জনৈক কবি ও আশ্চর্য জাদুগর
আচমকা জনৈক কবির সাক্ষাৎ হলো যার সাথে
তিনি এক আশ্চর্য জাদুগর
কর্ণে ধাতব রিং
শিরঃপরি প্রাচীন মুকুট
মিশরের মমির মতো গোল গাল যার
যেন ইতিহাস ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে তুতান খামেন।
জাদুগর বললেন তাকে গম্ভীর সদালাপে,
পেশায় কীরে তুই, পেট ভরে কীসে?
মহাশয়, আমি এক অচেনা কবি
পঙক্তির জাল বুনি অভুক্ত পেটে
কীবা রোদ্দুর কীবা জোছনাতে!
একটা কবিতা দেখা দেখি তোর
দে তো তুলে আমার হাতে
জাদুগর বললেন বজ্রগম্ভীর নিনাদে
অতঃপর একটি কবিতা প্রাপ্ত হয়ে অবশেষে
প্রাগৈতিহাসিক ঝোলা থেকে বের করলেন এক চুঙি বিশেষ
হাতের পরে কাব্যকাগজখানি রেখে
বিড়বিড় মন্ত্র পড়ে ফুঁ দিলেন
হাঁপরের নিশ্বাসে যেমন ধাতু জ্বলে জ্বলে ওঠে
তেমনি ঝিকিয়ে উঠল সে কবিতার প্রতিটি অক্ষর
বললেন সেই কিম্ভূতকিমাকার অথবা
কামরূপ কামাখ্যার আশ্চর্য জাদুগর
যাহ্ রে বেচাইন কবি,
একটি কবিতাই অমর করবে তোকে!
কবিতা শুনে যে কাছে আসে সে কুৎসিত হতে পারে না
এ বিশাল পোড়োবাড়িতে আমি একা
উঠেছি যেজন্য– রব জনবিচ্ছিন্ন-নিরিবিলি
গোটা কদিন লিখব আপন মনে আমার কবিতা ।
এক একটি কবিতা যখন
লেখা হয়ে গেলে আবৃত্তি করি উচ্চৈস্বরে
রাত কিংবা দিন নেই কোনো তফাৎ
মোমবাতির কাঁপা কাপাঁ আলোর আধিভৌতিক পরিবেশে
তখনই চোখের কোণা দিয়ে দেখি
দরজার পাশে নড়ে চড়ে ওঠে একটি ছায়া
কবিতা শেষ হলেই যে হারিয়ে যায়…
সলজ্জা এক নারী একটানা আমাকে দ্যাখে…
আমার কবিতার পাঠক নেই তাতে কী
আছে তো এক নীরব শ্রোতা!
কে তুমি রহস্যময়ী এমন কবিতাপ্রিয়া
বিশাল এ পোড়োবাড়িতে একাকী কী কর
কোন কবির দুহিতা তুমি অথবা দয়িতা
নাকি নিজেই এক কুসুমকুমারী দাস?
তোমার কি শরীর আছে নাকি অশরীরী
মুখে আঁচল দিয়ে কেন দরজার প্রান্তে দাঁড়াও
কাছে যখন এসেছো তখন পাশেই এসো না
আঁচল সরিয়ে না হয় দেখালে মুখটা
খুবই কি লাজুক তুমি
অথবা বীভৎসমুখো কোনো প্রেতনী?
কিন্তু…
কবিতা শুনে যে কাছে আসে সে তো কুৎসিত হতে পারে না ।
.