জ্যোতিপ্রসাদের ‘খনিকর’ একটি বাস্তব ধর্মী নাটক। এর রচনা কাল লভিতার আগে। ১৯২৯ থেকে ১৯৪০ এরমধ্যে নাটকটি রচিত হয়। এটি একটি পারিবারিক নাটক। নাটকটিতে অসমিয়া সমাজ এবং পরিবারের প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে একজন যুবক(নবীন) কীভাবে ইউরোপে গিয়ে অশেষ দুর্গতি এবং কষ্টের মধ্য দিয়ে ভাস্কর্য বিদ্যা আয়ত্ত করে স্বপ্রতিভায় স্বীকৃতি লাভ করেছিল তারই নাট্যরূপ লক্ষ্য করা যায়। আলোচ্য নাটকটি রচনার অন্তরালে একটি পারিবারিক শোকাবহ ঘটনা আছে বলে সমালোচকরা মন্তব্য করেছেন। চন্দ্র কুমার আগরওয়ালার পুত্র অরুণকুমার বিলাতে যেতে না পেরে আত্মহত্যা করেন। নাটকটিতে নবীন চন্দ্রের চরিত্রের মধ্য দিয়ে অরুণ কুমারকেই আঁকতে চেয়েছেন। নবীনচন্দ্র পারিবারিক বাধা অতিক্রম করে জাহাজে শ্রমিকের কাজ করে ফ্রান্সে ভাস্কর্য বিদ্যা শিক্ষা লাভ করেন। অনেকদিন অনাহারে কাটিয়ে অবশেষে তিনি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেন। শিল্প সাধনাকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করা নবীন একজন আদর্শবাদী শিল্পীকে প্রতিনিধিত্ব করছে।
আলোচ্য নাটকে অনেক চরিত্র রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান চরিত্র গুলি হল জীবনরাম, নবীনচন্দ্র ফুকন, সাবিত্রী ফুকননী, মিস্টার ভইন,ওঙ্কারমল অস ওয়াল। জীবনরাম ফুকন নবীনচন্দ্রের পিতা। তিনি চা ব্যবসায়ী এবং মৌজাদার। তিনি নিজের ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন। তার বড় ছেলে নবীন ভাস্কর্যবিদ্যা শেখার জন্য বিলেত যেতে চাইলে তিনি তাতে বাধা দেন। তার মতে ভাস্কর্য বিদ্যা শিখে সময় এবং টাকা পয়সার অপচয় হবে শুধু। নবীনচন্দ্র নাটকের প্রধান চরিত্র। নবীনের মাধ্যমে জ্যোতিপ্রসাদ অসমিয়া সমাজে একটা পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন। নাটকের শেষে নাট্যকার বলেছেন – ‘আজ দেশের সমস্ত যুবক নবীনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত ।’ জ্যোতিপ্রসাদ এই চরিত্রের মাধ্যমে শিল্প ও শিল্পীকে যথোপযুক্ত মর্যাদা দিতে চেষ্টা করেছিলেন । এই নাটকে সাতটি অংক আছে। অঙ্কের মধ্যে কোন দৃশ্য বিভাজন করা হয়নি। কনকলতা জ্যোতিপ্রসাদের একটি অসম্পূর্ণ নাটক। স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমিতে তিনি এই বাস্তবধর্মী নাটকটি লেখার চেষ্টা করেছিলেন। নাটকের পটভূমিতে রয়েছে তেজপুরের কলংপুর নামের জায়গা। বিহুর আয়োজনের মাধ্যমে নাটকের শুরু হয়েছে। জ্যোতিপ্রসাদ কনকলতাকে মুখ্য নায়িকা হিসেবে নিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমিতে নাটকটি লেখার পরিকল্পনা করেছিলেন । দুঃখের বিষয় যে তিনি নাটকটি শেষ করে যেতে পারেননি। নাটকটি সম্পূর্ণ হলে লভিতা নাটকের মতোই জনপ্রিয়তা লাভ করত।
আরো পড়ুন: ভারত গৌরব জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা (পর্ব-১২)
সুন্দর কোঁৱর(সুন্দর কুমার ) জ্যোতিপ্রসাদের আরও একটি অসম্পূর্ণ নাটক। নাটকটির মাত্র একটি অংক লিখেছিলেন। এটিকে তিনি কারেঙর লিগিরীর পরবর্তী কাহিনি বলেছেন। চরিত্র গুলির মধ্যে রয়েছে কুমার, সুদর্শন ,অনঙ্গরাম, বপুরা এবং রাজমাতা। সুন্দর কুমারের রাজ প্রাসাদের ভেতরে বিশাল গ্রন্থাগার। দেওয়ালের গায়ে সারি সারি খোপগুলিতে অসংখ্য গ্রন্থ সাজিয়ে রাখা আছে। সুন্দর কুমার গীতার বিষাদ-যোগ, সাংখ্য যোগ এবং কর্মযোগ অতিক্রম করে এখন জ্ঞান যুগে পদার্পণ করেছেন। জ্ঞানের বাইরে জীবন এবং জগতের অন্য কোনো শ্রেয় বস্তু নেই। একথা সুন্দর কুমার উপলব্ধি করেছেন। ক্ষত্রিয় ধর্ম পালন না করে সুন্দর কুমার যে দর্শনের আলোচনায় ব্যস্ত তা তার দায়িত্বজ্ঞান হীনতার পরিচায়ক ,জ্যোতিপ্রসাদ একথা নাটকে অনঙ্গরামের মাধ্যমে ব্যক্ত করেছেন।
অনুবাদক