্ব-নির্বাচিত গল্প)

কবে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলাম, কবে গল্প লিখতে শুরু করি, অর্থাৎ “ইনি জগদীশবাবু, গল্প-টল্প লেখেন”, এই গৌরবমূলক পরিচয়ের সূত্রপাত হয়, প্রথম গল্প কোনটা, প্রথম বই কোনখানা, কত বয়সে লিখিতে আরম্ভ করি, কি অনুপ্রেরণার বশে কলম ধরি, বাতিকে না তাগিদে, ইত্যাদি বিষয়ের সঙ্গে আমার লেখা এবং আমি সংশ্লিষ্ট বলিয়া মনে করি না; কারণ ঐসব সংবাদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কিছু নাই, যে-মানুষের পরের ঘরের খবর জানার কৌতুহল দিবারাত্র অস্থির ঠেকে তারও আমার জন্মতারিখ জানার কৌতুহল থাকা সম্ভব নয়। আমার লেখা ভাল লাগিলে পাঠক তাহা গ্রহণ এবং স্বীকার করিবেন – ভাল না লাগিলে নাকচ করিয়া দিবেন – গণনার ভিতর আনিবেন না। পাঠকের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কেবল ঐটুকু – তদরিক্ত কিছু চিন্তা বা অনুভব আমিই করি না – পাঠক করিবেন কেন?

আমি কেন লিখি বিচার্য বিষয় হইবে তাহাই। দেশের সেবা করিতে যাইয়া জেল খাটিয়াছি কি না, গ্রামোন্নয়নের কাজে নিজেকে একদা নিযুক্ত করিয়াছিলাম কি না, সমগ্র ভারত ভ্রমণ করিয়াছি কি না, দরিদ্রগণে যথাসাধ্য ভরণ করিয়াছি কি না, কোনো মহৎ উদ্দেশ্যে যথেষ্ঠ ত্যাগ স্বীকার করিয়াছি কি না, এ-সবও অবান্তর। আমার লেখা পড়িবার সময় আমার সর্বাঙ্গীণতা ও সর্ব্বজনীনতা, অনুভূতির প্রখরতা, প্রকাশের ভঙ্গি, বিষয়বস্তুর আশ্রয়ে ভাবাভিব্যক্তির উৎকর্ষ, ইত্যাদি গুণাগুণ পাঠক লক্ষ্য করিবেন, এবং লক্ষ্য করিবেন, জীবন্ত কোনো রসাশ্রিত সামগ্রী আমি তাঁহাদের উপভোগের জন্য দিতে পারিয়াছি কি না। আমার জন্মের ও প্রথম বই-প্রকাশের সন-তারিখ, আর, বইয়ের তালিকা কোনোই কাজে লাগিবে না যদি লেখা ভাল না হয় – তা ব্যর্থ হইবেই।

শ্রদ্ধেয় অচিন্ত্যবাবু ১৩৫৬/অগ্রহায়ণের পূর্বাশায় প্রকাশিত “কল্লোল-যুগ” প্রবন্ধে একটি অকপট সত্য অতি সুন্দর করিয়া বলিয়াছেন। জগদীশবাবু সাহিত্যক্ষেত্রে বিচরণশীল অনেকের কাছেই “অনুপস্থিত”। এই একটি শব্দ, “অনুপস্থিত” শব্দটি, আমার সঙ্গে পাঠকের যোগরেখা চমৎকার নির্বিশেষভাবে দেখাইয়া দিয়াছে। একটি শব্দের দ্বারা এতটা সত্যের উদ্ঘাটন আমার পক্ষে ভয়াবহ হইলেও আনন্দপ্রদ। সরল ভাষায় কথাটার অর্থ এ-ই যে, অনেকেই আমার নাম শোনেন নাই। কাজেই অত্যন্ত আনন্দের সহিত বলিতেছি যে, যাহাদের কাছে আমি “অনুপস্থিত” তাঁহাদের সম্মুখে, “এই নিন্ আমার জন্মতারিখ আর বইয়ের লিষ্ট” বলিয়া আচমকা লাফাইয়া পড়িতে আমি পারি না। লেখা পড়াইয়া সন্তোষবিধান ব্যতীত নিজের খবর আর তথ্য জানাইয়া তাঁদের কৃতার্থ করিবার দায়িত্ব আমার নাই।

নিজের সম্বন্ধে আমি যতই ফেনাইয়া ফাঁপাইয়া ফলাইয়া লিখি না কেন কোনো সুরুচিসম্পন্ন ব্যক্তি তাহা গ্রহণ করিবেন না; হয়থ হাসিবেন এবং হাসাহাসি করিবেন। আর, “অনুপস্থিত” লোকের হঠাৎ আসিয়া গাম্ভীর্যের সঙ্গে বাগাড়ম্বরপূর্বক সাহিত্যের প্রয়েজনীয়তা, কার্য্যকারিতা, দায়িত্ব, স্থায়িত্ব, উদ্দেশ্য প্রভৃতির ব্যাখ্যা করা হইবে ততোধিক হাস্যের কারণ।

তবে, একেবারেই যে খবর নাই, কিম্বা সব খবরই যে বলিতে আমি অনিচ্ছুক এমন নয়। একটি খবর দিব।

বোলপুর টাউনে গেলাম। কিছুদিন পরেই মাসিকপত্রের মাধ্যমেক্রমে কানাকানি হইয়া গেল যে, আমি একজন লেখক। দু’টি বন্ধু পাইলামঃ শ্রীভোলানাথ সেনগুপ্ত ও শ্রীশান্তিরাম চক্রবর্ত্তী। তৎপূর্বেই ভোলানাথবাবু তাঁল সুপাঠ্য “গোরুর গাড়ী” কাব্য ছাপাইয়াছেন। ঐ দু’টি বন্ধুর মানুষের অন্তরের তত্ত্ব হৃদয়ঙ্গম করার অসাধারণ শক্তি দেখিয়া এবং তাঁদের রসাল রসিকতায় ভারী মুগ্ধ হইয়া গেলাম। তাঁহারাই একদিন প্রস্তাব করিলেনঃ গল্পের বই করুন একখানা।

জানাইলাম, প্রকাশক পাইব না।

সেখানেই উপস্থিত ছিলেন সেখানকার কানুবাবু – শ্রীব্রজজনবল্লভ বসু। তিনি জানিতে চাহিলেনঃ ছাপতে কত টাকা লাগতে পারে?

বলিলাম, শ’আড়াই।

–    আমি দেব। ছাপুন।

কানুবাবু যথাসময়ে টাকাটা দিলেন – ‘বিনোদিনী’ গল্পের বই ছাপা হইল।

৩০/৩৫ খানা বই এঁ-কে ওঁ-কে দিলাম; অবশিষ্ট হাজারখানেক বই, আমার আর কানুবাবুর “বিনোদনী”, প্যাকিং-ব্যাক্সের ভিতর রহিয়া গেল; পরে কীটে খাইল।

লেখক এবং সমাজিক মানুষ হিসাবে আমার আর কোনো অনুশোচনা নাই, কেবল মানসিক এই গ্লানিটা আছে যে, কানুবাবুর শ’আড়াই টাকা নষ্ট করিয়াছি।

আমার নিজের সম্বন্ধে আর একটি কথা এ-ই যে, আমি যদি তখন মরি তবে যাঁহারা আমাকে চেনেন তাঁহারা বলিবেনঃ “বয়েস পেয়েই গেছেন।”

 

ফিলজফির বুদ্বুদ

কোথাও কোথাও ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য দাঁড়াইয়াছে ইহাই যে তাহার মানুষগুলি চমৎকার গা-আলগা বেপরোয়াভাবে দুনিয়ার গতিক লক্ষ্য করিয়া চলে ফেরে; সবাই তারা ফিলজফার। সত্যিকার ফিলজফারের কি লক্ষণ কে জানে, কিন্তু ইহারা আপনা আপনির ভিতর খুব জ্ঞানীর মত কথা কয়; সেই জ্ঞানের কথায় করুণরস এমন ভাবে মিশ্রিত থাকে যে কথাগুলি যেমন দমে ভারি তেমনি আর্দ্র হইয়া খামোকা মনের উপর হাঁটু দিয়া চাপিয়া পড়ে।

এই ফিলজফিকে নির্জ্জীবতার কৈফিয়ৎ স্বরূপে যদি গ্রহণ করা যায় তবে তাহার একটা মানে দাঁড়ায় বটে, কিন্তু কোনোদিকেই প্রেরণা অনুভূত হয় না। – জগতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা না করিয়া তাহাকে দানে সার্থক করিবার আশা যেমন ভুল তেমনি অহৈতুকী; কারণ আক্রোশ করিয়া খাপছাড়া হইয়া উঠিলে নূতনত্বের সাময়িক একটা মোহ ঘটাইতে হয়তো পারা যায়; কিন্তু বস্তুরূপের বাহিরে যে অন্তরলোক, তাহাকেও জাগতিক মাধ্যাকর্ষণের বাহিরে লওয়া যায় না। – কেবলি কেন্দ্রের দিকে টান পড়িতেছে; একটু উঁচুতে উঠিলেই দশজনের নজরে পড়ে; কিন্তু নামিয়া পড়িতেও দেরী হয় না; অর্থাৎ স্বভাবকে অতিক্রম করিয়া সৃষ্টির চেষ্টা ব্যর্থ হইবেই।–

উত্তরে হয়তো বলা যায়, যে-সৃষ্টি কেবল মাটিকেই চেনে, আর মাটির সঙ্গে সম্পর্ক ঘুচাইবার সাহস যার নাই, তাহার মাটি হইয়া যাইবার পক্ষে কোনো বাধাই নাই। আমরা তাই কল্পলোকে বাগিচা কেয়ারী করিতে বসিয়াছি। যদি জগতের মন এতই অবোধ আর ইতর হয় যে, তাহাকে টানিয়া নামাইতে হাত বাড়ায় তবে জগতকেই কৃপার চক্ষে দেখা ছাড়া আমাদের কিছু বলিবার নাই। জগত আত্মঘাতী হইতে পারে; তাই বলিয়া আমরা কেন আকাশের আলোবায়ুউত্তাপের মাঝে জীবনের রস খুঁজিয়া অমর হইয়া থাকিতে চাহিব না!

উত্তম। ইহা জীবনের ফিলজফির উচ্চ আদর্শ হইতে পারে; গল্প-সাহিত্যের নহে। গল্প-সাহিত্যেরও ফিলজফি আছে, কিন্তু আকাশস্থ নিরালম্ব হইয়া নাই। বহুঊর্দ্ধে ফুল ফুটিয়া আছে দেখিয়া আনন্দ বা আমোদ পাইলে আপত্তির কিছু নাই; কিন্তু, যে-মূল বহুনিম্নে নামিয়া যাইযা ফুলটির দলে দলে তার ক্ষুদ্রতম পরাগে পর্য্যন্ত রসধারা অবিরাম প্রেরণ করিতেছে তাহাকে ভুলিলে ঠকিতে হইবে। অর্থাৎ গল্প-সাহিত্যে এমন কিছু না থাকাই উচিত যাহা বাস্তবজীবনের রসের দ্বারা পুষ্ট নহে।

ফিলজফির প্রধান দোষ এই যে, গল্পে প্রবেশ করিলে সে কথাবস্তুকে আবৃত করিয়া চলিতে থাকে, এবং তাহার পায়ের ফাঁকে ফাঁকে যতটুকু কথার অবয়বের সাক্ষাৎ পাওয়া যায় ততটুকুই বহনক্লেশে যেন ক্লান্ত আর বিমর্ষ।

মেঘলা দিনের অপার দুর্ভাগ্যে কেবল মুখ আঁধার করিয়া থাকিলে মানুষের জীবন কত নিঃস্পৃহ হইয়া নিজের ভারেই তলাইয়া যাইতে থাকে তাহা কল্পনা করা কঠিন নয়। দৈন্যের ফিলজফি বিদেশ হইতে আসিয়াছে; এবং অতি সহজেই তাহা মনটাকে জড়াইয়া ধরিয়াছে; আর ধরিয়াই আছে কেবল এই কারণে যে, নানাদিক্ দিয়া জীবনের স্বাদগ্রহণের ক্ষমতা দেশ হারাইয়া ফেলিয়াছে। বিদেশে যে ফিলজফি জীবনের উপলদ্ধির ভিতর সত্য হইয়া উঠিয়াছে এখানে তাহা হয় নাই – অনুভূতির প্রখরতা নাই বলিয়া, আর অভিজ্ঞতার অভাবে; এবং ঐ জিনিষটা তাই এখানকার আবহাওয়ার মাটির জিনিষ না হইয়া ফুসফুসের ফুৎকারে বুদ্বুদের মত আকাশময় ঘুরিয়া বেড়াইতেছে।–

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>