জানা অজানায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Reading Time: 2 minutes
রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্য এবং সংগীতে নতুন মাত্রা যোগ করেন। যার স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯১৩ সালে প্রথম ভারতীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি ধ্রপদী সংস্কৃতিকে ভিত্তি করে নতুন ধারার যে গদ্য কবিতা রচনা করেন তা তৎকালীন সাহিত্যকে ঐত্যিহ্যিক গণ্ডী থেকে মুক্তি দিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে এই তথ্যগুলো কি আপনার জানা আছে:
১. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই একমাত্র কবি যিনি দুটি দেশের জাতীয় সংগীত লেখার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। তাঁর ‘জনগণমন’ শিরোনামের গানটি ভারতের এবং ‘আমার সোনার বাংলা’ শিরোনামের গানটি বাংলাদেশে জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচিত হয়।
২. ২০০৪ সালে রবীন্দ্রনাথের নোবেল পদকটি শান্তিনিকেতনের উত্তরায়ণ কমপ্লেক্সের জাদুঘর থেকে চুরি হয়। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকবির শততম জন্মবার্ষিকীতে নোবেল ফাউন্ডেশন তাঁর নামে একটি নতুন পদক ইস্যু করে।
৩. রবীন্দ্রনাথ হিমালয়ে অবকাশ কাটাতে ভালোবাসতেন। তাঁর হিমালয়ে ভ্রমণের সূত্র তাঁর মেয়ে রেনুকা। রেনুকা টিবি বা যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকরা তাঁকে বিশুদ্ধ বাতাসের কোনো যায়গায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তখন রবীন্দ্রনাথ ১৯০৩ সালে রেনুকাকে নিয়ে হিমালয়ের রামগড়ে গমন করেন। সেখানে অবস্থানকালেই তিনি তার ‘শিশু’ শিরোনামের কবিতা সংকলনের জন্য কবিতা লিখেন। রেনুকার অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়লে তিনি আবার কলকাতায় ফিরে আসেন। ১৯১৪ সালে রেনুকা মারা গেলে তিনি পুনরায় রামগড়ে পাড়ি জমান। আর এখানে বসেই তিনি ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের কিছু অংশ রচনা করেন। আর এই কাব্যগ্রন্থের জন্যই তিনি নোবেল জয় করেন। রামগড়ের যে স্থানে তিনি থাকতেন সেই স্থান এখন ‘টাগোর টপ’ বা ‘ঠাকুর চূড়া’ নামেই পরিচিত।
৪. ১৩ ভাইবোনের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সবার ছোট। তিনি স্কুল বা প্রথাগত শিক্ষা এড়িয়ে চলতে চাইতেন। তাই তার পড়াশোনার দায়িত্ব নেন তার বড় ভাই হেমেন্দ্রনাথ। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি রবীন্দ্রনাথকে জুডো, জিমন্যাস্টিক এবং কুস্তিও শেখাতেন। প্রথাগত শিক্ষার প্রতি উদাসীন রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনে মাত্র একদিন স্থানীয় প্রেসিডেন্সি কলেজে গিয়েছিলেন।
৫. মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৭ সালে ১৬ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এই বয়স থেকেই তিনি স্বনামে ছোট গল্প এবং নাটক লেখা শুরু করেন।
৬. রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে প্রথমবারের মতো আধ্যাত্মিক চেতনা এবং প্রেমের সম্মিলন ঘটান। সেসব রচনার উদ্দেশ্য ছিল আত্মার শান্তি এবং পরকালীন মুক্তি। তাঁর রচনা উইলিয়াম বাটলার ইয়েটসের রচনার প্রভাব ছিল।
৭. জাতীয় এবং জাতীয়তা সম্পর্কে কবিগুরুর চিন্তাভাবনা ছিল ঐতিহাসিক। তিনি বলেছিলেন, ‘সামাজিক জীব হিসেবে জাতীয়তা যেমনি মত প্রকাশের অবাধ মাধ্যম তেমনি মানবতার প্রতি বিপজ্জনকও বটে।’ আমেরিকায় ১৯১৬-১৭ সালে জাতীয়তার ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি পশ্চিমাদের এত হাত নেন। তিনি সরাসরি ‘পাশ্চাত্য পূজা’র নিন্দা জানিয়েছিলেন।
৮. রবীন্দ্রনাথ ভ্রমণপিপাসু ছিলেন। বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন জাতির সামাজিক-রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে জানার কৌতূহল ছিল তাঁর। ‘ডিসকোভারি অব ইন্ডিয়া’ বইয়ে জওয়াহেরলাল নেহেরু তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন, ‘তিনি ছিলেন ভারতের আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। যিনি আন্তর্জাতিক শক্তির সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করায় বিশ্বাসী ছিলেন। যিনি ভারতবর্ষের বার্তা সারা বিশ্বে এবং বিশ্বের বার্তা ভারতবাসীর কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন।’
৯. ৬০ বছর বয়সে এসে তিনি ছবি আঁকায় মনোনিবেশ করেন। তার আঁকা ছবি দিয়ে বেশ কয়েকটি সফল প্রদর্শনীও হয়েছে। তার আঁকা ছবিতে উত্তরের নিউ আয়ারল্যান্ডের প্রভাব লক্ষ করা যায়।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>