চারটি কবিতা
পেন্সিল
পেন্সিলে বুঝি ধার কম
নিমেষে মিলায় হাওয়াতে
রবারের সাথে পাল্লায়
আনো শাপনার আনো ব্লেড
পেন্সিল দিয়ে কালোফুল
শাদা খাতা জুড়ে এঁকে যাও
আঁকো ছাত্ররা ছবিয়াল
তিল থেকে তাল মিলবেই
কেউ অংকের সুতো খোঁজে
কেউ সমাজের বিজ্ঞান
ইতিহাস পড়ে রক্তেরা
ছড়িয়ে পড়ার পথ আঁকে
কারো লাল চোখ নিষ্প্রাণ
বর্ণ শব্দ কেউ শেখে
বর্ণ প্রথাকে ধান্দায়
বিবর্ণ করে উসকায়
কেউ দিনভর মানুষের
মুণ্ডুকে ধরে চাবকায়
পেন্সিলে ধার কমলেই
কারো বড় বড় পা গজায়
ধার করা যত বিদ্যায়
ধার দিয়ে কোনো লাভ নেই
যেখানে জ্বলছে দাবানল
তার ধারে গিয়ে কাজ নেই
চলো পেন্সিলে ধার দিই
নিয়ে আসো চোখা শাপনার
পেন্সিলে যদি রং দাও
সূর্যের লাল পূর্বেই
প্যাটেলার গান
সেবার প্যাটেলাটুকু গুড়িগুড়ি হলে
অবসাদে বসে পড়ে হাঁটুর লাটিম
চারিদিকে মানুষের ত্রস্ত চলাফেরা
ভেতরের হাহাকারে এস্রাজের সুর
স্থির, কি নিষ্কম্প তার তারের ব্যঞ্জনা
সমস্ত শরীর জুড়ে প্যাটেলার গান
অর্কেস্ট্রার আর্তনাদ হু হু বেজে চলে
দুমড়ে মুচড়ে জগদ্দল প্যাটেলার হাঁটু
সমস্ত শরীর স্থানু হঠাৎ অথর্ব
তীক্ষ্ণ টোপ মহাজাগতিক শিকারের —
কতো দ্রুতযান শত শব্দদোষ শুধু
আমাদের চারিপাশে ক্রমশ বিস্তারে
ক্রমশ সময় স্রোত টেনে যায় ভূত-
ভবিষ্যতে — কোষে কোষে তীব্রতর হয়
তীব্র ঘ্রাণ তীব্র তার ব্যগ্র মাদকতা
টোপের হরিণ আজ জনারণ্যে ভীড়ে
মিশে যায় শিকারীর শীতল দৃষ্টিতে
অথবা এমন কোন রক্তস্রোত ধারা
প্রবাহিত শিহরণ ঘর্ম কলেবরে
সমস্ত শরীর জুড়ে প্যাটেলার গান
অর্কেস্ট্রার আর্তনাদ হু হু বেজে চলে
তোমাদের দাঁড়াবার সে-সময় নেই
তোমাদের সামনে শুধু ঝুলে থাকে
অসমাপ্য কর্তব্যের লোভাতুর ঝুলি
চোখে ঠুলি পড়ে থাকে অগ্রগামিতার
সোপান পেরিয়ে চলে মানব জীবন
কেবল আমিই তবে স্রোতের বিপক্ষে
বেমক্কা পড়েছি বসে পথে– মাঝপথে
নিষ্পলক দৃষ্টিরেখা দূরে স্থিরমণি
হাঁটুভাঙা চলৎশক্তি নিতান্ত রহিত
কেবল ভেতরে গুঞ্জে মর্ম বিদারক
বিষণ্ণ এস্রাজ – সাজ সাজ রব ওঠে
কোথায় চলেছে ছুটে কর্তব্যের গাড়ি
কোন সে স্টেশনে তার থামার ঠিকানা
বিসমিল্লা খাঁর সানাই হঠাৎ ফুকারে
উথাল পাথাল করে সারা দেহমন
সমস্ত শরীর জুড়ে প্যাটেলার গান
অর্কেস্ট্রার আর্তনাদ হু হু বেজে চলে
বসন্ত উধাও ধু ধু — ফের শীতকাল
ফিরে আসে জীবনের সবুজ চত্বরে
তবে সে মীড়ের সাথে সারা পৃথিবীতে
স্রোতের বিপক্ষে থাকা অনড় হাঁটুতে
জীবনের নতুন ব্যঞ্জনা জমে ওঠে
অনন্তর ছোটা ছেড়ে দক্ষিণের দ্বারে
হৃৎ-ক্ষরণের গান আলোর উচ্ছ্বাসে
সমস্ত শরীর জুড়ে প্যাটেলার গান
অর্কেস্ট্রার আর্তনাদ হু হু বেজে চলে
চুরমার
চুরমার করে কাঁচের দেয়াল
হুহু সমীরণ ভেতর মহলে
আলো নিভু নিভু তন্দ্রা টুটেছে
ফিসফিস করে প্রেতচ্ছায়ারা
দূরে সাইরেন দূরে হেমলক
দূরে শাইলক খুদ পিপাসার
চোখের শর্ষে চোখে লেগে রয়
গন্ধে মাতাল মহর্ষিগণ
আয়ু চুরমার আয়ু সমাচার
দ্রোণাচার্যের আঙুলের খোঁজে
এইভাবে কাটে পৃথিবীর দিন
একলব্যের রক্তগঙ্গায়
চুরমার হয়ে পথে পড়ে রয়
ধূমকেতু লেজ প্লুটো নেপচুন
সময়ের গুঁড়া স্রোতের ফসিল
কাঁচের দেয়াল হুহু সমীরণ
অলাতচক্র
আমি কোনো চক্রে নেই
তবু দোল খায় পেন্ডুলাম
দোল খায় শব্দ তুলে ঢং ঢং
জ্বলন্ত কাঠ — অঙ্গার —
মর্মজ্বালা এবং প্রণয়
ঘোরে বেগে চক্রাকারে
দশচক্রে আটকে পড়ি
ভূত ভবিষ্যতে

নিবাস: চট্টগ্রাম।
কবিতাই প্রধান বিচরণ।তবে নন্দনতাত্ত্বিক প্রবন্ধ, নিবন্ধ, ভ্রমণগদ্য এবং অনুবাদকর্মেলিপ্ত।
কবিতার বই:
অন্যমন্ত্র(লিরিক১৯৯৫),
শাদা অন্ধকার(লিরিক২০১০),
ডায়োজিনিসের হারিকেন(ভিন্নচোখ২০১৮)
দীর্ঘ কবিতার পুস্তিকা:
শতখণ্ড(বাঙময়২০১৭)
আত্মজার প্রতি(বাঙময়২০১৭)
প্রবন্ধ/নিবন্ধ:
উত্তর আধুনিকতা: এ সবুজ করুণ ডাঙায়(লিরিক২০০১, পরিবর্ধিত২য়সংস্করণ: খড়িমাটি২০১৯)
অমৃত কথা(লিরিক২০১০)
অনুবাদ:
আধুনিকোত্তরবাদের নন্দনতত্ত্ব: কয়েকটি অনুবাদ(লিরিক২০১০)
নাজিম হিকমতের রুবাইয়াৎ(বাতিঘর২০১৮)
এমিলি ডিকিনসনের কবিতা(চৈতন্য২০১৮)