জীবনের নামতা

Reading Time: 2 minutes

শিশু একদিন আমাদের বলেছিল, মা, আমাদের সবার মা কি পৃথিবী?

হ্যাঁ

আর গাছের মা কে?

বৃষ্টি।

শিশু আন্তরিক সুরে বলল, তাহলে গাছের বাবা বোধহয় সূর্য।

 

দুনিয়ায় আসার পর আমরা অনেক ধনী ছিলাম, যদিও সে কথা বুঝতে আমাদের বড়ো হতে হয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্য ছিল, নির্ভাবনা ছিল, ছায়া ছিল।

নদীর মোহনায় এসে পুরো নদীর গতিপথ দেখতে পারা যায়।

এখন আমরা ধীরে ধীরে হতে পারি কারো ছায়া, কারো হাত-পা। কারো সূর্য আর কারো বৃষ্টি। আমরা কখনো এদের আলাদা করে দেখতে পেলাম না। আমাদের প্রকৃতি দুটোই করতে চেয়েছেন কিনা ঠিক বুঝতে পারি না। তবে আমরা আরো আরো বৃষ্টি হতে চাই।

বৃষ্টি নাকি মরে না।

 

আমি কখনো কাউকে সাহসী বা শক্ত হতে বলি না। প্রকৃতি আপনাআপনি যাদের পাঠান, তাদের বলার দরকার নেই, বললে তাদের সম্মান করা হয় না। আমি জানি মাটি ছাড়া একটা বটবৃক্ষের বীজও বৃক্ষের সম্মান পাবার যোগ্য।

কোনো এক সময় স্নেহবশত কারো উপকার করার ইচ্ছে থেকে আমি প্রতি সপ্তাহ ২০০০ মাইল পাড়ি দিতাম। এক বছর পরে প্রকৃতি আমাকে বারণ করতে চাইলেন বলে একটা কঠিন অসুখ দিলেন। আমি প্রকৃতির বারণ শুনলাম না। এভাবে আমি প্রতি সপ্তাহ যাতায়াত করতে লাগলাম। একবার পা ভেঙে যাবার পরও আমি যাতায়াত থামাইনি। প্রকৃতি আমাকে একবার গাড়ি চালানোর সময় অচেতন করে পরীক্ষা নিলেন, আমি তখন বুঝলাম তিনি থামতে বলছেন। ভালোবাসার নামে আত্মক্ষয় আমাকে সমস্যায় ফেলছে।

যা হোক, তখনো প্রকৃতির ভাষা আমি ভালো করে পড়তে শিখিনি। আমি শ্বাস নেবার জন্য হাঁপিয়ে উঠলাম। একজন পাহাড় সমান মানুষের কাছে ভাসতে ভাসতে এলাম। তাঁর কণ্ঠস্বর ধানক্ষেতের মধ্যে ধীর হাওয়া। তাঁর হাসি পাকা ধানে ছড়িয়ে যাওয়া সোনালি ঢেউ।

তিনি বলছিলেন, মানুষের নাকি মৃত্যু নেই। শুধু রূপ-পরিবর্তন আছে। চায়ের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন – সেই চায়ের মধ্যেই তো মেঘ। মেঘের কি মৃত্যু হয়?

মেঘ বৃষ্টির জল হয়ে নামে, নদীর কাছে, সাগরের কাছে, আবার মেঘ আকাশে ফিরে আসে।

 

সকল ভাবনাসম্পন্ন মানুষের মৃত্যচিন্তা থাকে। লোপ পাওয়ার চিন্তা। কিন্তু মৃত্যুর পরে তো চিন্তার আর কোনো অবকাশ নেই। তাই বেঁচে থাকতে থাকতেই এই সব ভাবনা মানুষ করে ফেলে। যে মানুষের মরণ আছে, তার দুরাশার জীবনও আছে। এক মুদ্রার এ পিঠ আর ও পিঠ। আমি শুধু মনে মনে জানি, আমাদের দেহ বাতাস, নদী, মেঘ, গাছের শিকড়ে ছাই হয়ে গেলে আমরা শান্তি পাবো। কেউ যদি মুদ্রিত করে এক জীবনের সুন্দরতার গল্প – সেই গল্পও হয়ত মেঘ হয়ে বৃষ্টি ঝরাতে পারে এক দিন।

 

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>