| 28 মার্চ 2024
Categories
কবিতা সাহিত্য

একগুচ্ছ কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 4 মিনিট
ঘোরানো প্যাঁচানো মুখের আদল দেখেই বুঝেছি
                               তুমি যে ঘাসের কথা বলছো
সে আমার প্রাণসখা;
মহাপ্রাণে এক সাথে গেথেঁছি উড়ন্তু ডানার
                                     কম্পমান  বিষয় আশয়
এমন কি গৃহের বিবাদ আর পুষ্পমুখী যৌনগন্ধ।
মনুষ্যজগত ছেড়ে কয়েক মাইল দূরে এই দূরবাসী
পড়শী উদ্ভিদে রেখেছি আমার নিঃশ্বাস প্রশ্বাস।
 আর গুড়ি গুড়ি আলোকনা জড়িয়ে ছড়িয়ে
                          যে বিত্তের বেসাতি উদ্ভিদ গড়েছে
                              সেখানে কোন মালিকানা নাই
পদ পদবি নাই ক্রিয়াকেই মেনেছে জীবনের সাধর্ম
আমি বিশেষ্য সমাজে বংশোদ্ভুত নাগরিক
বিশেষায়নে বিশেষায়িত না করলে বুঝি
                                             মনুষ্যসমাজের অপমান
ক্রিয়ার ক্রীড়া বুঝিনি বলে এখানে আমি অনাহুত নই
তাহাদের জন মেনে যেন আমাকে করেছে
                           কম্পমান ডানার সৌরভ
গুড়ি গুড়ি আলোকনা বৃষ্টিকনা পাজরের হাড়
যেন নয় —সত্যি সত্যি আমি তাহাদের জন
একই ক্রিয়ার ক্রীড়ামোদী।
খেলতে খেলতে শিখে নিতে হয় এই ভুবনের মানবিকগুণ
নতমুখী ঘোরানো প্যাঁচানো মুখের আদল
ক্রিয়াকে মেনেছে জীবনের সাধর্ম
আর বিশেষ্য আমাকে  আকঁড়ে নিয়েছে ঘাসের পাঁজরে
 আমি বিশেষ্য সমাজে বংশোদ্ভুত নাগরিক
বিশেষ্য পদবাচ্য।
কাছাকাছি কোথাও অরণ্য নেই—বাড়িঘর শপিংমলে ঠাসা
বন বিভাগের নার্সারি আমার একমাত্র ভরসা।
এখানেই পেতেছি আমার পদ্মাসন।
আশ্রম বলতে এইটুকু– ছোট চালা ঘর; সারি সারি টব
আর টবে লাগানো চারাদের শৈশব কাল—একটু একটু দুলছে
 বাতাসের সাথে ভয় ও শংকার ভেতর।
 চারাদের  হাসিখুশি দুলদুল ঘুমলাগা আধো চোখবুঝার মতো মোলায়েম।
 কালো পলিথিন সামনের দিকে কাৎ করে রেখেছি রোদ ও জল
 গড়িয়ে গড়িয়ে যেন ভিজিয়ে দেয় আমার উঠান;
উঠান বলতে এক চিলটে উঠান—–দশ বাই দশের বর্গক্ষেত্র।
এখানেই কাক ও কোকিল
 ব্যাঙ ও বেজি আর
 কুকুর ও বেড়ালদের নিত্য যাওয়া আসা।
আমার ফাইফরমাশ খাদ্যের বিনিময়ে  কর্মসূচী
                                        বাস্তবায়নের ভার নিয়েছে স্বেচ্ছায়;
গুরুবাক্য শিরোধার্য নিয়ে সদা প্রস্তত আমার শিষ্য শাবকের দল।
ধ্যানবিন্দু আমি এইসব দেখি আর দেখতে দেখতে
ডুবি আমি—-ডুবি আমি জলাশয়ে।
এই জলাশয়ে কোন পদ্ম নেই—-পদ্ম নেই মানে কোন পদ্ম নেই।
না ফোটা পদ্ম না কুঁড়ি না পদ্মের ডাট।
পাকে পাকে জড়িয়ে জড়িয়ে দু’ হাত ভরে যে পাক
তুলেছি সেখানে পঁচা শামুক ভাঙা আয়না চিরুনি
শিশু খেলনা আর চিতার পোড়া কাঠ
আর কবেকার গেরস্থ বাড়ির পেতলের ঘটি
উঠলেও কোন মাটি তুলতে পারিনি।
আর পারিনি বলেই পদ্ম নাম্নী কোন ষোড়শী বানাতে পারলাম না।
আহা!! পদ্ম; এখন কে তবে আশ্রমে ধ্রুপদী নৃত্য করবে?
ধুপ কর্পুর পুজার উপচার সব যে বিফলে গেলো।
পাকের গভীরে ডুবতে ডুবতে পদ্মা নামে
একটি নদীর সাথে দেখা হয়েছিল।
খুব ধীরে খুব ধীরে বইছে দক্ষিনে
সারা দেহে ময়লার স্তুপ আর  ডিজেলের ভ্যাপসা গন্ধ মেখে
শরীরে জোয়ার এখন পড়তির দিকে।
উপরন্ত শরীরের ভাঁজে ভাঁজে মেদ আর  মেদ।
                                        সে এখন যে কোন বিগত মহিলা।
যোগী আমি রমতা সাধু বহতা জল।
আর্শিবাদ করি পদ্মা তুমি  বিগত মহিলা সংসারি হও
আর্শিবাদ করি পদ্মা তুমি  বিগত মহিলা সংসারি হও
আর্শিবাদ করি পদ্মা তুমি  বিগত মহিলা সংসারি হও
ধ্যানি আমি যোগী আমি বহতা জল রমতা সাধু
না পদ্মিনী আমি তোমাকে আরাধনা করিনি।
পদ্মাসনে বসেছি বলেই তুমি আমার আশ্রমে
                       বিনা অনুমতিতে ঢুকে পড়বে?
আমি জানি তুমি নর্তকী শ্রেষ্ঠা
বণিকের কণ্ঠাহার তুমি
তুমি কথা বললেই বেড়ে যায় পণ্যের ব্র্যাণ্ডভেল্যু।
তোমার তনু নিতম্ব নিখুঁত
হাস্যমুখশ্রী স্কেল দিয়ে মাপা– যাকে বলে ডিপ্লোমেটিক হাসি।
এমন হাসির কদর রাজপাটে নির্ধারক নিক্তি।
আমি যোগী নিজের খেয়ালে নিত্য থাকি চিত্ত নিয়ে
                       এমন পদ্মিনী নিয়া আমি কী করিব?
আমি বনিক নই —নই  অ্যাড ফিল্মমেকার
অথবা হাওয়া বদলের জন্য কোন রিসোর্টে তোমাকে
নিয়ে যাবো তেমন খেয়াল আমার নয়।
আমি পদ্মাসনে বসা যোগী রমতা সাধু বহত জল।
ওগো কিঙ্করি পদ্মিনী তোমাকে লইয়া আমি কী করিব?
ওগো কেশনন্দিনী তোমাকে লইয়া আমি করিব?
গত জন্মে ছিলাম ভূজাঙ্গ আসনে।
তুমি কী দেখোনি আমার কর্তিত গলা হাত মুণ্ডু আর নাভীমুল?
নিজেই নিজকে দংশন করে করে হয়েছিলাম নীলকণ্ঠ।
দেহের জমিন জর্জরিত করেছিলাম সিবা গেইগির বিষে।
সেই বিষে বিষহরি পালাল পাতালে
সেই বিষে বিষহরি পালাল পাতালে
সেই বিষভাণ্ড কোথায়  আমি ঢালেনি?
পাহাড় পর্বত আবাদি জমিন নারীর জরায়ু আর জলের শরীরে—
                               বাণের জলের মতো বিষ ঢেলেছি পদ্মিনী।
পদ্মিনী ও পদ্মিনী তোমাকে আমি চিনি
তোমাকে দেখেছি বিকিনি পড়া সী বীচে
তোমাকে দেখেছি বিল বোর্ডে রঙিন মিহিদানা আলোর ঝালরে।
সাগুদানার মতো ফর্সা শরীর নিয়ে চুলখোলা তুমি হাঁটছো রেম্পে
ত্বক সচেতন তুমি মাখো ফেয়ার লাভলী।
এই সব তুমি —-তুমিই পদ্মিনী।
জানি আমি বীণ আর দূরবীনে তুমি সমান পারঙ্গম।
তোমার ভ্র-প্ল্যাকে যে সৌন্দর্য  ফুটে  ওঠে সেখানে ভূজাঙ্গ
নিমিষেই শবাসন।
সবে মুখাগ্নি বাকি—-চিতার কাঠ সহজে কাঠ কয়লা।
আমি যেখানে পদ্মাসনে বসেছি ইহা ফরেস্ট ডির্পাটমেন্ট।
ফরেস্টার পরিবার নিয়ে শহরে থাকেন।
মোটা মোটা বই পড়িতে পড়িতে তিনি কুঁজো হয়ে গেছেন বলে
চোখ তুলে আকাশ সমান ইউক্লিপটাস দেখতে পান না।
আমি পদ্মাসনে বসে বসে দেখি পাখিশুন্য বন
পালকের ওড়াওড়ি নাচানাচি শুন্য বন
আর দেখি শুন্য বনে বৃক্ষ রোপন সপ্তাহ।
দেখতে দেখতে যোগী আমি পদ্মাসনে আঁতিপাঁতি খুজি
কোখায় আমার শরীরের শেকড়বাকড়
কোথায় বনের হাজার হাজার ধমনী
কোখায় কেটেছে দাইমা নাড়ির বন্ধন
ধ্যানী আমি যোগী আমি ঘাটে ঘাটে খুঁজি আমার দিগন্ত চরাচর
 আমার অখন্ডমন্ডলকার চরাচর।
যে বছর লীজের বছর উন্নয়নের বছর
সেই বছরেই বণিকেরা নিয়ে  এলো রবার বাগান
আকাশ মণি
আর স মিলের বীজ আর করাতি
সেই বছরই আমি উৎখাত আশ্রমে আগুন
                                   অরণ্য হইল নার্সারি
আহা আহা সুন্দর আলির বায়স্কোপ
তারপরেতে আইসা গেছে দেখো দেখো ইকো পার্কে
সারি সারি গাড়ির বহর আর ডিস্কো ডানচারের পিকনিক পার্টি
বনচিরে পদ্মাসনে টলে গগনবিদারি হিন্দিগানের মাইক
আমি যোগী কেবলই ছিন্নভিন্ন কাঁটামুণ্ডু ছিন্নমম্তা
আমাকে মাথায় তুলে নাচছো তুমি পদ্মিনী
আমাকে মাথায় তুলে নাচছো পদ্মিনী
আমার আর কোথাও যাবার নেই।
বেনিয়া কাছে ডেকে
কী যেন কী যেন বিড়বিড় করে কানের ভেতর সীসা ঢালে
        ও বাবু আমাগো গান্নি দিয়া কী করিবার চাও
          ও বাবু আমাগে ঘরের নকরি দিয়া কী করিবার চাও
আমাগো গান্নি ক্ষেতে গেছে
আমাগো গান্নি বন্দরে গেছে
হলুদ আদা মরিচ চাও নিয়া যাও
 বাতরে চিনামাটি আছে তাও নে বাবু
ও বাবু আমাগো গান্নি দিয়া কী করবি
বাবু ও বাবু নে নে আমাগো তুমদা টামাক ঢোল
বাবু ও বাবু নে নে আমাগো  বানাম মাদল বাঁশি
বাজা তোর ইচ্ছামত। পাতা নাচিবে পাখি নাচিবে
নাচিবে রে বনবিবি নাচিবে শিবের শিবানি
ও বাবু ও বাবু গান্নি তুই চাস না
এই টিলা কৌলাসের ছড়ানো পা।
এই টিলা বনবিবির জড়ানো শরীর
এই টিলা মাদার মেরীর মেলানো শীতল পাখা
এই টিলা গাড়ো হাজং আর কোচের
ও সুন্দর আলি ভাই তোমার বায়স্কোপে ধইরা রাখো তামাম ইতিহাস।
আমি যোগী বনের সাথে বেধেছি আমার প্রাণের বহতা জল
আমি যোগী বনের সাথে বেধেছি আমার প্রাণের বহতা জল
আমি যোগী বনের সাথে বেধেছি আমার প্রাণের বহতা জল

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত