| 29 মার্চ 2024
Categories
দুই বাংলার গল্প সংখ্যা

না মানুষের আস্তানা

আনুমানিক পঠনকাল: 11 মিনিট

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.comগাংটেপাল এর গরু বাছুরগুলোকে বনের ভেতর এ গাছ, সে গাছের ফাঁকফোক্করে তাড়িয়ে তুড়িয়ে কোনমন্দে পাদ্রি সাহেবের বাঁধের পাড়ে ছেড়ে দিল জবরা। এতে ওর শরীরের কালঘাম ছুটে গেল। এ তো আর ফাঁকা ফৈফিক্কির ডাঙা ডহর নয়। এ হল বন।আর যা ঘন বন! দু’হাত দূরের মানুষকেও দেখা যায় না। এতগুলি গরু বাছুরকে সামলে সুমলে নিয়ে যাওয়া চাট্টিখানি কথা কি! যদি কোন রকম একটা গরু বা বাছুর গাছ-গাছালির আড়ালে,কিম্বা কোন লতাপাতায় আটকে থেকে যায় তো, ঘাড়ে বাঁশ, হাতে লন্ঠন! মাস মাইনে থেকে গরুর পুরো দাম, পাওনা গন্ডায় মিটিয়ে দিতে হবে মালিককে।কারণ, গরুগুলো তো আর জবরার নিজের নয়। এর তার গোয়ালের গরু।আলাদা আলাদা গোঁজ থেকে খুলে, এক জায়গায় জড়ো করতে হয় তবে না গাংটেপাল।

তো সেই গাংটেপাল এর গরুগুলোকে জবরা পাদ্রি সাহেবের বাঁধে এনে দিগদরিয়া ছেড়ে দিল। ছাড়বে না তো কি! বাচ্চা ছেলের মত ধুলো পদে ধপ করে বসে, পা হাত ছড়িয়ে, ধুলো বালির চিক তুলে তুলে দেওয়াল দিয়ে ঘর বানিয়ে, তার ওপর বাসন কুসন, থালা বাটি, ঘটি গেলাস, হাঁড়ি কুঁড়ি সাজিয়ে সুজিয়ে আর একটা সংসার পাতবে কি? দূর!একটা নিয়েই গলদঘর্ম। তাও সেখানি টিকল না। আবার রচে (ফের)দ্বিতিয়!

শালা, দশটা নয়, বিশটা নয়, কত কষ্ট করে একটামাত্র বিয়ে, তাও টিকল নাই। বাসন কুসন, কলসী গামলা রেখে, ছেড়ে ছুড়ে পালিয়ে গেল। তাও গেল তো গেল, যাবার সময় মুখে, একটাও কথা বলে গেল নাই। এ দুঃখ্য রাখে কোথায়! ঘরে? একটামাত্র ছাঁটবেড়ার ফুটো ফাটি দেওয়াল ঘিরা ঘর।সেই ঘরে এত দুঃখ্য থাকবার মত জায়গা হয় নাকি?

কদিনের মধ্যেই বৌটাকে বেশ ভালবেসে ফেলেছিল জবরা। চোখের পলকে দেখতে না পেলে, গুমরে গুমরে কাঁদত। একছুটে বাজার চলে যেত। বাজারে বৌ কাঠুরীর জন্য লুঙির ভেতর শাওয়া, ব্লাউজ, ব্রেসিয়ার প্যান্টি, এমন কি! ইমিটেশনের কপালের টাইরা, চুড়ি, গলার হার, টিপ, ঠোঁট পালিশ পর্যন্ত সবার চোখে ধুলো দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে ঘরে এনে হুড় (জমা) করত। সেইসব একেবারে ফালতু হয়ে গেল!

সাত সকালে কাঠুরী ঘাট বসার (প্রাতঃকৃত) লচনা (ভান) করে, ছেঁড়া উলুর ঝুলুর কাপড় পরে, সেই যে ঘাট বসতে গেল আর ফিরে এল নাই। একেবারে সোজা বাপের বাড়ি।সো-জা-আ-আ।

তবুও জবরা লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে, না হলেও বিশবার বৌকে আনতে শ্বশুরঘর গেছে। কিন্তু কোন বারই কাঠুরী না বৈ হ্যাঁ করল নাই।

শেষমেশ অনেক ভাবনা-চিন্তা করে, একপ্রকার বাধ্য হয়েই কাঠুরীর গ্রাম থেকে লম্বাঢেঙা, বেঁটেখাটো, রোগাপাতলা লোক এল দলে দলে। সম্পর্কের ছাড়বিড় করতে।অনেক আলাপ আলোচনা যুক্তি তর্ক করে, ছাড়বিড় হয়ে গেল। বর পণের ডবল জরিমানা দিয়ে, কোনরকম প্রাণে বাঁচল জবরা। মারকে মার, সঙ্গে পাঁচ সিকে গুনাকার!

তাতেও ক্ষান্ত হল নাই গ্রামের লোকগুলো।বিস্তর গাল বাপান্ত! ঝগড়াঝাঁটি  এমনকি হাতাহাতি করে শেষমেশ রফা হলো, কখনো কোন কস্মিনকালেও দৈবাত যদি দুজনের দেখাসাক্ষাত হয়ে যায় তো মুখ হাঁ করা চলবেক নাই। আর যদি মনগুমরে থাকতে না পেরে, মুখ ফস্কে কোন কথা বা প্রেমালাপ চালাচালি হয়েছে, তো সঙ্গে সঙ্গে আকাশ থেকে পিঠে কিল চড়ের শীলাবৃষ্টি পড়বে তখন। কি রাজি তো?

জবরা ঘাড় কাত করে ছিল, হ রাজি। রাজি হবেক নাই মানে! 

জবরা পাদ্রি সাহেবের বাঁধে গরুগুলোকে এনে হাইহিল্লা ছেড়ে দিল। নিজেও হাইহিল্লা দাঁড়িয়ে গেল, পাদ্রি সাহেবের বাঁধের জলের দিকে হেলে দাঁড়িয়ে যে মোলগাছটা (মহুলগাছ), সেই মোলগাছের ধ্যাবড়া ছাওয়ায়। ডান হাতে তার লম্বা দিগসই হেলেবাড়ি (লাঠি) আর বামহাতে শক্ত করে ধরা আছে ধার চকচকে হেতের (কাটারী)।বলা তো যায় না! বনে কখন কি বেরয়, না বেরয়।বাঘ না ভালুক, হাতি না ঘোড়া, শিয়াল না হুড়ার। এখানে হাঁ-মুখ জীবজন্তু থেকে একটু সাবধানে থাকায় ভাল।

জবরা মোলগাছে হেলে দাঁড়াল। দাঁড়াতেই বনের ভেতর থেকে ছুটে বেরিয়ে এল একটা ভেড়ুল (ঘূর্ণিবাতাস)।জবরাকে তাড়া করল।জবরাকে মাঝখানে রেখে ভেড়ুলটা পোঁ পোঁ ঘুরছে। বনের শুকনো লতাপাতা, শুকিয়ে দড়ি খ্যাংরাখ্যাং কাঠিখোঁচা, গরুবাছুর বা হাতিঘোড়ার পায়ের খুরে চ্যাপ্টে যাওয়া মিহি ধুলোবালি, সব ভেড়ুলটার সঙ্গে জবরার চারপাশে পৎ পৎ উড়ছে। বুকে পেটে ডাঁই ডাঁই ধাক্কা মারছে আর মুখেচোখে ভস ভস ধুলো ঢুকে যাচ্ছে কেবলই।

জবরা এক বেঁত (মুখ) থুতু পিচ করে হাতে ফেলল। তারপর বুকের মাঝখানে যে খদল, সেই খদলে ছিটিয়ে নিল পর পর তিনবার।থুতুর ভয়ে ভেড়ুলটা ছুটে পালাবার পথ পেল নাই। জবরা অঝরে খিস্তি ঝাড়ল, নচ্ছাড়, লাবড় মাগী! সোয়ামীর মাথাটা চিবিয়ে চিবিয়ে খেলি। তেমু (তবু) তুর খাওয়ার আশ মিটল নাই। আবার আমার মাথাটা খেতে আইচিস! হাতের হেতেরটা উঁচিয়ে দেখাল ভেড়ুলটাকে। দেকেচিস হেতেরটাকে? এক কোপে তুর বাঁশিপারা নাকটাকে হেনে (কেটে) দুব। সুপ্পনাকার মত নাককাটা যন্তনা নিয়ে, বনময় হ। দাদা, হ। দাদা… বলে বলে রোদন করে বেড়াবি। তুর তো আর আজ্যময় কুতাও দাদার অভাব নাই। হারামী মাগী কুতাকার!

ভেড়ুলটা ভয়ে ময়ে ছুটে পালিয়ে, কিছুক্ষণের মধ্যেই বনেই মিলিয়ে গেল। না হলে আরও কত কি কেচ্ছা কেলেঙ্কারি শুনতে হত!

জবরা হাঁটুটা সামনে দিকে মুড়ে, ডান পা’টা পেছন দিকে করে, মোলগাছে ঠেকাল।ঠেকাতেই পায়ের তলটা পিটপিট। পায়ের তল কি পিটপিট করে! পায়ের তলে যে হাজার বছরের হাজা বাসা বেঁধে দিব্বি বংশ বিস্তার করে বেঁচেবর্ত্তে আছে, সেই হাজাগুলো পিটপিট করল।

জবরা মোলগাছে হাজা ঘষছে। ঘষ-ঘষ ঘষ-ঘষ। এতে গাছটা দোলছে। শুধু গাছটা কেন?গাছটার ডাল, পাতা, পাতার শিরা উপশিরা, এমনকি গাছের তলের যে শিকড় -বাকড়, শিকড়-বাকড়ের ওপরে যে শক্ত সবুজ আবরণ, সেই সব একযোগে দোলছে। পড়ে যাবেক, গাছটা এক্ষুনি পড়ে যাবেক।

গাছটা দোলাতে দোলাতে, হেলেদুলে যদি মাটি সমেত সমুলে পড়েও যায়, তাতে জবরার কি! পায়ের হাজাগুলোকে সে তো আর পান সুপারী দিয়ে আমন্ত্রণ করে, ডেকে আনে নাই। বরঞ্চ হাজাগুলো বিনা আমন্ত্রনে পায়ের চামড়া ফুটে চোঁচাড়ে বেরিয়ে এসেছে। বেরিয়ে জবরাকে মরন যন্ত্রণা দিচ্ছে।

রোজ সকাল হল তো এর তার গোয়াল ঢুকতেই হয় জবরাকে। ঘুম ঘুম চোখে,মুখ চোখ কচলাতে কচলাতে গোয়ালের ঘুপচি অন্ধকারে কাচা গোবরে কেঁত কেঁত পা। শুধু কাচা গোবরে পা! আর গোয়ালের খানাডোবায় যে কলসী গোমুত,সেই গোমুতে প্রায়ই হাঁটু পর্যন্ত ডুবে যায় না কি। তাহলে গোবর আর গোমুতের সংমিশ্রনে কার পায়ে হাজা হয় না শুনি।

ওর ঘরে কে বা আছে,যে আদর সোহাগ কিম্বা প্রেম পিরিত মাখিয়ে মাখিয়ে, রোজ রোজ ঔষুধ মলম বা মালুইপুড়ার ছেঁকা দিয়ে দিয়ে, ওর রোগসজ্জার সেবা-শুশ্রূষা করবে। এক ছিল কাঠুরী। কিন্তু সে তো কবে, টা টা বাই বাই দিয়ে সম্পর্কের বিদায় ঘন্টা দিয়ে গেছে। সে থাকলে কি দিত নাই?হাজাগুলোর কি এত বাড়বাড়ন্ত হত? হত নাই। শুকনো মালুই এর (নারকেলের খোল) ভাঙ্গা তেভাঙ্গা টুকরোকে আগুনের শিষে ফেলে, তাতে আগুন ধরিয়ে, দাউ দাউ আগুনসহ মালুই এর টুকরোকে পাথরবাটি দিয়ে দেবে ধরে, বাটির ভেতর আগুন নিভলে পর, বাটির গায়ে গায়ে যে মালুইপুড়ার গরম ঘাম, সেই ঘাম আঙ্গুলের ডগে চেটে পুটে ছেঁক ছেঁক ছেঁকা দিত কাঠুরী। তাতেই হাজার দফা রফা। মা, কাকিমার বিধান দেওয়া ঔষুধ! এত তাড়াতাড়ি কি তার দব্যগুন নষ্ট হয়! কিন্তু ছেঁকা! দিবার যে, সেইই তো ঘরে নাই। তাহলে!

কাঠুরীর কথা মনে হওয়াতে তুসের আগুনের মত ওর মনটা ধীক ধীক পুড়ছে।বন পুড়লে সবাই দেখে,কিন্তু মন পুড়লে কে দেখে?

কি মনে করে গেছো ইঁদুরের মত জবরা তড়বড় গাছে ওঠে গেল।গাছে ওঠে গরুগুলো গুনছে, রাম দুই তিন…, এককুড়ি, দু’কুড়ি, তিনকুড়ি, চারকুড়ি পাঁচকুড়িং শ।শ এ শ এ মিলে গেল, পিজাপতি উড়ে গেল, ঢেকুর ঢাঁই ঢেকুর ঢাঁই।

ঢেকুর ঢাঁই করতে করতে পা দুটিকে একটা ডালে দুই দিকে মেলে দিল। দু’হাত দু’দিকে প্রসারিত করে, সামনের একটা মোটা ডালকে শক্ত করে ধরে খুব দোল খাচ্ছে জবরা। দোল দোল দোলানী/ রাঙা মাথায় চিরুনি/ বর আসবেক এক্ষুনি/ বরের নাম মোতি/ বাড়াও আরও জ্যোতি। যত সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, জবরা তত নিজেকে নিজেই দোলিয়ে নিজের জ্যোতি বাড়াচ্ছে। এ ছাড়া তো অন্য কোন উপায় নাই। কেউ কোনদিন ওর দেহ ধরে ওকে দোলিয়েছে কি? যদি বা একজন দোলানোর জন্য অকস্মাৎ এসে হাজির হয়েছিল, তো ঝড় উঠার আগেই খেল খতম!খতম ছাড়া আর কি। দেহের মানুষটা দেহে না থাকলে, বাঁচা মরা দুইই তো সমান। তাই নিজেকেই নিজে দোলাচ্ছে জবরা। এতে ও খুব সুখ পাচ্ছে।

দোল বন্ধ করে জবরা গাছের আরও মগডালে ওঠে গেল। মগডালে ওঠে বনের প্রান্তসীমা দেখছে। কত বড় বন! কোথাও বনের শেষ নেই যেন! দূরে, বহুদূরে নীল আকাশটা, যেন বনে এসে নেমে গেছে। বন আর আকাশ, দুই এ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। এই ভাবে চলতে চলতে, হাঁটতে হাঁটতে জবরা আর কাঠুরী দুইই মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতে পারত নাই কি?

বনের গাছগাছালির ফাঁকে ফাঁকে ধোয়ার মত দু’চারটা গ্রাম দেখা যাচ্ছে। উত্তরে পাটজোড়, রামপুর, হামিরহাটি। পাটজোড়ে ওর নিজের একখানা ছাঁটবেড়ার চালাঘর আছে। সেটাও এখন দূর আকাশে ধোয়া হয়ে গেছে। আর দক্ষিন পশ্চিম কোনে কোচডিহি, ভুলো, পাথরা। পাথরা গ্রামে ওর নিজের শ্বশুরবাড়ি। শ্বশুরবাড়ির টিন আর এ্যাডব্যাস্টারের ঘরগুলোকে দেশলাই বাক্সের মত ছোট ছোট দেখাচ্ছে।

জবরা গাছের মগডালে দাঁড়িয়ে গ্রামটাকে দেখছে। কেন দেখবে নাই? ঐ গ্রামেই যে কাঠুরী থাকে। যদি কোনমন্দে একবার,চএকটি বারের জন্য, ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে, উঁচু গাছের পানে চেয়ে, জবরাকে ঢ্যাপ করে চোখ মেরে দিয়ে যায়!চোখ মারার কথা মনে হতেই জবরা নিজ মনেই হো হো হেসে দিল। ন্না না, হাসি নয়, হাসি নয়, তীব্র রাগ। রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে গেল। লাল লাল চোখে, লুঙ্গিটা উপর দিকে তুলে ছন ছন মুতে দিল। মুতটা পাইপ বেয়ে, কাঠুরীর হাঁ বেঁতে ঠিক পড়ল তো?নাকী ডালে ধাক্কা পেয়ে, দর দর  বেগে, ডাল বেয়ে নিজের পরনের লুঙ্গীটাই ভিজিয়ে দিল?

লুঙ্গির ভিতর থেকে মুতের ঝাঁঝাল গন্ধ বেরিয়ে আসছে। তা সত্ত্বেও, এতে করেও আর একবার শ্বশুরঘর যেতে ইচ্ছা করছে।শ্বশুর ঘরে মুত্তে যেতে। মুতে ভাসিয়ে দিবেক পাথরার লোকগুলোকে, গ্রামের চালা-ঘরগুলোকে, বড় বড় অট্টালিকাগুলোকে।মরাই, খড়ের পালুই, সাড়কুড়, মুতকুড়, ফুলের বাগান, আমতলা, বেলতলা সব মুতে ভাসিয়ে দিবেক। মুতের স্রোতে সব ভেসে চলে যাবেক।

ঐ গ্রামের লোকগুলোই তো যত নষ্টের মুল না। বিয়ের ছাড়-বিড়টাতো ওরাই করে গেছে।বাব্বা! কি হুংকার তখন? কি হুম্বিতুম্বি!বরপনের সামান্য ক’টা বাড়তি পয়সা আদায়ের জন্য হ্যান করেঙ্গা, ত্যান করেঙ্গা!গুষ্টির মাথা করেঙ্গা!

জবরা গাছ থেকে চোঁচাড়ে নেমে এল।নেমে মোলগাছে পিঠ ঠেকিয়ে, মোলগাছটার মত হেলে দাঁড়িয়ে রইল। জবরা মুখ তুলে দেখল, গরুগুলো সব চরছে তো? হ চরছে।

গরুগুলোও জবরার দিকে মুখ তুলল, বলি, তুমি ঠিক আচ তো? জবরা হাত তুলে ইশারায় উত্তর দিল,

-হ, মরি নাই, বেঁচে আচি নে। গরুগুলো জবরার হাতের ইশারা পেয়ে, বাঁধের পাড়ে আশ মিটিয়ে চরছে।

কত বড় পাদ্রি সাহেবের বাঁধ। কোনকালে কোথাকার কোনএক পাদ্রি সাহেব বাঁধটা কেটেছিল। বাঁধটা কি পাদ্রি সাহেব কেটেছিল? না,সাহেব বনটা ইজারা নিয়েছিল মাত্র। তখন বনের চেহারা কি! ইয়া বড় বড় গাছের গুড়ি। এখান থেকে চোখ চালালে, গোটা বনটাকে দেখা যেত। তখন তো এত লতাপাতার ঝোড় ঝাড় ছিল না। বনে কেবল গাছ ছিল। বড় বড় গাছ। তাদের শিকড় কি!শিকড়ের শক্তি ছিল কত! একেবারে পাতাল পর্যন্ত ফুঁড়ে দিত শিকড়। পাতাল থেকে টেনে জল তুলত। সেই জল ঝর্না হয়ে ঝিরঝির বইত। সারা জঙ্গল ঝিকিমিক করত।ঝিকমিক ঝিকমিক।

কিন্তু গৃষ্মকালে? দেশে খরা হলে? দু’বা তিনবছর আকাশে বৃষ্টি না হলে?তখন বন শুকিয়ে কাঠ! একফোঁটা জলের জন্য বনের জীবজন্তুগুলো এধার থেকে ওধার দৌড়ে মরত শুধু। জল না পেয়ে সব চিৎপটাং!

সাহেব সারাবন ঘুরে ঘুরে, নাকে জীব-জন্তুর মরা পচা গন্ধ শুঁকে বেঘোর। বেঘোরে পড়ে সাহেব দেখল, সমুহে বিপদ তো! সামনে বিপদ দণ্ডায়মান তো! জীব-জন্তুগুলো মরে গেলে বনটা থাকবেক কি করে?ব্যাবসাটা লিস হয়ে যাবেক নাই তো? তাই সাহেব মাথায় ফন্দি আঁটল।ধারেপাশে,কাছেভীতের গ্রামগুলোকে গলা তুলে হাঁক পাড়ল।সাহেবের গলা শুনে, রিলিফের গমঘাটা খেতে, কোদাল গাইতি হাতে তরস্থ ছুটে এল গ্রামের মানুষগুলো। কোমরে গামছা বেঁধে, বাঁধটা কাটতে লেগে গেল, বাঘের মত গতরগুলো।

বাঁধ কেটে তলটা খাল হল।আর তলের মাটি কেটে, তল থেকে মাটি তুলে তুলে, পাড়টা উঁচু হল খুব। পাহাড়ের মত উঁচু। কিন্তু কালের অতলে উঁচু জায়গা উঁচু থাকল কি! বর্ষার তোড়ে কিম্বা অকাল বর্ষনে উঁচু জায়গা থেকে ঢিপ ঢাপ মাটি পড়তে থাকল। জায়গাটা হয়ে গেল অসমান, এবড়ো-খেবড়ো।

এবড়ো-খেবড়ো জায়গায় গাছের শিকড় কিন্তু বাধা মানল না।তলদিকে শিকড় ফুঁড়ে,মাথা তুলল গাছের চারা। পাদ্রি সাহেবের বাঁধের পাড়ে ছোট ছোট চারাগাছ।চারাগাছের ঝাকড় মাকড় ডালপালা, নতুন উদ্দমে বেড়ে ওঠে সবুজ হয়ে আছে। এই সবুজের আস্তরন ভেদ করে সূর্যের আলো ঢুকতে পারে না।

বাঁধের নীচু জায়গায় সিয়াকুল আর ময়না কাঁটার ঝোপ। ঝোপের মাথায় মাথায় মাকড়সার জাল বিস্তার। বনের শুকনো পাতা, পাতার টুকরো বিটুকরো অংশ বিশেষ, মরে শুকিয়ে যাওয়া মশা মাছি, ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র ধুলিকনা সব ডালে আটকে ঝুলছে।

ডোবার খানাখন্দে ময়না কাঁটা শুকিয়ে হাঁ হয়ে আছে।ঐ শুকনো কাঁটায় কারও যদি একবার শ্রীচরন পড়ে তো, সঙ্গে সঙ্গে সাত মাসের ঝোল খাইয়েছে ছেড়েছে বলে কথা।

বর্ষার জলে বনে প্লাবন হলে, জোড় (নালা) দিয়ে জল দ্রুত নীচে নামে। জলের বেগে জোড়ে বড় বড় গর্ত তৈরী হয়। কোথাও মানুষ সমান, তো কোথাও হাফ মানুষ, আবার কোথাও কোথাও বা দু’এক হাতের বেশি নয়। সেই গর্তের চারপাশ কাঁটাঝোড়।কিন্তু কি আশ্চর্য, তলটা সম্পূর্ণ, সাফসুরোত!একেবারে না মানুষের নিকানো উঠান !ঐ উঠানে যদি কোনদিন কেউ কাউকে মেরে অথবা আধমরা করে ফেলেও দিয়ে যায়, তো ভূতের বাবাও টের পাবে না।

তাই জবরা কোনদিন মরে গেলেও ঐ ঝোপের দিকে পা বাড়ায় না।বলা তো যায় না,বনে কাউকেই বিশ্বাস নেই।কখন কি মতলবে,কে কাকে ফেলে দেয়!

আর এই কথাটা বোঝার মত ওর মাথায় যথেষ্ট বুদ্ধি সুদ্ধি আছে।পেটে নাই বা দু’ফোঁটা ভূষোকালি থাকল।ভূষোকালি না থাকলে কি বুদ্ধি থাকতে নেই।তাহলে বনে এতগুলি গরুবাছুর চরাই কি করে।এতগুলো গরুবাছুরের হিসাব রাখাটা কি আর চাট্টিখানি কথা।এখনো ওর নিজ হাতের দেওয়ালের আঁক দেখলেই,নির্ঘাত বলে দিতে পারে,কোন গোরুটা বাবদ,কি রঙের গরুটা বাবদ, কোন মালিকের কাছ থেকে,কত টাকা পাবে।তবেই না ওর একলা সংসারের, নিজের ভরণপোষণটুকু চলছে।কিন্তু দুঃখের কথা এই,নিজের শোয়ার ঘরে, রংচটা দেওয়ালটাতে ভুলেও কোনদিন খড়িমাটির একটা দাগও টানল না।টানলে তো কাঠুরী ঘাটবসার লচনা করে,বাপের বাড়ি চলে যেতে পারত না।যদি সাতসকালে বিশ্বাস না করে,বৌটাকে সঙ্গে করে,নিজে ঘাট বসাতে নিয়ে যেত,তাহলে বৌটা পালাতে পারত কি!না। বৌ এর গ্রামের লোকগুলো হৈ হৈ রৈ রৈ করে তেড়ে এসে, সম্পর্কের ছাড়বিড় করে যেতে পারত! পারত নাই পারত নাই। নির্ঘাত পারত নাই।

জবরা মোলগাছে ঠেস দিয়ে নাগরদোলার মত দুলছে। এতে ওর পিঠটা কোমড়াতে (চুলকাতে) ইচ্ছা করছে। পিঠটা যে গুলগুল করছে। তাহলে পিঠেতেও পায়ের হাজাগুলো ছড়িয়ে পড়ল কি? জবরা মোলগাছে পিঠ ঘষছে। মোলগাছের শুকনো ছাল,পিঠের ঘষঘষ ঘষ্টানিতে মিহি হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে।

বনের ভেতর থেকে শোঁ শোঁ শব্দ  বেরিয়ে আসছে।শোঁ শোঁ,শোঁ শোঁ! শোঁ শোঁ শব্দ নয়, কারা যেন ফিস ফিস কথা বলছে। গাছগুলো কি? দূর গাছ কি কথা বলে? তাহলে কোন মানুষজন! মানুষ এই ভর্ত্তি দুপুর বেলায়, মাথায় গনগনে রোদে, বনে মত্তে আসবেক? এক আসতে পারে সেই মাগী, যে কিনা বনে আসতে তর নাই, ভেড়ুল হয়ে চারিচুমড়ি (চারিদিক) ঘিরে ধরে ছিল। যে শুধু পয়সার লোভে পাঁচ সাতজন পুরুষের সঙ্গে রাতের অন্ধকারে বনে এসে ছিল। এসে খুন হয়ে ছিল। মেয়েটাকে কেটে ভাসিয়ে দিয়ে ছিল বাঁধের জলে। সেই থেকে মেয়েটা আজও জলে ভাসে।

তবে জবরা নিজ চোখে কোনদিন ভাদতে দেখেনি। গ্রামের আরও সব লোক আছে না, তারা দেখেছে মেয়েটাকে কাপড় পরে জলে ভাসতে। তবে দিন দিন বা যখন তখন ভাসে না। একমাত্র বার বিথিকে (বারের অশুভ সময়) ভাসে।

জবরা কানখাড়া করে বনের ভেতর ফিস ফিস কথাগুলো শুনছে। ফিস ফিস, ফিস ফিস! কারা কথা বলছে? ধ্যাত তেরি,কথা কোথায়? বনে হু হু বাতাস বইছে, তারই শব্দ।তাহলে বাতাসও কথা বলে!জবরা ফিক করে হেসে দিল।

হাসি থামিয়ে ঘাড় সোজা করল জবরা। পাদ্রি সাহেবের বাঁধের জলে তাকাল।তাকাতেই দেখল একি! সেই মাগীটা যে! জলে সত্যি সত্যিই ভাসছে। পরনের কাপড়টা জলের ওপরে ফুলে ফেঁপে জয়ঢাক। তাহলে মাগীটা এখনো মরে নাই! মুহূর্তে জবরার গায়ে কাঁটা দিল। লোমকুপগুলো এক লহমায় খচাখচ দাঁড়িয়ে গেল।

জবরা ভয়ে ময়ে থর থর কাঁপছে।কাঁপতে কাঁপতে দাঁত গিজাড়ে (পড়ে দাঁত ভাঙা) পড়ে যাবে না তো? হাতের লাঠিটা মাটিতে পুঁতে, লাঠি ধরে কোনরকম সামলে সুমলে দাঁড়িয়ে রইল।

মেয়েটা জলে খলবল খলবল শব্দ করে,ভিজে কাপড়ে জল থেকে উঠে আসছে।কোথায় যাবেক মেয়েটা?

এই রে এ.এ! মেয়েটা যে জবরার দিকেই ছুটে আসছে!ভিজে শাড়ি থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে টপটপ জল পড়ছে। শাড়ির ভেতর শাওয়া ঘষার স্যাক স্যাক শব্দ হচ্ছে।

জবরা ভয় কাটিয়ে সাহস বাড়ানোর চেষ্টা করল।

ডান হাতের গরুচরানো লাঠিটা বাম হাতে বদল করল। আর বাম হাতের হেতেরটা ডান হাতে। করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে।হেতেরটা শক্ত করে  ধরল জবরা। এস না, এস না। এসেছ তো ঘ্যাচ-চ-চ!

মেয়েটা কিন্তু ডোন্ট কেয়ার। জবরাকে তেড়ে আসছে। জবরা বাধা দিল। স্বর তুলে বলল, আসবি নাই বলে দিচ্চি।

জবরার স্বর তুলাই সার হল। গলা বেয়ে বেরল তো স্বর? ভয়ে গলার যা অবস্থা।স্বর গলাতেই আঁটকে গেল। মুখটাই ফাঁক হল শুধু। এতটা ফাঁক। এত্তোটা। আর এদিকে মেয়েটার সাহস দেখ। মেয়েটা ওকে তাক করেই ছুটে আসছে। মেয়েটার সাহস তো খুব! চোঁচাড়ে ঢুকে যাবে নাকি বুকে! তারপর বুক থেকে টেনে হেঁচাড়ে কলজেটাকে বার করে, বুকের রক্ত খাবেক?

আরে দূর দূর! ওর বুকে রক্ত কোথায়? সবই তো এখন জল।

মেয়েটা জবরার কাছে এসে জবরার হাতটা খপ করে ধরল। আর ধরতেই হাত থেকে হেতেরটা ধপ করে পড়ে গেল। তাও পড়ল পড়ল, নিজের পায়ের বুড়ো আঙুলের মাথায় পড়ল। ভাগ্য ভাল হেতেরটা সোজা পড়েনি, উলটো পিঠে পড়েছে। নাহলে কি যে হত।হয়তো পাটাই হানা যেত। পায়ের রক্তে পইন্যাল হয়ে যেত মাটি।

মেয়েটা জবরাকে হাত ধরে টানছে। শিয়ালে ছাগল ধরলে, শিয়াল যেমন ছাগলের কান ধরে তার সুবিধা মত জায়গায়, যেখানে বসে আরামসে খেতে পাবে, সেইসব জায়গায় টেনে নিয়ে যায়। আর ছাগল চোখ বন্ধ করে, তার পেছন পেছন সুটসাট হাঁটে। জবরাও তেমনি চোখ বন্ধ করে মেয়েটার পেছন পেছন হাঁটছে। এতে ওর পায়ে প্যাট প্যাট কাঁটা ঢুকে যাচ্ছে। বিস্তর। তবু সান নেই।

মেয়েটা জোড়ের কাছে,সেই কন্টকময় মানুষ সমান গর্তে, জবরাকে ঠেলে ফেলে দিল।

নিজেও ঝাঁপ দিল গর্তে। জবরার গায়ে ধাব্বিস করে পড়ল। আহত জবরা চোখ খুলল।খুলতেই দেখে কি না! কাঠুরী। কা-ঠু-রী-ই-ই-ই।

কাঠুরী ভিজে গলায় বলল, খুব ভয় পেয়ে গেইলে? জবরা বলল, তুকে ভয় খাব, আমি?আ-মি?

-তাইলে খুব কাঁপছিলে যে?

-কাঁপছিলাম অন্য কারনে।

-কি কারনে?

-তুকে দেকছিলাম।

-কি দেকলে?

-তুই মেয়ে বটিস আকখান।

-মেয়ে নয় তো তুমার মত মরদ হত যাব কেনে?

-তুই মরদই বটিস, মরদের কান কাটবি।

-না, আমি মরদ নয়, তুমার বৌ বটি।

-এগে (আগে) ছিলি, আকন নাই।

-নাই তো আমি কার কাচে এইচি? জান না আমি কত কষ্টে আছি। আত দিন ঘুম হয় না।বিচানায় পড়ে পড়ে, এই আসচ এই আসচ করি। তেমু (তবু) তুমার মায়া নাই। একদিনের তরেও আমাকে দেখতে গেলে নাই। অসম্ভব জেদ বটে তুমার। শ্যাষে আমি হার শিকার করলাম। গুগলি কুড়ানোর লচনা করে বাঁধে এসে নামলাম। দেকলাম তুমি কানা বট, আমাকে দেকতেই পেলে নাই। তাই খলবল খলবল জল থিকে উটে, সটান তুমাকে ধরলাম।

-আমাকে ধরে কি পেলি?

-তুমাকে পেলাম।

-জবরা বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বলল, আমাকে কচুটা পেইচিস।

-কাঠুরী সাথকে সাথ জবাব দিল, তুমার ঐ কচুটাই আমার দরকার।

-জবরা রাগে বলল, তাই যদি দরকার, তাহলে আমাকে না বলে চলে গেইলি কেনে?

কাঠুরী ফোঁস ফোঁস নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,

-তকন আমার কত বয়স, আঁ! শরীলে ভাল করে হাত পা ওঠে নাই। বিয়ের কতা কি বুজব? তুমাকে দেকলেই ডর করত। ভয়ে থর থর কাঁপতাম। পালাই পালাই করতাম।

-তাই আমাকে ছেড়ে, না বলে, পালিই গেইলি?

-হঁঃ, একে পালিই যাওয়া বলে নাকী? বাপের বাড়িতে জিরতে গেইলাম। জবরা ফিক করে হেসে কাঠুরীকে বুকে টেনে নিল।

কাঠুরীও জবরার বুকে ফোঁ ফোঁস গজরাচ্ছে। যেন মা মনসা। ধূনোর গন্ধ পেয়েছে। এ ধূনো তো সে ধুনো নয়। এ হল পিরিতি ধুনো! না মানুষের আস্তানায় খুব গুলোচ্ছে!

 কাঠুরী ভিজে কাপড়টা নিকানো উঠানে লম্বা করে পাতল। নিজেও লম্বা হয়ে গেল কাপড়ের উপর। জবরাকে টেনে নিল। জবরা যেন এখন আর জবরা নয়। সে যেন কাঠঠোকরা পাখি। ঠক-ঠক শব্দ তুলে, কাঠুরীর দেহে পোকামাকড় বেছে বেছে খাচ্ছে আর কাঠুরী? কা-ঠু-রী? সে যেন একটা লম্বা পাটাতন। কাঠঠোকরা পাখীর ঠক ঠক শব্দের কেবলই তারিফ করছে, ঠ-র-র-র-র!

হঠাৎ,এক্কেবারে আচমকা গুড়ুম শব্দ! বিনা মেঘে বর্জঘাত! জবরা ভয়ে ময়ে কাঠুরীকে ছেড়ে সরে বসল। কি ব্যাপার? বিত্যান্তটা কি? আকাশে মেঘ নাই, রোদে  খই ফুটছে, কিন্তু শব্দটা এল কোথা থেকে?

মেঘ নয়, মেঘ নয়, জবরার মাথার ঘেলু থেকে চোঁচাড়ে বেরিয়ে এল শব্দটা। দীর্ঘদিন মাথাতে তেল জল পড়ে নাই তো। রুখু শুখু হয়ে এতদিন বেশ দিব্বি ছিল। যা কিছু নোংরা আবর্জনা সব মাথাতেই আটকে ছিল।আটকে ছিল কাঠুরীর বাপের বাড়ির গোটা গ্রামটা। গ্রামের লোকগুলো মাথাতে তেল জলের সন্ধান পেয়েছে বোধহয়। তাই হাতে লাঠি বহ্লব নিয়ে জবরাকে তেড়ে মারতে আসছে কারণ ঐ লোকগুলোই তো একদিন হৈ হৈ রৈ রৈ করে বিয়ের ছাড়বিড়টা করে গেছিল। তাহলে মারতে আসবেক নাই?জবরা ভয়ে ময়ে থর থর কাঁপছে।

কাঠুরী আবেশ গলায় বলল, কি গো, সরে গেলে যে? জবরা বার কয়েক ঢোক গিলে বলল, তুর মনে নাই, আমাদের ছাড়বিড় হয়ে গেচে? কাঠুরী মনে করেও মনে করতে পারল নাই। বলল, সে যারা করেচে করেচে, তুমি আর আমি তো করি নাই। ভয় কি? কাঠুরী লম্বা হয়ে শুয়ে রইল মাটিতে। জবরা? জবরা ভ্যাল ভ্যাল করে চেয়ে রইল কাঠুরীর মুখ পানে।

এই সময়, এই না মানুষের আস্তানায় যদি কোন ফিচকেল হলবল ঢুকে পড়ে, ব্যাপার খানা দেখেও ফেলে, কে বলবে, এতদিন এই দুটো মানুষ ছাড়বিড়ের সম্পর্ক্য নিয়ে পৃথক ছিল।

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত