| 19 এপ্রিল 2024
Categories
সাক্ষাৎকার সাহিত্য

ঝুম্পা লাহিড়ীর সাক্ষাৎকার

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

“যখন আপনি প্রেমে পড়বেন, তখন চিরকাল বেঁচে থাকতে চাইবেন। আপনি আবেগ উত্তেজনার শেষ বিন্দুটুকু অনুভব করতে চাইবেন। ইতালিয়ান ভাষায় পড়তে গিয়ে আমার এমনই অনুভব হচ্ছিল। আমি মরতে চাই না, কেননা আমার মৃত্যুর অর্থ হবে ভাষা আবিস্কারের অবসান। কারণ প্রতিদিনই নতুন নতুন শব্দ শেখার আছে। এভাবেই সত্যিকারের ভালবাসা চিরন্তন হয়”।

ঝুম্পা লাহিড়ী তাঁর জমকালো স্মৃতিকথা ইন আদার ওয়ার্ডস সম্পর্কে এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে। বইটি তিনি লিখেছেন ইটালিয়ান ভাষায়।
ঝুম্পার বাবা মায়ের ভাষা ছিল বাংলা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রথম ইংল্যান্ডে যান সপরিবারে , এখানেই লন্ডন শহরে জন্ম হয় নীলাঞ্জনা সুদেষ্ণা’র। হ্যাঁ, ঝুম্পা লাহিড়ীর ওটাই ছিল জন্ম নাম, কিন্তু পরিচিতি পেলেন ডাকনামে। কেননা ঐ নামটার উচ্চারণ সহজ ছিল না ইংরেজি ভাষাভাষীদের কাছে। তারপর বাবা মায়ের সাথে আমেরিকায় অভিবাসন ও বেড়ে ওঠা। তবে কোলকাতায় নিয়মিত আসা যাওয়া লেগেই থাকত ঝুম্পার। কারণ বাবা মা সবসময় চাইতেন তাদের সন্তান নিজের সংস্কৃতিকে জানুক। তাই ছোটবেলা থেকেই বাংলা ও ইংরেজি এই দুই ভাষার সান্নিধ্যেই বড় হয়েছেন এই ভারতীয়-মার্কিন লেখক। যদিও তিনি খুব ভালভাবে বাংলা লিখতে পড়তে পারেন না, তবুও ছোটবেলায় মাকে দেখেছেন বাংলায় কবিতা লিখতে। যখন বয়স ৩২ তখন ইংরেজি ভাষায় লেখা প্রথম বই ইন্টারপ্রেটার অফ মালাদিস-এর জন্য পেলেন পুলিৎজার পুরস্কার। এরপরের বইটি দ্য নেমসেক নিউইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলার, এমনকি একই নামে একটি চলচ্চিত্রও তৈরি হয়েছিল। ইংরেজিতে লেখা সর্বশেষ দ্য লো ল্যান্ড বইটিও দারুন জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

আর ৪৮ বছরের ঝুম্পা লিখেছেন ভিন্ন এক ভাষায়। স্প্যানিশ স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে বর্তমানে রোমে বাস করছেন ঝুম্পা লাহিড়ী। ইতালিতে তাঁর বসবাসের প্রথমদিককার দিনগুলোর স্মৃতি নিয়ে লিখেছেন In Altre Parole যার ইংরেজী অর্থ হচ্ছে In Other Words ।

এই সাক্ষাৎকারটি ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এ ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়েছিল।

এই মুহূর্তে কোন বইটি পড়ছেন? আপনি কি একসঙ্গে একাধিক বই পড়েন?

প্যাত্রিসা ক্যাভালি’র কবিতা পড়ছি আজকাল, ইতালির রোমে যার সঙ্গে পরিচয় হওয়াটা ছিল আমার জন্য খুব আনন্দের। আমি মুগ্ধ হয়েছি তাঁর প্রখর ব্যক্তিত্বে এবং তা আমার শ্রদ্ধা বাড়িয়েছে। তাঁর কবিতা মনে দোলা দেয়। আমাদের আকাঙ্ক্ষাগুলির এমন বর্ণনা করেছেন যা অন্য কারও সাথে মিলে না। আমি তাঁর কবিতার ইতালিয়-ইংরেজি’র একটি দ্বিভাষিক সংস্করণের জন্য শিহরিত হচ্ছি, বইটি এই শরতে আমেরিকা থেকে প্রকাশিত হতে চলেছে। এছাড়া আমি এখন পড়ছি চেসারে পাভিসি’র চিঠিপত্র, উপন্যাস আর চলচ্চিত্রের আশ্চর্য মিশ্রণে লেখা পাসোলিনি’র ‘তিওরেমা’। এভাবে আমি কবিতা, ফিকশন, চিঠিপত্র, লেখকের নোটবুক এমন অনেককিছুই একসঙ্গে পড়াতে ভালবাসি এবং দারুণ উপভোগ ও করি।

 

এ-বছর এখন পর্যন্ত পড়া কোন বইটি আপনার বিবেচনায় সেরা?

এ বছর এখন পর্যন্ত যা পড়েছি তার মধ্যে ‘লাভার্স’ উপন্যাসটিই আমার কাছে সেরা। ‘লাভার্স’এর লেখক ড্যানিয়েল আরসান্ড একজন ফরাসি। উপন্যাসটি প্রথমে আমি ইংরেজি অনুবাদে পড়েছি, তারপর ইতালি’র ভাষায়। এ এমন এক মর্মভেদী প্রেমের উপাখ্যান যা মিশে আছে তাৎপর্যপূর্ণ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে। বইটির কোথাও লেখাকে অতিকথনের ভার ন্যুব্জ করেনি, ন্যারেটিভের আশ্চর্য কারুকাজ আছে। আমি এই বইয়ে খুঁজে পেয়েছি সাহিত্যপাঠের এক অনাস্বাদিত আনন্দ, গদ্যের ম্যাজিক, এবং এক ব্যতিক্রমী স্বর। একটি গল্পকে যে কতভাবে বলা যায়- এই ব্যাপারে বইটি আমাকে পথ দেখাবে।

 

যদি প্রিয় ঔপন্যাসিকের নাম বলতে হয়, কার নামটি বলবেন?

টমাস হার্ডি। হাইস্কুলে থাকতে তাকে প্রথম পড়ার পর থেকেই আমি তাঁর চরিত্র, স্থান-কাল, মানবজমিনের প্রতি তার নিষ্করুণ দৃষ্টিভঙ্গি- এইসব বিষয়ের সঙ্গে গভীর আত্মীয়তার সম্পর্ক অনুভব করি। সুযোগ পেলেই আমি তাঁর লেখা পড়ি। এবং বারবার পড়ি। হার্ডির উপন্যাসের বিনির্মাণ চমৎকার। স্থান-কালের ধারণার ভিতর দিয়ে চরিত্রদের পরিভ্রমণকে তিনি স্মরণযোগ্য কুশলতায় নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। তিনি যে জগতটিকে গড়ে তোলেন তা সম্পূর্ণ নির্দিষ্ট, তার চিরচেনা, এ যেন তার নিজেরই মনোভূমি। বিষয়ের জটিলতা স্বত্ত্বেও তার গদ্য মসৃণ, অকপট, মিতবাক। কোনও একটি দৃশ্য, বর্ণনার খুঁটিনাটি, কিংবা একটি বাক্যও তিনি অপ্রয়োজনে লেখেন নি।

 

আর, আপনার প্রিয় গল্পকার?

সে তো অনেক লম্বা তালিকা। যেমন উইলিয়াম ট্রেভর, মাভিস গ্যালান্ট, গিনা ব্যারিওল্ট, ফ্ল্যানারি ও’কোনার, এলিস মুনরো, আন্তন চেখভ, শিড। তারপরও বলবো- একবার শুধু এডওয়ার্ড গোরে’র সঙ্গে তাঁর মৃত্যুর আগে দেখা করতে চাইবো আমি। শুধুমাত্র তাঁর প্রতিভার উজ্জ্বল দীপ্তিকে শেষবারের মতো স্যালুট জানানোর জন্য।

 

এখন কোন বইটি পড়বেন বলে ঠিক করেছেন?

আন্তোনিও তাবুচি’র ভ্রমণবিষয়ক লেখাগুলি পড়ব বলে ভাবছি।

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত