Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

জীবনানন্দ ও লেসবিয়ানিজম

Reading Time: 2 minutes

নিজের সময় থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন জীবনানন্দ দাশ। আমি আমার সমস্ত লেখায় বারবার এই কথাটাই বলতে চেয়েছি।বাংলা ভাষার প্রথম আভাঁ-গার্দ লেখক জীবনানন্দ দাশ।

লেসবিয়ানিজম সম্পর্কে নিশ্চয় সচেতন ছিলেন জীবনানন্দ দাশ।

জীবনানন্দ দাশের ‘কল্যাণী’ উপন্যাসের নায়িকার বাবা যখন নায়িকাকে বলে:

‘কোন মেয়ে তোমাকে চুমো দিল তাই নিয়ে তুমি কবিতা করতে আরম্ভ করলে।’

তখন ইঙ্গিতটি আমাদের কাছে অস্পষ্ট থাকে না।

তার আগে দেখি নায়িকার মেয়েদের বোর্ডিঙের আনন্দোচ্ছল জীবন।কোনও মেয়ে তাকে পড়তে দিচ্ছে ‘রেড লিলি’, কোনও মেয়ে ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’।আর সেই বিশেষ মেয়েটি নায়িকাকে পড়তে দেয় বার্নাড শ’র ‘Intelligent Woman’s Pride’!

নায়িকা বইটির গন্ধ শোঁকে।শুধু গন্ধ তো নয়।বইটির মধ্যে যে সেই বিশেষ মেয়েটির ‘নোট’ও আছে।অনেক বই ঘেঁটে অনেক বিদ্যাবুদ্ধি খরচ করে মেয়েটি যে নোট লিখেছে!

মেয়েটির কথা বলতে গিয়ে মাকড়সার প্রসঙ্গ এসেছে।ইঙ্গিত তো আরও আছে!দুটি মেয়ের কথোপকথন।

— পড়ব না আজ আর?
— না
— তুমি?
— আমিও না।…
— তোর টিকালো নাক কার কাছ থেকে পেয়েছিস — তোর মার কাছ থেকে?
—- বাবার কাছ থেকে।
—- এই চোখ?
—- বাবার কাছ থেকে।
—- এমন সুন্দর থুতনি?
—– বাবার কাছ থেকে।…

এসব প্রশ্নের গুখখুরি বুঝল সে।কাজেই আর নয় — ওর মুখের অনুপম রূপসৃষ্টির দিকে তাকিয়েই রইল সে।
ওর নিশ্বাস থেকে কেমন যেন মিষ্টি ঘ্রাণ আসছে।
— কি খেয়েছিস রে?
—- কখন?
—- মুখ থেকে তোর কিসের গন্ধ আসে?
—- জানি না তো।
—-জনিস না? সব সময়ই আমি পাই।
—- কিসের গন্ধ রে?
মেয়েটি উত্তর দিল না।সৌন্দর্যের রসের থেকেই এ যেন এক ঘ্রাণ।পদ্মের রক্তমাংস থেকে যেমন গভীর বিলাসের গন্ধ আসে তেমন।পদ্ম কি কিছু খায়?

একটা চুমো খাই তোকে?
চুমো সে খেল।
এমন পরিতৃপ্তি জীবনে সে কোনো দিনও পায়নি যেন।

আমরা জীবনানন্দর কবিতায় দুটো মেয়ের চপ্পল বদলের কথা পড়েছি।জীবনানন্দ নিশ্চয় সাফো পড়েছেন।পড়েছেন ডি.এইচ.লরেন্সের লেসবিয়ানিজম নিয়ে বিখ্যাত ‘ফক্স’ গল্পটি।এমনকি ১৯৩৩-এর আগে লেসবিয়ানিজম নিয়ে চিন্তাচর্চাও নিশ্চয় জীবনানন্দর অজানা নয়।

কবিতায় দেখি :

শহরের পথে দুটি মেয়েকে দেখলাম
মেয়ে নয় — দুটি মহিলাকে
বরং দুটি জীবনকে দেখলাম
একজনের লাল পেটিকোট তার শাড়ি ছাড়িয়ে
ফুটপাতের কাদা, কফ ও ঘাস ঘষে চলছে
পেটিকোটটা সে নিজেই কোনও কাঁচা রং দিয়ে লাল ক’রে নিয়েছে
হৃদয়ে তার লালরঙের পেটিকোট চায় ব’লে
আর একজন একজোড়া পুরুষের জুতো পায় দিয়েছে
জুতো পায়ে দেবার একান্ত প্রয়োজনে।
তারা যে হেঁটে চলেছে
তাদের অজ্ঞান সাহস ও সুস্থিরতা
পৃথিবীর ব্যথিত জ্ঞানের শিয়রে কোনও স্থিরতা দিল না
তারপর বড়ো রাস্তার ভিড়ের ভিতর হারিয়ে গেল
রাতের ঘুমের গহ্বরের ভিতর
রুগ্ন বিড়ালের ধূসর লেজ যেমন ফুরিয়ে যায়।

অত্যন্ত ইঙ্গিতপূর্ণ কবিতাটি আমাদের অবাক করে। এনার্কিজম, সুররিয়েলিজম থেকে শুরু করে এমন কোনও সাহিত্য আন্দোলন নেই যা জীবনানন্দকে স্পর্শ করেনি। আবার এই মানুষটাই দ্রোণ ফুল, সুদর্শন বা নিম ফুল নিয়ে কবিতা লিখেছেন। এক সর্বগ্রাসী ক্ষুধা নিয়ে যেন জন্মেছিলেন। নিটশে বলেছিলেন ‘ওভারম্যান’ -এর কথা, জার্মান শব্দ ‘উবারমেনশ’ থেকে। আমাদের জীবনানন্দ উবারমেনশ।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>